।। সুপ্রদীপ দত্তরায়।।
(C)Image:ছবি |
১৮ তম বিবাহ বার্ষিকী ।
এবারে টুম্পার ইচ্ছেটা অন্যরকম । প্রত্যেকবার এই বিবাহ বার্ষিকী অনুষ্ঠানটা কোন
হোটেল বা মলে আয়োজন করা হয়ে থাকে । বন্ধু বান্ধব, কিছু আত্মীয়দের ডেকে একটু গান বাজনা,
পার্টি, খানিকটা ড্রিংকস, গিফটের পাহাড় আর সবশেষে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরা । একই গদ বাঁধা নিয়মে বিগত সতেরো বছর ধরে চলছে উদযাপন । টুম্পা
চাইছে এবছরটা একটু অন্যরকম ভাবে পালন করা হোক । একটু অন্যরকম মানে অন্যরকম,
মানে গত বাঁধা নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু একটা করা । এমনও হতে পারে
বন্ধু বান্ধব সবাই মিলে কোথাও আউটিঙে যাওয়া, সারাদিন হৈ হুল্লোড় করে দিনান্তে বাড়ি ফিরে আসা কিংবা দুজনে ঠিক ঐদিনটিতে কোথাও হারিয়ে
যাওয়া, কোন এক পাহাড়ের চূড়ায় বা কোথাও সমুদ্রের পারে,
শুধু টুম্পা আর সমীর ।আর কেউ নয়, না বাবুসোনাও
নয়। ঠিক যেমনটি তারা বিয়ের ঠিক পরপরই বেরিয়ে গেছিল ভাইজাক বীচে , টুম্পারই পছন্দে। আসলে দীঘা, মন্দাকিনী বা পুরীর
সমুদ্রে এখন আর একান্তে বসার মতো ফাঁকা জায়গা নেই । একটু নিরিবিলি জায়গাতে বসে
হয়তো সবে একটা রোমান্টিক মুহূর্ত তৈরি হতে চলছিল ঠিক তখনই পিছন থেকে শুনতে পাবেন ,
" এই যে টুম্পা না , কবে এলি? --- ওহ্ উনি তোর বর বুঝি ?
--- বাঃ কি সুন্দর । কী করে পটালি ।" ব্যাস হয়ে গেল
রোমান্স । এবারে হোটেলের নাম দাও, রুম নাম্বার দাও , একসাথে খেতে
চলো, যতক্ষণ না এখান থেকে বিদেয় হতে পারছো। টুম্পা তাই সেবার
ভাইজাক যেতে চাইছিল, যেখানে পরিচিত কেউ নেই, শুধু টুম্পা আর সমীর, সমীর আর টুম্পা ।
নিজের খুশি মতো একটা পুরো সপ্তাহ কাটিয়ে ছিল সেখানে । একদিকে উঁচু পাহাড় অন্য দিকে
সমুদ্র । একদিকে শান্ত সবুজ বনানী অন্য দিকে উদ্দাম সমুদ্র, প্রকৃতির
এক অপূর্ব সৃষ্টি । মন ভরে যায়। এখনো মনে পড়লে প্রতিটি লোমকূপে পুলক লাগে । কত
রোমান্টিক ছিল সমীর । এই এতটা বছরে এখন কেমন যেন ভোঁতা হয়ে গেছে । আগের মতো আর
ভালবাসে না । সব সময় কেমন নেতিয়ে থাকে । তাই এবছরটা একটু অন্যরকম ভাবে পালন করতে
চায় টুম্পা । সমীরকে বলেছিল, কিন্তু খুব একটা আমল পাওয়া যায়
নি । তাই নিজে গুগল ঘেটে সব দেখে নিয়েছে । এবারে বিবাহ বার্ষিকীটা ওর ইচ্ছে
কাজিরাঙাতে কাটানোর । জঙ্গলের মধ্যে একটা রিসোর্টে দুটো দিন একসাথে কাটিয়ে আসবে ।
বাবুসোনা এবছর কোটাতে আছে কোচিং নিতে । ওর পক্ষেও এসে জয়েন করা সম্ভব নয় । তাই এ
যাত্রায় শুধু সমীর আর টুম্পা ।
অনেক
বুঝিয়ে সমীরকে রাজি করানো গেছে শেষপর্যন্ত । আসলে সমীরটা এখনো পুরনোপন্থী । জন্মদিনে
কেক কাটতে লজ্জা পায় , যখন তখন সিনেমা হলে বা রেস্তোরাঁ গিয়ে সময় কাটানো বা পার্টিতে গিয়ে অল্প
স্বল্প ড্রিংকস নেওয়া একদম পারে না । কেমন একটা বোকা বোকা আচরণ করে। তাই নিয়মের বাইরে ওকে দিয়ে কিছু
করানো বেশ কষ্ট । তবু শেষ পর্যন্ত
সমীর রাজি হয়েছিল যেতে। ঠিক হলো, বাইশ তারিখে বিবাহ বার্ষিকী তাই একুশ তারিখে টুম্পা আর সমীর তাদের স্কর্পিওটা নিয়ে সকাল
সকাল বেরিয়ে পড়বে । এখন রাস্তা ভালো, তাই দশ ঘণ্টার বেশি সময় লাগার কথা নয় ।
সমীর নিজেই গাড়ি চালিয়ে যাবে, ড্রাইভার নিলে পথের রোমান্সটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে । তাই নো রিস্ক, নো আপদ ।
একুশ
তারিখ ভোরবেলা মোটামুটি সাড়ে পাঁচটা নাগাদ প্ল্যান মত ওরা দুজন তৈরি হয়ে বেরিয়ে
পড়ল কাজিরাঙার উদ্দেশ্যে । বিজেপি সরকারের দৌলতে রাস্তা এখন আর আগের মত নেই ।অনেক
ভালো । এসির প্রয়োজন নেই,
জানালা দুটো খুলে দিলেই হলো । খোলা মুক্ত বাতাস । সমীর পেন ড্রাইভে টুম্পার ফেবারেট কিছু গানের কালেকশন নিয়ে এসেছিল,
সেই ফোল্ডারটা চালিয়ে আড়চোখে তাকিয়ে টুম্পার রিয়েকশনটা বোঝার চেষ্টা
নিল । এই একটা জায়গাতে টুম্পাও সমীরের মত পুরনোপন্থী । গাড়িতে সন্ধ্যা
মুখোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাত গান " আরো কিছুক্ষণ না হয় রইলে কাছে ---" বাজছে । কী অপূর্ব কথা আর সুর , মন ছুঁয়ে যায়। বাইরে
দিগন্ত ব্যাপী খোলা আকাশ , সূর্য তখন সবে ঘুম ভাঙা চোখে এদিক
ওদিক তাকাচ্ছেন । লাল হয়ে আছে পুব আকাশ। গাড়ির ভিতরে টুম্পা আর সমীর । ভেতরে ভেতরে
অনেক দিন পর একটা রোমান্টিক ভাব।
গাড়ি
ছুটছে বিপুল বিক্রমে , চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার স্পীডে । পাহাড়ের
রাস্তাতে এটাই অনেক স্পীড , এরচেয়ে বেশি স্পীডে চালানো
নিরাপদ নয়। সমীরের হাত খুব পরিষ্কার , একদম মাখনের মত চালায়
। সামনে মসৃণ চওড়া আঁকাবাঁকা পথ । একপাশে খাড়া পাহাড় অন্যপাশে গভীর খাদ । আর তারই
গায়ে গজিয়ে ওঠা নাম না জানা অজস্র ফুলের গাছ, যেন ফুলের
কার্পেট পাতা ওদের অভ্যর্থনা জানাতে । মাঝে মাঝে তুলোর মত মেঘগুলো পথ ঢেকে দিচ্ছে
। যতদূর চোখ যায় সবুজের মেলা । গাড়ি এগিয়ে চলছে যথারীতি, মাঝে
মাঝে পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছোট ছোট জনবসতি । কোথাও স্থানীয় পোশাকে মেয়েরা ঘর
গৃহস্থালিতে ব্যস্ত , কোথাও আবার ঘন জঙ্গল । রাস্তার পাশে
বসা ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা চলন্ত গাড়ির যাত্রীদের হাত নেড়ে বাইবাই জানাচ্ছে যেন কত
পরিচিত । মুখে নির্মল হাসি । মনে হচ্ছে যেন ওরা অন্য এক জগতে আছে ।
পথে
একটা ছোট্ট ঘুপচিতে থেমে এককাপ গরম চা সাথে স্থানীয় কেক। খেতে মন্দ না। টুম্পা তার ঘর
থেকে কিছু খাবার নিয়ে এসেছিল । সাথে সেগুলোও কিছু খাওয়া হলো । একটা বাচ্চা পাশেই
একা একা খেলছে , হাতে একখানা ভাঙা গাড়ি তাতে রশি বাঁধা । যতই গাড়িটা চালানোর চেষ্টা করছে,
কিন্তু চলছে না । সমীর একমনে বাচ্চাটাকে দেখছিল । ওদের বাচ্চাটা এখন
বড় হয়ে গেছে, কোটাতে থেকে কোচিং নিচ্ছে । কি মনে হতেই সমীর
টুম্পার কাছ থেকে একটা কমলালেবু চেয়ে বাচ্চাটার হাতে দিল। ভীষণ খুশি বাচ্চাটা,
সঙ্গে ওর মা । ওদের ভাষায় কিছু একটা বলল ।সমীর বুঝতে পারলো না ।
হয়তো ধন্যবাদ জাতীয় কিছু হবে ।ওরা দুজনেই মাথা নেড়ে আবার গাড়িতে উঠে বসলো ।
গাড়ি
ছুটছে তো ছুটছেই । পথ যেন শেষ হতে চায় না । বেলা দেড়টা নাগাদ হোজাই । রাস্তার পাশে
একটা পরিষ্কার বাঙালি ধাবা দেখে গাড়িটা সাইড করলো সমীর । খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে
টুম্পা ভীষণ খুঁতখুঁতে । জায়গাটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না হলে কিছুতেই খেতে চায় না ।
তাই দুচার ধাবা ঘুরে শেষ পর্যন্ত একটা পছন্দ হলো । প্রায় খালি ধাবা শুধু কোনায়
একটি অসমিয়া মহিলা বসা। হয়তো কোথাও যাওয়ার জন্যে গাড়ির অপেক্ষা করছেন। ভদ্রমহিলা
বসে বসে সমীরদের খাওয়া লক্ষ্য করছিলেন । ব্যাপারটা ওদের দুজনেরও নজর এড়িয়ে যায়
নি । সমীর ইশারায় টুম্পাকে দেখাতেই, টুম্পা কপট রাগ দেখিয়ে বললো, " তুমি ওদিকে তাকাচ্ছো কেন ? " সত্যি তো, ওদের কী? যার ইচ্ছে তাকাক না ,
ক্ষতি কী । সমীর খাবারের অর্ডার দিল, ডাল, ভাজা , একটা সবজি আর লোকেল গুলসা টেংরা । সাথে গরম
গরম মিহি চালের ভাত , অপূর্ব । শেষ পাতে ক্ষীরদৈ আর রসগোল্লা
। খাওয়ার পর যখন ওরা গাড়িতে উঠতে যাবে, ঠিক তখনি ঐ ভদ্রমহিলা
সোজা টুম্পার কাছে এসে হাজির । বললেন , " বহিনজী আপ লোগ
কাঁহাতক যা রহে হ্যায় ।"
--- " কিউ --- ।" টুম্পাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সমীর প্রশ্ন করলো
--- "একচুয়েলি
হামে কাজিরাঙা যানা হ্যায়। হামারা গাড়ি খারাব হো গেয়ি, অভি
গাড়ি মিলনেকা চান্স ভি বহুত কম হ্যায় । ইকেলা আউরত ইসিলিয়ে সোচ রহি থি ----
।"
এতক্ষণ
খেয়াল করা হয়নি, এবারে চোখে পড়লো একটা ইনোভা গাড়ি ধাবার পাশে দাঁড় করানো আছে । গাড়িটির
পিছনে লেখা " রিসোর্ট হর্ণবিল, কাজিরাঙা ।"
সমীর
টুম্পার দিকে তাকাতেই টুম্পা ইশারায় নিয়ে নিতে বলল । একা মহিলা, এই নির্জন রাস্তায়
কোথায় থাকবে । টুম্পার মনটা এমনিতেই খুব নরম । কারো কষ্ট সহ্য করতে পারে না । বলল,
" চলুন, আমরাও তো ঐদিকেই যাচ্ছি, আপনাকে ড্রপ করে দেব। "
ভদ্রমহিলা
খুব খুশি । সাথে সাথেই ইনোভা থেকে নিজের ট্রলি ব্যাগটা একটানে নামিয়ে নিয়ে গাড়িটা
লক করে দিলেন । ধাবার মালিককে দুই চার কথা বলে গাড়িতে চেপে বসতেই গাড়ি ছুটলো
কাজিরাঙার পথে ।
কথায় কথায় আলাপ
শুরু হলো । ভদ্রমহিলা হর্ণবিল রিসোর্টের ম্যানেজার । আজ পাঁচ বছর হলো এই ব্যবসায়
আছেন । অসমিয়া মহিলা হলেও কাজ চালাবার মত সুন্দর বাংলা বলতে পারেন । কথাবার্তাও খুব সুন্দর, মার্জিত । লিফট দেবার জন্য বারবার ধন্যবাদ দিলেন।
গাড়ি ছুটছে, এবার আর পাহাড়ে নয় ।
দুপাশে ধানের ক্ষেত তারই মধ্যে দিয়ে গাড়ি ছুটছে । মাঝে মাঝে ছোট ছোট শহর কিংবা
শহরতলি। ভদ্রমহিলার সমস্ত কিছু নখদর্পণে । একটার পর একটা জায়গার নাম বলে যাচ্ছেন,
যেন কত দিনের চেনা । কোন জায়গাটার কি বৈশিষ্ট্য, কোথায় কি ভালো পাওয়া যায় সব বলে যাচ্ছেন । মনে মনে টুম্পাকে ধন্যবাদ না
দিয়ে পারলো না সমীর । ও যদি বুদ্ধি করে ভদ্রমহিলাকে সঙ্গে না নিত তবে এই যাত্রায়
অনেক কিছু অজানা থেকে যেত । ঘণ্টা খানেক চলার পর গাড়ি কাজিরাঙা অভয়ারণ্যে প্রবেশ
করলো । কোথাও দুপাশে ঘন জঙ্গল আবার কোথাও দুপাশে সবুজ মাঠ । তারই মধ্যে কোথাও দুরে
মাঠের মধ্যে নানা জাতের হরিণের দল কিংবা একটা
শিঙের গণ্ডার
। আবার কোথাও ঝাঁক বাধা অসংখ্য পাখি। ভদ্রমহিলা জায়গায় জায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে
ভিউয়ারস পয়েন্ট থেকে সব কিছু দেখাচ্ছেন । ধীরে ধীরে একটা বন্ধুত্ব হয়ে গেছে ।
--- " কাজিরাঙাতে আপনারা কোথায় রিসোর্ট বুক করেছেন ?" ভদ্রমহিলা কথায় কথায় সমীরকে জিজ্ঞেস করলেন ।
থাকার
ব্যাপারে ওরা কোন স্থির সিদ্ধান্ত কোন সময়ই নেয়নি । ওখানে গিয়ে দেখেশুনে যা হোক
একটা ব্যবস্থা নেবে এইরকমই একটা প্ল্যান ছিল । সমীর সেটাই খুলে বলল ।
--- " সেকী ? এখনো বুক করা হয়নি, তবে তো খুব
মুশকিল ।"
ব্যাপারটা ঠিক
বোধগম্য হলো না । ভদ্রমহিলাই বুঝিয়ে বললেন । এখানে পিক আওয়ার্সে রিসোর্ট খালি
পাওয়া খুবই দুষ্কর । তাছাড়া এলিফেন্ট রাইডিঙের জন্য আগে থেকেই বুকিং করা প্রয়োজন ।
আর এলিফেন্ট রাইডিং ছাড়া কাজিরাঙা বেড়ানোর মজাটাই ফিকে।
সত্যি
তো, এই
সব কথা তো ওরা আগে ভাবেনি বা কেউ বলেও দেয় নি। এবারে যে সত্যি সত্যিই সমস্যা দেখা দিয়েছে । এদিকে বিকাল হতে বেশি সময় বাকি
নেই । টুম্পা সমীরকে একটু তাড়াতাড়ি চালাতে বলল ।
--- "এই কাজটাই করবেন না । এখানে জায়গাতে জায়গাতে এনিম্যাল করিডোর আছে । ঐসব
জায়গাতে খুব সাবধানে পার হতে হয় ।" ভদ্রমহিলা সাথে সাথে সমীরকে সাবধান করে
দিলেন । কথাটা সত্যি বটে । পথে বেশ কয়েকটা জায়গাতে বোর্ড টাঙ্গানো দেখেছে সমীর ।
যদি কোন পশু গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে যায়, তাহলে ফরেস্ট পুলিশ
এসব নিয়ে নানা ঝামেলা। দুজনের ভিতরেই একটা টেনশন শুরু হয়ে গেল। সমস্ত আনন্দটা একটা
অনিশ্চয়তার মধ্যে । সমীর নিজের মনে মনে একটা ছক করছিল, তার
মধ্যেই ভদ্রমহিলা বললেন, " যদি কিছু মনে না করেন তবে
আমার রিসোর্টে একটু চেষ্টা করে দেখতে পারি। তবে কতটা খালি পাওয়া যাবে এই মুহূর্তে
বলা মুশকিল ।"
সমীরের
হাতে কোন বিকল্প নেই, অগত্যা রাজি হয়ে গেল । ভদ্রমহিলা টেলিফোনে তার রিসোর্টে কারো সাথে
কথা বললেন । সবটাই অসমিয়া ভাষায়। যেহেতু বাংলা ভাষার সাথে অনেকটা মিল আছে, তাই তাদের কথাবার্তা
বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না । বোঝা গেল রুম পাওয়া
যেতে পারে সাথে এলিফেন্ট রাইডিঙেরও ব্যবস্থা হয়ে যাবে তবে একটু কস্টলি ।
ভদ্রমহিলাও তাই বললেন। ওরা রাজি হয়ে গেল ।
বিকেল
নাগাদ গাড়ি কাজিরাঙা পৌঁছল । শহরটি পেরিয়ে হাতের বা দিকে একটা মেঠো রাস্তা । সদর রাস্তাতেই একটা বিশাল বোর্ডে হর্ণবিল
রিসোর্টের নাম লিখা । দু’দিকে দুটো ডোনাল্ড ডাকের মুখ আঁকা।
রাস্তার মুখেই একটা গেট। একটা উর্দি পরা লোক গেট খুলে দিল । রিসোর্টের এরিয়া বিশাল
। সমীর গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে, দুপাশের মাঠে অনেকগুলো হরিণ চড়ে
বেড়াচ্ছে । হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়। এরকম একটা জায়গাতে টুম্পা প্রচণ্ড উচ্ছ্বসিত।
শিশুর মত আনন্দ করছে । সমীর একবার দেখে নিল টুম্পাকে । ভদ্রমহিলা সাবধান করে দিলেন
জোরে না চালানোর জন্য । যে কোন সময় কোন পশুর গায়ে আঘাত লাগতে পারে । সমীর এমনিতেই
আস্তে চালাচ্ছিল, আরো খানিকটা স্লো হয়ে গেল । টুম্পার আনন্দ
দেখে কে । ভদ্রমহিলাকে বারবার প্রশ্ন করে কোনটা কী জাতের হরিণ জেনে নিচ্ছিল ।
প্রায়
দশ মিনিট এভাবে চলার পর গাড়ি একটা সুন্দর সাজানো টিলার উপর এসে থামলো
। শুধু সুন্দর বললে বোধহয় ভুল বলা হবে, অপূর্ব সুন্দর একটা
রিসোর্ট । একটা টিলার উপর প্রায় ত্রিশটির মত কটেজ । বাঁশের মাচার উপর খড়ের চালের
ঘর । নক্সাটি পরিবেশের সাথে মানানসই করে তৈরি করা ।ভেতরে আধুনিকতম সুবিধা । শুধু ইন্টারনেটের সুবিধা নেই । ওটা নাকি ওরা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেছেন।
সবটাই ভদ্রমহিলার কাছ থেকে শোনা । প্রত্যেকটা কটেজের সামনে সুন্দর করে ফুল বাগান
সাজানো । ভদ্রমহিলা খুব সংক্ষেপে বাইরে থেকে একবার পুরো রিসোর্টটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে
দেখালেন । সবটা দেখা গেল না, তার আগেই অন্ধকার নেমে এসেছে ।
ভদ্রমহিলা
গল্পচ্ছলে বললেন,
" গর্ব করছি না, তবে এখানে আসার পর আর এলিফেন্ট রাইডিং বা জীপ রাইডিঙের প্রয়োজন
হয় না । এখান থেকেই সব মজা নেওয়া যায় ।"
কথাটা খুব মিথ্যে
নয় । রিসোর্টটা জঙ্গলের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে । তাই রিসোর্টে বসেই জংলী জন্তু
জানোয়ার সব দেখা যায়। একটা ওয়াচ টাওয়ারও বসানো হয়েছে । টুম্পা আনন্দে উত্তেজনায়
পাগল । কৌতূহল বশে জানতে চাইলো এখানে বাঘের দেখা পাওয়া যায় কিনা
। ভদ্রমহিলা মুচকি বললেন, " এখানে সব আছে, বাঘ, ভাল্লুক, গণ্ডার সব ।
একবার যখন এসে গেছেন তখন মনে কোন অতৃপ্তি থাকবে না ।"
রিসিপশনে
এসে ভদ্রমহিলা কাউন্টারের মেয়েটিকে যথারীতি নির্দেশ দিয়ে দিলেন ।বললেন, " উনারা আমার
বিশেষ অতিথি । সবচেয়ে ভালো কটেজগুলির মধ্যে থেকে একটা দিয়ে দাও ।" তারপর
টুম্পাকে বললেন, " আপনারা রুম দেখে নিন, পছন্দ হয় কিনা । তারপর একটু ফ্রেশ হয়ে এখানেই চলে আসুন একসাথে চা খাওয়া
যাবে ।"
ভদ্রমহিলা
চলে গেলেন ।সমীর টুম্পাকে বলল, একবার রুমটা দেখে নাও, তোমার
পছন্দ হয় কিনা , তারপর নাহয় লাগেজ
নিয়ে আসা যাবে ।"
একজন
বেয়ারা টুম্পাকে রুম দেখাতে নিয়ে গেল । খুব সুন্দর প্ল্যান করে সাজানো হয়েছে এই
রিসোর্টটা । প্রত্যেকটা কটেজের জন্য আলাদা করে পরিকল্পনা করা । বেয়ারা কিছুটা দুরে
একটা কটেজের সামনে এসে দাঁড়ালো । বাইরে থেকে লাইটের সুইস অন করে দরজা খুলে দিয়ে বলল, " দরজা খোলা আছে, দেখে নিন পছন্দ হয় কিনা ।" বাঙালি ছেলে, দেখতেও বেশ মিষ্টি । মনে মনে টুম্পা খুশি হলো বাঙালি বেয়ারাকে পেয়ে।
টুকটাক ফরমাইস খাটানো যাবে প্রয়োজন মত।
কটেজ
টুম্পার অনেক আগেই পছন্দ হয়ে গিয়েছিল। এখন শুধু যেটা বেটার সেটি বেছে নেওয়া ।
টুম্পা দরজা খুলে একবার ভেতরটা দেখে নিল । খুব সুন্দর ছিমছাম সাজানো । হঠাৎই একটা
গোঙানির আওয়াজ শুনে কোনায় বিছানার দিকে নজর যেতেই ছিটকে রুম থেকে বেরিয়ে এলো ।
দেখে একটা ছেলে আর মেয়ে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র হয়ে বিশ্রী ভাবে শুয়ে আছে বিছানাটিতে ।
এরকম একটা পর্ণ দৃশ্যের জন্য টুম্পা মানসিক ভাবে একেবারেই প্রস্তুত ছিল না । এক
দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে এসে থরথর করে কাঁপতে লাগলো ।
বেয়ারা
টুম্পাকে এভাবে আসতে দেখে স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করলো,
" কী হয়েছে ম্যাডাম ? কোন সমস্যা ?
টুম্পা
কী বলবে
ওকে । অনেক কষ্টে বলল,
" ঘরে লোক আছে ।"
বেয়ারা অবাক, বাইরে থেকে তালা
লাগানো, ভিতরে কী করে লোক থাকতে পারে? নিজে ছুটে গেল ভিতরে
। ভালো করে চারপাশ দেখে বললো, " কোথায় ? কেউ নেই তো ?"
--- " আছে, বিছানায় তাকাও ।" টুম্পা দৃঢ়তার সাথে
উত্তর দিল । ও স্পষ্ট দেখেছে ।
বেয়ারাটি আবার সব
দেখে এসে বললো, " না: কেউ নেই তো । আপনি আসুন, কোথায় দেখেছেন একবার
দেখিয়ে দিন দেখি ।"
টুম্পার
ভীষণ রাগ হচ্ছিল । গটগট করে কটেজের দরজা ঠেলে বললো, " এটা -----।" মুখের কথা
মুখেই থেকে গেল। কথাটা শেষ করতে পারলো না টুম্পা । সত্যি বিছানাটিতে কেউ নেই।
টুম্পার নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না । তবে কি সে ভুল দেখলো । কিন্তু এমন ভুলতো
হবার কথা নয়। টুম্পা কি উত্তর দেবে বুঝতে পারছিল না । পরমুহূর্তেই সিদ্ধান্ত নিয়ে
বললো, " এইটা নয়, অন্য রুম
দেখাও।"
বেচারা
নিরস মুখে বললো, "
বেশ চলুন, কিন্তু এই রুমটা নিলে পারতেন
ম্যাডাম । রুমটা ভালো ছিল ।"
টুম্পা
গম্ভীর মুখে জানিয়ে দিল,
ঐ রুমটা ওর পছন্দ নয়।
বেয়ারা
টুম্পাকে আরো কয়েকটা কটেজ পেরিয়ে একটা
কটেজের সামনে এসে দাঁড়ালো। এবারের কটেজটা আগের থেকে ছোট তবে বাইরে ভালোই মনে হয়।
কটেজের বাইরে বন ফায়ারের ব্যবস্থা আছে । বারান্দায় বসার বন্দোবস্ত করা । এখানে বসে
দূর দূর অবধি দেখা যায়। রুমের দরজা খুলে দেওয়ার পর টুম্পা খুব ভালো করে চারদিক
দেখে নিল । না: এখানে কোন সমস্যা নেই । ভিতরটা খুব সুন্দর করে সাজানো । টুম্পা
জানিয়ে দিল এইটাতে চলবে।
বেয়ারা তবু
টুম্পাকে বাথরুম দেখে নিতে বলল । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রুম পছন্দ হওয়ার পরও বাথরুমের
জন্য বাতিল করতে হয় । কথাটা মন্দ বলনি ছেলেটা । টুম্পা ভিতরে গিয়ে দেখে নিল, ঠিকই আছে । খুশি হয়ে
গেল টুম্পা । শুধু একটা খটকা
থেকে গেল মনে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না । যদি সে সত্যি দেখে থাকে তাহলে
কোথায় গেল সেই ছেলে আর মেয়েটি । যাক এবারের রুমটা পছন্দ হয়েছে এটাই মঙ্গল ।
সারাদিন জার্নি করে পরিশ্রান্ত লাগছিল, আজকের রাতটা পুরো
বিশ্রাম নেবে ঠিক করলো টুম্পা ।
বাথরুমের
দরজা বন্ধ করে ফিরতেই দেখে ঘরের মূল দরজাটা নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । টুম্পা
সঙ্গে সঙ্গে দরজার দিকে ছুটলো। ততক্ষণে দরজা বন্ধ হয়ে গেছে । অবাক কাণ্ড, কী করে এমনটা ঘটছে ভেবে ঘরের
ভিতরে লক্ষ্য করতেই টুম্পা দেখতে পেল ঘরের বিভিন্ন জায়গাতে কতগুলো বাজে প্রকৃতির
ছেলে বসা । খালি গায়ে ন্যূনতম পোশাক পরা । টুম্পার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভাবে হাসছে
। টুম্পা ভয়ে চিৎকার করে উঠলো । টুম্পা যত চিৎকার করে ওরা ততই বিকট শব্দে হাসতে
থাকে । টুম্পা দরজার দিকে ছুটে যায়, লোকগুলো ততই তাকে বিশ্রী ভাবে টেনে হিঁচড়ে ঘরের
মধ্যে নিয়ে আসে । অবস্থা বেগতিক দেখে
হাতের কাছে যা আছে তাই ছুড়ে মারতে থাকে টুম্পা । কিন্তু লোকগুলো অদ্ভুত কায়দাতে
নিজেদের ঐ জায়গাটা থেকে সরিয়ে নেয় । ভয়ে টুম্পা বারবার চিৎকার করার চেষ্টা করে, কিন্তু
মনে হয় কেউ যেন তার গলায় চেপে বসে আছে । ওর গলা দিয়ে গোঙানি ছাড়া আর কিছুই আওয়াজ
বের হচ্ছে না । হাত পা ভয়ে ঠাণ্ডা হয়ে আসছে । দমবন্ধ হয়ে আসছে টুম্পার । কোন কান্নাকাটিতেই
লোকগুলোর মন গলানো যাচ্ছে না । শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে টুম্পা শেষবারের মত চিৎকার
করে উঠে । টুম্পা বুঝতে পারে ক্রমাগত টানা হেঁচড়ায় তার শরীরের সমস্ত শক্তি শেষ হয়ে
যাচ্ছে । হাত পা গুলো ক্রমশ অবশ হয়ে গেছে , চলার শক্তি নেই ।
লোকগুলোর শরীরে অদ্ভুত পচা গন্ধ । টুম্পার বমি পাচ্ছিল। টুম্পা চিৎকার করে,
" কে কোথায় আছো, বাঁচাও, প্লিজ আমাকে বাঁচাও------।"
ওদিকে
টুম্পার দেরি দেখে সমীরের মনে মনে চিন্তা
হচ্ছিল। এতটা সময় লাগার কোন কারণ নেই ।তবে কি টুম্পার কোন সমস্যা হয়েছে । এমনি সব
আজেবাজে চিন্তা করছে সমীর তখনি কানে এলো টুম্পার চিৎকার । সমীরের বুঝতে বাকি রইল
না যে এই মুহূর্তে কোন একটা বিপদ ঘটতে চলেছে । তৎক্ষণাৎ কাউন্টারে ছুটে এসে দেখে
কাউন্টারের মেয়েটিও নেই । আশেপাশে একটা লোক নেই যার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে ।
টুম্পার সাথে যাওয়া বেয়ারাটিকেও কোথাও দেখা যাচ্ছে না । সমীর পাগলের মতো ছুটে গেল, যেদিকটাতে
টুম্পা গেছে । প্রত্যেকটা কটেজের দরজা বন্ধ । অথচ প্রত্যেকটা কটেজের ভিতর থেকেই
যেন টুম্পার চিৎকার ভেসে আসছে । সমীর ছুটে গিয়ে দরজা খুলতেই সব শান্ত । কোথাও কোন
লোকজন নেই । টুম্পারও কোন খবর নেই । আবার কটেজ থেকে বেরোনো মাত্রই সেই চিৎকার ।
সমীর বুঝে উঠতে পারছে না কী ঘটতে চলেছে । পাগলের মতো এই কটেজ ঐ কটেজ খুঁজতে থাকে, কোথাও টুম্পা নেই ।
ভয়ে উৎকণ্ঠায় সমীর কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বুঝতে পারছে না কোথায় গেলে টুম্পাকে খুঁজে
পাওয়া যেতে পারে । নিজেকে খুব অসহায় লাগে । পাদুটো ক্রমশ ভারি হয়ে আসছে । আর বোধহয়
চলার শক্তি নেই ।তবু সমীর হাল ছাড়ে না, একটার পর একটা কটেজ
দেখতে থাকে, হঠাৎই একটা কটেজের সামনে আসতেই দরজা হঠাৎ করে
খুলে যায় । আর তার ভিতর থেকে ভয়ার্ত টুম্পা আলুথালু বেশে বেরিয়ে আসে । টুম্পার
চোখে মুখে প্রচণ্ড ভয়, গলায়
গোঙানির আওয়াজ ।মুখে কিছু বলতে পারছে না,
শুধু আঙুল তুলে কিছু একটা দেখাতে চাইছে । চলার শক্তি নেই বললেই চলে
। সমীর হঠাৎ করে যেন আসুরিক শক্তি ফিরে পায় । ছুটে গিয়ে টুম্পাকে পাঁজাকোলা করে
গাড়িতে এনে তুলে তৎক্ষণাৎ গাড়ি স্টার্ট দেয় । সমীর বুঝতে পারে এইমুহূর্তে
না পালাতে পারলে সমূহ বিপদ । গাড়ি স্টার্ট দিতেই সার্চলাইটের আলোয় সমীর স্পষ্ট দেখতে পায়
প্রত্যেক ঘর থেকেই যেন একগাদা করে লোক ওদের দিকে এগিয়ে
আসছে । ওদের চলার ধরণ কেমন যেন অস্বাভাবিক
। সমীর দ্রুতগতিতে গাড়িটা ঘুরিয়ে নেয়। লোকগুলো ক্রমশ চারদিক থেকে গাড়িটা ঘিরে
ফেলেছে । গাড়ির ভিতরে টুম্পা অচেতন হয়ে শুয়ে আছে । মুখ দিয়ে সাদা ফেনার মত কিছু
একটা বেরোচ্ছে । পালাবার সব পথ বন্ধ । সমীর নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নেয়, যা খুশি পরিণতি হোক সে গাড়ি চালাবে । এতে যদি দুই একজনের ক্ষতি হয়, হবে। কিন্তু টুম্পাকে
বাঁচতে হবে । যে কোন মূল্যেই হোক, টুম্পার জীবনটা এই মুহূর্তে
সমীরের কাছে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান । সমীর সোজাসুজি গাড়ি চালিয়ে দেয় । লোকগুলো
গাড়ির উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে ছিল ।মনে হচ্ছিল যেন যে কোন মুহূর্তে গাড়ির গ্লাস ভেঙে
ওরা সমীর টুম্পাকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাবে । সমীর লোকগুলোর উপর গাড়ি চালিয়ে দেয়।
গাড়ি এগিয়ে যেতে থাকে, সাথে সাথে সামনে থাকা লোকগুলো ছিটকে
ছিটকে পড়তে থাকে । সমীর শক্ত হাতে স্টিয়ারিং ধরে থাকে । কোন মূল্যেই সে গাড়ি
থামাবে না । যেভাবেই হোক টুম্পাকে বাঁচাতে হবে
। একটা সময়ে মনে হয় সামনে আর লোকজন নেই, যা আছে সব দুপাশে আর পিছনে । সমীর তবু গাড়ি চালিয়ে যেতে থাকে । সামনে
একটার পর একটা গেট। সমীর সিদ্ধান্ত নেয়, গেট ভেঙে গাড়ি
চালাবে তবু থামবে না । এখানে থামলেই মৃত্যু ।
এভাবেই
কতক্ষণ কেটে গেছে মনে নেই । একসময়ে সমীর গাড়ি নিয়ে সদর রাস্তাতে পৌঁছল। মূল সড়কে
এসে সমীর যেন জীবন ফিরে পেলো । পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে সেই বিশাল বোর্ডটি লিখা নেই । সমীর আরো একবার ভালো করে দেখলো কোথাও কোন রিসোর্টের নাম লিখা বোর্ড নেই।। অথচ ঠিক এই
জায়গাটাতেই লিখা ছিল হর্ণবিল রিসোর্ট। সমীরের কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে, মাথাটা ভীষণ ঘুরছে। সমীরের সমস্ত গা হঠাৎই মোচড় দিয়ে উঠল । হাত পা অবশ হয়ে গেছে
। আর গাড়ি চালানোর ক্ষমতা নেই। তারপর কখন সমীর গাড়িটা সাইড করে
সুইচ অফ করে দিয়েছে নিজেই বলতে পারে না । যখন জ্ঞান এলো তখন তারা হোজাই এর সেই
ধাবার সামনে দাঁড়ানো । ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলো সেই ইনোভা গাড়িটা এখন আর সেখানে
নেই ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন