(দেশভাগ এবং পরের দশকের কাছাড় সিলেটের প্রেক্ষাপটে রণবীর পুরকায়স্থের এই উপন্যাস ছেপে বের করেছে দিন হলো। ভালো লাগা এই উপন্যাস পুরোটা টাইপ করে তুলে আমার প্রিয় কথা শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানালাম। আশা করছি আপনাদের সবার এটি পড়তে ভালো লাগবে। সম্পূর্ণ উপন্যাসের সংলাপ ভাগটি সিলেটিতে -সে সম্ভবত এই উপন্যাসের সবচাইতে আকর্ষণীয় দিক। আপনাদের পড়বার সুবিধে করে দিতে, ঈশানে এই উপন্যাস ধারাবাহিক ভাবে আসছে। আজ তার উজান পর্বের অধ্যায় তেত্রিশ ---সুব্রতা
মজুমদার।)
তেত্রিশ
বৈতলের মনে
দুর্গাবতীর জন্য হু হু করা এশক বয়ে যায় গাগলাছড়ার পাগলা জলে । বৈতলের একার দুঃখ
ইদানীং উথলে উথলে ওঠে, দুর্গাবতী যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে
দিনদিন । দুর্গাবতী এমন নয়, জাত ধর্মের ফারাক করেনি বলেই
বৈতলের মনে ধরেছে । দুর্গাবতী এক প্রতিকূল পরিবেশে ব্রাহ্মণকন্যা হয়ে মাছুয়া
পাটনির সঙ্গে গাটছড়া বেঁধেছে । পিয়াইন-এর পারে, একা বাড়িতে শ্মশানঘাটের বাড়িতে যখন একা তখন
লুলাও গেছে । যে-রাতে লুলা দুর্গাবতীকে বেইজ্জত
করে, সে-রাতেও তো ছিল রুল আমিন বেজ । গ্রামের মানুষের এতসব ফারাক করার
সময় নেই । এপারে এসেও সব ঠিকঠাক ছিল, কোনও বিদ্বেষ রাখেনি দুর্গাবতী
কোথাও । লুলার বিশ্বাসঘাতকতায় একটা ক্ষত হয়েছে হয়তো, বাকিটা কি বৈতলের প্রতি অভিমান না যম জমিদারের কাছে নেওয়া হিন্দুত্বের
পাঠ । দুখু বছই আপদরা দুর্গাবতীর পাত্তা দেওয়া না দেওয়ার উপর নির্ভর করে না । ওরা
জানে ওদের দোস্ত বৈতল, আর কিচ্ছু জানে না । বৈতল মানেই
সরাসরি, বৈতল মানেই অফুরন্ত আনন্দের
ভাণ্ডার, বৈতল মানে অনেক জানার এক মক্তব ।
সত্যের বড় বিপরীত চলন, মানতে গেলেই আপদ বাড়ে ।
হরিৎবরণের চ্যাড়া জমিদারের সঙ্গিনী হয়েই কি দুর্গাবতীর অধঃপতন । দুর্গাবতীর ইদানীং
খুব বিবিয়ানা বেড়েছে । ধরাকে সরা জ্ঞান করেছে, বৈতলের মুখে মুখে কথা বলছে, দুর্গাবতী আর অভিমানে আঁচল ভেজায় না । বৈতল খুদকুঁড়ো যা-ই হোক রোজগার করেছে কিংবা ডোলের পাওনা নিয়ে
এসেছে তা-ই দিয়ে হাসিমুখে বাড়িয়ে দিয়েছে
কলাইকরা ভাঙা থালায় পঞ্চব্যঞ্জন । বৈতল তার বৌকে দিয়ে কাজ করাবে এমন কাপুরুষ নয়, দুর্গাবতী স্বেচ্ছায় ঠাকুরঘরের লেপাপুছার কাজ
নেয়, আর এখন তো হেডদিদিমণি জমিদার
বাড়ির, কার এত সাহস আছে বলে দুর্গাবতী
কাজ করবে না । বৈতল প্রাণভরে দুর্গাবতীকে কিছু বলতে পারে, কিন্তু বৈতলের বৌকে নিয়ে যে পাঁচজনে পাঁচকথা বলতে ছাড়ে না ।
বইয়াখাউরি থেকে এদেশে আসার পর দুই নামে রিফ্যুজি খাতায় নাম লেখানোর পর বৈতল বড়
ধন্দে আছে । কোনটা আসল কোনটা নকল বেছে বার করতে পারে না । বৈতল নিজের জাতি নিয়ে
ধন্দে আছে, বৈতল নামটা নয় গুরুর নামে পাল্টে
ফেলেছে মন্দ না । কিন্তু সে কে, পাটনি না শর্মা । সে বৌএর স্বামী
না যা স্বাভাবিক তা-ই । সম্পর্কের ধন্দ নিয়ে বাঁচা
যায় না । দুর্গাবতী বৈতলকে ব্যবহার করে তো কোনও ধন্দ, কোনও টানাপোড়েনে নেই । দুর্গাবতী প্রাণের দায়ে বৈতলের সঙ্গে
সমঝোতা করেছে । ব্রাহ্মণ কৈবর্ত বিয়ে করে ধর্মরক্ষার কবচ পরেছে গায়ে, মুসলমানের ছায়া না মাড়ানোর প্রতিজ্ঞা নিয়েছে
। আসলে দুর্গাবতী চাকরির শর্ত মেনে ধর্মাধর্মের পাঁচালি চড়িয়েছে মনে । নিজের
সঙ্গেও মাঝে মাঝে বিদ্রূপ করে । বলে,
--- আছলাম কটার বাবন কেম্পে বানাইল
শর্মা
স্বামী পাইলাম পাটনি, আমার কিতা আর ধর্ম ।
বৈতল সাহস করে স্বামী হতে পারেনি ।
দুর্গাবতীই ওকে বরণ করেছে । কিন্তু অসম বর্ণ, অসম শিক্ষায় স্বামী-স্ত্রী
জীবনযাপন করতে পারেনি । সম্ভ্রমের দূরত্ব বজায় রেখেছে বৈতল । হরিৎবরণ চলে আসার পর
কী থেকে যে কী হয়ে যায়, দুর্গাবতীর ছেঁড়া কাপড়ের ফাঁকে
উঁকি-দেওয়া যৌবন বিদ্ধ করে বৈতলকে ।
কী জানি ঈর্ষা না তেজ । যুবক জমিদারের কুচোখ থেকে স্ত্রীর শরীর বাঁচাতে বাঁচাতে
নিজেই ঘায়েল হয়ে যায় বৈতল । বৈতল ভাবে তারই তো সব, নবীন শহরে নবীনা ঘরণীকে নতুন চোখে দেখে । বৈতল ভাবে শুধু
অসভ্য জমিদার কেন সেও চাইলে সব পেতে পারে, তাদেরও একটি সন্তান হতে পারে । একটি মেয়ে চাই, মেয়েই চেয়েছে বৈতল । দুর্গাবতীকে বলেছে,
--- আমার পুড়ি অইব দেখিও ।
--- তুমি কুনু সব জান্তা নি । পেটর
ভিতরে ঢুকিয়া দেখছ নি । ইতা ভগবানর দয়া । পুয়া অইলে কিতা করবায়, তুমার অউত্ত পুয়া ।
--- অয়, আও কথাও ঠিক ।
বৈতলের ভয় ছেলে হওয়া নিয়ে । নিজেকে
নিয়ে ভয় । ছেলে হলে যদি শয়তানিতে পায়, ছেলে বাপে শত্রুতা হয় । বাপকে ফেলে দেয় গাছমাচা থেকে । দুর্গাবতীর কথায় নতুন
করে ভাবে । না ছেলেকে নষ্ট হতে দেবে না, ভাঙা পথে যেতে দেবে না । মানুষের মতো মানুষ করবে । পড়াশুনা শেখাবে, জজ ব্যারিস্টার না হলেও মাস্টার তো হবে ।
গ্রামে শিক্ষকের বড় অভাব । ভাল ওস্তাদের মনসাপুঁথি শেখার জন্য ভাটির দেশ ছেড়ে কত
কত গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েছে । শেষ পর্যন্ত তো বৈতল সদগুরুর পায়ে মাথা ঠেকাতে পেরেছে রইদপুয়ানি
গ্রামে, পণ্ডিতের দেশ পঞ্চখণ্ডর এক
কাঠমিস্ত্রি বৈতলকে আবার জন্ম দিয়েছেন । গুরুর শিক্ষা এক জীবনে শেষ হওয়ার নয়, বৈতল তার ছেলেকে গান শেখাবে, মনসাপুঁথিও পড়বে ছেলে, কিন্তু গুরমির নাচ শেখাবে না, ছেলের মা পছন্দ করে না, বাপকে নপুংসক বলে অবজ্ঞা করে । গুরুর কথাটাই বৈতল ধ্রুব
মানে । গুরু বলেন,
--- আইমনসার গান শিখতায় করি বাকি
গানর লগে আড়ি নি । আরো কত সুন্দর সুন্দর গান আছে বাংলাত । বৈষ্ণব পদাবলী এক জীবনে
পড়িয়া শেষ করা যায় না । খালি হিন্দু পদকর্তা নি রেবা কত মরমীয়া মুসলিম সাধকে
লেখছইন পদ, হুনতায় নি । হুন, হুন বলেই আর তর সয় না গুরুর । দুকলি শোনাবেনই
শোনাবেন,
‘শিতালং ফকিরে কয় শ্যামরে কালিয়া
প্রকাশিত কর ঘর দরশন দিয়া ।’
গুরুর গানের ভাণ্ডার অফুরন্ত । সারি
গান জারি গান রামপ্রসাদী মালসী থেকে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত তাঁর বিস্তৃত ভ্রমণ ।
বলেন অখন সিনেমার গানও মাইনষে গায় । তিনি বলেন,
--- গান অইল রেবা মনর আয়না, চউখ বন্ধ করিয়াও দেখা যায় নিজরে ।
বৈতল ছেলেকে শেখাবে সিনেমার গান, সায়গলের গান, কাননবালার গান । শেখাবে, ‘আমি বনফুল গো, নাচি ছন্দে কী আনন্দে ।’ সেন্ট্রাল রোডের কালীজয় কবিরাজের বাড়ির ছেলে
মেয়েরা গান শেখায় সঙ্গীত বিদ্যালয়ে । রবি ঠাকুরের গান হয়, ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি কে আমারে নিয়ে যাবি’ শেকানো হয় ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায় ।’ দুর্গাবতী আবার বৈতলের মতো ক অক্ষর গোমাংস নয়, লেখাপড়া জানে । বলেছে ওটা রবি ঠাকুরের গান নয়, এক ফকিরের লেখা গান, লালন ফকির । নামটা ভারি সুন্দর, বৈতলের মনে ধরে । দুর্গাবতীকে বলে, ছেলে হলে নাম রাখবে লালন, লালন পাটনি । উঁহু, দুর্গাবতী বারণ করে পাটনি লেখা চলবে না, কৈবর্ত না, উঝা না এমন কি দাসও না । এখন যে
বৈতলের বৌ এর নামে পদবি । বৈতল দাস শর্মার ছেলের নাম হতে পারে লালনদাস শর্মা ।
বৈতল বুদ্ধি করে দাস শব্দটা ঢুকিয়ে দেয় মাঝখানে ।
মাটিজুরির সাজিদ মিয়ার পাঁচ বেটা
দুই বেটি । দুই বিবি বর্তমান । ছোট তিন ছেলে আর দুই মেয়ে নিয়ে কোনও সমস্যা নেই ।
মায়ের বাধ্য বাপকে ডরায়, মাটির সঙ্গে কথা কয় । একেবারেই
ছোট ছোট । শেষ পাঁচটির বড়টির বয়স সাত, ছোট দুটো এখনও কোলে দুই মায়ের ।
বড় দুই ছেলে একেবারে খোদার অদেখা । বাপকে
ডরায় না, দুই মায়ের নয়নের মণি । এতেই ভয়
ঠিকাদারের, ঠিকাদারের মন পোড়ায় । বারবার যায়
পিরের কাছে, দোয়া চায় । মামুর হাতে চড় চাপড়
খায় বেদম, আর হাসে । গভীর বেদনা হাসি হয়ে
ঝরে মামুর মারে । মিয়া ঠিকাদার যখন মার খায় তখন তার দোয়া হয় । হাতে নাতে যে প্রমাণ
পায় ঠিকাদার, যখন মার খায় পিরের হাতে তখনই তার
অর্থাগম হয়, ঠিকাদারিতে লাভ হয় বিস্তর ।
সরকারি অফিসে সাজিদ আলির বিল পাশ হয় । ঠিকাদার যখন মামুর হাতের মার খায় তখন কাতর
চোখে মামুকে নিবেদন করে তার মনোদুঃখ । বলে,
--- আরো মারো, আমারে মারি ফালাই দেও দাতা । আমার বড় দুইটারে মানুষ করি দেও
। ই দুইটারে ডিগরা দেও বাবাজি ।
‘ডিগরা’ দেওয়া মানে বেঁধে রাখার কথা বলে সাজিদ মিয়া । নাকি অন্য কোনও ইশারা করে, তার মনের কোনও গোপন কথা শোনাতে চায়
সর্বশক্তিমানের প্রতভূকে । পিরের কাছ থেকে কোনও অলৌকিক সমাধান না পেয়ে, মনের ব্যথা মনে নিয়ে ফাটকবাজারে আহমদিয়া
হোটেলেই রাত্রিবাসের সিদ্ধান্ত নেয় সাজিদ, মাটিজুরি একরাত না ফিরলেও কেউ তার জন্য অপেক্ষায় জেগে থাকে না । হোটেলের ঘরে
যেমন একা, বাড়ি ফিরলেও একই । তবে মিয়া
ঠিকাদারও কোনও ভালবাসাবাসির তোয়াক্কা করে না তাই তটস্থ করে বাড়িতে তার উপস্থিতিতে
সবাইকে । সবাই তাকে ভয় পেয়ে এসেছে এতদিন, ইদানীং বড় ছেলে দুটো একটু লাগামছাড়া হয়ে গেছে । বাড়ি থেকে উস্কানি পাচ্ছে সে
বুঝতে পারে সাজিদ । বুঝেও সে অসহায়, কিছুই করতে পারে না, তার হম্বিতম্বিতে ভয় পায় না ওরা দুজন । তাই
তো পিরের কাছে যাওয়া । পির যদি কিছু একটা সমাধান দিতেন, সাজিদের মন খুশিতে ভরে যেত, পিরের পায়ে বেশুয়ার টাকা পয়সা ঢেলে দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছে
সে । সাজিদ মিয়া তাই মনোদুঃখ সন্ধ্যার পর যায় নাগাপট্টির পতিতালয়ে । বৈতল
ঠিকাদারকে আগেও দেখেছে নাগাপট্টিতে, তখন এত ঘনিষ্ঠ পরিচয় হয়নি । তাই
বৈতল এবার নিজেকেই লুকিয়ে রাখে মধুবালার ঘরে ।
মুখোমুখি হলে যে মানী মানুষের লজ্জা ।
এরপরও সাজিদ ঠিকাদার যায় মামুর
কাছে । মামুর হাতে মার খেয়ে হাসতে হাসতে কাঁদে ঠিকাদার । দুখুর হাত ধরে বলে,
--- আমার কজা আছে, ভুল করছি আমি । বাবাজি তো আল্লার অলি, জানইন সব তা উ ।
--- জানলে ভুল করইন কেনে । শুধরাই
লাইন । যাইন না যেন বেজাগাত, সিমেন্টর বদলা বালু মিশাইন না
যেন । বালুর পুল যেদিন ভাঙ্গিয়া পড়ব হিদিন তো ধনে মানে যাইব । তখন কারে দোষ দিবা, আপনার নিজর, না মামুর, না আল্লার । মামুয়ে মারিয়া আপনার
খাইসলত খারাপ কররা না, আপনারে সাবধান কররা । ঠিক আছে, লিল্লা বাড়াই দেইন অখন ।
দুখুটা মহা হারামজাদা । ঠিকাদারের
বেশ্যাবাড়ি যাওয়ার কথা বৈতলের কাছ থেকে শুনে কেমন ঝেড়ে দিল । মামুর মহিমায় যেন সে
জেনেছে । আসলে ঠিকাদার কিছু একটা বুঝতে পারলেও দুখুর ইশারা বোঝে নি । সেয়ানা দুখু তো
বেশ ভাল ভাল কথাও বলতে জানে, দুর্বল মানুষটার উপর খাঁড়ার ঘা
টাও মেরে দেয় কেমন মোক্ষম । দানের টাকা বাড়িয়ে দেওয়ার কথা না বললেই পারত দুঃখী
মানুষটাকে । তবে কাজ হয় । দুখুর কথায় মিয়া ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করে সঙ্গে সঙ্গে । দুখুর
হাতে মামুর পবিত্র অর্থভাণ্ডারে দান দেয় হাত খুলে । গরিব দুঃখীদের দাওয়াত দেয়
বাড়িতে । মোমেন, মৌলবি, পিরদেরও ভরপেট খাইয়ে দেয় । মামু পিরকে তার মুরশিদ মেনে, ভক্ত সেজে পড়ে থাকে । মামুর ছনবাঁশের ঘরটা
কাঠ সিমেন্ট ঢেউ টিনে বেঁধে দেয় । নতুন জিপ কিনে মামুর কাছে আসে । দুখুকে অনুনয়
বিনয় করে মামুকে তার বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য । গাগলাছড়া নদীর পারে সাজিদ মিয়ার নিজ
বাড়িতেও একই ঘটনা পুনরাবৃত্ত । মামুর হাতে মার খেয়ে হাসতে হাসতে দুখুকে বলে,
--- মামুরে জিগাইন না, একটা মসজিদ বানাইতাম নি বাড়ির জমিনো ।
মসজিদ বানানো তো খুব পাক প্রস্তাব ।
না করার কিছু নেই । কিন্তু মামু রাগে, ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে । ঠিকাদার এবার আসল প্রস্তাবটা দেয় খোদার নিজের মানুষকে । বলে,
--- আমার ডেকা দুইটা আমারে মানে না ।
ইতারে মানানি লাগব আপনার ।
মামু আবার হাত উঠাতেই সাজিদ মিয়া
সরে যায় । পিরের বাড়ি তো ধর্মস্থান, ওখানে মার খেলে পুণ্য বই ক্ষতি
নেই । এখানে তার নিজের বাড়িতে মানসম্মানের ভয় আছে, গ্রামের মানী মানুষে এমন মার খাওয়ার অসম্মানকে ভয় সাজিদ
ঠিকাদারের । তাই হাসিমুখে সরে যায় । বৈতলের চোখে চোখ রেখে বলে,
--- কিতা উঝা, মুরগির ছালন কিলা খাইলায় ।
--- কিলা আবার, যেমনে খাওয়াইলা । আপনে অইলা দিলদার ইনসান । আপনার বেপার অউ
আলেদা ।
সাজিদ মিয়াকে একেবারে পছন্দ করে
না, দুখু ওকে চাপে রাখে সর্বক্ষণ ।
তাই বৈতলের অকারণ প্রশংসায় রেগে যায়, বৈতলকে মারে । পিঠে লুকনো চিমটি
খেয়েও যখন হাসে, তখন সে মাথায় মারে চাঁটি । ফিশ্ফিশিয়ে
বলে,
--- অই বেটা পুঙ্গির ভাই, আল্লার লগে বেইমানি করিছ না । আল্লায় কইছইন
যেগু ভালা ইগুরে ভালা কওয়ার লাগি, বাদুয়া ইগুরে অত দিলদার উলদার
কইলে কেনে ।
--- দিলদার কারে কয় অততা করের বেটায়, একটু কইতাম নানি । তর কেনে তার উপরে রিশ আমি
জানি ।
--- কিতা জানছ । তর জানা তো অইল কার
বৌ কিগুয়ে নিল অতা । কোন জমিদারর লগে কোন বৈতলের বৌর লেঙ্গিপেঙ্গি, অতা । আমার তো বেটা বৌ অউ নাই । আমার কিতা
জানতে ।
--- মারিলাইচছ বৌ তে থাকত কেমনে ।
--- মুখ সামলাইয়া মাতিছ কইলাম । ই
বেটা ইগু ঠগ, ভাবিছ না, মামুর ঘর উর পাক্কা করি দিছে এর লাগি মামুয়েও ভালা পাইন ।
তাইন অইলা উপরআলা, তাইন কেনে আইছইন তাইন অউ জানইন ।
সোজা রাস্তাত আনার লাগি বউৎ চড় থাপ্পড় মারছইন, হে ভাবছে উল্টা ।
--- তে আইলা কেনে, তাইন না করলে আমরা আইলাম নে নি ।
--- পিরাকি তুইন বুঝতে নায় । হে ঠগ
অইলে কিতা অইব, তার পরিবার দেখচছ নি । ভালা কইলে
তারারে কইছ । হিগুরে না ।
--- হে আর কিতা খারাপ ক । শিলচর গেলে
একটু আধটু মৌজমস্তি করে, হোটেলো থাকে, চৌদ্দনম্বরো যায় । ইতা হক্কলেউ করে একটু আধটু
ঘরো শান্তি না থাকলে ।
--- তুইন ওতো যাছ, এর লাগি নায় বেটা । ইগু বদমাইশ, আমার বাড়িও তো হাইলাকান্দির ভিচিংচাত । হে
যখন টেম্পুর হেণ্ডিমেন তখন থাকি উ নু চিনি । আমিও ত হেণ্ডিমেন করছি শিলচর
হাইলাকান্দির রউটো, মোহনপুর দিয়া আইত । হারা জিল্লাত
তখন দুই টেম্পু, এক শিলচরর পান্না নাগর, প্রেমতলা সোনাবাড়িঘাট । আর হাইলাকান্দি
মাটিজুরিও বলাই পুরকায়স্থর, আমরা কাকা ডাকতাম, অখন নাই, মরি গেছইন । হউ ভালা মানুষরে ঠগাইয়া হে অই গেল ঠিকাদার, আমি অইলাম চেরাগ জ্বালানির কামলা, মাজারর খাদিম । যত নেকি করলাম মামুর পাওর তলো থাকি সব গেল বরাকর পানিত ।
--- কেনে বে ।
--- কেনে কিতা, তিন বেইমানরে গাইঞ্জা খাওয়াইয়া গুণাও তো কম অইল না ।
--- তুইও খাচনা কেনে হালার হালা, খামকা হুকইন টিপরে কেনে । বচন হুনতে নি ।
লিল্লার বাক্স মারিয়া বেটা ফাক করি দিরে আর গাইঞ্জা না খাইয়া তুই পির অইবে ।
আল্লায় ভগবানে ইতা দেখইন । তুইও একলাখান চুর, হি বেটাও চুর, চুরে চুরে আলি, এক চুরে বিয়া করে আর এক চুরর
হালি ।
--- তুইত বেটা বড় চুর । আমরার সব
চুরির মাল তো তর কাছে উ । তুই কইচছ সব তোর জমিদারর জাঙ্গালও ফালাই রাখচছ, কিছু নছিবালি হাকিমর পুকইরো । অখন তুই নি
হক্কলতা মারি দিচছ কে জানে ।
--- মারন লাগত নায় আর, বছই আর আপদে সব শেষ করি দিছে জানছ না যেনে
তুই ।
সত্যি সত্যি দুখু জানে না কিছু ।
দুখুকে না জানিয়েই বছই কাপড় চোপড় করিমগঞ্জ পাথারকান্দি গিয়ে বিক্রি করেছে । বৈতল
এক পয়সাও নেয়নি, দুখুও নেয় না । বৈতলের কাছে
চুরিটা একটা নেশা, মজাও বটে । বৈতল পেশাদারি চুরির
কলাকৌশল ঝালিয়ে নেয়, নির্লিপ্ত দুখুও বৈতলের মতো সঙ্গ
নেয় । আর আপদ বছই লুটের মাল হাপিস করে । বৈতল যখন দুখুর উপর চড়াও হয় তখন মুখে তাই
খই ফোটে । আবার বলে,
--- তর কথা কইয়াউতো হে আইয়া জমিদার
বাগানো ঢুকে । আমি ইতা বুঝি না নি, বছই ইগু আউয়া, পয়সা পাইলে সব ছাড়ি দেয় । ভাঙা বেড়া ফালাইয়া
হে তো যায় পাথারকান্দি, জানে না বাট্টি বেটায় তার বাড়িত
কিতা করে ।
বছইর মনে রাগ আছে বৈতলের উপর ।
বৈতলের জন্য বছই তার বউকে আনতে পারেনি সঙ্গে । ঠিকাদার সাজিদ আলির নয় একটু বেটিঘেঁষা
বাতিক আছে, বছইর বৌর দিকেও নজর আছে । বছই
এসব নিয়ে ভাবে না, সব পুরুষই অন্যের মেয়েমানুষ
দেখলে চঞ্চল হয়, আর বছই-এর বৌ এর মতো স্বাস্থ্যবতী হলে তো কথাই নেই । পয়সাওলা
লম্পটদের কথায় আলাদা, ধরাকে সরা জ্ঞান করার প্রাথমিক
ধাপই হল নারীত্বের অপমান, সে জমিদার যমুনাপ্রসাদই হোক
কিংবা ঠিকাদার সাজিদ মিয়াই হোক । যম হারামজাদাও বৈতলের ভাঙা ঘরের দিকে দৃষ্টি
রেখেছে সর্বক্ষণ, বৈতল বেরিয়ে গেলেই সে রাজা গড়
গোবিন্দ । এমনিতে তো দুর্গাবতীকে লোলুপ চোখে দেখে সারাদিন । তবে বৈতল জানে তার
বৌকে, দুর্গাবতীকে নষ্ট করার ক্ষমতা
কোনও শয়তানেরই নেই । দুর্গাবতী না চাইলে কিছু হওয়ার নয় । বৈতল এও জানে লুলা
দুর্গাবতীর জন্য মরেনি, বৈতল লুলাকে মেরেছে চোখের সামনে
বন্ধুত্বের অপমান হতে দেখে । দুই বন্ধুতে মিলে ওরা চুরি ধারির অনেক অপকর্ম করেছে
কিন্তু নারীশরীর নিয়ে অপমানজনক কিছু করেনি । বৈতল জানে লুলাকে মেরে সে দুর্গাবতীকে
উদ্ধার করে নি । দুর্গাবতী তার মর্জির মালিক, সে চাইলে লুলার প্রেমিকা হওয়ার কোনও বাধা থাকত না । কিন্তু দুর্গাবতী এখন যদি
জেনেশুনে যমুনাপ্রসাদের সঙ্গে জড়ায়, ঠিক হবে না । বৈতলের ইদানীংকার
সন্দেহ কি ওদিকেই গড়াচ্ছে, দুর্গাবতী যে ঘনঘন এখন
জমিদারবাড়ি যায় । দুর্গাবতী যা চাইবে তা-ই করবে
ঠিক, কিন্তু তাহলে বৈতলকেও তার
ইতিকর্তব্য ঠিক করতে হবে । শয়তানের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে । একা একাই তার লড়াই হবে
দুই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে, একজনের পাপের ভরা শূন্য হলে সে
যাবে তার আপন দেশে । যমুনা যাবে যমের দেশে, কিন্তু আর একজন যে অবধ্য । বৈতল হাজারো প্ররোচনা সত্ত্বেও দুর্গাবতীর অনিষ্ট করতে পারে
না । তাই বৈতলের এই বিপরীত লড়াইএ সে একা, ওখানে কেউ তার সঙ্গী নেই । দুর্গাবতী নেই, দুখু নেই বছই নেই, আপদ নেই । বৈতল ভাবে সে বছইর মতো হলে কী হত, বছইর এত মনের মনকলা খাওয়ার বাতিক নেই । সে তার পেট নিয়ে
ভাবে শুধু দুবেলা ভালমন্দ খাওয়ার জন্য সে সব কিছু করতে পারে । বৌকেও বন্ধক রাখতে
বাধা নেই, কী আর করবে, শুধু দেখবে । ঠিকাদার মানুষটাকে নিয়ে দুখু বৈতলের কেন এত
দুর্ভাবনা ভেবে পায় না বছই, সে জানে বৌকে নিয়ে এলে আরো একটু
খাতির হয় তার । নাহয় একটু তাকিয়ে দেখবে তার বৌ-এর পুরুষ্টু বুক । হাত দেওয়ার জন্য নিশপিশ করবে । দেবে তো
না । বছই তাই বৈতলের উপর রাগ ঝাড়ে । বলে,
--- তোর ভাবিরে ত বেটা চিনছ না, হাজরা বেগমরে দেখনেঅলা অখনও পয়দা অইছে না ।
ছইয়া দেখউক না, বিচি কচলাইয়া মারি ফালাই দিব
বেটিয়ে ।
--- তর কুনু ঘিন্না পিত্তা নাই, অততা জানিয়াও শুওরর জনার বাড়িত আইচছ মাছে
গোস্তে খাইতে এর লাগি ।
--- আইছি তে কিতা অইছে । মামুর লগেউত
আইছি, পিরর চেলা অইয়া আইছি । তুইও
হক্কলতা জানিয়া আচছ যম জমিদারর বাড়িত ।
--- হি কুত্তার বাইচ্চার কথা ছাড় ।
তার বাড়িত আমি কেনে আছি, আমি উ জানি ।
--- তে বুঝি লা আমি কেনে আইছি, আমি জানি ।
--- হে নায় বুঝলাম, দুখু হারামজাদা কেনে আয় । তারেও তো পয়সা দেয়
ঠিকাদারে ।
--- দুখুর কথা দুখুরে জিগা, হে জানে ।
বৈতলের সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যায় ।
এতসব জটিলতা চারদিকে, কোনটা শুদ্ধ কোনটা ভুল বুঝতে
পারে না । সে শুধু অন্যের ভুল ধরে যাচ্ছে, নিজের দিকে ফিরেও দেখছে না । বইয়াখাউরির স্বদেশ তাকে স্বার্থপরতা শেখায়নি ।
মিরতিঙ্গার পাহাড়জঙ্গল আর সুরমা পিয়াইনএর জলহাওয়ার নির্মল পরশে বুকের পাটাও হয়েছে
চওড়া । বড়হাওরের জলহাওয়ায়ও যে কোনও লুকোচুরি নেই । বৈতল চুরি করেছে, ডাকাতি করেছে সরাসরি । নিজের দোষ ঢাকতে
অন্যের দোষ ধরে বসে থাকেনি । বৈতল কখনও অকারণ অন্যের স্তাবকতা করেনি । দুদিনের
জন্য ভরপেট মাছ আর মাংসের লোভে সে কেন ঠিকাদারের প্রশংসা করবে । তাহলে কি লোকটার
প্রাচুর্য দেখে সে হারিয়ে ফেলেছে তার তাত্মসম্মান । সাজিদ মিয়ার উঠোনে পিল পিল করে
ঘুরে বেড়ানো মুরগির বাচ্চা দেখে মাথা ঘুরে গেছে তার । পুকুরের মাছ আর এপার ওপার
নদীর মালিক মানুষটাকে সে তার মাপের থেকে বড় ভাবতে শুরু করেছে । দুখু যেমন জানে
বৈতলও তো জানে মানুষটার অপদার্থতা । জানে তার শয়তানি । নাকি বৈতলের মনেও কোনও
অপরাধ । যম জমিদারের লাম্পট্যকে সে ঘৃণা করেছে অর্থবানের দুরারোগ্য অসুখ হিসেবে ।
যার একমাত্র শান্তির সত্য শুধু বৈতল জানে । নিদানও দেবে সে । সাজিদ মিয়াকেও সে
দেখেছে বেশ্যাবাড়িতে, দেখেও দেখে না, লুকিয়ে থাকে মধুবালার ঘরে । দেশবাড়ির কথার
কথা ‘হাগল বেটির লাজ নাই, দেখল বেটির লাজ’ কথাকে অভ্রান্ত করে এক জটিল নাগরিক দ্বিচারিতার শিকার হচ্ছে
। মুরগির মাংসের লোভ তার আছে । আর এক লোভী, দুষ্ট জমিদার যমুনাপ্রসাদ, যে হিন্দুধর্মের নবজাগরণ নিয়ে
সভা করে, মুসলমান বিতাড়নের কথা বলে পরিবেশ
উত্তপ্ত করে, মুসলমান এলাকায় গিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলে, ধর্মনিরপেক্ষতার বক্তৃতা করে, বৈতল তারও দেখেছে বহুরূপী রঙ । গিরগিটির মতো
ক্ষণে ক্ষণে তার বদলে যাওয়ার লোভী মানসিকতা । বৈতলকেও সেই যমুনাপ্রসাদ ব্যবহার
করেছে । বৈতল যতই বলুক যে তাকে খেলাচ্ছে, দেড়মণি বোয়াল মাছের জন্য দেওয়া টোপ গেলানোর জন্য এসব করতে হয় । না, বৈতল কিছুটা হলেও ব্যবহৃত হয়েছে
যমুনাপ্রসাদের শয়তানির । জমিদারের বাগানে ফিস্টি করার মদ ও মুরগির যোগান তো দিয়েছে
বৈতলই । প্রথম প্রথম বেশ উৎসাহ করে, বাগানের জঙ্গলে তিন ইটের উনুনে
রান্না করে দিয়েছে মাংস ভাত, ঢেলে সাজিয়ে দিয়েছে মদপাত্র ।
প্রফেসার বন্ধুর সঙ্গে খেয়েছে । বৈতলের জন্য রেখেছে মাথা গলা আর ছানামাখা ঝোল, মদের খালি বোতল । বৈতল বলেছে সেদিন, হালা, হালার হালা । এরপর থেকে কলাপাতায় রেখে দিয়েছে নিজের জন্য আগপাত । মাংসের ভাল
ভাল টুকরো । চড়া নেশা হয়ে গেলে বোতলের মদেও জল মিশিয়ে পরিবেশন করেছে । নিজের ভাগটা রেখেছে
ষোল আনা । বৈতল কারো ভাগে ভাগ বসায় না, তবে নিজেরটা নিয়ে কেউ শয়তানি করলে ঠকানোর চেষ্টা করলে বৈতল ছেড়ে দেয় না । তার
বৌ দুর্গাবতীর সঙ্গে ফস্টিনস্টিও বৈতল সয়নি, বইয়াখাউরির বৈতলের ভয়ঙ্কর রূপ এখনও এদেশে কেউ দেখেনি । কিন্তু বৈতল যে দুখুর
উপর ভরসা করে । দুখুর সঙ্গে লড়াই করে, কিন্তু দুখু কোনও দ্বিচারিতা করলে বৈতল সইতে পারে না । তাই দুখুকে সরাসরি
প্রশ্ন করে । বলে,
--- তুই কেনে তার কাছ থাকি পয়সা নেছ, তার গাড়ি চড়ছ, তার বাড়িত থাকছ আইয়া ? হে যদি অত বাদুয়া, তে কেনে ক ।
--- কিতা কেনে ।
--- তুইন হালা কাফের, কিতা বুঝবে কেরামতি । মামুয়ে না চাইলে দুখু মিয়া
কুনুখানো এক পাড়াও দেয় না । সাজিদ মিয়ার নিয়ত খারাপ, কিন্তু হে আল্লার নেক বান্দা । হে আল্লার ওয়াস্তে কিতা না
করে,
--- হুন তে নেক বান্দা অইতে কিতা করন
লাগে,
এক চিত্তে পাচ ওক্ত নেমাজ পড় ।
কালা মাল্লা পড় ভাইরে গোছল করিয়া
জুম্মার নেমাজ পড় সকলে মিলিয়া
ফজরের নেমাজ পড় সাহেবিনীর সহিত
নহে দিবা নহে রাত্র কোরাণের
লিখিত ।
ত্রিশ রোজা কর একদিল-এক-জানে
হরদমে আল্লার নাম জপ মনে মনে ।
যেই জনে মহম্মদের তারিক্ না
মানিবে
কাফের হইয়া সে যে দুজকে যাইবে ।।’
হে হক্কলতা মানে । নাইলে মামুরে পাওয়া নি অত সুজা । হে পুল বানার, নিয়ত খারাপ এর লাগি সিমেন্টো বালু দের বেশি ।
মামুয়ে দোয়া দরুদ দিবা, তারে সোজা করন লাগব ।
--- আর হে যে লাটিয়ামি করে । নমাজ
পড়লেউ নি সব মাফ ।
--- আল্লায় সব দেখরা, সব ঠিক করবা দেখিছ । তুইন অউত্ত একটু আগে
কইলে ঠিকাদার ভালা, অখন কইরে বুরা । কিতা বুঝতাম ক ।
বেটা ইগুরে আমিও দেখতাম পারি না, তার লগে বেশি মাতিও না । কিন্তু
তার কপালো যে অত দুঃখ, তুইন হুনলে কইবে অয় । তার সব
থাকিয়াও কিচ্ছু নাই । জানছনি তার বড় ছুকরা দুইটা বেলাইনো গেছে গিয়া । তারে মানে না, এর লাগি তার আতান্তর । মামুরে দিয়া মুকাবিলা
করাইত আনছে ।
--- কিওর বেলাইন বে । কিওর মুকাবিলা
।
--- মিয়ারে মানে না, বাপ ডাকে না । বড়গু হাই মাদ্রাসা পাশ করিয়া
আর পড়ল না, অখন কবি অইচে । আর ছুটগু সাইকেল
মাস্টর ।
চলবে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন