“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১

সন্ধিক্ষণ

 

                                                         ।। শৈলেন দাস ।।

 


   সায়েন্স স্ট্রিমে এমনিতেই মেয়েদের সংখ্যা কম থাকে এরমধ্যে অভির আবার ফিজিক্স অনার্স। যে কয়জন রয়েছে তাদের ব্যাচে তারা সবাই মোটামুটি এঙ্গেজড। দুয়েকজন ফ্রি থাকলেও ওরা পড়াশোনা নিয়ে ভীষণ সিরিয়াস। সুতরাং প্রেম করার বা প্রেমে পড়ার জন্য মেয়ে জুটল না অভির। অগত্যা আর্টস স্ট্রিমের বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করার জোক বাড়ল তার।

 

     অভির স্কুল জীবনের সহপাঠীদের অনেকেই আর্টস নিয়ে পড়াশোনা করছে। এদের মধ্যে অভির ক্লোজড ফ্রেন্ড ভিকির বাংলা অনার্স। তাই ক্লাসের ফাঁকে সুযোগ পেলেই অভি চলে যেত ভিকিদের ক্লাসে। ভিকি একজন স্মার্ট ছেলে তাই ক্লাসে তার ভালো আধিপত্য। অভি ভিকির বন্ধু হওয়ায় কোন সমস্যা হয়নি সবার সাথে মিশে গল্পগুজব করার। তাছাড়া অভি ছাত্র সায়েন্সের হলেও ওর সাথে আর্টসের যোগসূত্র রয়েছে, খুব ভালো কবিতা লেখার হাত তার।

 

     বাংলা অনার্সের ক্লাসে অভির নিয়মিত যাওয়া এবং সময় কাটানোর মূল আকর্ষণ ছিল ঝিনুক। চোখে চশমা পড়া সিরিয়াস টাইপের মেয়েটি যেন সাক্ষাৎ  রশ্মিকা মন্দনা দ্য কর্ণাটকা ক্রাশ। ব্যস, প্রথম দেখার পর থেকেই অভি প্রেমে পড়ে যায় তার। আড্ডার সময় অভি কথা বলত বন্ধুদের সাথেই কিন্তু তার নজর থাকত ঝিনুকের দিকে। খুব চেষ্টা করত ঝিনুকের চোখে চোখ রাখার। কিন্তু সমস্যা হল মেয়েটি তেমন মিশুকে ছিল না তাই অভির সুযোগ হয়নি তার সাথে কথা বলার। এমনকি ভিকির সাথেও মেয়েটি কথা বলে কদাচিৎ। অথচ অভি যে মেয়েটিকে ভালবাসে এই কথাটা তো ওর জানা দরকার। তাই ঝিনুকের যা যা বৈশিষ্ট্য অভি লক্ষ্য করত তা নিয়েই কবিতা লিখত এবং বন্ধুদের শুনাত বার বার। একদিন ঝিনুক ক্লাসে ছিলনা তাই অভি ইচ্ছে করেই সরাসরি ঝিনুকের নাম নিয়ে দুলাইন শোনাল বন্ধুদের- নীল নয়নে ডুব দিয়েছে ডুবুরি / ধরা ঝিনুক দেয় নাকো করে যে চাতুরী।উদ্দেশ্য স্পষ্ট মেসেজ দেওয়ার।

 

    পরদিন বৃষ্টি ঝরছিল সকাল থেকেই। অনার্সের ক্লাসও ছিল সকাল সকাল। অভি নিয়মমাফিক কলেজে উপস্থিত হয়ে দেখে কলেজের এনট্রানসে দাঁড়িয়ে আছে তার দ্য কর্ণাটকা ক্রাশ। অভির বুক ডিপ ডিপ করছে। পা-ও যেন কাঁপছে একটু। কোন মতে ঝিনুককে পাশ কাটিয়ে ভেতরে চলে যাবে, পেছন থেকে পড়ল ডাক শোন কবি, একটু দাঁড়ানো যাবে?’ নার্ভাস হয়ে ঘুরে দাঁড়াল অভি। দ্বিতীয় প্রশ্ন - ফিজিক্স আর বাংলার ককটেল, কখন থেকে এইসব? অভি কাঁচুমাচু হয়ে উত্তর দিল ‘কী সব?’ ‘আ হা হা হা, যেন কেউ কিছু বোঝেনা জানেনা? মানুষের নাম নিয়ে কবিতা লেখার সাহস হয় কী করে?’ অভি লক্ষ্য করল ঝিনুক রাগত প্রশ্ন করছে ঠিকই কিন্তু চোখমুখে মুগ্ধতার ছাপ। দেখে মনে হচ্ছে যেন ভেতর ভেতর খুব খুশি সে। তাই জড়তা কাটিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল সে তোমাকে দেখে।হেসে ফেলল ঝিনুক, যেন জানত একথাই বলবে অভি। বলল, তা, কতটি কবিতা লিখেছ আমাকে নিয়ে? সবগুলোই আমাকে শুনাতে হবে আজ।’  

 

    বৃষ্টি ঝরেই চলেছে। ছোট্ট মাঠ পেরিয়ে লাইব্রেরী বিল্ডিং এর দিকে যাবে ওরা। ঝিনুক ছাতা খুলে ডাকল অভিকে এসো। অভি নিঃসঙ্কোচে ছাতার নীচে মাথা গুঁজল। সামনেই সন্ধিক্ষণ আঙুলে আঙুল টোকার।

 

কোন মন্তব্য নেই: