“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১

যে ক'টা দিন পৃথিবীতে ৷৷ দ্বিতীয় পর্ব

।।২।।

 

(C)IMAGE:ছবি

ফজরের জামাত খাড়া হয়েই আবার সবাই আচমকা বসে গেলো। ইমাম সাবের সুন্নাত পড়া বাকি, তা-ই। আমি বারান্দায় টাঙানো নামাজের সময়সূচীর প্লাস্টিক হোর্ডিঙে লেখা উর্দু লাইন ক'টি প্র্যাকটিস করছি ভাঙা ভাঙা ভাবে। এরই মাঝে টের পেলাম কেউ আমার মাথার পেছনের চুলে হাত বুলাচ্ছে। ‘ভেজা’ বলে একটা ভেংচি হাসি দিয়ে ভেতরে চলে গেলো সে, আমি ও হাঁটা দিলাম পেছনে পেছনে। আর আমাদের দু'জনের আগে সুন্নত শেষ করা ইমাম সাব! 

      নামাজ শেষ হতে না হতেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি! দোয়ার অপেক্ষা না করেই এক দৌড়ে ঘরে। কিন্তু ঘরে পৌঁছতেই বৃষ্টি বন্ধ! যেন কেউ মেঘের সুইচ অন অফ খেলা খেলছে। আশ্বিনের শেষের এমন খেলা আমার বেশ ভালোই লাগে। একটু হাসলাম। মনে মনে বললাম ভালো ই হলো। জামা টা খুলে মাথা মুছে বিছানায় বসে বিড়বিড় করছি, শোব, না শোব না; শোব, না শোব না। চোখ টা আধোঘুমের মত, আধা বন্ধ আধা খোলা। আমার বিড়বিড়ে ব্যাঘাত ঘটালো একটা আয়তাকৃতির ট্রেতে থাকা দুটো কাপ আর প্রায় কনুই অবধি পরা চুড়িওয়ালা দুটো হাত। ঘোর টা কে ঝেড়ে ফেলে মুখ টা তুলতেই শুনতে পেলাম, ‘চা!’ এবারে আমি তৎক্ষণাৎ একটা রিপ্লাই দিলাম। আর দিতে দিতে ভাবলাম এমন রিপ্লাই আসলে উঁচুমানের। কিউট একটা সুন্দর মিষ্টি হাসি, ঠোঁট দুটো বন্ধ রেখেই। প্রতি উত্তর টা ও সেম ছিলো যদিও তবু কেন জানি মনে হলো আমার টা সুন্দর। ডে টুর শুরু টা ভালোই হয়েছে আমার। চায়ের আগে পানি খেতে চাইছিলাম তা-ই উঠতেই বলল, দিচ্ছি। পানি টা শেষ করে চায়ে চুমুক দেবো ঠিক তখন-ই, সুমনা কে

        আমি সুমনা বলে কাউকেই খুঁজে পেলাম না আমার নিকট দূর আত্মীয়ের মাঝে কেউ। কিন্তু কিছুই বললাম না। কারণ আমি নিজেই কনফিউজ ছিলাম সে কি আদৌ ‘সুমনা কে’ জিজ্ঞেস করেছে না কি অন্য কিছু। এমনিতেই একটা নার্ভাসনেস কাজ করছে কাল থেকেই, তাছাড়া কথা অর্থ বদলাচ্ছে এক পক্ষ থেকে আরেক পক্ষে আসতে আসতে। তাই কোনো রিস্ক না নিয়ে না শোনার ভান করে বললাম, চা টা ভালো হয়েছে! এবার আবারও একটা মুচকি হাসি। আমি হাসবো কি হাসবো না ভাবতে ভাবতেই আল পটকা ভাবে বলে ফেললাম, ‘কাল থেকে দেখছি শুধু হেসেই চলছেন, আমার কি কিছু...’

     ‘আমার কি কিছু কি? পুরো করলেন না যে’, বলেই একটু জোরেই হেসে ফেললো। তারপর কিছুক্ষণের জন্য নীরবতা পালন করলাম যেন দু'জনেই। 

 

আপনার জড়তা দেখে আমার হাসি পাচ্ছিলো!’ এবার যেন সত্যিই আমি একটু লজ্জা পেলাম, কিন্তু সে কাঁটিয়ে উঠেই বললাম একটু নার্ভাসনেস তো ছিলো ইপ্রথম বিয়ে বলে কথা! এবার সে তাঁর চোখজোড়া বড় করে রাঙাতেই আবারও দু'জন জোর গলায় হেসে উঠলাম। সে ট্রে নিয়ে ভেতরে যেতেই 'ইয়েসবলে একটা হুররে বাতাসে ছুঁড়ে দিলাম। কিন্তু সেই হুররে টা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। বাতাস আমার দিকে সুমনা কে ছুঁড়ে দিলো। আমি রিক্যাপ করলাম পুরো এপিসোড টা। বিশেষ করে চায়ের চুমুক দিতে যাওয়া টা প্লে করলাম বারবার। সুমনা কে!! এটা আবার কী, এটা কেন জিজ্ঞেস করলো। দু মিনিট চোখ বন্ধ করে খুললাম আবার। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম আধঘুমে আরও খেলো শোব, না শোব না, শোব, না শোব না! শোব না টা সুমনার মত এমন মারাত্মক রূপ নিতে পারে ভাবতেই গা কাঁটা দিয়ে উঠলো! 

 

ক্রমশ:

 

#যেকটাদিনপৃথিবীতে

 

কোন মন্তব্য নেই: