।। সপ্তর্ষি
বিশ্বাস ।।
সপুত্র কৃষ্ণা চৌধুরী (চক্রবর্তী) । ২০ এপ্রিল চলে গেছেন। |
“আমার সঙ্গে ওর পরিচয়ের পাঁচ বচ্ছর পরে আমি ওকে প্রপোজ
করি। তারো কয়েকবছর পরে আমাদের বিয়ে হল…”
– বছরের হিসাব পুণ্যদা ঠিকই বলেছিল। আমার এখুনি মনে পড়ছে না।
“আমি গেছি বিজয়াড়াতে কনফারেন্সে, এদিকে বিএ পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপের শেষ দিন ডিক্লেয়ার হয়ে গেছে। ও
গিয়ে শিবানীর কাছ থেকে ফাইলপত্র
নিয়ে ফর্ম ফিলাপ করল। এবার সই দেওয়ার
পালা। কৃষ্ণা গিয়ে প্রিন্সিপ্যালকে বলেছিল ‘স্যার, ও তো এখানে নেই সই’টা …’ প্রিন্সিপ্যাল
বলেছিলেন ‘এভাবে বলে না’কি? যাও, বাইরে
ফিয়ে নিজেই একটা সই মেরে দাও’
– ওই ফর্ম ফিলাপ হয়েছিল বলেই শেষ পর্যন্ত
আমার বিএটা পাশ করা হয়েছিল …”
বলছিল পুণ্যদা। সারাদিনই – হাসপাতালের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে – ফাইলপত্রের জন্য
দৌড়াদৌড়ির ফাঁকে কৃষ্ণাদির কথা,
তাদের পুরোনোদিনের কথা – এ
সবই বলছিল আর আমার মনে আসছিল কুরুক্ষেত্র যুদ্ধশেষের অর্জুনকে, যে
অর্জুন নিজ গাণ্ডিবোত্তলনে অদ্য অক্ষম কেননা অর্জুনের বিপুল দৈহিক শক্তি মূলত:
দৈবদত্ত এবং কুরুবংশ ধ্বংস করামাত্র সেই শক্তি
অন্তর্হিত। মনে হচ্ছিল যে পুণ্যদা’কে আমি দেখেছি ১৯৯১ সালে, তখনো
যে সত্যিই “হিরো” – সিটিবাসের
ব্যবসায় নেমে নিজেই বাস চালায় কখনো,
কখনো হোস্টেলবাসী আমি আরইসি ক্যম্পাসের
ভিতরে বাস ড্রাইভারকে পেটালে সেই ঝামেলা মিটিয়ে দেয় ম্যাজিকের মতো, কোনোদিন
মতিলাল মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের আড্ডায় এসে আমিসহ আমার আরো দশবন্ধুকে চা
সিগ্রেট খাইয়ে, আমাদেরই সমবয়সী হয়ে আড্ডাদেয় … সেই ৯১-৯২ সালেও পুণ্যদা ‘হিরো’ – পূর্বাহ্ণের
হিরোইজমের কাহিনী তখন ‘মীথ’
– কংগ্রেসি গুণ্ডাদের দিকে, ভোটে
রিগিং-কালে, একা বাঁশ হাতে ছুটে যাওয়া, মেঘালয়ের
গহনগ্রামে ব্যবসা ফেঁদে বসা
… আরো অনেক অনেক অনেক
… আজ তার মুখে
কৃষ্ণাদির কথা শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল
যেন কৃষ্ণাদিই ঐ দৈবশক্তি যার বলে পুণ্যদা তুলে নিয়েছিল প্রকৃত
হিরোর প্রকৃত গাণ্ডিব …
তাহলে কী হবে তখন?
তুমিও কি নির্জীব হয়ে পড়বে কুরুক্ষেত্রযুদ্ধান্তে অর্জুনহেন?
অক্ষম হবে গাণ্ডিব বহনে???
না। তেমনটা হবেনা। হবেনা, কেননা যে শক্তি তোমাকে জুগিয়েছে কৃষ্ণাদি, তা
কোনো “দৈব” শক্তি নয়। তা মানুষী-শক্তি, তা
মানুষীর শক্তি। অর্জুনকে দেবতারা শক্তি দিয়েছিল, গাণ্ডিব
দিয়েছিল নিজ নিজ ধান্দায়। কিন্তু প্রেম
যে শক্তি দেয় তা নিঃশর্ত। নিঃস্বার্থ।
তাই, কাল যদি কৃষ্ণাদি না’ও
থাকে তোমার পাশে, তবু তুমি তুলে নিতে
পারবে গাণ্ডিব কেননা কৃষ্ণাদি তেমনটাই ত চায়।
আমরাও চাই।
আমরা আছি তোমাকে ঘিরে। আমরা থাকব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন