“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০১৭

মুর্শিদ হে


(C)Image:ছবি














।। অশোকানন্দ রায়বর্ধন।।

লমটা কি বেচে দেব বলো না গো মুর্শিদ হে,
কলমেরই তরঙ্গেতে ত্রিবেণীর ওই ধারা বহে ৷
রত্নাকর তার দস্যু নামটি ঘুচিয়েছে যে কলমে,
কালিদাস হন মহাকবি কলমেরই খোশনামে,
জয়দেব আর পদ্মাবতীর অমরগাথা গীতগোবিন্দ ,
কৃত্তিবাস আর কাশীরাম কলমে ধরেন ছন্দ,
ভারতচন্দ্র দৌলতকাজির আরবি ফার্সির দ্বন্দ্ব যে-
কলমটা কী বেচে দেব বলো না গো মুর্শিদ হে ,
কলমেরই তরঙ্গেতে ত্রিবেণীর ওই ধারা বহে ৷
হাসন রাজা লালনগানে ধর্মাধর্মের নেইকো বাধা,
মন্দির আর মসজিদেতে খোদার সঙ্গে কৃষ্ণরাধা ,
ভেদাভেদ যে সরে গেল তা কী আমি ভুলব হে -
কলমটা কী বেচে দেব বলো না গো মুর্শিদ হে,
কলমেরই তরঙ্গেতে ত্রিবেণীর ওই ধারা বহে ৷
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের মানবতার জয়গান,
নজরুলের সাম্যবাদের উদারসুরে আহ্বান,
জগৎ জুড়ে যে ডাক পাঠায় বাংলামায়ের সন্তান,
নতুন হাওয়ায় মেতে গিয়ে সে সব কিছু ছাড়ব হে-
কলমটা কী বেচে দেব বল না গো মুর্শিদ হে,
কলমেরই তরঙ্গেতে ত্রিবেণীর ওই ধারা বহে ৷
পল্লীকবি জসীমউদ্দিন আর শামসুর রাহমান,
ওই কলমেই রেখে গেছেন বাংলাভাষার মানসম্মান,
বাহান্নর ভাষাশহিদ উনিশের শিলচরে,
জাতিধর্মের ধুয়া তুলে তাদেরও কী ছাড়ব হে-
কলমটা কী বেচে দেব বলো না গো মুর্শিদ হে -
কলমেরই তরঙ্গেতে ত্রিবেণীর ওই ধারা বহে ৷
অন্ধকারে ছাইল আকাশ ভাঙন ধরে নদীর বুকে,
বাতাস যদি ভাগ করতে চাই থাকব কী আর পরমসুখে,
আকাশ বাতাস এই দুনিয়ায় সবই তো তাঁরই দান,
কেউ বা আল্লা কেউ বা গড কেউ বা বলেন ভগবান,
এসব কথা ভুলে গেলে আমরা কী আর বাঁচব হে-
কলমটা কী বেচে দেব বলো না গো মুর্শিদ হে-
কলমেরই তরঙ্গেতে ত্রিবেণীর ওই ধারা বহে ৷
বাউল পূর্ণানন্দে বলে, সহজকথা ভুলে গেলে ,সহজ মানুষ কি আর মেলে ৷
হানাহানি হিংসা ভুলে, দেলের ভেতর বাতি জ্বেলে, ভালোবাসো মানুষে হে-
কলমটা কি বেচে দেব বলো না গো মুর্শিদ হে-
কলমেরই তরঙ্গেতে ত্রিবেণীর ওই ধারা বহে ৷

কোন মন্তব্য নেই: