“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০১৭

অবনী চক্রবর্তীর কবিতা

।। নীলদীপ চক্রবর্তী।।

            যারা মগ্নতার সঙ্গে কবিতা পড়েন, এবং অসমীয়া কবিতা জগতের বিশদ খবর রাখেন তাঁদের কাছে অবনী চক্রবর্তী নিশ্চয় একটি পরিচিত নাম। তবে বাংলার মতো ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় অসমীয়া কবিতার পাঠকও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে কমে যাচ্ছে, সুতরাং অসমের অকালে হারিয়ে যাওয়া এই উজ্জল জ্যোতিষ্কটির সঙ্গে দেখা গেল অনেকের পরিচয় নেই।
    
অবনীর সুযোগ্য সন্তান, আমার বন্ধুবর ঋতিক চক্রবর্তীর হাত থেকে পেলাম “অবনী চক্রবর্তীর পঞ্চাশটি কবিতা” (মূল অসমীয়া কবিতার বাংলা অনুবাদ)। এগুলো অনুবাদ করেছেন বাসুদেব দাস।
               কবিতাগুলো পড়তে পড়তে এক অত্যাশ্চর্য ভাবনার সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন কবি । আমাদের অতি পরিচিত সমাজের এক অপরিচিত মুখ দেখালেন । তাঁর কবিতা পড়ার সময় শ্রেণী সংগ্রাম ও বাম রাজনীতির প্রভাব যে কবিকে একসময় রনিত করেছিল তা বোঝা যায়, কিন্তু চেনা বিষয়ের গন্ডি থেকে আমাদের তিনি রাজনীতি দর্শন বিজ্ঞান ইত্যাদির ওপরে যে খেয়ালী কবিতা-বিশ্বটি আছে, সেখানে নিয়ে যান। বর্ণ, জাতি ধর্ম ইত্যাদির অচল ব্যাখ্যার প্রতিবাদে তিনি লেখেন “কার সাহায্যে ওরা যুদ্ধ করে”, সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে লেখেন “ কনসেনট্রেসন ক্যাম্প” এর মত দীর্ঘ কবিতা, লেখেন অবিস্মরণীয় লাইন
                     “কৃষক... তাঁর আশাতেই সূর্য
                       দিনটিকে তুলে দেয়
                       নিত্য চিতায় ...
             

  অবনীর কবিতা পড়তে পড়তে মনে হয় একজন সামাজিক দায়বদ্ধ কবি তাঁর বলিষ্ঠ হাতে আমাদের সমাজকে ধরে নিয়ে যান পরবর্তি শতাব্দীতে মানুষের মতো বাঁচতে। বইটি প্রকাশ করেছে কবিতা প্রকাশন, খরঘুলি, গুয়াহাটি। আমাদের দুর্ভাগ্য 1941 এ নলবাড়িতে জন্মানো এই কবি 12 নভেম্বর 1994 এর সন্ধ্যা পাঁচটায় গুয়াহাটির খরঘুলি বাসভবন থেকে সান্ধ্য ভ্রমণে বেরিয়ে আজ অব্দি আর ফিরে আসেননি !

কোন মন্তব্য নেই: