“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০১৭

আলো-ছায়া


।। অধিষ্ঠিতা শর্মা।।

(C)Image:ছবি
















মেঘ জমে জানালার কাঁচে ভীষণরকম
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টিও নামে,
ভিজিয়ে দেয় সব ক্ষত।
অজ্ঞাতবাসের আস্তাকুড়ে লুকিয়ে থাকে আলোর জখম-
ফাঁকা স্টেশনে রোজ আমার অপেক্ষা করে কেউ
শেষ ট্রেন আসা অব্দি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে,
তবু সে পায়না মনের খোঁজ।
শেষ ট্রেনে মন ফেরেনা বাড়ি
সিলিং ফ্যানে ঝুলতে থাকা নিজের প্রতিচ্ছবি -
প্রেতছায়া ভেবে আঁতকে উঠি হঠাৎ
বুকপকেটে যত্নে রাখা শেষ চিঠিও
আজ অন্তিম নি:শ্বাস নেয়,
শাশ্বত রাত্রির কাছে নিদারুণ সমর্পণে।

ধূসর কাব্য

।। অধিষ্ঠিতা শর্মা।।

(C)Image:ছবি














থে যেতে যেতে এখন আর
হোচট খাইনা আমি
তোমার করুণ বিদায়স্পর্শ
ম্লান আজ শিউলির ছায়ায়।
মাঝে মাঝে কুয়াশায় ছেয়ে যায় পথ
মহুয়াবীথির পরপারে চাঁদ ও দেখায় বিষন্ন বিধুর।
কুয়াশার ঝাপসা আবেশ অতিক্রম করে
আজও রক্তিম হয়ে ওঠে তোমার মুখ
তীব্র আঘাতের মত।
স্মৃতিভ্রম ঘটলেও কিছু দু:খ থাকে নিতান্ত অবুঝ,
নিজ উপস্থিতি জানান দিয়ে যায়
শব্দহীন মুহ্যমান পৃথিবীর কবরের পাশেও।

বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭

অসময়

।। মধুমিতা নাথ।।
























বাপ -----
নাহি সুনলি বটেক
ইত্তবার কইরে তুকে চিল্লা চিল্লা কে ডেইকেছিলুম
নিসুত খাঁ খাঁ মাঠের বুড়া বটগাছটায় পক্ষীগুলান ঝটপটাইছিলস মুর মত ----
হাত পাওগুলান ইক সময় অসার হই গেলস ...

ঐ বাপ -----
তু মুকে ইত্ত নাজুক কিনে বানাইছিলিস !
গতরে তুর মতো মর্দাঙ্গি নাহি দিলিস ,
জনম দিলি , বেইচে থাকার জুর নাহি দিলি গ ...

ভাইকে ভইষের দুধ পিলাইছিস ,
ফুটবল খিলাইছিস , কুস্তি আখড়ায় পঠাইছিলিস ...
মুর লাগি তুর ঘরে দুধ নাহি ছিলস !
মুই ফুটবল খেলতে চেইয়েছিলুম ,
কুস্তি ভি লড়তে সাধ ছিলস গ
নাহি দিলি বটেক , বুললি ----
"ইটা মাইয়া মাইনষের কাম নাহি আছে" ....

ঐ বাপ ----
তু মুকে বেটা বুইলেছিলিস ,
লেকিন বেটা নাহি বানাইছিলিস !
ভগবান ভি মুকে বিটি বনাইল
তু ভি মুকে বিটি বনাইয়ে রাখলি গ ...

ঐ বাপ -----
তু জানিস ন
বিটি হওয়া বড় দুখ আছে রে
ই হমার গতর আজ হমার শত্তুর হইল বটেক !
তু নাহি দেখলি , তুর বিটির চুখে জল নাহি ছিল ,
আগুন ছিল রে ----- আগুন !
কত্ত খুন ঝইরে গেলো ,
দাগ আভি ভি নাহি মিলাইল ...

ঐ শকুনটা যখন বুকের মাংস খুবলেছিলস ,
মুই কান্দি নাই
মুর বুকে বাতাস আটকে ছিলস
শেষবার তুকেই ডেইকেছিলুম

ঐ বাপ ------
কিনে নাহি সুনলি ,
মুই কি দূষ কইরেছিলুম !
শুধু ত ভালো বেইসেছিলুম , ভরোসা কইরেছিলুম ...
যেমন তুকে কইরেছিলুম
মুই নাহি বুইঝেছিলুম রে
ঐ শয়তানটার মর্দাঙ্গিতে কুনু দরদ নাহি ছিল !
কিবল বিষ ছিলস গ ---- বিষ ...

ঐ বাপ -----
মুর নিথর গালে ইকবার তুর আদর বুলাই দে
তুর শেষ আদর ,
আর ছকল বাপগুলানরে বুইলে দে ----
"বিটিয়া কো ভি মরদ জেইসে বনাও , মুকাবিলা সিখাও ,
লড়তে সিখাও , বেঘোরে মরতে নাহি , বাঁচতে সিখাও ..."।।

                 ----------------//-----------------

উৎসর্গ : আমার শহর ধর্মনগর কে ----


কবিকে হুমকি দিলে













।। অর্পিতা আচার্য।।

বিকে হুমকি দিলে গণধর্ষণের
কবরে কান্নার শব্দে উলুধ্বনি পড়ে -
মৃত সব নারীদেহ সরে সরে শোয় l
শীতল মাংস থেকে টুকরো টাকরা
তত্ত্ব তালাশ, ওরাও পাঠাবে বলে
ঠেলাঠেলি করে কবির হাতের
কলম থেকে ফোঁটা ফোঁটা লাল রক্ত
আবিরের মত লেপ্টে যায়
সেইসব মৃত মেয়ে মানুষের খোলা পেটে

ঘৃণার সন্তান হয়ে জন্ম নেয়
শহর পেরিয়ে যত পাহাড়ে,প্রান্তরে !

হারিয়ে গেলে

















।।  সুমন দাস।।



কলা ফেলে আমায় তুমি,
কোথায় হারিয়ে গেলে।
হৃদয়খানি মোর পুড়িয়ে গেলে,
ভালোবাসার অনলে।।
চলে যাওয়ার যদি ইচ্ছে ছিল,
কেনই বা এসেছিলে।
আপন করে মোর মনের ঘরের,
দখল কেন নিলে।।
চুপিসারে আজ কেন চলে গেলে,
আমার থেকে দূরে।
কালোমেঘ তাই ছেয়ে গেছে মোর,
মনের আকাশ জুড়ে।।

আমার কথা ভুলে তুমিও কী গো,
রয়েছ অনেক সুখে। 
নাকি নীরবে নিরালায় বারিধারা,
ঝরাচ্ছ দু-চোখে।।
 
যেখানেই থাক তুমি ভালো থাক,
এইটুকু করি কামনা।
নীরবে বসে সহ্য করে নেব আমি,
ভালোবাসার যন্ত্রণা।। 


অসমে পানীয় জলে বিষ এবং রিভার্স অসমোসিস ফিল্টারের উপযোগিতা




।। রজত কান্তি দাস।।
        প্রায় সাত আট বছর আগে আমার স্ত্রীর এক নিদারুণ অসুখ দেখা দেয়। কিছু খেলেই পেটে গ্যাস হয়ে হাঁসফাঁস করতে থাকে। শুধু বলে মরে যাব আর বাঁচব না। মেয়েদের ডেকে ডেকে শেষবারের মতো দেখতে চায়। ভয়ানক অবস্থা।
 
           আমি আমার সামান্য বৈজ্ঞানিক বুদ্ধি দিয়ে বুঝতে পেরেছিলাম যে পেটের মধ্যে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস তৈরি হচ্ছে এবং এই গ্যাস রক্তের সঙ্গে মিশে গিয়ে হিমোগ্লোবিন থেকে অক্সিজেনকে শুষে নেওয়ায় অক্সিডেশনের অভাবে প্রচণ্ড অস্বস্তি হয় এবং মনে হয় এখনই মরে যাবে। আমার পাড়ার একটি ফার্মাসিতে খবর দিলে ওরা এসে স্যালাইন দিয়ে যেতো এবং কিছু সময়ের মধ্যেই আমার স্ত্রী স্বাভাবিক হয়ে পড়ত। তবে এই সমস্যা প্রায় নিত্য হয়ে পড়ে। কয়েকবার হাসপাতালেও ভর্তি করানো হয়েছে।

           আমি ওর চিকিৎসার জন্য গুয়াহাটির হেন স্পেসিয়েলিস্ট নেই যাকে দেখাই নি। গাদা গাদা টেস্ট রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এরপর ওকে নিয়ে ব্যাঙ্গালুরুতে গিয়ে মনিপাল হাসপাতালে একজন বিখ্যাত গ্যাস্ট্রো এন্টেরোলজিস্টকে দেখাই। তিনি নানা ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ঔষধপাতি দেন কিন্তু কোন কাজ হয় নি। এর পর আমি ওকে নিয়ে যাই হায়দ্রাবাদের এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব গ্যাস্ট্রো এন্টেরোলজি হস্পিট্যালে। সেখানের ডাক্তাররা নানান ধরণের পরীক্ষা করান এবং আমাকে জানান সমস্ত রিপোর্টে সব কিছু স্বাভাবিক আছে তাই কেন যে এরকম হচ্ছে তা তারা বুঝতে পারছেন না। শেষ পর্যন্ত কিছু হজমের টনিক দেন যা আমি কিনি নি।

           আমি একটা জিনিসে কনফার্মড হলাম যে ওর শরীরে কোন সমস্যা নেই। অতএব সমস্যা বাইরের। তাই গুয়াহাটি এসে অ্যাকুয়াগার্ড কোম্পানির ডিলারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম যে ওদের কাছে জলের সব চাইতে ভাল রিভার্স ওসমোসিস ফিল্টার কি আছে। ওরা জানালো এমন একটা ফিল্টার আছে যেখানে রিভার্স ওসমোসিসের সঙ্গে আলট্রা-ভায়োলেট ট্রিটমেন্টেরও ব্যবস্থা আছে। এই ফিল্টারের সমস্ত ফিচার পড়ার পর বললাম যে এর সঙ্গে আয়রন ফিল্টার ও হেভি মেটাল ফিল্টার আলাদা করে লাগবে। ওরা জানালো আছে এবং সর্বমোট আঠারো হাজার টাকা খরচ পড়বে। আর দেরি না করে কিনে নিলেম। এই ফিল্টার লাগানোর পর থেকে আমার স্ত্রী একদিনের জন্যও বলে নি যে ওর পেটে গ্যাস হয়েছে। ওর খাওয়া দাওয়া সব কিছুই আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে পড়ে।

           আমি এখানে ফিল্টারের বিজ্ঞাপন দিচ্ছি না। আমি শুধু এই টুকুই বলতে চেয়েছি যে এত এত ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করলাম অথচ একজন ডাক্তারও আমাকে জিজ্ঞেস করলেন না যে আমার বাড়িতে যে জলের সোর্স আছে তা কি ধরণের। আমি কি ধরণের ফিল্টার ব্যবহার করি। আমরা জল ফুটিয়ে খাই কি না। ইত্যাদি।
 
           গুয়াহাটিতে পিএইচই' ল্যাবরেটরি আছে বামুনি ময়দানে। মাত্র কয়েক শ টাকায় জলের মধ্যে কি কি কেমিক্যাল ডিজলভড অবস্থায় আছে তা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা আছে সেখানে। আজ পর্যন্ত কোন ডাক্তারকে দেখলাম না রোগীকে বলতে যে আপনার বাড়ির জলের রিপোর্ট নিয়ে আসুন। অথচ তারা রোগীকে পরীক্ষা করানোর জন্য এক গাদা টেস্ট করান। কিন্তু রোগের কারণ সব সময়ে রোগীর শরীরে থাকে না। থাকে অন্যত্র যেখানের কথা পেটের ডাক্তারদের মাথায়ও আসে না।

            আমাদের শরীরের ৮০ শতাংশ অসুখ হয় জল থেকে। অথচ অসমের অনেকেই জানেন না যে বিশ্বের সর্বাধিক ফ্লোরাইড দূষিত জল যে অঞ্চলে পাওয়া গেছে তা এই অসমেরই কার্বি আংলঙ জেলা। এই জেলার অন্তত ১৩টি গ্রামে ফ্লোরাইডের যে মাত্রা আছে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যে নিরাপদ সর্বাধিক মাত্রা ধার্য করা হয়েছে তার চাইতে বহু গুণ বেশি। এর মধ্যে কাঞ্চনজুরি গ্রামের মাত্রা সর্বাধিক। এই অঞ্চলের প্রতি লিটার জলে ১৫-২০ মিলিগ্রাম ফ্লোরাইড পাওয়া গেছে যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিরাপদ সর্বাধিক মাত্রা হলো ১.৫ মিলি গ্রাম। এই ফ্লোরাইড থেকে নানা ধরণের অসুখ হয়। এর মধ্যে বদ হজম, খাদ্যে অরুচি ইত্যাদি তো আছেই।
 
         কার্বি আংলঙে বিশ্বের সর্বাধিক ফ্লোরাইড দূষণ কি করে আবিষ্কার হলো তার একটা কাহিনী পড়েছিলাম। তবে ঘটনাটি সত্যি কিনা তা বলতে পারব না। এখন স্মৃতি থেকে লিখছি।

           অসমের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক শ্রীমতী মঞ্জু বরা যিনি লজ্জাসিনেমাটি বানিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি এর আগে কার্বি আংলঙ জেলার পুরনো রূপকথা নিয়ে দূরদর্শনের জন্য একটি কাহিনী চিত্র তৈরি করতে চান। এই কাহিনী চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি একটি খুব সুন্দরী কার্বি মেয়ের খোঁজ করেন যে মেয়েটি এক রাজকন্যার ভূমিকায় অভিনয় করবে। উনার এক বন্ধু জানালেন কার্বি আংলঙে এরকম একটি মেয়ে আছে উনার চেনা। তবে দীর্ঘ দশ বছর আগে মেয়েটিকে দেখেছিলেন, হয়ত এখনও সে ঐ গ্রামেই থাকে। মঞ্জু বরা মেয়েটিকে দেখতে চাইলে তাকে খবর দিয়ে ডিফু শহরে আসতে বলা হয় এবং মঞ্জু বরা উনার বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ডিফুর একটি হোটেলে মেয়েটির সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু এই মেয়েটিকে দেখে তিনি হতাশ হয়ে যান। কারণ মেয়ের চেহারায় কোন জৌলুস নেই। চুল কিছুটা পেকে গেছে। গায়ের চামড়া কিছুটা কুচকে গেছে। দৃষ্টি যেন ঘোলাটে। অথচ এই বয়সে তো এরকম হওয়ার কথা নয়। তারা মেয়েটিকে এর কারণ জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন যে তাদের গ্রামের প্রায় সকলেরই এই অবস্থা হয়ে গেছে। আশপাশের আরো কিছু গ্রামের মানুষও দিন দিন বুড়িয়ে যাচ্ছেন।

         যাই হোক এই মেয়েটিকে শেষ পর্যন্ত রাজকুমারীর ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য সিলেক্ট করা যায় নি। তবে মঞ্জু বরা এই বিষয়টি পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের চিফ ইঞ্জিনিয়ার শ্রী অমলেন্দু পালকে জানান। মিস্টার পাল বিলম্ব না করে সেখানে গিয়ে জলের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন এবং বামুনি ময়দানের ল্যাবোরেটিতে পরীক্ষা করে জানতে পারেন এখানে ফ্লোরাইডের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। এর পর পিএইচই থেকে ঐ অঞ্চলের জলের পাম্পগুলোকে লাল রঙ করে জনগণকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে লাল রঙের পাম্পের জল দিয়ে কাপড় কাচা বা অন্যান্য কাজ করা যাবে কিন্তু পান করা চলবে না। মিঃ পাল এই বিষয়টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানানোর পর সেখান থেকে বিজ্ঞানীরা এসে জলের স্যাম্পল নিয়ে যান এবং পরীক্ষার পর বিশ্বের সর্বাধিক ফ্লোরাইড দূষিত অঞ্চল হিসেবে কার্বি আংলঙ জেলাকে শনাক্ত করা হয়।

            এর পর আমি ইন্টারনেট থেকে গুয়াহাটির ফ্লোরাইড ম্যাপ সংগ্রহ করি যা তৈরি করেছিল NERIWALM (North Eastern Regional Institute of Water and Land Management)ঐ রিপোর্টে দেখলাম গুয়াহাটি শহরের কয়েকটি অঞ্চলে অধিক পরিমাণে ফ্লোরাইড থাকলেও আমাদের বিরুবাড়ির জল মোটের উপর নিরাপদ। তবে নর্থ ইস্টার্ন ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির সার্ভে অনুযায়ী অসমের ছয়টি জেলায় জলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফ্লোরাইড পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গুয়াহাটির আশপাশের কয়েকটি অঞ্চলও আছে। এই ছয়টি জেলার মধ্যে অন্তত পাঁচটিতে আর্সেনিকও পাওয়া গেছে। এছাড়া অসমের ২৭টি জেলার মধ্যে ২০টিতেই আর্সেনিকের পরিমাণ অধিক বলে জানানো হয়েছে। এর জন্য সরকারের তরফ থেকে গণমাধ্যমে কতটা প্রচার করা হয়েছে তা আমার জানা নেই। মন্ত্রী গৌতম রায় এই নিয়ে বিধান সভায় চর্চা করেন কিন্তু পিএইচইর তরফ থেকে গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রচার করাটা সরকারের দায়িত্ব বলেই মনে করি।

               রিভার্স অসমোসিস ফিল্টারে যেভাবে জলকে পরিশুদ্ধ করা হয় তার ফলে জলের সমস্ত মাইক্রো অরগ্যানিজম ফিল্টার হয়ে যায়। সেই সঙ্গে জলের মধ্যে থাকা সমস্ত ধরণের কেমিক্যালসও ফিল্টার হয়ে পড়ে। আমরা অনেক ধরণের প্রয়োজনীয় মিনারেল জল থেকেই পাই। তাই এগুলো ফিল্টার হয়ে যায় বলে অনেকেই এই ধরণের ফিল্টার ব্যবহারে আপত্তি করেন। তবে যে সমস্ত মিনারেল আমরা জল থেকে পাই তা আমাদের খাদ্যের মধ্যেও প্রচুর পরিমাণে থাকে। তাই ঠিক মতো আহার করলে এই মিনারেলের অভাব হওয়ার কথা নয়। সাধারণত একটি রিভার্স অসমোসিস ফিল্টারের ছিদ্রের সাইজ থাকে ০.০০৪ মাইক্রোন যেখানে সবচাইতে ছোট সাইজের ভাইরাসের সাইজ হলো ০.০২ মাইক্রোন। তাই ভাইরাসও এর ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করতে পারে না। অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া কিংবা মাইক্রো অরগ্যানিজমের সাইজ অনেক বড় তাই এই ছিদ্র দিয়ে পেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এছাড়া ফ্লোরাইড কিংবা আর্সেনিক জাতীয় বিষ এই ফিলট্রেশন পদ্ধতিতে আটকা পড়ে যায়। তাই আমি সবাইকে রিভার্স অসমোসিস ফিল্টার ব্যবহার করার কথাই বলব বিশেষ করে যারা অসমে থাকেন। মেঘালয়ে পাইন গাছ থেকে যে সমস্ত পোলেন গ্রেইন বাতাসে ছড়ায় তাও পেটের অসুখের একটি অন্যতম কারণ। তাই সর্বাবস্থাতেই রিভার্স অসমোসিস ফিল্টার আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে খুবই উপযোগী।