কালিকার স্মৃতিচারণ করেন
গীতা দে। তিনি বলেন, স্বামীর
চাকরি সূত্রে তাঁকে একধিকবার শিলচরে যেতে হয়েছিল। তখনই কালিকাদের
বাবা-কাকা-পিসিদের সঙ্গে প্রায় আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাঁদের কারো কারো থেকে তিনি শিখেছেন, আবার তাঁদের সঙ্গে
মিলে অন্য আরো অনেককে শিখিয়েওছেন। কালিকারও শৈশবের সঙ্গীত শিক্ষার অনেকটাই তাঁর
কাছে। তাঁদের বাড়িতে গিয়ে বহু সময় তাঁকে থাকতেও হয়েছে, তখন তাঁর কাছে কালিকা এবং
বাড়ির শিশুদের ছিল গল্প শোনার আবদার। বড় হয়ে যোগাযোগ কমলেও যখনই দেখা হয়েছে,
তিনসুকিয়া, গুয়াহাটি বা কলকাতাতে কালিকা সেইসব দিনের কথা স্মরণ করত। তিনি বলেন, সততা
এবং নিষ্ঠার সঙ্গে সাধকের মত কাজ করে গেছেন।
সদ্য গঠিত ব্যতিক্রম
সাংস্কৃতিক মঞ্চের সম্পাদিকা শতাব্দী গাঙুলি সম্প্রতি গুয়াহাটিতে ব্যতিক্রম আয়োজিত ‘ভাষামিলন উৎসবে’ কালিকার
পরিচালিত ধামাইল কর্মশালার অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি একটি ব্রহ্মসঙ্গীতও গেয়ে
শোনান।
সুশান্ত কর ছাত্র জীবনে
ভিন্ন ভিন্ন সংগঠনে থাকলেও এক সঙ্গে করা বহু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্মৃতিচারণ
করেন। গুরুচরণ কলেজে তাঁরা প্রায় একই সময়ে পড়েছেন, কালিকা যদিও তাঁর কনিষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তেন। সেখানেও এক
সঙ্গে বহু ছাত্র আন্দোলন করেছেন, দেয়াল পত্রিকা খড়ম করেছেন, পথ নাটক করেছেন, সেই
সব স্মৃতিচারণ করেন। কলেজের বাইরে কালিকার
সঙ্গে একত্রে কোনো সাংস্কৃতিক কাজকর্ম না করলেও তাঁকে এক দক্ষ তবলাবাদক হিসেবে
দেখেছেন। গণনাট্যের শিলচর শাখার সঙ্গে
কালিকার সংশ্রবের কথা উল্লেখ করে বলেন, কালিকার তাঁর বাড়িতে বা শিলচর সংগীয়
বিদ্যালয়ে অসামান্য সব প্রতিভাসম্পন্ন গুরুজনকে পেয়েছিল ঠিকই---কিন্তু সে যে ছাত্র
এবং সংগঠন করত---সেই এস এফ আই বা গণনাট্য, বা পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো
মেধাবীদের সমাবেশ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেল তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে —সেখান
থেকেও তিনটি গুণের তার মধ্যে সমাবেশ ঘটেছিল। সামাজিক দায়বদ্ধতা,সাংগঠনিক বুদ্ধি
এবং প্রচণ্ড অধ্যয়ন স্পৃহা। অন্যথা ‘দোহার’ এবং আজকের কালিকাপ্রসাদের উত্থান
অসম্ভব ছিল। তিনি বলেন,তাঁর অকালে চলে যাওয়াতে ক্ষতি অনেক হল, বেঁচে থাকলে হয়তো সে
হেমাঙ্গ বিশ্বাসের মতোই একদিন তাঁর অধ্যয়নের ফসলগুলো লিখেও রেখে যেত। কিন্তু সে এক
প্রত্যাহ্বানও রেখে গেল আগামীর, বিশেষ করে পূর্বোত্তরের শিল্পীদের, জন্যে। বহুজনকে
সে প্রেরণা যোগাতেই থাকবে। তাঁকে কেবল জিটিভির শিল্পী বললে খাটো করে দেখা হয়।
সেরকম শিল্পী আরো বহু আছেন, আসামের একজন
হয়ে বাকি ভারত এবং বাংলাদেশের মানুষজনের এতো আপনার জন হয়ে ওঠা কেবল জিটিভির দৌলতে সম্ভব
ছিল না। বরং যে সম্মান এবং দক্ষতা দোহার অর্জন করেছিল,তাতে জিটিভি তাঁদের পরম্পরার
থেকে বেরিয়ে এক বিশেষ ঢঙে মঞ্চ দেবার কথা ভাবতে বাধ্য হয়েছিল। সেই মঞ্চ কালিকাকে হয়তো
আরো বেশি মানুষজনের কাছে পরিচিত করেছে, কিন্তু কালিকা একে ব্যবহার করেছেন লোকগান
এবং শিল্পীদের মানুষের কাছে নতুন করে নিয়ে যাবার জন্যে। এই দায়বদ্ধতার জায়গাটি
বুঝতে হবে। এই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সে ব্যতিক্রম মাসডোর সঙ্গে মিলে আসামে এবং
পশ্চিমবাংলাতেও লোকগান এবং নৃত্যের বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করত।
অনুষ্ঠানে পৌষালি করের গাওয়া গানটি নিচে রইল...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন