“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

মুদ্রা



।।  বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ।।

(ছবি দীপঙ্কর কর; সৌজন্য বাসব রায়)














রা বলে - করতে হবে
আমরা বলি - মানব না।
ওদের কথায় দেশ যে চলে
আমাদের তা মানায় না।

ওরা হলো পিঁপড়ের জাত
মিছিল করে ফুলায় বুক
আমরা হলাম বাঁদর বংশ
টেনে নামাই নিজের লোক।

ওরা বলে - অস্ত্র আছে
নেহাত সেটা নিইনি হাতে
আমরা বলি - কিছুই তো নেই
অনুকম্পায় বাঁচাও ভাতে।

ওরা বলে - অস্ত্র নিলে
কেউ পাবে না রেয়াত আজ
আমরা বলি - অহিংসাটাই
অদ্য আমার মাথার তাজ।

ঘৃণা ওদের চোখে মুখে
হৃদয় জুড়ে হিংসানল
দরিয়াদিল আমরা সবাই
তোয়াজ করাই মোদের চল।

আব্দার হোক অন্যায় তবু
আদায় ওরা করেই ঠিক
ন্যায্য পাওনা না পেলেও
আমরা থাকি নীরব- ধিক্।

ভবিষ্যৎটা ওদের জন্য
একশ ভাগই নিশ্চিত
হাজার প্রমাণ দিয়েও আমরা
থাকছি অসুরক্ষিত।

ওদের বেলা রাজানুগ্রহ
উপচে পড়ে যেমন চাই
হাজার চোখের রাঙানিতে
আমরা হচ্ছি পুড়েই ছাই।

ওরা হলো স্বদেশ পুত্র
শেকড় কিন্তু দূর দেশে
আমাদেরও একই সূত্র
তিন পুরুষের এই দেশে।

ওরা তবু রক্তচক্ষু
দেখিয়ে করে অত্যাচার
ভয়েই আমরা সিঁটিয়ে থাকি
দু'য়ে দু'য়ে হই না চার।

ওদের মতোই এখন থেকে
দাঁড়াই রুখে আমরা তবে
লক্ষ লোকের লক্ষ ব্যথা
ভাগ করে নিই নিজের ভেবে।

ভাষার দোহাই দিয়ে ওরা
যতই করুক ফন্দি ফিকির
ভাষার গানেই বাঁধব আমরা
অধিকারের সু-প্রাচীর।

ওদের পথেই হাঁটব আমরা
নামব পথে বাঁধনহীন
আমরাও যে ভূমিপুত্র
নই তো আমরা দীন ও হীন।

ওদের যেমন দাপট আছে
আমরা এতই কি দুর্বল ?
ঈদে কিংবা পুজোয় তবে
পথ বেয়ে কার নামে ঢল ?

ওদের মতোই আমরা এবার
নামব পথে করব পণ
করব আদায় সুবিচার
মিলব পথে লক্ষ জন।

যতই আসুক রাজরোষ আর
যতই বাধা বিপত্তি
দাঁড়াই রুখে এক হয়ে আজ
মানব না আর আপত্তি।

ভাষার আত্মীয়তায় বাঁধা
আমরা সবাই হবই এক
হবেই বাধ্য সব পক্ষ
মানবে সত্য ছাড়বে ভেক।

বুঝুক ওরা আমরাও চাই
অবাঞ্ছিত মুক্ত দেশ
কিন্তু আমরা মানব না তো
অন্যায়ের দেখব শেষ।

বুঝবে ওরা আমরাও যে
এ দেশেরই নাগরিক
কপটতা, ছলচাতুরি
হচ্ছে যা তা নয় যে ঠিক।

জানুক ওরা আমরা যে আজ
অত্যাচার আর সইব না
দেশভক্তির পরাকাষ্ঠা
আর দেখাতে পারব না।

মর্জি মতো অন্যায় আর
অবিচারের হোক অবসান
প্রকৃতই যে দেশের মানুষ
পাক সে ফিরে মান সম্মান।

দেখুক ওরা আমরা যে নই
মোটেই হেলার পাত্র
আমরা তো নই মোটেই শত্রু
সুনাগরিক মাত্র।

এবার তবে ওদের মতোই
জেগে ওঠার পালা
মন্দির আর মসজিদ ছেড়ে
রাস্তায় পা ফেলা।

- - - - - - - -


কোন মন্তব্য নেই: