( দেশভাগ এবং পরের দশকের কাছাড় সিলেটের প্রেক্ষাপটে রণবীর পুরকায়স্থের এই উপন্যাস ছেপে বের করেছে দিন হলো। ভালো লাগা এই উপন্যাস পুরোটা টাইপ করে তুলে আমার প্রিয় কথা শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানালাম। আশা করছি আপনাদের সবার এটি পড়তে ভালো লাগবে। সম্পূর্ণ উপন্যাসের সংলাপ ভাগটি সিলেটিতে -সে সম্ভবত এই উপন্যাসের সবচাইতে আকর্ষণীয় দিক। আপনাদের পড়বার সুবিধে করে দিতে, ঈশানে এই উপন্যাস ধারাবাহিক ভাবে আসছে। আজ তার উজান পর্বের অধ্যায় কুড়ি ---সুব্রতা মজুমদার।)
কুড়ি
বৈতল ভোলে না কিছুই । উদ্বাস্তু পুনর্বাসন
আধিকারিক এড়িয়ে গেলেও কাকাবাবু তাকে নিরাশ করবেন না । বৈতলের মনের কথা শুনে উতলা
হয়ে ওঠেন । বৈতলের প্রশ্নে হরিমাধব ভট্টাচার্যর মনের ভিতরও তোলপাড় শুরু হয় । তাঁর
ছোটখাটো চেহারা ফুঁসতে থাকে । খদ্দরের ধুতির কোঁচা হাতের মুঠোয় ধরে বৈতলের
অসহায়তার সঙ্গী হয় দরদী মানুষ । বৈতলের কাঁধে হাত রেখে বলেন,
--- অয় । কংগ্রেসি হকলে যেতা কইন অতাউ ঠিক । পানি
কাইত কইলে কাইত । কিতা করবায় । এরা কুনু আসল কংগ্রেসি নি । ভালা মানুষ সবরে তো
খেদাই দিচ্ছে পার্টি থাকি । অখন লিগ আর বড়লোক জমিদারউর এরাউ হইলো কংগ্রেস ।
--- কেনে, আপনে তো আছইন ।
--- আমি তারারে ছাড়ি দিছি । তারা কয় আমারে খেদাই
দিছে । দিলে কিতা অইব । আমার কথা তো হুনানি লাগব । সরকার চালার তারা । তারা জাগিয়া
ঘুমার । হক্কলে ঘুমাইরা, আমার লগে তুমরা ছাড়া কেউ নাই ।
--- কেনে, সরকারে হুনতা না কেনে । হুনানি লাগব ।
--- লাগব তো বুজিয়ার । তারা একদিকে এক আইন, আর একদিকে এক আইন করলা । পাঞ্জাবি হকলে কইল
বদলা বদলি করব । ইদিকর সব হিদিকে হিদিকর সব ইদিকে । সবে শান্তিত থাকবা । আর আমরারে
লইয়া অইল খেইড় । বাঙালি হকলরে বুলে পাকিস্তানে ফিরাইয়া লই যাইব । যেলাখান আছিল সব
আবার এক লাখান অই যাইব । হিন্দু রিফ্যুজিরে বুজানি অর নেতাজি আইয়া তারারে লই যাইবা
তারার দেশো । ঘটি বাটি মাটি সব ফিরাই দিবা ।
--- অউত্ত আপনেও কইরা, তে কুনদিন আইতা তাইন । কুনদিন ভাঙত বরগাইট ।
--- কুনুদিন ভাঙত নায় । নেতাজি কুনু আছইন নি ।
নেতাজি নাই কইলে আমারেউ আস্তা রাখব নি । এর লাগি ইতা মাতঅউ মাতি না । আর তান লাখান
অত বড় মানুষ লুকাই থাকবা নি কও । তাইন আইলেউ কিতা, অত শক্তি নি তান, দুই ধর্মরে আবার এক করি দিবা । ভগবানেউ পারতা নায় । ইতা হয় না । অখন কথা অইল
পুনর্বাসন । তুমরা ইদেশো থাকবায় এর লাগি জমি দেখা অর । চা বাগানর বউত জমি খালি পড়ি
রইছে, কাটিগড়া বড়খলাত আছে । তুমি কই
যাইতায় কও ? পাট্টা উট্টা পাইলিবায় । দেওন
লাগব সরকারর ।
--- আইচ্ছা কাকাবাবু, ইয়ত যে শুনলাম বউত জমিন আছে ।
--- ইওত কই রেবা ।
--- ইওত আরি, অউ মাছিমপুর শালচাপড়া শ্রীকোনাত ।
--- অ, তুমিও নি পড়ছ অউ চক্করো ? ইতা সব পাত্থর । ইতাদি বুলে
ভুদান অইত ।
--- ভুদান কিতা ।
--- ইতা কিতা আমি জানি না । মাইনষর, বড় বড় জমিদার হকলে, চা বাগানর মালিকে বাইঞ্জ জমি দান কররা, তারার নাম ফাটের, যে পার তারও ফাটের । ইতাত যাইও না । মধ্যপ্রদেশ যাইরা বউতে দন্ডকারণ্যত
পাত্থরর বাড়িত থাকতা, সুন্দরবনর সাপ পানি আর বাঘর পেটো
যাওয়ার লাগি ।
--- না, আমার জমিন থুড়া অইলেউ অইব, আমার লাগে পানি । দিবা নি ।
--- পানি । ইতো আচানকি মাত মাতলায় । সবর অউ মাটি
লাগে কেউ পানি চায় না । তুমি চাইলায় ।
--- আমি অইলায় পানির পুক ।
--- তুমি কুনু মাইমল নি । তুমি ত শর্মা বাবন ।
--- অখন আর শর্মা কিতা কৈবর্ত কিতা । সব অউ এক, দিবা নি ।
--- দেখ রেবা, জলর জমি তো কেউ নিত চায় না । তুমার লাগি বেবস্থা করতাম পারি
। তারপরে না করিও না ।
--- না করতাম কেনে । কই কইন ।
--- অউত্ত চাতলার আওরো, কাঠলবস্তি দিয়া ঢুকলেউ খাস জমি আছে । পাঁচ কাঠা জমি পাইবায়, আওরর পানিও পাইবায় মাগনা । যত ইচ্ছা মাছ ।
মাছের লোভ বড় লোভ । হরিমাধব কাকাবাবুকে হ্যাঁ
করে দেয় বৈতল ।
এই নিয়ে দেখা দেয় অন্য দুর্যোগ ।
দুর্গাবতীর সঙ্গে অবনিবনা । দুর্গা রাজি নয় আবার অনিশ্চয়ের অতলে তলিয়ে যেতে । আবার
সেই জতিলতা, দুর্গার মন বোঝার চেষ্টা করে
বৈতল । ঠিকই তো, দুর্গাবতী কোনো চাষা মাইমল নয় যে
চাষ আবাদের কাজ করবে মাছ ধরায় সাহায্য করবে, ওর সঙ্গে থাকবে জীবনের দৈনন্দিনতায় । তখন টালমাটাল অবস্থায় সদ্য যুবতি সহায়
ভেবেছে সঙ্গ নিয়েছে । এখন দুর্গাবতীর কোনও অনিশ্চয়তা নেই, নতুন দেশে অনেক বিকল্প নির্ভরতার ঠাঁই আছে তার । দুর্গাবতীর
জীবনে তাহলে এখন বৈতল বাতিল । বৈতল ভাবে, তাহলে দুর্গাকে একা রেখে চলে যাবে । কোথায় যাবে বৈতল । কে আছে তার
হিন্দুস্থানে । আছে আছে, কেউ একজন আছে, কাকাবাবু আছেন । আছেন দুর্গাবতীর কাকাবাবুও ।
যাকে সে ডাকে ‘কবিরাজ মশয়’ । যে – বৃদ্ধ চিকিৎসককে সে জড়িবুটি
পাতালতার যোগান দেয়, হবিষ্যান্ন খাওয়ার লোভে কাটিয়ে
আসে ইটখোলায় একরাত । কিন্তু মানুষটি বড় সোজাসাপটা, কবিরাজি বটিকা বানানো আর চিকিৎসা এছাড়া অন্যজীবন নেই । তবু
তাঁর চেলা হয়ে কিছুদিন থাকতে চেয়েছে, পারেনি, দুর্গাবতীর টানে চলে আসতেই হয় । কবিরাজ মশইয়ের ভাঙাঘরের মেঝেতে
শুয়ে ঘুম হয় না ঠাণ্ডায় । বৈতল মাঝরাতে কাউকে কিছু না বলে চলে এসেছে মেহেরপুর পায়ে
হেঁটে । দুর্গাবতীর ঘরেও কোনও লেপ নেই কম্বল নেই কাঁথাও নেই তবু সে – রাতে দুর্গাবতী দুয়ার খুলতেই ঠাণ্ডা উধাও ।
বোকার হাসি হেসে বৈতল বলেছে,
--- তোমার কাকাবাবুর দোকানো অ শীত । তান তো কোথাও নাই একখান । কাপতে
কাপতে মনো পড়ল তুমার কথা, তুমারও তো কিচ্ছু নাই শীতর কাপড়
। আর অউ মাইজরাইতো দিলাম হাটা ।
--- ভালা করছ । তে কিতা আনছ দেখি শীতর কাপড় ।
বৈতল হাসে । দুর্গাবতীও হাসে । হাসতে হাসতে
কাঁপতে কাঁপতে শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা হয় দুজনের । সেই দুর্গাবতীকে এবার ছেড়ে যাবে
বৈতল । নতুন কাকাবাবুর চেলা হয়ে চলে যাবে উদ্বাস্তু কল্যাণে । কত জায়গায় যায়
কাকাবাবু । নিন না বুঝে ঝাঁপ দেওয়ার অভ্যাস বৈতলের । জলের অতলকে বৈতল চিনে নেয়
ঝাঁপ দেওয়ার পর । তাই রাতের মন কষাকষির পর ভোর হতেই রওয়ানা দেয় কাকাবাবুর বাড়ি
অভিমুখে । কাকাবাবুর বাড়িতে অবারিত দ্বার । বরাক নদীর পারে মস্তবড়ো ভাড়াবাড়ির
বৈঠকখানায় বসেই আছে বৈতল, কাকাবাবুর আর দেখা নেই । ঠিক দুপুরে সূর্য যখন মাথার উপর
তখনই হন্তদন্ত হয়ে বাঁধের উপর থেকে নেমে আসেন কাকাবাবু সদলবলে । সোজা বৈঠকখানায়, বৈতলকে দেখে অবাক । অসময়ে বৈতলকে দেখে প্রমাদ
গোনেন । আসলে তাঁর অভ্যেস, সব কিছুকে সবাইকে অতিরিক্ত
গুরুত্ব দেওয়ার । আদর্শ জননেতার গুণ । তারপর এই অস্থির সময়ে সব কিছু ঠিকঠাক না
চললে তিনি আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন । এতেই বৈতল বুঝে নেয় মানুষটি তার আপনজন । বৈতল হাসে ।
বলে,
--- সকাল থাকি বই রইছি ।
--- সকাল কই, আমি তো নয়টাত বার অইছি । ইস্কুলো গেছি, ডিসিএ চিঠি পাঠাইলা ইস্কুলো, গেলাম তান অফিসো । কথা অইল হাওরর জমি লইয়া । কথা তো ঠিক
অইছে, অখন মন্ত্রী আইলে কাগজ কলম লড়ব ।
--- মন্ত্রী আবার কই থাকি আইবা ।
--- কেনে দিল্লি ।
--- মন্ত্রী তো থাকইন হুনছি করাচিত না
রাওয়ালপিণ্ডিত । যোগেন মণ্ডল নাম নানি ।
--- না বা, হেইন তো পাকিস্তানোর মন্ত্রী আছলা । তানে বান্দি রাখি দিছে অখন ।
--- তেউ কিতা অইব ।
--- কিতা আর অইত, বেটা ভাগিয়া আইছে ইন্ডিয়াত ।
--- তে ত আবার দুর্গতি ।
--- দুর্গতি কেনে ।
--- আবার যদি মন্ত্রী হয় । গরিবর দুর্গতি বাড়ব না
কমব ।
--- আইচ্ছা ইতা বাদ দেও, অখন কও কেনে আইছ । এমনেউ আপনে কইছলা আইতাম ।
--- ভালা করছ, খাইছ নি কিচ্ছু ।
--- খাইছি, কাকিয়ে খাওয়াইছইন ।
কাকিকে দেখে বৈতল অনেকক্ষণ হতভম্ব হয়ে যায় ।
এও কি সম্ভব । এত সাদৃশ্য কী করে হয় । বৈতল জীবনের এক অমূল্য অস্থির সময়ের নিয়ন্তা
সেই কিশোরী কী করে ফিরে আসে । সেই তিনি কী করে আজ কাকাবাবুর ঘরনি । সিলেট
দাড়িয়াপাড়ার পেশকার বাড়ির মেয়ে বুড়ি আজ তার প্রিয়জনের স্ত্রী । প্রাণের ভয়ে দৌড়য়নি বৈতল, বৈতল দৌড়েছে রাগে । পেশকারের কিশোরী কন্যার
কান ছিঁড়ে দুল নিয়ে দৌড়েছে বৈতল । চুরি করার জন্য কানে টান দেয়নি । বৈতলকে যে চাকর
বলার দুঃসাহস দেখায় পুকুরপারের মেয়ে । তারপর থেকেই তো বিক্ষিপ্ত জীবন বৈতলের ।
শান্তিহীন ঘুরে বেড়ানো এখান থেকে ওখানে, সারা সিলেটে । ঘরে ফেরার কথাও মনে পড়ে না । মনে পড়ে শুধু মায়ের ইচ্ছাপূরণ করার
সংকল্প । মনসা পুঁথির পাঠ তাকে শিখতেই হবে । উল্টোপাল্টা ঘুরতে মানুষের অবজ্ঞা
সইতে সইতে বৈতলের শিখে নেয় বড়বিদ্যা । আবার এক মানুষের আদরও পেয়ে যায় পঞ্চখণ্ডর
রইদপুয়ানি গ্রামে । গুরুদেব সৃষ্টিধর ওঝার দর্শন পায় বৈতল বিয়ানিবাজারে । পুঁথি
পড়তে শিখে যায় ক অক্ষর গোমাংস বৈতল পাটনি । কত কত গান শিখেছে বৈতল গুরুর সঙ্গে, কত ভাল ভাল কথা শিখিয়েছেন তার কাঠমিস্ত্রি
গুরু । এদেশে এসে তো গুরুর নামটাই আত্মস্থ করে নেয় এক নিয়তির টানে । গুরুর প্রতি
অবিচারও করেছে বৈতল, নিয়েছে শুধু, দেয়নি একরতিও গুরুদক্ষিণা । গুরুর পঞ্চমী
কন্যা চামেলি ওরফে চায়নাকে প্রত্যাখ্যান করে পালিয়েছে, আর ওমুখো হয়নি । এক দুই তিন করে নারী এসেছে বৈতলের জীবনে
কেউ দূরের কেউ কাছের । প্রথমা দাড়িয়াপাড়ার কিশোরী বুড়ি, দূরের কিশোরীকে তো ভালই লাগত, দূরস্মৃতির মিঠে পরশ নিয়ে কাটিয়ে দেওয়ার মতো । বিপরীত
প্রকৃতিকে নিয়ে এখনও স্বপ্ন দেখে বৈতল । দুঃস্বপ্ন দেখে আঁৎকেও ওঠে । ছাড়ালে না
ছাড়ে এক দুঃসহ পীড়ায় কাতর হয় বৈতল । আর দ্বিতীয়া তার ফিঙ্গাপাখি, বিয়ানিবাজারের পেচকুন্দা, গুরু সৃষ্টিধরের কনিষ্ঠা কন্যা । কথা রাখেনি
বৈতল, নেশার ঘোরে গুরু তার হাত ধরে
কন্যাদান করতে চেয়েছেন, বৈতলের কালো মন শুধু কালো রঙ
বলেই সুমনা কন্যাকে একা রেখে পালায় । আর তৃতীয়া, দুর্গাবতী । দুর্গাবতী তো বৈতলের অর্জন নয়, দুর্গাই বৈতলকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে । দুর্গার
হাতের পুতুল করেছে । তেলে জলে মিশ খায় না জেনেও সে উদ্ধার নেই এককুণ্ডে পড়ে রয়েছে
। তবে এবারও বৈতল তার তেলাল শরীরকে ব্যবহার করেছে, বেরিয়ে যাওয়ার উপায় বের করেছে । দুর্গাবতী থেকে মুক্ত হয়ে
সে চলে এসেছে, মানুষের ভাল করার কারিগর
কাকাবাবুর যোগালি হয়েই কাটিয়ে দেবে বাকি জীবন । কিন্তু বৈতলের জীবন কখনওই তার
ইচ্ছে মতো চলে না । একমুখী হয় না । সব সময় দুফাল হয়ে দুদিকে ছোটে, বৈতল বিভ্রান্ত হয় । সত্য আর মায়ার বিভ্রমে
হতবুদ্ধি হয় । তাই হয়তো পূর্বস্মৃতির আগমন । কাকাবাবু, যাকে সে তার প্রাণপূর্ণ দেহ ভাবছে, যার সে ছায়া, তার সঙ্গে সে কী করে খেলায় মাতে
। কাকাবাবুর কাছে অপরাধী হয়ে সে কী করে পারবে তার সঙ্গী হতে । তাই জোড়হাতে বৈতল
কাকাবাবুর সামনে এসে মিনতি করে বিদায় দেওয়ার জন্য । বলে,
--- যাই গিয়া আইজ্ঞা । আপনারে দেখার খুব ইচ্ছা
অইছিল । দেখি লাইলাম ।
--- যাই গিয়া কিতা । দুপরর খানি খাইয়া যাইবায়
আমার লগে ।
--- ছি ছি, আপনার লগে, কিতা কইন ।
--- কেনে ।
--- আপনার লগে কিতা খাইতাম । আপনে অত বড় মানুষ ।
--- বড় কিতা দেখলায় ।
--- সব নেতা হকলে নেতাগিরি করইন, পয়সা কামাইন । আপনারেউ দেখলাম মাস্টরি করইন ।
ডিসিএ আপনারে ডাকিয়া লই যাইন । আপনার শ্বশুরবাড়ি কিতা সিলেট নি ।
--- অয়, জিলা সিলট, বানিয়াচঙ ।
--- সিলেট টাউনো নায় নি ।
--- না ।
--- দাড়িয়াপাড়ার দাম পেশকার আপনার শ্বশুর নায় নি ?
--- না বা, জাতুকর্ণপাড়াত আছিল তারার বাড়ি । ইস্কুলের মাস্টর আছলা আমার শ্বশুর । অখন নাই, শুনছ নি ভুবনচন্দ্র রায়র নাম । তারা
চক্রবর্তী বাবন ।
--- না চিনি না । কাকির নাম কিতা ।
--- তার নাম বুড়ি । ভালা নাম অরুন্ধতী, অখন তো ভট ।
একই ডাকনামের দুজন মানুষ হতেই পারে । ভাল নাম
জানে না বৈতল । কিন্তু নামের সঙ্গে চেহারার সাদৃশ্য হয় কী করে । বৈতল বিভ্রান্ত হয়
। কোথাও ভুল হচ্ছে । হোক ভুল । কাকাবাবু কখনও ভুল বলেন না । কাকির নাম মিলে গেল
মানুষ মিলে গেল কিন্তু কেউ কাউকে চিনল না, ঘোমটার ঢাকা থেকে কানের ক্ষত দেখা যায় না । তবে সেই ফটর ফটর কথা বলা
কিশোরীকে সঙ্গে আজকের কাকির মুখে কথা খুব কম । বৈতল ভাবে সবার জীবনেই কিছু না কিছু
ভুল থাকে । কে জানে কাকাবাবু না কাকি কে ভুল । দুর্গাবতীর কথাও মনে পড়ে বৈতলের, ছেড়ে এসেও কেন মনটা হুহু করে । এখন যদি আবার
ফিরে যায় শিবিরে কেউ জানবে না বুঝবে না কিছু, দুর্গাবতীও তো জানে না তার পালিয়ে যাওয়ার কথা । এদিকে
কাকাবাবুও দুপুরের খাওয়ার পর ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন । কী করে এখন বৈতল ।
কাকিকে দেখলেই যে তার কৈশোর দুঃখ উথলে ওঠে, নিষ্পাপ কিশোরীর প্রতি অপরাধের পাপ তাকে ঘিরে ধরে । একার দুঃখে বৈতল ভাগীদার
পায় না কাউকে, দুর্গাবতীকেও বলা যায় না এমন কথা
। শুধু বন্ধু লুলাকে বলেছে । ছোট বৈতলের অপরাধের শাস্তি ভোগ করতে দিয়ে প্রাণের
বন্ধুও তলিয়ে গেল পিয়াইনএর জলে । তবে রাগ দুঃখ অভিমান নিয়ে বসে থাকে না বৈতল, জল পাথরের বাধা কাটিয়ে এগিয়ে যায় মুক্তপথে ।
দামছড়া হিলাড়ার পাহাড়ি নদী যেমন পাথরের বাধা পেরিয়ে পৌঁছে যায় গন্তব্যে । তাই বৈতল
ফিরে যাওয়ার কথা বলেও থেকে যায় তাঁর সঙ্গে । বিহাড়া কাটিগড়া ভ্রমণে বেরিয়ে অবাক
হয়ে যান তাঁর ছায়াসঙ্গীকে দেখে । বৈতলের উপর নির্ভর করেছেন দায়িত্ব দিয়েছেন, বৈতলও মনের আনন্দে অবাক মানুষটির সঙ্গে
ঘুরেছে আর দেখেছে ছিন্নমূল মানুষের দুর্দশা । পাহাড়ের জমিতে ঘরবাড়ি হয়েছে জলের উৎস
থেকে অনেক দূরে । বন্যজন্তুর উৎপাতে জখম মৃত্যুও ঘটেছে । মানুষটিকে পেয়ে সবাই দুঃখ
ভুলে যায়, তিনি যেন কল্পতরু, যে যা চাইছে সব পাচ্ছে । ঘর বাড়ি খাওয়া পরা
সব । মাছিমপুর থেকে শ্রীকোনা বিহাড়া কাটিগড়া দামছড়া পর্যন্ত বিস্তৃত তখন পুনর্বাসন
কর্মকান্ড । কাজে যখন রাজনীতির সঙ্কীর্ণতা, ধর্মীয় বাধা এসে দাঁড়িয়েছে কাকাবাবু থেকেছেন অবিচল । অনেক বড় মানুষের সঙ্গে
দেখা হয়েছে বৈতলের । বড় নেতাদের অনেকেই প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছেন, কিন্তু কানে কানে সাহায্যের কথা বলেছেন ।
লিগওয়ালারা যারা জিগির তুলেছিল লাঠির জোরে কাছাড় নেওয়ার তারাই এখন কংগ্রেসের শক্তি
ভরসা । বৈতলের সব থেকে বেশি রাগ ঐ লিগওয়ালাদের উপর । এখানে ক্যাম্প ঘুরে ঘুরে সে
সিলেটে লিগের অত্যাচারকথা শুনে রাগ বাড়িয়েছে । মেহেরপুরে বৈতলের প্রতিবেশী সুধা
দত্তর মুখে তো আগেই শুনেছে শ্রীমঙ্গলের নৃশংসতার কাহিনি । মায়ের কোল থেকে বাচ্চা
নিয়ে ছুঁড়ে ফেলেছে জঙ্গলে । মাধবপুরের বিষ্ণু সাহা এখন কাটিগড়ায় মাটির ঘর বানিয়েছে
। বলে,
--- আমরা তো ভালাউ আছলাম । গণভুটর পরেও ভালা
আছলাম । আমরা ইন্ডিয়াত থাকমু জানতাম । আক্তা কিতা অই গেল । সব বদলি গেল । গাতর তল থাকি লিগ
বার অই গেল । কইল, ভাগ । এক আনা দি এক ভিখারির তফন
কিনলাম । লুঙ্গি পিন্দিয়া, ছিড়া তেনার ভিতরে সোনাদানা যেতা
আছি বান্ধলাম, তাইনও তেনা কাপড় পিন্দলা ।
কুলাউড়া স্টেশনো আইয়া উঠলাম গাড়িত । ইদিকে গলাত আমার হাফানির টান, হায় আল্লা হায় আল্লা ডাক হুনিয়া কেউ কিচ্ছু
কয় না । কুনুমতে আইয়া পৌঁছলাম ভাঙ্গাবাজার । তার পরে তো হরি কাকায় লই আইলা কাটিগড়া
।
বৈতলও মায়ের কাছে মামার বাড়ির গল্প করে ।
কাকাবাবুকে শোনা কথা শোনায় বাড়িয়ে চড়িয়ে । কাকাবাবু বৈতলের গল্পকথাকে আমল দেন না ।
বৈতলের মন খারাপ হয় । বলে,
--- আপনে যেতাউ কইন লিগ আলা হকল ভালা নায় । তারার
লাগিউ আমরার ই লেজারতি । ইখানো আইয়া ভাবলাম হিন্দুর রাজত্ব অইব । ইখানোও দেখি হউ
লিগ ।
--- দেখ রেবা সৃষ্টিধর, দেখার চউখ বদলানি লাগব । মানুষরে আলাদা করলে বাচতায় পারতায়
না । মানুষরে আলাদা করলে রাজনীতি করতায় পারতায় নায় । রাজনিতিত সব মানুষ সমান, সবর কথা হুনন লাগব । সংখ্যাত যে আধার বেশি
হেউ জিতব, ইতা ঠিক নায় । হিন্দু মুসলমান
নিয়া রাজনীতির খেলা অইছে, খেলছইন । গান্ধিও জিতছইন জিন্নাও
জিতছইন । যে যেখানো বেশি, দখল নিছইন । অখন আমরা তুমরা
মরিয়ার । ইলাখান হিন্দু মুসলমান আলাদা আলাদা দেখিও না ।
--- আপনে আমারে চিনছইন না কাকাবাবু, আমি লিগর কথা কইয়ার, মুসলমানর কথা নায় । আমার বন্ধু লুলা, লেংটা থাকি বন্ধু, মুসলমান
। আমার মার মুখো পানি দিছে, আমি তখন কই । বিয়ানিবাজারো
রইদপুয়ানি গাওত থাকিয়া পুথিপড়া শিখিয়ার আর আরি রান্দা বাইশ চালাইয়ার । আমার
গুরুয়েও কইছইন হিন্দু মুসলমান আলাদা করলে মানুষ হওয়া যায় না ।
--- আইচ্ছা রেবা, আমার বুঝার ভুল অইছে । কিন্তু মাইনষে কিতা করত কও, লিগ করছিল একদিন, অখন ত আর লিগ নাই ই দেশো, হে কিতা করত, করের কংগ্রেস, করঅউক । কিন্তু দুষ্ট বুদ্ধি লইয়া তারারে
ব্যবহার করা খারাপ । অতদিন চা বাগানোর নেতা আছলা বাঙালি; অখন সব অই গেছইন হিন্দুস্থানি । কেনে । অউ লিগ আলা হকলরে
দিয়া মুসলমানরে আলাদা করা ওর । ইদিকে হিদুস্থানি দিয়া চা বাগানোর কামলা কামিনরে
আলাদা করা অর । টুকরা টুকরা করি দেওয়া । ই আলি কুলির রাজনীতি বড় সাংঘাতিক রেবা ।
কংগ্রেস কররা । ইতা আটকানি লাগব ।
--- আলি কুলি হকলে ত আর আমরারে দেখতা নায় ।
রিফ্যুজির কিতা অইব ।
--- ছি ছি, তুমি দেখি তিন নম্বর লাগাই দিলায় । আলি কুলি রিফ্যুজি । তেউ আবার কইবায় বাবন
আরো বাড়ব কাইস্ত পাটনি ধুপা । ইলাখান দেখিও না । কত মুসলমান সজ্জন মানুষে নিজর জমি
মাগনা দিলাইছইন উদ্বাস্তু পুনর্বাসন লাগি । হুরমত আলিরে চিন নি । তাইনও চেষ্টা
কররা দেশছাড়া মানুষরে দেশ দেওয়ানির । চা বাগানোর হিন্দুস্থানি নেতায়ও কাম কররা ।
বাগানোর জমি দেওয়ানির চেষ্টা কররা । আসল কথা উদ্বাস্তু পুনর্বাসন অইল এক আন্দোলন ।
আর আন্দোলন চালাইলে চলব । তুমার খিদা নাই খাওয়াইত কে ।
--- আমরার আন্দোলনো দেখিয়ার একজন অউ নেতা । আপনে
।
--- না রেবা । বউতেউ কাম কররা ।
--- আর কররা । সব তেনা ।
--- আইচ্ছা, তুমি বুলে পুথি পড়তায় পার, হুনাইলায় না ।
--- শ্রাবণ আউক, হুনাইমু ।
--- তুমি কার কাছে হিকছ কইলায় বিয়ানিবাজারো ?
--- আমার গুরু শ্রী সৃষ্টিধর উঝা ।
--- তুমার নাম আর গুরুর নামও দেখি এক । তুমার
তানে যেন চিনিয়ার রেবা । তাইন কিতা কাঠমিস্ত্রি নি ।
--- আইজ্ঞা অয় ।
--- হে, উঝাদা তো আমরার পার্টি মেম্বার আছলা ।
--- আছলা কেনে ? অখন নাই নি ।
--- না না, হিকথা কইয়ার না, আমি অউ অখন পার্টিত নাই ।
--- আপনে কমুনিস্টও আছ্লা নি । এর লাগিয়াউ কই ।
--- কিতা কও ।
--- আপনে তো আর রিফ্যুজি নায় । চাকরিবাকরিও করইন
। সুখে থাকতা পারইন, তে কেনে গরিব রিফ্যুজির লাগি জান
দিলাইতরা ।
--- তুমার গুরু বড় ভালা মানুষ রেবা । মন বড় সাফ ।
--- আপনেও ভালা । রইদপুয়ানি গেছইন নি আপনে ।
--- যাইতাম না কেনে । আমার ওতো বাড়ি হনো ।
--- হনো কিতা । কোনগ্রাম ।
--- পণ্ডিতপাড়া গেছনি । অনিপণ্ডিতর নাম হুনছনি ; রইদপুয়ানির আগে ।
--- আমি পণ্ডিত নায় রেবা । আমি অখন জমির দালাল ।
--- কিতা যে কইন ।
--- হে, না তে কিতা । অউ যে অত অত জমি দেখিয়ার, জমিদারর লগে মাতকথা করিয়ার । মাগনা নি । সবরে পয়সা দেওন লাগে, তারপরে তুমরার নামে নামজারি অইত । ইতা দালালি
নানি ।
--- অত জমির মালিক আপনে, তে ই ভাড়াবাড়িত থাকইন কেনে ।
--- দালালি পাইলেউ পাক্কাবাড়ি বানাইমু । লোভ কার
নাই রেবা ; আমিও তো মানুষ ।
--- হাচারির কইয়ার, আপনার ইচ্ছা হয় না নি ইনতনে এক আধ কিয়ার নিজর নামে করি
লাওয়ার ।
--- না অয় না । ই এক নিশা রেবা । নিশা না থাকলে
লোভ অইত ।
--- পরে পস্তাইবা ।
--- পস্তাইতাম কেনে । নিজর লাগিয়াউতো লইয়ার । অউ
যে পনর বিঘার মতো জমি দেখরায়, ইনো আমার ঘর অইব, বড় বড় ঘর হইব বউতটা । আমার পরিবার কুনু কম বড়
নি । তাত আনাইমু, তাত বইব । যুগির কাপড় অইব ইনো ।
নিজে বানাইব, নিজে বেচব । সমবায় অইব ।
--- সমবায় আবার কিতা ।
--- সমান মালিক অইব সব । যতজন কাম করব, থাকব বেচব । লাভক্ষতি সব নিজর । স্বপন
দেবনাথরে দেখছ নি, অউ তালগাছর লাখান লম্বা, তারে কইছি, যারা হাতর কাম জানে তারারে এক করার লাগি । হে ঘুরের ই
কেম্পো হি কেম্পো । মেম্বার অওন লাগব, মেম্বার অইলেউ একখান ঘর আর একটা তাত ফ্রি । কও অইতায় নি মেম্বার ।
--- আমি তো তাতি নায় ।
--- তে তোমার কুনু কাম নাই । অ রেবা বে-আক্কল, তাতি অইলে তাতির ঘরো জন্মানি লাগে না । কাম শিখন লাগে, সব শিখাই দিব স্বপনে । তুমি যে খালি পানি আর পেলইন জালর কথা
কও, বাবন অইয়া কেমনে শিখলায় মাছুয়ার
কাম । অউ যে শিখলায়, অখন যদি খাল বিল হাওর শুকাই যায়, কিতা করবায় । মাছ দেশো উট দুম্বার মাংস
বিক্রি করবায় । বাচার লাগি কাম ।
বৈতলের খুব ভাল লাগে স্বপ্নের কথা শুনতে ।
স্বপ্ন বুনতে । ভাবে, তাহলে তাঁত বুনতেই শুরু করে দেবে
। সমবায়ের সভ্য হয়ে যাবে । কী নাম হবে তাদের সমবায়ের । বৈতল নাম প্রস্তাব করে ‘কাকাবাবু সমবায়’ । স্বপন দেবনাথ মানুষটা দেখতে লম্বা চওড়া হলে কী হবে, সবার কথা শোনে । সবার পরামর্শ গ্রহণ করে ।
বৈতলের কথা অমান্য করে না । কাকাবাবু উট দুম্বার কথা বলে আর এক স্বপ্নের দরজা খুলে
দেন । লুলা বলে আরব দেশের মানুষ বড় দুঃখী, জলের বড় অভাব । গাছগাছালিও কম । মাছ নেই শাকসব্জি নেই । উঠ দুম্বার মাংস খেয়ে
বেঁচে থাকে । লুলা বলে নবীর দেশ আরবে কোনও দুঃখ নেই । আরবে আছে নবীর আপন দেশ মক্কা, মদিনা, জমজম । বৈতল মনে মনে মক্কায় যায় মদিনায় যায় শাহজালালের আপন দেশ এমেনে যায় ।
বৈতলের মনের আর একটি সুপ্ত স্বপ্ন হলো ঢাকাদক্ষিণের ঠাকুর মহাপ্রভুর কর্মস্থল
নবদ্বীপ দর্শন, গুরুদেব সৃষ্টিধর ওঝাকে যে বৈতল
কথা দিয়েছে নিয়ে যাবে । আবার এক নতুন প্রভুর স্বপ্নে এখন বিভোর হয় বৈতল । এমন সব
বড় বড় মানুষের স্বপ্নে বৈতলের চোখ রাখা, বৈতলের তীর্থ দর্শন । তবু এককথায় সেকথায় বৈতল নেড়ে চেড়ে দেখে তার নবীন প্রভুকে
। বলে,
--- আপনে কেনে ঘরবাড়ি ছাড়িয়া বাইরে বাইরে ঘুরইন । খালি মাইনষর কাম করইন । আপনারওনি
বাড়িত অশান্তি ।
--- তুমি কিতা রেবা বৌ বেটির লগে ঝগড়া করিয়া
আইছনি । ছি ছি ছি, তুমি অখন অউ বাড়িত যাও ।
--- আমার কথা পরে অইব, আপনে কেনে সোনার সংসার ছাড়িয়া পথে পথে ঘুরইন । আপনার কিওর
দুঃখ ।
--- ধুর বা । সবে কুনু দুঃখ কষ্টর লাগি নি কাম
করে । সুখর লাগি আনন্দের লাগি করে । খালি নিজর নিজর ভাবলে অইব নি । সবর লাভ দেখন
লাগব ।
--- আপনেও লাভ দেখইন নি ।
--- দেখি নানি তে । তুমরার লাভ অইলেউ আমার সুখ ।
তুমরার মুখর হাসি অউ আমার বুকর বল । আর কিতা লাগে ।
--- আপনার বাড়িত ত চাইর পুয়া মাইয়া । তারারে
দেখইন না কেনে । তারা তো ছুট ।
--- দেখি না কে কইল । তারার মা আছইন ।
--- তাইনও মাস্টরি করইন ।
--- কাম না করলে কে খাওয়াইব ।
--- বাইচ্চা মানুষ করবা কেমনে ।
--- মা ভালা অইলে বাইচ্চা মানুষ হয় এমনেউ । আমার
পুয়াপুড়ি ভালা । তারার মাও ভালা ।
--- অয় আমরার ছিলেটি কথাত আছে, তামাকাসা মাজলে চিকন, লোহা চিকন তায়, আর ছাওয়াল চিকন মায় । কাকিরে যে একলা ছাড়িয়া আইন, আপনার কষ্ট হয় না ।
দিনের
শেষে যে-প্রশ্ন বৈতল কাকাবাবুকে করে, সে-কথার জবাব
যে তার কাছেও নেই । দুর্গাবতীকে ছেড়ে এসে তার মনেও যে কষ্টের পাহাড় । নিশ্চুপ বৈতল
তাই নিরুত্তর কাকাবাবুর বেদনার্ত মুখে তাকিয়ে এক দূরান্তরের টান অনুভব করে মনের
কোনে । উড়ে যায় পুঁথির পাতা, নতুন অধ্যায়ের ভিতর তখন তার
পথচলা । সন্ধ্যার অন্ধকারে আবার শুরু হয় তার পথ হাঁটা । পুরনো পথ চলতে চলতে ফিরে
আসে আবার দুর্গাবতীর কাছে । কাকাবাবু চেলাগিরি শেষ হয় মাঝপথে । আবার ক্যাম্পের
বাঁশবাড়িতে কিছুদিন । তারপর হরিৎবরণে পাকাপাকি ।
চলবে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন