“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০১৭

কৌশল

।। অভিজিৎ  দাস।।

         সুনয়না আর সোমা বান্ধবী । অনেকের কাছেই অবশ্য ওরা “বেষ্ট ফ্রেন্ড” । কিন্তু ওরা মানেনা এ কথা - কারণ দৃষ্টিভঙ্গী ওদের পৃথক, আর কাউকে ওরা ‘ফ্রেন্ড’ মনে করেনা । আসলে কোনো অজানা এক কারণে সপ্তম শ্রেণিতে চাণক্যের শ্লোকে পড়া ‘বন্ধু’র বৈশিষ্ট্যগুলো ভালো মতই আত্মস্থ করেছে এরা, আর সাথে সাথেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে পরস্পরের বন্ধু হয়ে থাকার ।

         বন্ধুত্বের পাঁচ বছর হল, কী অসম্ভব মিল এদের । সোমা বরাবরই প্রথম হয়, সুনয়না দ্বিতীয় । কিন্তু এ নিয়ে এদের কারো কোনও মাথা ব্যথা নেই । কথা ওদের একটাই, “বন্ধু আমরা, একের জিৎ হলে অপরেরও জিৎ, একের হার হলে অপরেরও হার” । একথা অবশ্য মুখ ফুটে দুজনের কাউকেই বলতে হয়নি, এরা পরস্পরের মন বোঝে, আর বোঝে বলেইতো বন্ধু ।

            রীতিমত মাধ্যমিক পরিক্ষায়ও দুই বান্ধবী কাছাকাছি বসার সুযোগ পেল । প্রথম ডেস্ক এ সোমা, দ্বিতীয় ডেস্কে সুনয়না । ভালবাসার অদ্ভুত এক ক্ষমতায় বলা-শোনা অথবা দেখা-দেখি পদ্ধতিতে সংকটাপন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ভালো মতই পরীক্ষা দিল দুজনে ।

         সুনয়না হল প্রথম । ৫৬৭ নম্বর পেয়েছে সুনয়না, সোমা পেয়েছে ৫৬৫ । নম্বর জেনে খুশি উভয়েই । কিন্তু খুশি হতে পারলেন না সোমার পরিজনরা, বাবা বললেন, “কী গো সোমারানী, খুব তো ফার্স্ট হয়ে ছিলে টেস্ট-এ, এবার কী হল” ?

           মা বললেন, “সে কি সোমা, তুই ফার্স্ট হলি না ? ফার্স্ট হল ওই সুনয়না ? হায়রে, একী  হল গো, বোর্ড আমার মেয়ের সাথে কি করল এ । হা ভগবান !...”

               শিক্ষক মশাইরা বললেন, “দারুণ কম্পিটিশান হয়েছে দুজনের মধ্যে । একেবারে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই” । স্যারেদের কণ্ঠে কণ্ঠ মেলালেন গ্রামের আরও অনেকেই ।
“একেবারে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই ।”
“একেবারে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই ।”
“একেবারে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই ।”
             কই সোমা-সুনয়নাতো লড়াই করেনি, ভালবেসেছিল, বন্ধু হয়েছিল । প্রতিযোগিতা তো করেনি এরা ! তবে কি পৃথিবীতে ভালবাসা বলে কিছুই নেই ? বন্ধুত্ব বলে কিছুই নেই ? শুধুই শত্রুতা ?

           একাদশ শ্রেণি; সোমা আর্টস নিয়েছে, সুনয়না সায়েন্স । মাঝে মাঝে দেখা হয়ে যায়, কথা হয়ে যায়, হয়ে যায়, দুজনেরই অনিচ্ছা সত্ত্বেও হয়ে যায় ।

           দ্বাদশ শ্রেণি; এখন এরা অভ্যস্থ – দেখা হয়না । অভিজ্ঞতা লব্ধ কৌশল । আর দেখা হয়ে গেলেও কথা হয়না, এও কৌশল । হিংসা, ঘৃণা আর দ্বন্দ্ব দুজনের জীবনটাকে কৌশলময় করে তুলেছে । তবুও, মনের কোন এক কোণায় সরল এক ভালবাসা বসে আছে । স্বপ্ন দেখে – একদিন সব কৌশল বিনষ্ট হবে ।...

কিন্তু আপাতত হিংসা, ঘৃণা, দ্বন্দ আর কৌশল – এরাই পরম সত্য ।।

কোন মন্তব্য নেই: