॥নীলদীপ
চক্রবর্তী॥
ক্যাপশন যোগ করুন |
তিনি না
থাকলে হলধরের ১২ বছরের ছেলে ভবজিত হয়ত বাঁচত না! সে আজ বছর দশেকের
পুরোনো কথা! চলিহা নগরের
ড: বড়ুয়ার হাতেই
নিউমুনিয়া থেকে নতুন জীবন পেয়েছিল হলধর আর পিকুমনির একমাত্র ছেলে ভবজিত। সেই থেকে
রবিবার বা সম্ভব হলে উৎসব পার্বণের দিনে হলধর কৃতজ্ঞতার উন্মুখ প্রকাশ করে যায়
বড়ুয়ার বাড়ি এসে। খেটে খুটে দেয় ওদের ফুল আর ফসল বাগানে। আর সেই অবসরে বড়ুয়ানী
কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজের বৈভবময় জীবনের ফল্গু স্রোতে ভেসে আসা রিক্ততার আক্ষেপ
শোনান হলধরকে! হলধর শোনে, মুখে মৃদু সান্ত্বনা
উচ্চারণ করে, কিন্তু মনে
মনে ভাবে, বৃথাই
বড়ুয়ানী দু:খ করেন।
ডাক্তারের ছেলে শহরের গর্ব। যেমন তার নাম গৌরব, তেমনি ও শহরেরও গৌরব! মাধ্যমিকে জেলার সর্বোচ্চ স্থান দখল করে প্রথম গুয়াহাটি, এরপর কোনও এক বিদেশী যায়গায় চলে গেছে গৌরব। অনেক অনেক বড় হওয়ার
স্বপ্ন নিয়ে।
থানা
চারালিতে ভূপেন হাজরিকার মূর্তির দিকে তাকিয়ে নিজের এতদূর হাটার পরিশ্রম ভুলে গেল
হলধর, যদিও ব্যথায়
ওর পা টনটন করছে। কিন্তু ও ভূপেনকাই মারা যাবার পর শুনেছে, লোকটা শুধু গানই গায়নি, ঘুরে বেরিয়েছে সারা পৃথিবী। পাড়ার অনুষ্ঠানে, বিহুতে, রেডিওতে, গাঁওবুড়া জীবন
কুর্মির বাড়ির টিভিতে হলধর ভূপেন কাইকে গান গাইতে শুনেছে। শুনে হেসেছে, কেঁদেছে, আপ্লুত
হয়েছে! কিভাবে লোকটা এত বিশাল হয়ে উঠল, তাই ভেবে
অবাক হয় হলধর! অথচ মূর্তিটা দেখে ওর কেমন যেন অসহায় লাগে সুধাকণ্ঠকে।
আজ
ডাক্তারবাবুর শরীরটা বিশেষ ভাল নেই। এদেরও যে শরীর খারাপ হয়, সাতান্ন বছর
বয়েসে অন্য একজন সমবয়সীর বিষয়ে সেটা সম্ভবত প্রথম আবিষ্কার করল হলধর। আরাম চেয়ার
নিয়ে বিশাল লনে বসে আছেন বড়ুয়া। একটা সংক্ষিপ্ত প্রণাম ঠুকে হলধর ব্যাগটা ছেড়ে আসে
কিচেনের বারান্দায় । তারপর বসে ডাক্তারবাবুর পাশেই রাখা একটা মোড়াতে। একটা শীতের দোয়েল
কাছেই উদাসী আওয়াজ তোলে একটানা ।
-‘কী রে বহুদিন
পর এলি যে!’ ডাক্তারের
প্রশ্নে হলধর একটু বিব্রত হয়ে বলে –‘দেউতা, কী বলব, আমার ভবটাকে
নিয়ে কি যে সমস্যায় পড়েছি! একদম কথা
শোনে না, সারাদিন
শুধু কয়েকটা বখাটেকে নিয়ে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ানো! এখন আঘোনের ধান কাটার সময়, আমি ব্যস্ত
থাকি ক্ষেতেই। ওকে আনতে চাই না একাজে। কিন্তু কে শোনে কার কথা, স্কুল থেকে
হেডস্যার প্রায় ডেকে নালিশ জানান, নিয়মিত যায়ও
না ইস্কুলে। টইটই করে, গ্রামের গরু
ছাগল তাড়ায়, এই আর কি!’
-‘হা হা হা, সে সব ঠিক
হয়ে যাবে কালে দিনে’। ডাক্তার হাসেন। -‘ছেলেকে ঠিক
মতো ডেকে বোঝা, পড়াশুনা না
করলে আজকের দিনে আর কিচ্ছু হবে না, নইলে ওটাও
তোর মতই মুখু সুক্ষু হয়ে ঘুরবে’।
-‘ঠিকই কর্তা’, বেজার মুখে
চিন্তিত হয় হলধর। ‘যদি আমার
লেখাপড়ায় অমনোযোগী গাধা ছেলেটা ডাক্তার বাবুর ছেলেটার মতো একটু হতো’! হলধর
ভাবনায় তলিয়ে যায়। ‘আমাদের গৌরব
দাদাবাবুর একটু গুণও যদি আমার ছেলেটা পেতো’। হলধরের কথা
শুনে ডাক্তার হাসেন।
অবশ্য টাকা
পয়সা না থাকলে ভাল পড়াশুনা হয় না। হলধর এটা বোঝে। ও দেখেছে যখন গৌরব দাদাবাবু বা
হুন এখানে থাকত ওকে পড়াতে আসতেন তিনজন শিক্ষক। হলধরের কাছে ভবজিত কিন্তু এক-দুবার
বলেছিল, গায়ের সঙ্গী
বা লগরিয়াদের সাথে বিপিন স্যারের কাছে শহরে অংকের টিউশন করতে
যাবে ও। অথচ আসা যাওয়ার অটো ভাড়া আর স্যারের মাইনে দেওয়া হলধরের পক্ষে একেবারেই
অসম্ভব। সেইজন্যই গ্রামের স্কুল আর বাড়ির পড়াশুনায় নির্ভর করতে হয় ভবজিতকে। অবশ্য
এ নিয়ে ওর কোন চিন্তা নেই। পরীক্ষায় ভাল বা খারাপ ফলাফল দুটোই ওর কাছে মূল্যহীন।
হলধর নিজেও
পড়াশুনা করে নি, পড়তে হয়নি।
ধানক্ষেতের আল ধরে সোজা দৌড়াতে গিয়ে অনেকবার হোঁচট খেয়েছে ছেলেবেলায়, বিহুর মেজি
আর ভেলাঘর বানিয়েছে মাঠেই, বর্ষার একহাঁটু
জলে দাঁড়িয়ে কাওই মাছ ধরেছে গামছা দিয়ে, আর সেই
সঙ্গে কখন যেন মাঠেই ওর জীবিকার অনাগত দিনের যাপন-বৃত্তান্ত লেখা হচ্ছিল, বুঝতেই
পারেনি!
‘বুঝলি হলধর, হুন কিন্তু
ছিল একেবারে আলাদা! ছোটবেলা
থেকে কখনো স্কুলের পুরস্কার ও প্রশংসা ছাড়া আর কিছু আসে নি বাড়িতে। আমি তো একটুও
দেখা শোনা করতে পারিনি ওকে, নিজে
নিজেই....’।
এ কথাটি
কিন্তু ঠিক নয়, জানে হলধর।
ডাক্তারবাবু নিজে রোজ ওকে নিয়ে স্কুল ছেড়ে আসতেন, গাড়িতে চেম্বার যাবার সময়। বিকেলে
চেম্বার থেকে এক রাউন্ড বেরিয়ে ওকে খেলার মাঠে দিয়ে আসতেন। আর রাতে রোজ স্কুলের
পড়া হোমওয়ার্ক দেখতেন নিজেই। যা করা হলধরের পক্ষে কখনো সম্ভব নয়।
ও নামতা, ভূগোল
ইতিহাস কিছুই জানে না। তবে অনর্গল বলে দিতে পারে ওজাপালির গান –‘ও মুর আই হাক, ও মোর মইনা
হাক...’, গেয়ে দিতে
পারে ‘প্রথম
প্রণামতে হরি .... এ দ্বিতীয় প্রণামতে গুরুজনা এ এ ....’ ইত্যাদি।
-‘দেউতা, আমাদের বাবাটি
তো সোনার ছেলে। ওর মতো আর কটা আছে এই জেলায়’। প্রচ্ছন্ন
সুখবোধের মিশ্ররেখা খেলা করে যায় প্রৌঢ় চিকিত্সকের মুখের বলিরেখায়।
-‘হলধর,
ডালিয়াবাগানের বেড়াটা একটু বেঁধে দিয়ে যাস তো, জিমি নষ্ট করেছে পরশু’। বড়ুয়া গিন্নির উচ্চকণ্ঠ শুনে হলধর গা তোলে। এইবেলা তাড়াতাড়ি
বেড়ার কাজটা শেষ করলে বিকেলে কালোজোহার আঁটি গুলো বেঁধে ফেলতে পারবে ও। গতকাল ওগুলো
কেটে হলধর নিজের আঙিনায় ছড়িয়ে রেখেছিল। হাতের কয়েক জায়গায় ছড়ে গেছে কাস্তে টেনে
টেনে। তবু অকৃত্রিম পৃথিবীর মতো জননের
আদিম-উল্লাস ছিল বুকভরা!
কার্তিকের
মোহময় সন্ধ্যায় তুলসীর কাছে চাকিগছি জ্বেলে দেবার সময় পিকুমনির চোখের কোণে চিকচিকে
জল দেখেছে ও। ওর সাদামাটা অভাবের সংসারে সেই কবে থেকে অশ্বত্থ গাছের শেকড়ের মতো সুদৃঢ়
বাঁধন দিয়ে এক মহীরুহের ন্যায় দাঁড়িয়েছে পিকুমনি। অর্থের জন্য হন্যে হয়ে বিভিন্ন
কাজে নিজের ভাগ্যকে প্রায়ই পরখ করে অভাগা হলধর, আর প্রতিদিন একই তন্ময়তা নিয়ে সন্ধ্যায় দুয়ারে দাঁড়ানো
থাকে দুটি অত্যুজ্জ্বল চোখ, যার পরতে
পরতে দ্রুত নেমে আসে ক্লান্তি আর রক্তাল্পতার ফ্যাকাসে
রঙ!
বাগানের
বেড়াটা বাঁধার সময় অভিজ্ঞ হলধর অনুভব করে আজ বড়ুয়ানির মনটা যেন কোথায় উড়ে আছে, উদাসী
দোয়েলের মতই! ও শোধায়, ‘আই, কী গো, আজ যেন কোন
ভাবনায় তলিয়ে আছো’?
-‘না আমার কী
আর ভাবনা আছে? দিব্যি আছি!’
-হুন বাবার
আসার কথা কী আছে এর মধ্যে?
-‘এখন! না না এ
তো গেল কিছুদিন আগে! একটা নতুন চাকরির কথাও চলছে। বোধহয় আসতে
পারবে না বহাগেও’। শেষের
বাক্যে বড়ুয়ানির গলাটা শূন্যতায় যেন খা খা করে ওঠে।
-‘সেকি এবারে
তো আমিও কালো জোহা উঠিয়েছি পথারে। কোথায় তুমি একটু সাধ করে হুন বাবার জন্য পিঠে
পুলি বানাবে...।’
-‘তোরও জ্ঞান
গম্মি একেবারে নেই। ইংল্যান্ড থেকে কি আসা যায় চাইলেই? একি তোর
ঘোড়ামরা গ্রাম থেকে চলিহানগর!’
-‘এখন আমি
ব্যস্ত আছি! আপনি পরে আসুন’।
উচ্চস্বরে
ডাক্তারবাবুর গলা শুনে হলধর বাড়ির ঝুল বারান্দার খোলা যায়গায় এসে দাঁড়ায়। বড়ুয়া
তখন বিরক্ত হয়ে ঝুল বারান্দার নিচে অপেক্ষারত কোন পেশেন্টকে ছুড়ে দিচ্ছেন কিছু কাগজপত্র।
হলধর আগন্তুক ভদ্রলোককে দ্যাখে। উষ্কখুষ্ক চুল, দুর্ভাবনার ছায়া মুখে। বিড়বিড় করে কোনও কৈফিয়ত দেয়, ‘না স্যার, ভাবছিলাম
বাচ্চাটার চিন্তার কোনও কারণ নেই তো, আপনাকে এই
অসময়ে বিরক্ত...’
-‘আমি আগামীকাল
দেখব, আপনাকে তো
আগেই বলেছি। আপনারা বাচ্চা নিয়ে অযথা বেশি চিন্তা করেন। যান, এখন বিরক্ত
করবেন না’।
ভদ্রলোক
দুইহাত জোড় করে দ্বিধাগ্রস্ত লজ্জার সঙ্গে বেরিয়ে পড়লেন। আর সেই একই বিড়ম্বনার
অনুভব হল হলধরেরও! আজ থেকে দশ বছর আগের ডাক্তারবাবুর সঙ্গে এই মুহূর্তের বড়ুয়ার
অমিল কষ্ট দিল হলধরকে।
বড়ুয়ানির
রান্নাঘরে লক্ষী কাজ করে। গিন্নিমাকে কিছু বিশেষ করতে হয় না। আজ কিন্তু কিছু
টুকটাক কাজ করছেন তিনি। তবে পাশেই বারান্দার নিচে ডালিয়াবাগানে কাজ করতে ফিরে এসেও
হলধরের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলল বড়ুয়ানি ভাল নেই, মন ভাল নেই!
মাঝে মাঝে হলধর অবাক হয়! বড়লোক মানুষ, প্রচুর টাকা
পয়সা, এত গুণী
ছেলে, নাম ডাক
প্রতিপত্তি, তবুও উদাসীন
লাগে কেন বড়ুয়া গিন্নিকে?
-‘আই তুমি
কিন্তু এখনো বললে না তোমার কী কোনও চিন্তা...’ হলধর আবার শুধয়।
-‘না না
বল্লামই তো...’ বড়ুয়ানি সরে
আসেন।
-‘তা যাই বল, হুনবাবা
এবছর না এলে বড় মন খারাপ লাগবে। ওই বহাগেই তো যা একটু আসার সময় পায় বোপা’।
-‘কেন ওই বহাগ
বিহু কি শুধু তোর গায়ের বিহুতলিতেই হয়, দুনিয়ার আর
কোথাও হয় না’?
ডাক্তারবাবু
ইতিমধ্যেই এসে দাঁড়িয়েছেন ওখানে। হলধর বোকার মতো হাসে।
-‘তা তো জানিনা
কর্তা, বিহু নিশ্চয়
হয়, শুধু নিজের
বাড়ি ঘর, স্বজন, পিঠে পুলি
ছাড়া কেমন যে লাগে রঙালি, রঙ হয় কি
দেউতা’?
-‘হয় হয়! হুন
যেখানে আছে, ইংল্যান্ড!
সেখানে খুব বড় করে বিহু পালন করা হয়! সেসব তোরা ধারণাই করতে পারবি না।’
ডাক্তারবাবুর
গলাতেও শূন্যতা, খা খা করা
আর্তি! হলধরের বুকের কোণে সেই আর্তি পরম যতনে যেন ধরা পড়ে। হলধর দ্রুত নিজের কাজে
মনোনিবেশ করে । বহুদিন পর এই বাড়িতে এসে ও ছন্দপতনের ধুন শুনতে পায় যেন। জাগতিক
শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকার দরুন ওর অভিজ্ঞতার শিক্ষা ওকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে এই পঞ্চাশোর্ধ বয়েসে।
ডাক্তারবাবুর কথায় আইদেউ যেন ভ্রূক্ষেপও করল না। এককাপ চা দিতেও যদি ভুল হয়ে যায়
তবে বুঝতে হয় কোথাও একটা ছন্দপতন হয়ে আছে। দুপুর বারোটা হয়ে যাবার সাথে সাথে
ছন্নছাড়া দুটি কাক একনাগাড়ে ডেকে চলল কলতলা থেকে।
হারাধন এইবার
বাড়িমুখো হবে। ওখানে ওর অনেক কাজ! কর্তাবাবু কিচেন বারান্দার বাইরে রোদে নিজেকে
উষ্ণ করে চলেছেন, অথচ কী
আশ্চর্য, গিন্নিমার
শীতলতাকে ছুঁতেও পারছে না, অঘ্রাণের
রোদ! হলধর বিদায় নেবার সময় এই বাড়িটির প্রতি চির কৃতজ্ঞতার প্রকাশ করে নিজের ঝোলা
থেকে বের করে আনে একটা পেপা। খুব ভাল মহিসের শিঙের পেপা বানাতে পারে হলধর। ভেবে
রাখা মতো সকালে এসেই বাড়ির লাউ সবজি এসব দিয়ে, যাবার সময় গৌরবের জন্য স্নেহের উপহার স্বরূপ এই পেপাটা
দিতে এগোয় হলধর। গিন্নিমার কাছে গিয়ে বলে,
–‘আই এবার তো
আর বাবাজীবন এলো না, এই পেপা ওর
জন্য বানিয়েছিলাম। বহাগে বাজাত। এটা রাখো’।
হঠাৎ উপচে
পড়া কান্নায় ভেঙে পড়েন বড়ুয়ানি। চিত্কার করে বলেন-
-‘তোকে বললাম
না, ও আসবে না, বহাগে আসবে
না, বহাগে ওর
বিয়ে ....’
-‘চুপ কর’। ডাক্তার
গর্জে ওঠেন।
-‘না চুপ করে কী
হবে, আমাদের মতো
হলধরের স্বপ্নও ভাঙ্গুক। ও দেখুক, আমারা
সারাজীবন ধরে কিভাবে শুধু ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছি। সন্তান সুখের ভিক্ষা’!
হলধর কাঠের
মতো দাঁড়িয়ে থাকে এক পাশে। ডাক্তারবাবুর মাথাটা ঝুঁকে পড়ে বুকের কাছে, যেন নিজের
খোলে ঢুকে আত্মগোপন করে এক প্রাচীন কচ্ছপ!
-‘ও আসবে না।
ওখানে এক সাহেব মেয়েকে বিয়ে করবে গৌরব, তোর হুন
বাবা। আমরা বলেছিলাম আসতে, এখানে এসেই
না হয় ওর বুড়ো বাবা মায়ের সামনে বিয়েটা করত’।
বড়ুয়ানির
চোখের জল থেমে শুকোয়। বড়ুয়া বিড়বিড় করে বলতে থাকেন –‘তুমি থামবে, তুমি...’।
-‘কাল রাতে এই
খবর পেয়ে তোর সাহেবের শরীর খারাপ করে, হার্ট
অ্যাটাক বুঝিস... হ্যাঁ বুঝিস’? আইদেউর কথায়
বিস্ফারিত চোখে এক বিষণ্ণ রোগীকে দেখে হলধর।
পেঁপাটা
নিজের ঝোলায় ঢুকিয়ে পথে পা বাড়ায় ও। আবার হাটতে শুরু করে দীর্ঘ পথ। একটা অব্যক্ত
ব্যথা ওর মনে সুচের মতো খোঁচায় । এত শত লোক এইপথে, অথচ কত একা কতজন! ঝোলার পেপাটাকে চেপে ধরে ও দ্রুত হাঁটতে
থাকে আর ক্রমশই ওর চোখের সামনে আনন্দময় হয়ে উঠতে থাকে ওর ছাপোষা জীবনগাথা। কারণ ও
জানে, এই মুহূর্তে
ওর ঘোড়ামারা গ্রামের ছোট্ট কুঁড়েঘরে এখন অপেক্ষারত দুটি উজ্জ্বল চোখ। আর কাছেই
কোনও সোনালি মাঠে ওর ফেলে আসা যৌবনের ছায়া, দুটি বলিষ্ঠ
হাত, পা, ঘন কোকরান
চুল আর দুষ্টুমি ভরা এক তরতাজা প্রাণ, যে সকালে মায়ের
বকুনি খেয়ে ঘুম থেকে ওঠে, মুখ হাত ধোয়
আর বেরিয়ে পড়ে টোটো করতে, ওর প্রিয়
শিল্পীর গান গাইতে গাইতে... ‘ও মালিক সারা
জীবন কাঁদালি যখন, আমায় মেঘ
করে দে...’!
হলধর
থানাচারালি থেকে একটা অটোরিক্সা ধরে আর বিনম্র ভক্তিতে, সবাইকে
লুকিয়ে টুক করে ভূপেনদার ধূলিমাখা মূর্তিটাকে একটা প্রণাম করে !
** সমাপ্ত **
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন