।। শিবানী দে।।
পাঁচতলা বাড়িটার ছাদে বসানো পুলি থেকে দেওয়াল ঘেঁষে
মোটা মোটা দড়ি ঝুলছে। একটা দড়ির প্রান্তে একটা ছোট পিঁড়ের সাইজের কাঠ বসবার জন্য, কাঠটির দুপাশে
দুটো আংটায় দুটো কৌটো ঝুলছে, কৌটোতে ব্রাশ চুবিয়ে দেওয়ালের গায়ে টানছে রঙ মিস্ত্রি। একবার ডান হাতে,
একবার বাঁহাতে। স্ট্রোকের
পর স্ট্রোকের সঙ্গে তার কাঁধের ও হাতের পেশি ফুলে উঠছে, একবার ডানদিকে, একবার বাঁদিকের। খানিকটা দেখনদারি,
তবে মনোযোগের ঘাটতি নেই, কোথাও যেন ফাঁক থেকে
না যায়। বাড়িগুলোতে রঙ করা হবে, তাই প্রথমটা প্রাইমার মারা
হচ্ছে।কাজের মাঝে মাঝে একআধ বার ঝুলন্ত সিট ছেড়ে জানালার কার্নিশে আধশোয়া হয়ে বসে
আয়েশ করে বিড়ি ফুঁকে, সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে দার্শনিকভাবে।
বিড়ি শেষ হলে দুআঙুলের একটা বিশেষ মুদ্রায়
তা নিচে ফেলে। তারপর লম্বা পা বাড়িয়ে দড়ি টেনে আবার সিটে বসে, রঙ করে ।
ব্যাল্কনির দরজা খুলে বেরিয়ে আসে সুমিত্রা সাউ, নয়/ডি-র সত্তর
বছরের বাচ্চালাল সাউয়ের পঁয়ত্রিশ ছত্রিশের
বছরের প্রায় জোয়ান বউ। মুখে আলগা হাসি। খানিকটা রঙ করা দেখে, খানিকটা ছেলেটার চওড়া কাঁধের নিচে উপরে পেশীবহুল হাতের ওঠানামা, তার ময়লা রঙের ছোপওলা গেঞ্জিপরা বেশ চওড়া বুক, সরু
পেট দেখে, আবার দেখে। ছেলেটা ত্যারচা চোখে খেয়াল করে। খানিকক্ষণ
পর না তাকিয়েই বলে, কেমন হচ্ছে কাজ, বৌদি
? সুমিত্রা মিষ্টি গলায় বলে, তোমার রঙ
করার তরিকা খুব বড়িয়া । দোনো হাত সে কাজ
করছ, আর কোনোদিন
কাউকে এরকম করতে দেখিনি। ছেলেটা তাকায়। সুমিত্রা হাসে। বলে, ‘আমার রঙ করার কাম দেখতে খুব ভাল লাগে।’ ছেলেটি বলে,
‘এতো রঙ নয়, প্রাইমার হচ্ছে। প্রাইমারের পর
ওয়ালপুটি হবে, তারপর রঙ।’ ‘ও বাবা,
তাহলে তো অনেক কাজ।’ ‘তুমি একাই করবে?’
এই বিল্ডিং-এ আমি করছি, অন্য বিল্ডিংগুলোতে
অন্য ছেলে করছে ।’
এমন নয় যে সুমিত্রা এই কথাগুলো জানে না। কিছুদিন হল
এই মেরামতির কাজ চলছে, লেবার ছেলেগুলো আবাসনের কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে ভেতরেই
গ্যারেজ স্পেসের একটা দিকে অস্থায়ী আস্তানা বানিয়েছে, কারণ
তাদের বাড়ি দূরে অন্য জেলায়। তবুও সুমিত্রা বলছিল কারণ সব-জেনে-গেছি হয়ে গেলে কথা
বাড়ানো যায় না, আর তার কথা বলতে ভাল লাগছিল। ফ্ল্যাটবাড়ির
বাসিন্দাদের মধ্যে মেলামেশা কম। দেখা হলে
একটু হাসি, কোনো গেট-টুগেদার হলে অল্পস্বল্প কথাবার্তা হয়,
বেশির ভাগই বাড়ির কাজের লোক আর রাঁধুনি নিয়ে, সুমিত্রার
আলোচনার দৌড় ও খুব বেশি নয়, বড়জোর হাউসিং-এর কোনো সমস্যা নিয়ে কথাবার্তা হয়, এইপর্যন্তই। ঘরে তার প্রায়-সত্তর স্বামী, তিনটে
সৎছেলেমেয়ে, তার দুজনের বিয়ে হয়ে গেছে, ঘরে কথা বলার লোক নেই। তবুও সে বিহারি টানের বাংলায় একে তাকে ডেকে
ডেকে কথা বলে। ফ্ল্যাটবাড়ির বাসিন্দাদের
সংস্কৃতি হল কোনো কিছু অপছন্দ হলেও সামনাসামনি অপ্রিয় কিছু না বলা, পেছনে হাসাহাসি করা যেতে পারে।
ছেলেটি তার ব্যাল্কনির সমানে আসতে সুমিত্রা তাকে
বলে, অনেক সময় ধরে কাজ করছ, একটু চা খাও। সে চট করে কিচেনে গিয়ে এক কাপ লেবু চা করে আনে, কাগজের কাপ ছেলেটার দিকে এগিয়ে দেয়। ছেলেটার আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে যায়।
ছেলেটা তার ঝুলানো সিটে বসে চা খায় তৃপ্তি করে। ‘ভাল চা
খাওয়ালে, বৌদি।’ তারপর আবার কাজ করতে
লাগে। সুমিত্রা ততক্ষণ দেখতে থাকে যতক্ষণ না
ছেলেটা আস্তে আস্তে ঝুলতে ঝুলতে দোতলায় নেমে যায়। ব্যাল্কনির ওপাশের কাজ
বিকেলে হবে।
পড়তি দুপুরে সুমিত্রা কাপড় তুলতে যায় ছাদে । সিঁড়ির
ঘরে ছেলেটা তার আরো দুই সঙ্গীর সঙ্গে ভাত খাচ্ছে। মোবাইলে গান বাজছে, মেঠো বাংলা
লোকগীতি । ‘খানা খাচ্ছ’, জিগ্যেস করে
সুমিত্রা। ছেলেটা একেবারে ছাদের দরজায় বসেছিল, সরে গিয়ে পথ
করে দেয়। সুমিত্রার নাইটির হাওয়া ছেলেটার
গায়ে লাগে। এক মুহূর্ত সে তাকায়, তারপর খাবারে মন দেয়। সুমিত্রা লীলায়িত ভঙ্গীতে ক্লিপ খুলে কাপড় তুলে একটা একটা করে ভাঁজ করে দেওয়ালের উপর রাখে,
তারপর সব তুলে নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে একটু হাসিমুখ করে সিঁড়ি দিয়ে
নেমে যায়।
বিকেলে ছেলেটি ব্যাল্কনির অন্যদিকের কাজ ধরে।
সুমিত্রা বাইরে আসে। রেস্ট করনি? এখনি
কাজে লেগে গেছ? অনর্থক জিজ্ঞাসা, শ্রমিকের দুপুরবেলা সিয়েস্তা দেবার সময় নেই, জানা
কথা, তবুও জিগ্যেস করে। ছেলেটি বলে, কাজ
শেষ করে একবারে রেস্ট করব। সুমিত্রা ঘরে ঢোকে, ঘরের কাজ কিছু
সারে, খানিক পর আবার আসে। তার বুড়ো স্বামী বিকেলের ঘুম
দিচ্ছে। সৎছেলে ফিরবে রাত্রে। বুড়ো জেগে উঠলে বিকেলের চা দিতে হবে, সন্ধেবেলার টুকটাক, তারপর রাতের সবজি রুটি করতে হবে।
বিরক্ত লাগে তার। সারাজীবন বুড়োর সংসারের
ঘানি ঘাটতে ঘাটতেই গেল ।
সে রাঁচির মেয়ে। বাপমা পণ জোগাতে পারেনি, তাই জোয়ান পাত্র
জোটেনি তার কপালে। বাচ্চালাল ভাল চাকরি করত, ডিভিসি-তে
কেরানি থেকে ধাপে ধাপে সেকশন অফিসার হয়েছিল, উপরিও ভাল, ঝাড়খণ্ড থেকে সল্টলেকে
ট্রান্সফার হয়ে এসে সরকারি কোয়ার্টার নিয়েছিল। আসল বয়স তখন পঞ্চান্ন পেরিয়ে
আরো দুএক বছর এগিয়ে গেছে, যদিও অফিসের খাতায় বাহান্ন। তিনটে ছেলেমেয়ে, বড়ছেলে
গ্র্যাজুয়েশন করে চাকরির খোঁজ করছে, ছোটটা সেকেন্ড ইয়ার,
মেয়ে ক্লাস ইলেভেন, এরকম অবস্থায় তার বউ মারা গেল তো সে বিয়ে করল সুমিত্রাকে ।
সুমিত্রা এসে পেল প্রায় তার প্রায় সমবয়সী সতিনপো পিণ্টু, তিন
বছরে ছোট নিকু, আর
বছর সাতেকে ছোট সতিনঝি মুনিয়া। তাদের সব
কাজ করে রাতে বিগতযৌবন বরের কষের লালাগড়ানো ভেজা বালিশের দুর্গন্ধ নাকে নিয়ে,
তার নেতিয়ে যাওয়া পুরুষত্বকে উজ্জীবিত করার প্রচেষ্টাকে সঙ্গত দিতে গিয়ে কোনো আনন্দ
করার অবকাশ আসেনি। যৌবন যাব যাব করছে, তার পেটে বাচ্চাও এল
না। জোয়ান ছেলেদের সামনে সৎমা নিয়ে এসেছে,
বাচ্চালালের মনও শান্তি পায়না, সন্দেহ যায় না।
চোখে চোখে দেখে রাখত নতুন বঊকে। অফিস বাড়ির কাছেই, ছুতোয়
নাতায় বাড়ি এসে দেখে যেত। রিটায়ার করার সময় এগিয়ে আসতে কোনো এক বাবাজির কাছে
দীক্ষা নিয়ে শাকাহারী হয়ে গেল, সৎসঙ্গ, ধর্মকর্ম, পুজোপাঠ বাড়িয়ে নিল, আর বউকে তার নিত্য যোগাড়ের ভূমিকা নিতে হত। আশা, স্বামীর
উদাহরণে নিরামিষভোজনে বউয়ের ও শরীর ঠাণ্ডা হবে, পুজোপাঠে মনে
শান্তি আসবে। পিন্টু চাকরি পেয়ে মাঝেমাঝে মাছ মাংস আনত, বুড়ো
গজগজ করে নিজে খেত না, চাইত সুমিত্রা ও যেন না খায়। সুমিত্রা
খেত, বাচ্চালাল সামনে থেকে চলে গেলে। প্রথম চাকরি পেয়ে
পিণ্টু সুমিত্রার হাতে পঞ্চাশটি টাকা ও দিয়েছিল, বলেছিল রাখ
দেনা, কুছ ভি খরিদ লেনা। ভাগ্যিস বাচ্চালাল দেখতে পায়নি।
কৃতজ্ঞতায় সুমিত্রা পিণ্টুর বিছানা গুছিয়ে
রাখত, বিছানার, বিছানার উপরে ছেড়ে রাখা
এলোমেলো জামাপ্যাণ্টের গন্ধে তার শরীর ঝিমঝিম করত, কেউ
আশেপাশে আছে কিনা দেখে আরো একবার সেগুলো শুঁকে নিত, আহ,
বাপের স্যাতলাধরা গন্ধের সঙ্গে ছেলের গন্ধে কত তফাত, তারপর সেগুলো যত্নে গুছিয়ে রেখে ময়লাগুলো কাচতে নিয়ে যেত। পিণ্টু বাড়ি থেকে বেরোলে সে ব্যালকনি থেকে
তাকিয়ে থাকত, যতক্ষণ না পিণ্টুর চওড়া কাঁধ দীর্ঘ শরীর
রাস্তার ওপারের বাড়িঘরের আড়াল যেত। এর বাইরে হাত বাড়াতে নেই সেটা সে বুঝত, এইটুকু ছিল তার গোপন সুখ । বাকি দুজনের বাইরে যাবার সময় সে ব্যালকনিতে যেত
ঠিকই, কিন্তু ওরা নামতে না নামতেই সে ঘরে ঢুকত।
একই ঘরে শোত নিকুও, সে বেশ পরিপাটি, তার বিছানায়, জামাকাপড়ে সুমিত্রার হাত দেবার দরকার
পড়ত না। তার আর ইচ্ছেও করত না। কলেজের পর নিকু খেলাধুলো ব্যায়াম নিয়ে থাকত। হনুমানজির ভক্ত। মুনিয়া পড়াশুনো করত,
নিজের কাজ না থাকলে টিভি দেখে সময় কাটাত , কিন্তু
ঘরের কাজকর্মে সাহায্য করত না, কোনো কিছু অপছন্দ হলে ক্যাট
ক্যাট করে কথা শোনাত, সৌতেলি বলে খোঁটা দিত। কাজে ব্যতিক্রম
হলে, রান্না খারাপ হলে, রুটি জ্বলে
গেলে বা দুধ উথলে নিচে পড়লে বাচ্চালালও ছাড়ত না। একই ত্রুটি দুদিন দেখলে চড়থাপ্পড়
দিতেও কসুর করত না।
বাচ্চালালের সামনে পিণ্টুর রুমে গেলে চট করে বেরিয়ে
আসতে হত। দুমনিট বেশি হলেই সে চেঁচাতে থাকত, ইতনা দের ওঁহা ক্যা কর রহী হো? পিণ্টু ঘরে থাকলে তার মুখ লাল হয়ে যেত, বাচ্চালালের
জ্বলন্ত দৃষ্টির সামনে সুমিত্রা মুখ নিচু করে রান্নাঘরে ঢুকে যেত।
ওদিকে মুনিয়া বাপ ঘরে না থাকলে ফোন করত, তার ফোন আসতও ওই
সময়, সুমিত্রা কিছুটা অভিভাবকের ভূমিকা নিয়ে এ বিষয়ে জিগ্যেস
করলে বলত, আপকা ক্যা কাম হ্যাঁয়? বুয়াজি
কা ফোন থা, নাহলে কোনো বান্ধবীর ফোন, বলে
কাটিয়ে দিত। বিয়ে হয়ে আসার পর প্রথম প্রথম সুমিত্রা চেষ্টা করেছিল মুনিয়ার মন
রাখতে, মিষ্টি কথা বলে, ওর চুলের যত্ন
নিতে দেখিয়ে দিয়ে, বাচ্চালালকে নিজের জন্য জামাকাপড় না নিয়ে সৎমেয়ের জন্য নেবার কথা বলে, নিজের ভাল
খাবারের ভাগটুকু থেকে মুনিয়ার জন্য বাড়তি
রেখে--- কোনো কিছুতেই সন্তুষ্ট করতে পারে নি। মাঝে মাঝে লুকিয়ে দেখেছে, ফোন করার সময় মুনিয়ার অভিব্যক্তি--- কখনো ফিসফিসিয়ে, কখনো অল্প জোরে, কিংবা অনুনাসিক স্বরে, ঠোট সরু করে চুমো খাবার ভঙ্গিতে, এই ভাবভঙ্গী তার
মনেও বিচিত্র ভাব জাগায়--- তার বয়স, সময়, সবই চলে গেছে এইসব করার, এই জীবনের মত, কোনোকিছুই হয়নি। নিজে হায়ার সেকেন্ডারি পর্যন্ত পড়েছিল মেয়েস্কুলে। পাড়ার
একটা ছেলেকে ভাল লাগত। জাত, ঘরের দিক থেকেও ঠিক ছিল।
আভাসে ইঙ্গিতে ভাবীকে বলেওছিল। কিন্তু
দহেজের জন্য কথা আর এগুলো না। এখন মুনিয়াকে
দেখে হিংসে ও হয়। এক রাতে বাচ্চালালকে এই ফোনাফোনির কথা সে বলে দেয়। বাচ্চালাল
একদিন মুনিয়াকে জিগ্যেস করল, কিসকা ফোন আয়া থা? মুনিয়া থতমত খেয়ে বাপকে কিছু বলতে পারল না । ফোন কো হাথ মত লাগাও। বাপ চলে গেলে মুনিয়া
সৎমাকে এই মারে তো সেই মারে। সৌতেলি অউর সাপ বরাবর---- বলতে বলতে তেড়ে যায়। ঠিক
হ্যায়, ম্যয় তুমহারে পাপাকো বোলুঙ্গী, ম্যয় সাপ হুঁ, মুঝে ত্যাগ দেনা, সুমিত্রা বলে । তুমতো হর বাত হী পাপাকো লাগাতি হো—গজগজ করতে করতে মুনিয়া নিজের ঘরে ঢুকে। অল্পদিনের মধ্যেই সাবধানী
বাচ্চালাল তার জন্য পাত্র দেখা শুরু করে, বিয়ে হয়েও যায়।
মুনিয়ার পর পিণ্টুর পালা। বাচ্চালালেরই ইচ্ছা বেটার
বিয়ে দেয়---চাকরি করা ছেলে, ভাল দহেজ পাবে, ঘরে বউ আসলে সুমিত্রার
উপর নজরদারি করতে হবে না, এটা আরেকটা লাভ, মুনিয়ার জায়গায় আরেকজনের দরকার। বউ এলো পণ নিয়েই, সুমিত্রা
দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পিণ্টুর বিছানা কাপড়চোপড়ের ভার এখন বউয়ের, পিণ্টুর
বেরোনোর সময় ব্যালকনিতে দাঁড়ানোর জায়গাও বউ নিয়ে নিয়েছে, আগে
পিণ্টু পেছনে তাকাতই না, এখন বউকে রোজ টা টা করে। মধ্যে মধ্যে যে বিশপঞ্চাশ টাকা পিণ্টু সুমিত্রার হাতে দিত, তাও এখন বউয়ের।
কাছাকাছি বয়সের জুটি, ছুটির দিনে মাঝেমাঝে দুজনে বেড়াতেও বেরোয়। সুমিত্রার মনটা হু হু করে,
ঈর্ষায়, দুঃখে, হতাশায়।
রান্নাঘরে বউয়ের ছোটখাটো ত্রুটি ধরিয়ে দেয়
কর্কশ গলায়, বউ ও সহজে ছেড়ে দেয়না, সৌতেলি
সাস বলে ঝগড়া করে। পিণ্টু এখন দায়িত্বশীল স্বামী, এক সময়
বউয়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলে। ঝগড়াঝাঁটি বাড়াবাড়ি
হলে হেঁসেল আলাদা হয়ে যায়, একই রান্নাঘরে স্টোভ জ্বেলে
পিণ্টুর বউ রুটি সেঁকে, ডাল
বানায়। আলাদা হেঁসেল হলে রান্নার জিনিষপত্র সবই আলাদা, অত রাখবার জায়গা নেই, কাজেই ঝগড়া বরং বাড়ে। বাপ তখন তাদের নিজেদের ঘরের ব্যবস্থা করতে বলে,
অলগসে চৌকা জলানা হ্যায় তো অপনা অলগ ইন্তেজাম কর লো। এক সময় পিণ্টু
পরিবার নিয়ে চলে যায়, আর এমুখো হয় না। মুনিয়া ও সেই যে গেছে,
আগে মাঝেমাঝে আসত, পিণ্টু চলে যাবার পর আর আসেনা।
বাচ্চালাল রিটায়ার করে ফ্ল্যাট কিনল, ছোট দুকামরার
ফ্ল্যাট। একটা ঘরে নিকু, সে একটা ছোটখাটো চাকরি করে, সকালে বেরিয়ে রাত দশটায় ঢোকে, বিয়ের সামর্থ্য নেই,
তাই বাপের ফ্ল্যাটই তার ভরসা আপাতত। অন্য ঘরে বাচ্চালাল ও সুমিত্রা।
আবাসনে আসার পর সুমিত্রা ভেবেছিল বাঙ্গালিদের সঙ্গে জমিয়ে বন্ধুত্ব করবে, তাই প্রথম প্রথম এখানকার বাসিন্দা
নারীপুরুষ নির্বিশেষে সকলের সঙ্গেই আলাপ করার চেষ্টা করেছে, সকলকেই বলেছে, হামার ঘরে আসবেন, মাঝে মাঝে হোলি দেওয়ালিতে মালপুয়া
দহিবড়া খাইয়েছে, কিন্তু এখানে সবাই খাবার দিনে খেয়ে যায়,
ভাল খাবার জিনিষ রিটার্ন ও দেয়, শুধু গল্প
করতে আসে না। ব্যালকনি থেকে মুখ বাড়িয়ে মাঝে
মাঝে যতটুকু কথা হয়, ততটুকুই। সুমিত্রা মিষ্টি হেসে ফ্ল্যাটের দাদাদের জিগ্যেস করেছে, দাদা, কী করছেন, কেমন আছেন,
দাদারা ভাল আছি বলে সরে
গেছে, ভয় পেয়ে বউকে এগিয়ে দিয়েছে, বাঙালি বাবুরা বড় ভিতু, বেরসিক, এত কাছে পেয়েও সুন্দর হাসির কদর করতে পারে না, মুখ
গম্ভীর করে পালায়।
দুদিন
বিল্ডিঙের অন্য ধার রঙ হয়েছে, সুমিত্রা এর মধ্যে ছেলেটাকে বেশি দেখতে পায়নি। তার যেন দেখার
নেশা পেয়ে গিয়েছিল। জানালা দিয়ে
অল্পস্বল্প হয়তো দেখেছে, কিন্তু সে অবস্থায় কথা বলা যায় না, বাচ্চালাল ঘরে থাকে,
এদিক থেকে অন্য ফ্ল্যাটের জানলাও কাছাকাছি । এরপর দুপুরে একদিন
দেখেছিল, যখন সে সিঁড়ির
ঘরে খেতে বসেছিল। ভাত আর ডিমের কারি।
সুমিত্রা সেদিন ধোঁকার ডালনা রেঁধেছিল, রাঁধতে রাঁধতে
তার মনে পড়েছিল ছেলেটার কথা, আহা, যদি
কোনো রকমে ওকে একটু দেওয়া যেত। সেই চিন্তায় ভাল করে ঘি গরম মশলা বাদাম ইত্যাদি
দিয়ে সে সুস্বাদু ডালনা রান্না করে ফেলল,
ধোঁকার সংখ্যা যদিও বেশি নয়, বেশি সে করতে
পারেনা, রান্না করার সময় বাচ্চালাল উঁকি মারতেও পারে।
ছেলেটাকে পেলে সে বরং নিজের ভাগের গুলোই ওকে
দিয়ে দেবে। দুপুরে যখন দেখল ছেলেটা আজকেও এখানে খেতে বসেছে, এবং একাই, সুমিত্রা দুটো ধোঁকা দিয়ে খানিকটা গ্রেভি
এনে ওকে দিয়েছিল। ছেলেটা বেশ চেটেপুটে খেয়েছিল, বলেওছিল,
‘খুব ভালো হয়েছে।’ সুমিত্রা খুশি হয়েছিল,
ছেলেটাকে খাইয়ে তৃপ্ত হয়েছিল, কিন্তু মনে
ভাবছিল, বেশির ভাগ দিনই তো তার ঘরে ডাল আর রোটি, সঙ্গে বড়োজোর সবজি
ভাজি, আর আচার। বেশি সুস্বাদু কিছু তো সে দিতে পারেনা ।
তার
পরদিন দুপুরে খাবার আগে ছেলেটা এসে ঠাণ্ডা জল চাইল। বাচ্চালাল দরজা খুলেছিল, বলল, উপর মে
কোই নহী হ্যায় ক্যা ? ছেলেটা বলল, সব
ঘর আজ বন্দ হ্যায়। সুমিত্রা বেরিয়ে এলো, বলল, ঠাণ্ডা জল চাই? বলে বোতলটা নিয়ে ফ্রিজের জল খানিকটা
ও খানিকটা সাধারণ জল ঢেলে ছেলেটাকে দিল। যাবার পর বাচ্চালাল বলল, য়ঁহা আ জাতা পানি কে লিয়ে। নলোয়া কা পানী আজকাল নহী পীতে, ফিরিজ কা পানি চাহিয়ে।
সুমিত্রা
মনে মনে বলল, খাড়োস বুড্ঢে।
দিন
পাঁচেক হয়ে গেছে, রঙের কাজ প্রায় শেষের মুখে। সুমিত্রা ছাদে কাপড় তুলতে গেছে। ছাদে সবাই যায়
না, আজকাল আবার কাজ
হচ্ছে বলে ধূলোময়লায় ভর্তি, তাই যারা কাপড় শুকোতে দিত, তারা ও যাচ্ছে না। শুধু সুমিত্রাই প্রায় রোজ ছাদে যায়। উল্টোদিকের ছাদে রিপেয়ারিং-এর কাজের সুবিধের জন্য একটা কল বসানো
হয়েছে, জল পড়ার শব্দ হচ্ছিল। ছাদের দরজা অল্প ভেজানো। সুমিত্রা দরজা অল্প ঠেলে
দেখল, ছেলেটা সেখানে
চান করছে। পরনে শুধু জাঙ্গিয়া, দরজার দিকে পিঠ,
ছেলেটা রঙের খালি ড্রাম থেকে একটা কাটা নরম পানীয়ের বোতলের নিচের
অংশ দিয়ে গায়ে জল ঢালছে। তার সাড়ে পাঁচ ফুটের শরীর, কিন্তু
সুগঠিত, বেশ চওড়া কাঁধ, পিঠ, বাহু, ও উরুর পেশীগুলো জলে
ভিজে যেন আরো স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে।
সুমিত্রা নির্নিমেষ তাকিয়ে রইল। এরকম স্নান করতে কোনো পুরুষকে সে দেখেনি। ছেলেটা বোধ হয় বুঝতে পেরেছিল তাকে কেউ
দেখছে, সে পেছন ফিরে তাকাল। এক লহমায় সুমিত্রার চোখে পড়ল,
তার লোমহীন বুক, সরু পেট, নিচে জাঙ্গিয়ায় ঢাকা ফুলো জায়গাটা। সুমিত্রাকে তাকাতে দেখে সে গামছাটা
জাঙ্গিয়ার উপর জড়াল। সুমিত্রা সম্বিত ফিরে পেল, লাগোয়া ছাদে
গেল । কাপড় তুলে সে আবার কল থাকা ছাদের দরজায় তাকাল। ছেলেটা এবার একটা শর্টস পরেছে,
গা খালি। এখনো সুমিত্রার ঘোর যায়নি। নিচুস্বরে জিগ্যেস করল, চান হয়ে গেল? ছেলেটার চোখে দুষ্টুমির হাসি। এখানে চান করছি---কাউকে বলে দিও না, বৌদি। সুমিত্রার যেন পা চলেনা । সিঁড়ির নিচে নেমে, ঘরে
যেতে ইচ্ছে করছে না। ছেলেটার হাসিতেও যেন কি পৌরুষ, খালি
তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।
ছেলেটা
এবার নিচু অথচ প্রগলভ গলায় জিগ্যেস করল, কী দেখছ বউদি?
সুমিত্রা যেন ঘোরের মধ্যে বলল, তোমায় দেখছি।
তোমার বাড়ি কোথায়?
ছেলেটার চোখে বাচাল হাসি। বলল, জেনে কী হবে?
আমার বাড়িতে যাবে?
যেতাম, সব ছেড়ে যদি
তোমার সঙ্গে যেতে পারতাম।
তাহলে চলে এস।
ফিসফিসিয়ে সুমিত্রা বলল, তাহলে সন্ধেয়
এসো এইখানে, ছাদে।
আমায় মেরে ফেলবার মতলব?
এই হিম্মত নিয়ে মরদ হয়েছ?
পৌরুষে যেন ঘা লাগল ছেলেটার। তার অল্প বয়স, বড়জোর চব্বিশ
পঁচিশ, নারীর ডাকে সে সাড়া দেবে না? এখন
কাজের জন্য বাড়ি থেকে দূরে থাকছে, কোনো বাধা নেই তার।
জিগ্যেস করল, কটায় আসব
বলো?
সাতটায় এস।
আমন্ত্রণ জানিয়ে সুমিত্রা কাপড় নিয়ে নিচে চলে এল।
সন্ধের কাজ একটু আগেই সারল। বাচ্চালাল রোজ সন্ধেয় মন্দিরে যায়, ভজন সৎসঙ্গ
করতে। ফেরে আটটার পর। নিকু ফিরবে রাত
দশটায়। সন্ধ্যার পর ছাদে কেউই আসে না। রাত দশটার পর আবাসনের সিকিউরিটি গার্ড একবার
টহল দিয়ে যায়, ছাদের দরজা, সিঁড়ির লাইট,
গেট সব বন্ধ আছে কিনা দেখে নিয়ে নিজেদের গুমটিতে ফেরে।
সন্ধেয়
চারদিকে আলো জ্বলে উঠেছে, ছেলেটা তাদের আস্তানায় চা খেতে খেতে ভাবে, বউদিটা বেশ ডাঁশা। কিন্তু কী করে যাবে? এখানে রাতের
রান্না তারা ছজন মিলেই করে, দিনের বেলা করে পালা করে।
সে না থাকলে চোখে পড়ে যাবে। বাজারে বা
কোথাও যাবার নাম করে কাটানো যেতে পারে, কিন্তু কাজের সময়ের
বাইরে বিল্ডিঙে ওঠা বারণ। রাতের বেলা তেজালো বৈদ্যুতিক আলোয় মধ্যে চোখে পড়ার
সম্ভাবনা বেশি। আর ধরা পড়লে কাজ তো যাবেই, বদনাম হলে কোনো
কন্ট্রাক্টরই কাজ দেবে না। বউটি যদি বাইরে কোথাও যেতে বলত, দেখা
যেত। দেখি কাল কী বলে।
সুমিত্রাও
মনে হয়, ছেলেটা আসতে হয়তো পারবে না, তবুও সে সময়মত অন্ধকার
ছাদে গিয়ে একবার চারপাশ ঘুরে কিছুক্ষণ
পায়চারি করে। খানিকক্ষণ বসে, আবার দেওয়ালে ঠেস দিয়ে একটু
দূরে লেবারক্যাম্পের দিকে তাকায়। কী যে হয়েছে তার। মাথা কি খারাপ হয়ে যাচ্ছে!
শরীরটা যে কেমন করে, তখন মনে হয় এই ঘর সংসার আর গৃহিণীর
ঠুনকো সম্মানের মুখে ঝ্যাঁটা মেরে যার তার সঙ্গে দুদিনের তরে হলেও চলে যাই,
একবার অন্তত জীবনের স্বাদ চাখি।
তারপর যা হবার হোক। চারদিকে এত তৃপ্তির থালি, কিন্তু
তার ভাগ্যে কি কিছু নেই, কিছুই থাকবে না?
কতক্ষণ
কেটে গেল, বাচ্চালাল চলে এসেছে। দরজার হুড়কো লাগানো বাইরে থেকে, খুলে ঢুকল। সুমিত্রা শব্দ পেয়ে নেমে ঘরে চলে এল।
কঁহা
গয়ী থী?
ছত পর।
ইত্নী রাতকো ওঁহা ক্যা কর রহী থী?
টহল
রহী থী।
শর্ম নহী আতা? ঘর ছোড় কর রাত কে অন্ধেরে মেঁ ছত পর ! কৌন
হ্যায় ওঁহা?
সুমিত্রা বিবর্ণ হয়ে গেল। তার মনের খবর কি জেনে গেছে
?
বাচ্চালালের চোখে তার
ভীতদৃষ্টি এড়াল না। সে ধরেই নিল, সুমিত্রা কাউকে আড়াল করছে। আরো কঠিন গলায়
জিগ্যেস করল, কে ছিল ওখানে ?
সুমিত্রা ধরা গলায় বলল, কে থাকবে আবার ?
কেউ ছিল না।
সালি, ঝুট বোলতী। থাপ্পড় কষাল বাচ্চালাল। তোর
চরিত্রই খারাপ। ছিনাল কঁহীকী।
সুমিত্রা
এবারে শক্ত হল। মনের ব্যাপার যাই হোক না কেন, এপর্যন্ত সে বাস্তবে তো কোনো অপরাধ করে নি।
বলল, যাইয়ে, দেখকে আইয়ে কৌন হ্যাঁয়
ওহা। পেহ্রা দেকে রাখিয়ে। আজ পর্যন্ত অনেক পাহারা তো দিলে, কিছু
তো বের করতে পারলে না।
হ্যাঁ জানি, সালি, তুই কার কার
পেছনে ছোঁক ছোঁক করিস সব জানি।
সুমিত্রার
ও রাগ মাথায় চড়ল। হ্যাঁ, বোলিয়ে, নাম বোলিয়ে ঊনকে ।
বাচ্চালাল
আবার এক থাপ্পড় কষিয়ে বলল, আবার যদি রাতে ঘরের বাইরে একা একা দেখি তাহলে তোর এক দিন কি
আমার এক দিন। সারাদিন মন উড়ুউড়ু, তাই বাঁজা মেয়েছেলেটার
বাচ্চা হল না।
ফ্ল্যাট বাড়ি, খুব বেশিক্ষণ গলা ওঠানো যায় না, লোকনিন্দার ভয় ও আছে, বাচ্চালাল ক্ষান্ত দিয়ে গজগজ
করতে করতে ভেতরে গেল। সুমিত্রা বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে জলের নিচে অনেকক্ষণ ধরে
কাঁদল। মাঝে মাঝে তার আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে না।
মাঝে
মাঝে তার মনে হয়, তার একটা বাচ্চা থাকলে ভাল হত। একটা ছেলে, মেয়ে নয়।
মেয়ে হলে তো সেই তার নিজের মতই পুরুষের উপর সমস্ত সাধ আহ্লাদের জন্য নির্ভর করতে
হবে। যে নিজে কখনো স্বাধীন হয় নি সে মেয়েকে কি স্বাধীনতার পাঠ পড়াবে। বুড়ো বাপ
টেঁসে গেলে মেয়ে মানুষ করাও সমস্যা হবে। তার চাইতে একটা ছেলে হলে তার উপর সে
নির্ভর করতে পারত। তবে তার তো কিছুই হল না, বুড়োর সঙ্গে শুয়ে তার কামনা বাসনা প্রথম থেকেই থমকে
যেত, এখন তো আর ওই কথা ভাবাই যায় না।
পরদিন
ঘরের কাজ করে বাকি সময় সে শুয়ে কাটাল, ছেলেটাকে মুখও দেখাল না। কিছুটা রাগও
হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, বেটাছেলে সবই গদ্দার। আওরতের মান রাখে
না। সুমিত্রা কত ঝুঁকি নিতে যাচ্ছিল, কতকিছু ছাড়তে যাচ্ছিল
শুধু তার সঙ্গসুখের জন্য। সে কোনো চেষ্টাই করল না। তারপর আর কদিন। রঙয়ের কাজ শেষ হলে সে চলে যাবে। আর কোনোদিন
দেখা হবেনা। ভালোই হল, এ কলঙ্ককাহিনির এখানেই পরিসমাপ্তি।
কিন্তু
এ জ্বালা, এই শরীরের, এই মনের বুভুক্ষা মিটবে কিসে। এ জীবনে
তার আর কোনো আশা নেই। বাচ্চালাল বেঁচে থাকতে নেই, মরলেও নেই।
সারা জীবন এই একই ভাবে থাকতে হবে। বাচ্চালাল বেঁচে থাকলে যতদিন ওর গায়ে জোর আছে,
গালি দেবে, মারবে। মরলে পরে সে কোথায় যাবে?
ফ্ল্যাটটা বুড়োর নামে আছে, মরলে হয়তো তার ছেলে
নেবে, সুমিত্রা একা তাদের সঙ্গে লড়াই করে পেরে উঠবে না।
বাপের বাড়ির লোক যখন বিনা দহেজে বুড়োর কাছে তুলে দিয়েছে, তাকে বুড়োর কেনা বাঁদি করে
দিয়েছে। বাপ মা মরেই গিয়েছে, ভাই আছে বটে দুজনে, তারা নিজেদের দরকারে মাঝেসাজে
এখানে আসে বটে, কিন্তু
বাড়িতে নিয়ে যাবার নাম করে না। উলটে বাচ্চালালের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছে,
শোধ হয় নি এখনো। সুমিত্রার পাগল পাগল লাগে। সুমিত্রা ভাবল, না, এদের ছাড়া যাবে না। অল্প হলেও মনস্তাপে ভুগুক
ওরা। সে পরদিন আবার ছাদে উঠল। জানত, ছেলেটা আর আসবে না। কারণ
তাদের রঙের কাজ শেষ হয়ে গেছে এবারকার মত।
সুমিত্রা
ছাদে উঠল, আরোও উপর, ছাদের নিচু দেওয়ালের উপর উঠে বসে পা
দোলাতে থাকল। হঠাৎ সিকিওরিটির চোখ পড়ল । কে? কে? নামো ওখান থেকে--- বলে এগিয়ে আসতে লাগল তারা। সুমিত্রা দু হাত দুদিকে ছড়িয়ে বাতাসকে আলিঙ্গন করতে করতে নিচের দিকে নামতে
লাগল---মহাকর্ষের বলে।