“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বুধবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৬

আয়স কাল ১৬



(দক্ষিণ আফ্রিকীয় লেখক জে এম কোয়েটজি-র লেখা 'এজ অব আয়রন'- উপন্যাসের  বাংলা অনুবাদের ৩য় অধ্যায়ের ৬ষ্ঠ    ভাগ: -- শিবানী দে)
শীতল ভোরবেলা আমি উঠোনের গেট খুলতে চেষ্টা করার শব্দ পেলাম । ভারকুয়েইল হবে, আমি ভাবলাম । ভারকুয়েইল ফিরে এসেছে তারপর দরজার বেল বাজল---- একবার, দুবার, লম্বা রিং, বারবার, অধৈর্য, এবং আমি বুঝতে পারলাম যে এ ভারকুয়েইল হতে পারে না ।

আজকাল নিচে যেতে আমার বেশ কয়েক মিনিট লেগে যায়, বিশেষ করে যদি আমি পিলের প্রভাবে আচ্ছন্ন থাকি । যখন আমি আধো অন্ধকারে হামাগুড়ি দিয়ে নিচে নামছিলাম, ওরা বেল বাজাচ্ছিল, দরজায় জোরে টোকা মারছিল আমি যতদূর পারি উঁচু গলায় বললাম,“আমি আসছি,” কিন্তু আমার গতি তো খুবই মন্থর । আমি শুনতে পেলাম যে উঠোনের গেট হাট করে খোলা হচ্ছে । রান্নাঘরের দরজাতেও অনেক টোকা পড়তে লাগল, আফ্রিকানার ভাষায় কথা শোনা গেল । তারপর একটা পাথর আরেকটাকে আঘাত করলে যেমন একটা থ্যাবড়া সাধারণ আওয়াজ হয়, তেমনি একটা গুলির আওয়াজ ।

সব কিছু নীরব । তার মধ্যে পরিষ্কার শুনতে পেলাম কাচ ভাঙ্গার ঝন্‌ঝন শব্দ । দাঁড়াও ।আমি চিৎকার করলাম, এবং দৌড়োলাম, সত্যি দৌড়োলাম---আমি জানতাম না যে দৌড়োনো এখনো আমার মধ্যে আছে ---- রান্নাঘরের দিকে । দাঁড়াও,” আমি চেঁচালাম, সার্সিতে চাপড় মারলাম, ছিটকিনি, শেকল ধরে শব্দ করতে লাগলাম, “কিছু করো না ।

বারান্দায় আমার দিকে পেছন করে নীল ওভারকোট গায়ে কেউ একজন দাঁড়িয়েছিল । যদিও সে আমার কথা শুনে থাকবে, ফিরে তাকাল না ।

আমি শেষ ছিটকিনি খুললাম, দরজা সম্পূর্ণ খুলে ফেললাম, তাদের সামনে দাঁড়ালাম । আমি গাউন পরতে ভুলে গিয়েছিলাম, পা খালি, শুধু সাদা নাইটড্রেস পরে যেন মড়া উঠে দাঁড়ানোর মত করে দাঁড়ালাম । দাঁড়াও,” আমি বললাম, “এখনো কিছু করো না, কারণ ও তো একেবারে একটা বাচ্চা ।

ওরা তিনজন ছিল । দুজন ইউনিফর্ম পরা । তৃতীয়জন একটা পুলওভার পরা, বুকের উপর আড়াআড়ি  দৌড়োনো বল্গা হরিণের নকশা করা ব্যান্ড, হাতে পিস্তল নিচের দিকে তাক করা । আমাকে ওর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দাও ।আমি গতরাতের বৃষ্টির জমাজল মাড়িয়ে এসে ওদের বললাম । ওরা আশ্চর্য হয়ে আমার দিকে তাকাল, কিন্তু আটকাবার চেষ্টা করল না

ফ্লোরেন্সের ঘরের জানালা ভাঙ্গা ছিল । ঘরটা অন্ধকার, কিন্তু গর্ত দিয়ে উঁকি মেরে আমি বুঝতে পারলাম যে বিছানার অন্য ধারে একজন কেউ গুটিসুটি মেরে লুকিয়ে আছে ।

দরজা খোল, ছেলে ।আমি বললামআমি কথা দিচ্ছি, আমি ওদেরকে তোমাকে আঘাত করতে দেব না ।

এটা মিথ্যে কথা । সে হেরে গেছে, আমার তাকে বাঁচানোর কোনো ক্ষমতাই ছিল না । তবুও আমার থেকে তার প্রতি কিছু একটা যেন গেল । আমি বেদনাহত হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরতে, তাকে রক্ষা করতে চাইলাম

একজন পুলিশ আমার সামনে এসে আমাকে দেওয়ালে ঠেসে দিল । বলল, “ওকে বলুন বাইরে চলে আসতে ’’ আমি প্রচণ্ড রেগে তাকে বললাম, “যাও এখান থেকে ।আমি চিৎকার করলাম, প্রচণ্ড কাশির বেগে মুহ্যমান হয়ে পড়লাম ।

সূর্য উপরে উঠছিল, আকাশে চলমান মেঘের মধ্যে গোলাপি আভা ছড়াচ্ছিল ।

জন, বাইরে এসো, আমি তাদেরকে তোমার কিছু করতে দেব না ।

পুলওভার পরা লোকটি আমার কাছে এসে দাঁড়াল । সে মৃদুস্বরে বলল, “ওকে বলুন ওর অস্ত্রগুলো দিয়ে দিতে ।

কি অস্ত্র ?”

ওর কাছে একটা পিস্তল আছে । আমি জানি না আর কি আছে । তাকে বলুন সব কিছু দিয়ে দিতে ।

প্রথমে কথা দাও তোমরা তাকে আঘাত করবে না ।

তার আঙ্গুলগুলো আমার বাহুর উপর আনল । আমি বাধা দিলাম, কিন্তু সে বলবান । সে বলল, “আপনি এখানে নিউমোনিয়া বাঁধাবেন আমার উপর কিছু একটা পড়ল । একটা কোট, পুলিশের ওভারকোট । একে ভেতরে নিয়ে যাও ।ওরা আমাকে রান্নাঘরে নিয়ে গেল এবং দরজা বন্ধ করে দিল ।

আমি বসলাম, আবার দাঁড়ালাম । কোটটাতে সিগারেটের বিচ্ছিরি গন্ধ । আমি সেটা মেঝেয় ফেলে দরজা খুললাম । আমার পাদুটো ঠাণ্ডায় নীল হয়ে গিয়েছিল । জন,” আমি ডাকলাম । তিনজন লোক একটা রেডিও-র উপর ঝুঁকেছিল । একজন, যে আমাকে কোট দিয়েছিল, হতাশ ভাবে আমার দিকে ফিরল । ভদ্রমহিলা, এখানে থাকাটা বিপজ্জনক । বলে সে আমাকে আবার ভিতরে ঢোকাল, কিন্তু দরজা তালা দেবার চাবি খুঁজে পেল না ।

ও একেবারে একটা বাচ্চা ,” আমি বললাম ।

আমাদের নিজেদের কাজ করতে দাও ,” সে বলল ।

আমি তোমাদের দেখছি,” আমি বললাম আমি তোমরা কি করছ সব দেখছি । আমি তোমাদের বলছি, ও একেবারে একটা বাচ্চা ।

সে একটা শ্বাস নিল, মনে হল কিছু বলবে, তারপরেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার কথা নিঃশেষ হবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল । অল্পবয়সী যুবক, সুঠাম শরীর, মজবুত হাড় । কারো ছেলে, অনেকের তুতো ভাই । অনেক তুতো ভাইবোন, অনেক কাকা মামা মাসি পিসি দাদু দিদিমা তার সঙ্গে, তার পেছনে, তার উপরে, যেন সমবেত কণ্ঠে গানগাওয়া দলের মত, তাকে পরিচালনা করছে, উপদেশ দেবার জন্য আছে ।

আমি কি বলতে পারতাম ? ওর ও আমার মধ্যে এমন কি সাধারণ ব্যাপার আছে যে কোন কথা বলা যেতে পারে শুধু মাত্র এই ছাড়া যে সে এখানে আছে আমাকে রক্ষা করবার জন্য, এবং বিশদভাবে বলতে গেলে, আমার স্বার্থ রক্ষা করবার জন্য ?

আমি মরব, তবু তোমাদের পক্ষে যাব না ।আমি বললাম । আমি তোমাদের বিরোধিতা করতে করতেই মরব ।আমি অন্যপক্ষেই থাকব ।  অন্য ধারে, নদীর অপরপারে । দূরের পারে, দূরের পার থেকে দেখব ।

সে ফিরে গিয়ে বুড়ির রান্নাঘরের উনুন, সিঙ্ক, তাক সব পরীক্ষা করতে লাগল, আর তার বন্ধুরা বাইরের কাজ করছিল । মনে হচ্ছিল সারাদিন এইসবেই লেগে যাবে ।

আমি বললাম, “এই-ই সব, আমার কথা ফুরিয়েছে। আমি অবশ্য তোমাদের সঙ্গে কথা বলছিলাম না ।

তাহলে কার সঙ্গে ? তোমার সঙ্গে: সবসময়ই তোমার সঙ্গে আমার গল্প, কিভাবে আমি বাঁচি, কিভাবে আমি বেঁচেছিলাম ।

দরজার ঘণ্টি বাজল । পায়ে বুট, মাথায় ক্যাপ ও জংলা ইউনিফর্ম পরা আরো লোক ঘরের মধ্যে মচমচ করে ঢুকল। তারা রান্নাঘরের জানালার কাছে জড়ো হল ।একজন পুলিশ ফ্লোরেন্সের ঘরের দিকে দেখিয়ে তাদের বোঝাল, “সে ঐ পেছনের ঘরে বসে আছে । ঘরে একটাই দরজা ও একটা জানালা আছে ।

নবাগতদের একজন বলল, “আমরা ওকে পেয়ে যাব।

আমি বললাম, “তোমাদের সতর্ক করছি, তোমরা কি করছ সব আমি দেখছি ।

সে আমার দিকে তাকাল । বলল, “আপনি কি ছেলেটাকে চেনেন ?”

হ্যাঁ আমি তাকে জানি ।

আপনি কি জানতেন ওর কাছে অস্ত্র আছে ?”

আমি কাঁধ ঝাকালাম । অস্ত্রহীন লোকেদের আজকাল শুধু ভগবানই রক্ষা করেন ।

আরেকজন কেউ ভেতরে এলো, একজন ইউনিফর্ম পরা অল্পবয়সি মেয়ে, চটপটে পরিচ্ছন্ন ভাব । এই সেই মহিলাটি ?” সে জিগ্যেস করল ; তারপর আমাকে বলল, “যতক্ষণ পর্যন্ত এই ব্যাপারটা শেষ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এই বাড়ি আমরা খালি করব । আপনার কি কোনো বন্ধু বা আত্মীয় আছে যেখানে যেতে চান ?”

আমি কোথাও যাব না । এটা আমার বাড়ি ।

মেয়েটার বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার, উদ্বিগ্নতা কমাল না । আমি জানি,” সে বলল, “কিন্তু এখানে থাকা খুবই বিপজ্জনক । খুব অল্প সময়ের জন্যই আপনাকে বাড়ি ছাড়তে বলছি ।

জানালার কাছে থাকা লোকগুলো এখন কথা বলা বন্ধ করেছে । তারা আমার চলে যাবার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছিল । একজন বলল, অ্যাম্বুলেন্স ডাক । উনি না হয় ষ্টেশনেই অপেক্ষা করতে পারেন ।মেয়েটি বলল । সে আমার দিকে ফিরে বলল, “চলুন, মিসেস----সে অপেক্ষা করল যাতে আমি নামটা যোগাই । আমি যোগালাম না । এককাপ গরম চা খাওয়া যেতে পারে,” সে প্রলোভন দেখাল ।

আমি যাচ্ছি না ।

একটা বাচ্চার কথাকে তারা যেমন গুরুত্ব দেবে না, তেমনি আমার কথাতেও কোনো গুরুত্ব দিল না । এঁর জন্য একটা কম্বল নিয়ে এস,” একজন লোক বলল, “ঠাণ্ডায় জমে ইনি প্রায় নীল হয়ে গেছেন ।

মেয়েটি উপরে গেল এবং আমার বিছানা থেকে লেপটা তুলে নিয়ে এলো । সে সেটা আমার গায়ে জড়িয়ে দিল, আমাকে জড়িয়ে ধরল, তারপর পায়ে স্লিপারও পরিয়ে দিল । আমার পায়ে ধরতে তার কোনো ঘেন্না হল না, ভাল মেয়ে, ভাল বউ হবার জন্য তৈরি হয়েছে

সে জিগ্যেস করল, “আপনি কি কোনো পিল বা ওষুধ সঙ্গে নিয়ে যেতে চান ?”

আমি যাব না,” আমি আমার চেয়ার আঁকড়ে ধরে আবার বললাম ।

ওর এবং অন্যদের মধ্যে মৃদুস্বরে কিছু কথা হল । কোনোও সতর্কবার্তা ছাড়াই আমাকে পেছন দিক থেকে বগলের নিচে ধরে তুলে নেওয়া হল । মেয়েটি আমার পা ধরল । গোটানো কার্পেটের মত তারা আমাকে সামনের দরজার দিকে নিয়ে গেল । আমার পিঠের ব্যথা প্রচন্ডভাবে নাড়া দিয়ে উঠল । চিৎকার করে বললাম, আমাকে নিচে রাখ ।

মহিলাটি নরম সুরে বলল, “এক মিনিট ।

আমি চিৎকার করলাম, “আমার ক্যান্সার আছে । আমাকে নিচে রাখ ।

ক্যান্সার ! কথাটা তাদের মুখে ছুঁড়ে দেওয়াতে কি মজা ! ছুরির মত বিদ্ধ করে কথাটা তাদের থামাল । একে নিচে রাখ, এর জন্য কিছু লাগতেও পারে । আমি আগেই তোমাদের বলেছিলাম অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে

মহিলাটি ভুরু কুঁচকে জিগ্যেস করল, “কোথায় ব্যথা ?”

আমার হৃদয়ে,” আমি বললাম । তাকে দ্বিধাগ্রস্ত দেখাল । আমার হৃদয়ের ক্যান্সার হয়েছে ।তারপর সে বুঝল, এমন ভাবে মাথা নাড়ল যেন মাছি তাড়াচ্ছে ।

তোমাকে তুললে তোমার ব্যথা লাগে ?”

আমার সবসময়ই ব্যথা করে,” আমি বললাম । মহিলাটির চোখ আমার পেছনের লোকটার চোখে পড়ল, ওদের  মধ্যে মজাদার কিছু একটা ঘটল যে সে মৃদু না হেসে পারল না ।

আমি তিক্ততার পেয়ালা পান করে এই ক্যান্সার বাঁধিয়েছি ,” আমি বলতে থাকলাম । তারা আমার মাথা খারাপ ভাবলে আমার কিছু আসে যায় না । তুমিও সম্ভবত: একদিন এই ব্যামো বাঁধাবে, এটা থেকে সহজে ছাড়ান নেই ।

কাচ ভাঙ্গার শব্দ হল । দুজনেই ঘর থেকে দৌড়ে বেরোল । আমি উঠে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ওদের পিছু পিছু গেলাম ।

জানালার আরো একটা  সার্সি ভাঙ্গা ছাড়া আর কোনো পরিবর্তন ঘটেনি । উঠোনটা খালি । পুলিশরা এখন আধ ডজন, সবাই একসঙ্গে বারান্দায় উঠে বন্দুক তাক করছিল ।

সরাও ।একজন হিংস্রভাবে বলে উঠল, “ওকে এখান থেকে সরাও ।

মহিলাটি আমাকে পুঁটুলির মত করে ভেতরে নিয়ে গেল । সে যখন দরজা বন্ধ করছিল, তখন একটা স্পষ্ট বিস্ফোরণের শব্দ হল, তারপর একসঙ্গে অনেকগুলো গুলির শব্দ, তারপর একটা আশ্চর্য নীরবতা, তারপর নিচুস্বরে কথা, এবং কোনো জায়গা থেকে ভারকুয়েইলের কুকুরের ঘেউঘেউ ।

আমি দরজা টেনে খোলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু মহিলাটি আমাকে শক্ত করে ধরে রাখল ।

তোমরা যদি ওকে আঘাত করে থাক, তাহলে আমি তোমাদের কখনো ক্ষমা করব না,” আমি বললাম

ঠিক আছে, আমরা আবার অ্যাম্বুলেন্সকে ফোন করছি,” সে আমাকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করতে করতে বলল ।

কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স তো ইতিপূর্বেই এসে গিয়েছিল, রাস্তার ধারে রাখা ছিলচারদিক থেকে অনেক লোক জমা হচ্ছিল---- পড়শিরা, পথিকরা, অল্পবয়সী, বুড়ো, সাদা, কালো; ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে লোকে নিচে তাকাচ্ছিল । যখন পুলিশ মেয়েটি ও আমি সামনের দরজা দিয়ে বের হলাম, তখন তারা ঠেলাগাড়িতে করে কম্বলে ঢাকা শরীরটিকে ড্রাইভওয়ে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে তুলছিল ।

আমি ও তারপর সেই অ্যাম্বুলেন্সে উঠবার চেষ্টা করলাম; একজন সহায়ক এমন কি আমার হাত ধরে তোলার জন্য এল । কিন্তু একজন পুলিশ বাধা দিল । দাঁড়াও, ওনার জন্য আমরা অন্য অ্যাম্বুলেন্স ডাকছি,” সে বলল ।

আমার অন্য অ্যাম্বুলেন্স চাই না ,” আমি বললাম । সে আমার দিকে দয়ার চোখে, নিরস্ত হবার অনুরোধ মাখা চোখে তাকাল । আমি ওর সঙ্গে যেতে চাই,” আমি বললাম, এবং আবার উঠতে চেষ্টা করলাম । লেপটা আমার পায়ের কাছে পড়ে গেল ।

সে মাথা নাড়ল । না,” সে বলল , সহায়ক লোকটাকে ইঙ্গিত করল দরজা বন্ধ করতে ।

ঈশ্বর আমাদের ক্ষমা করুন!আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম । লেপটাকে গায়ে জড়িয়ে আমি শুণ্ডার স্ট্রিট দিয়ে ভিড়ের থেকে দূর দিয়ে হাঁটতে থাকলাম । আমি রাস্তার মোড়ে প্রায় পৌঁছানোর পর পুলিশ মেয়েটি আমার পেছন পেছন প্রায় দৌড়ে এল । সে আদেশ করল, “তুমি এখন ঘরে যাও ।আমি প্রচণ্ড রেগে বললাম, ওটা আর আমার বাড়ি নয় ,” বলে চলতে থাকলাম । সে আমার হাত ধরল, আমি ছাড়িয়ে নিলাম । একেবারে মাথার ঠিক নেই,” সে বলল বিশেষ কাউকে লক্ষ্য না করে, এবং হাল ছেড়ে দিল ।

ব্যুইটেন্‌কান্ট্‌ স্ট্রিটে ফ্লাইওভারের নিচে আমি বিশ্রাম করতে বসলাম । গাড়ির অবিশ্রান্ত স্রোত শহরের দিকে ছুটছে । আমার দিকে কেউ দেখলও না । উসকোখুসকো চুল ও গোলাপি লেপ নিয়ে শুণ্ডার স্ট্রিটে আমি দর্শনীয় বস্তু হতাম ; এখানে নোংরা আবর্জনার মধ্যে  আমি শহুরে অন্ধকার জগতের এক অংশমাত্র ।

কোন মন্তব্য নেই: