।। আলি ইব্রাহিম।।
জন্মদিনকে উদযাপন করে নিজের জন্মের
উপলব্ধিই যখন পাওয়া গেল না, তখন
এ উদযাপনের কোন মানেই হল না, বরং
নিজের জন্মদাত্রী মায়ের সেই অসহ্য যন্ত্রণাকে উপহাস করা হল।
যারা খুব ঘটা করে জন্মদিন পালন করেন, তাদের জন্য বলতে চাই তারা একবারও কি
তাদের মায়ের কাছে গিয়ে বলেন? "মাগো
আজকের দিন তোমার আমার সবচেয়ে স্মরণীয় দিন, যান তুমিই আমায় ৯ মাস ১০ দিন পেটে রেখেছ,
লালন পালন করেছ অনেক কষ্ট করে! আর আজই তো সেই দিন যেদিন তোমার
মাধ্যমে আমি এই দুনিয়ার আলো দেখেছি, আমার
সেই জন্মের মুহূর্তের মৃত্যু যন্ত্রণার মতো যন্ত্রণা তোমার
মনে আছে নিশ্চয়! আমার সেদিন বোঝার ক্ষমতা ছিল না তোমার সে যন্ত্রণা। আজ বড় হয়ে বুঝতে পারছি, আমার জন্যই তোমাকে এ যন্ত্রণা ভোগ করতে
হয়েছে। এর জন্য তো আমিই দায়ী মা! আমি না আসার হলে তোমার
কি সে যন্ত্রণা ভোগ করতে হতো! তবুও আমি এসেছি তোমায় দুঃখ কষ্ট দিয়ে। আমি আজ চির ঋণী তোমার কাছে, আমাকে ক্ষমা করে দিও মা। জানি আমি তোমার
এই ঋণ সারা
জীবনেও পরিশোধ করতে পারব না,তবুও
কথা দিচ্ছি আমি তোমার মুখে হাসি ফোটাব মা। আমার চেয়ে কাছের কেউ আছে তোমার! আমিই তোমার থেকে। এ কি তুমি
কাঁদছ মা!
কিন্তু তোমার মুখে তো আমি হাসি দেখতে চাই, হাসি
ফুটাতে পারলেই তো আমার জন্ম নেওয়া সার্থক
হবে, শুধু এটুকুই করতে দিও, যেন তোমার
মুখে হাসি ফুটাতে
পারি, তখনই তো তুমি আমায় জন্ম দেওয়াটা তোমার জন্য সার্থক হবে মা"।
আমার কাছে জন্মদিন উদযাপন এর চেয়ে বেশি
কিছু আছে বলে মনে হয় না, সেই
জন্ম নেওয়াটাই
তো তখন সার্থক হবে, যখন বড় হয়ে মা-বাবার
মুখে হাসি ফোটাতে পারব। আসুন না নিজের
জন্মদিনটাকে এভাবে উদযাপন করি, নিজের
জন্মদিনে মা কে নিয়ে একটু
ভাবি। যিনি জন্ম দিয়েছেন,
মায়ের মুখে একটু হাসি ফোটাই। হাসি তামাসা না করে মায়ের কোলে মাথা রেখে নিজের জন্মের
উপলব্ধিটা মায়ের সাথে ভাগ করে নিই। মা'ই
যখন জন্মের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, তাই
দিনটি তো মায়ের জন্যই তাই না! মা তো আমার ধন দৌলত টাকা পয়সা কিছুই চান না
নেন না, আমাকে নিয়ে একটু খুশি থাকতে চান,
সুখী হয়ে বেঁচে থাকতে চান, হায়! মা কি জিনিস, কেউ মা না হলে জীবনেও বুঝতে পারবে না।
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যারা জন্মদিনে
হাসি তামাশা মদ খাওয়া গান গাওয়া হাস্য মহোল্লাস করা কেক কাটা দামী কাপড় পরা ইত্যাদি করে
বিশেষ দিনটিকে সারা বছরের জন্য স্মরণীয় করে রাখেন। আসলে জন্মদিনে যা কিছুই করা
হয় তা ত ক্ষণস্থায়ীই হয় তাই না? একটু পরে সব শেষ। কিন্তু দিনটাকে যদি বিশেষ দিন হিসেবে দেখা
যায় তাহলে দেখতে
পাই এই দিনে মায়ের অবদানই সবচেয়ে বেশি, তার
জন্যেই তো এই দিনটা বিশেষ। যারা নেহাতই উৎসব মনে
করে দিনটিকে উদযাপিত করেন, কখনোবা
কেউ বাইরে গিয়ে সারা
রাত ধরে পার্টি করেন, বার্থডে সেলিব্রেশনের নামে, তারা কিন্তু আসলে তাদের মা'কে
মিস করছেনই, মা ঘরে ঘুমচ্ছেন অথচ
তার জন্ম দেওয়া ছেলে সকাল অবধি নাকি আজ তার পাশে নেই।
তাই আমি মনে করি জন্মদিনটা আসলে এই দুজনেরই
মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, উৎসব
হোক সেলিব্রেশনের, মা সন্তানের মধ্যেই আবেগিক হয়ে
থাকবে সারা বছরের জন্য স্মরণীয় হয়ে। মা ও সন্তানের এই অটুট বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করবে বছর বছর ধরে। তখন আর কোন মা'কেই বৃদ্ধাশ্রম দেখতে হবে না, বাবাকে তো নয়ই। খুবই পরিতাপের বিষয়, বার্থডে সেলেব্রেশনের নামে আমরা মা'কে বিশেষ পাত্তা দিই না। মিথ্যে কথাও বলি,
এই একটু আধটু ফর্মালিটি করেই শেষ। বাকিটুকু নিজের জন্য। তাই ধিক সেই মানব সন্তানকে যে জন্ম
নিয়ে জন্মদাত্রী মায়ের কথা ভুলে নিজের জন্ম নেওয়াটাকে একটি উৎসব মনে করে, তারা ত জন্মদিনের মানেই বুঝল না।