“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

রবিবার, ২৯ জুলাই, ২০১৮

ভালবাসা

।। সুপ্রদীপ দত্তরায়।। 

(C)Image:ছবি








সেদিন পথের মোড়ে হঠাৎই দেখা
ভালবেসে দিয়েছিনু নাম সূর্যতপা
 
মৌন হিমালয় কোলে তপস্যা রত --
শান্ত স্নিগ্ধ যেন অদ্রিরাজ দুহিতা ।
 
চলনে চমকে তার হরিণীর গতি
বন্ধু ছিল মোর,
  ষোড়শী যুবতী 
কথা তার বনানীতে পাখির কুজন
 
পরিচয় বহুকালে, সেই কলেজ জীবন
 
এখনো তেমনি সে, অতি সাধারণ ।
বিকেলের আড্ডাতে
  ভুষণ্ডির মাঠ 
কাঠালতলিতে বা বরাকের ঘাট
 
বহুবার বসেছি সেথায় শুধু দুজনায়
মিথ্যে অজুহাতে, কেবল মনের খেলায়।
হাতেতে রেখে হাত পরম আশ্বাসে
মুক্ত কণ্ঠে গেয়েছিনু জর্জ বিশ্বাসে।
আপন বিভোরে । একগুচ্ছ চাঁপাকলি
 
সযত্নে তুলে এনে বাগিচা থেকে
 
মরমে ভরেছি তার কোমল অঞ্জলি
 
যেন পৃথিবীর বুকে থাকা শ্রেষ্ঠ উপহার ।
কখনো নিজ হাতে কখনো অনুরোধে
 
খোঁপাতে গুঁজেছি তার, নিত্য বহুবার,
 
আপন খেয়ালে । সাক্ষী তার শেষ সূর্য ,
নীড়ে ফেরা পাখি সব শ্রান্ত বিকেলে ।
 
সেও বহুকাল । বাকীসব দগ্ধ ইতিহাস
 
অপেক্ষা, স্বপ্নভঙ্গ আর শুধু
  দীর্ঘশ্বাস ।
জীবনের সব শর্ত ধর্ম, বর্ণ জাত
 
পারিবারিক চাপ, সমঝোতা, অপবাদ
 
ভালবাসা শিখিয়েছে কঠিন সে পাঠ,
শিখিয়েছে ভালবাসা স্বতঃস্ফূর্ত নয়
 
অঙ্ক কষে জীবনসঙ্গী
  বেছে নিতে হয়।
শিখিয়েছে জীবনে প্রতিষ্ঠারই দাম
ভালবাসা বিলাসের অন্তর্নিহিত নাম ।
 
ভালবাসা বিশ্বাসের অন্তিম বিন্দু
আবেগ ভাসিয়ে আনে বিষাদ সিন্ধু ।
প্রতিপদে রজ্জু পথে সতর্কে চলা
 
শিকারি দৃষ্টিতে সদা বার্তালাপ বলা
অনুযোগ, অভিমান প্রহরারত
ভালবাসা বিরহের শ্রেষ্ঠ চারুকলা ।
বহুদিন পর আজ আবার  দুজনাতে দেখা 
চুলে তার ফাঁকে ফাঁকে সুবর্ণরেখা
 
শির'পরে নীল আকাশ, শান্ত স্নিগ্ধ ঘন
দাঁড়িয়ে সম্মুখে একা হিমকমল যেন
 
শিলা ফাঁকে বরফের ঘোমটাতে ঢাকা
 
নীল গোলাকার আহা, অপূর্ব স্নিগ্ধতা।
ধীর পায়ে হেঁটে এসে সমুখে দাঁড়ালে, যেন
 
অনাদিকাল হতে আমারই প্রতীক্ষাতে ।
রোমে রোমে পুলকেতে জাগে শিহরণ
 
আমাকে শুধালে সে, "আছেন কেমন । "
মাত্র দুটো ছোট্ট শব্দ , সহস্র ঝর্ণা
 
অলক্ষ্যেতে বাজে শুনি লক্ষ
  মোহনবীণা
আমাকে শুধালে সে "আপনি "সম্বোধনে
তবু ভালো দেখা হলো হঠাৎই দুজনে ।
অবাক বিস্ময়ে দেখি এখনো তেমনি
সেই চোখ, সেই দৃষ্টি, সেই
  দীপ্ত চাহনি 
আমাকে বললে সে, পরিচিতি হোক।
ঐ যে পার্কে বসা,
  কোনার ভদ্রলোক  
সরিফুজ্জমান হক। আমার স্বীকৃত বর
অতি সজ্জন । ভালবাসেন যেন জন্নতে হুর।
 
ভালবাসার কিতাব আমি আবার শিখেছি ।
 
যেখানে ছিল
  ত্রুটি শুধরে নিয়েছি । 
আর ঐ মেয়েটি, সরিফের আফিয়া
 
যার জন্ম নিয়ে ছিল অসংখ্য সংশয় ,
ভয় ছিল কি হবে তার পিতৃপরিচয়;
উনি দিয়েছেন তাকে কন্যা স্বীকৃতি ।
ভালো করে দেখুন
  ওর মুখের গড়ন, 
কোথাও কি লুকিয়ে আছে পরিচিত
  ছাপ,
ও মৃন্ময় কন্যা মরিয়ম, ভালবাসার অভিশাপ ।
চমকে উঠি, কি শোনালে ফেরদৌস এবার
 
মরিয়ম আমার আত্মজ, আমার সন্তান ।
তবে কি ফেরদৌস ---? হে ঈশ্বর ক্ষমিও আমায়।


কোন মন্তব্য নেই: