তবুও আমি
উঠি
_______________________________________________________
(মায়া অ্যাঞ্জেলো
জন্ম ১৯২৮, মৃত্যু
২০১৪, প্রকৃত নাম
মার্গারিত অ্যানি জন্সন, প্রখ্যাত আফ্রিকীয়-আমেরিকীয় লেখিকা, কবি ও সমাজ ও মানবাধিকার কর্মী ।
আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষিতে ওঁর এই কবিতাগুলো খুবই প্রাসঙ্গিক বলে মনে হল ।
তাই অনুবাদ এখানে দিলাম । ~ শিবানী দে । )
তোমরা আমাকে
ইতিহাসের পাতা থেকে বাদ দিতে পার
তোমাদের তেতো,
ব্যাঁকাচোরা
মিথ্যা দিয়ে
তোমরা আমাকে
ময়লার মতো পায়ে দলে যেতে পার,
কিন্তু আমি ধুলোর
রেণুর মত আবার উঠব ।
আমার ঔদ্ধত্য কি
তোমাদের বিচলিত করে ?
কেন তোমাদের এত
মুখ ভার ?
কারণটা কি আমি
চলছি এমনভাবে যেন
আমার বসবার ঘরেই
তেলের খনির থেকে তেল তুলছি ?
ঠিক অনেক
সূর্যোদয় এবং চন্দ্রোদয়ের এবং
অনেক জোয়ারের
নিশ্চয়তার সঙ্গে
অনেক আশার
উত্থানের মত
আমি উঠতে থাকব ।
তোমরা কি
চেয়েছিলে আমি ভেঙ্গে যাব ?
মাথা ঝোঁকানো,
দৃষ্টি নত ?
চোখের জলবিন্দুর
মত দু-কাঁধ ঝোঁকানো
হৃদয়ভাঙ্গা
স্বরে বিলাপ-দুর্বল ?
আমার অহংকার কি
তোমাদের আঘাত দেয় ?
তোমরা অত
কঠোরভাবে নিয়োনা
যে আমি হাসছি,
যেন খুঁড়ে
পেয়েছি
আমার ঘরের
পেছনেই সোনার খনি ।
তোমরা কথা দিয়ে
আমাকে গুলি করতে পার।
তোমাদের চোখ
দিয়ে কেটেও ফেলতে পার
তোমাদের ঘৃণা
দিয়ে হত্যা করতেও পার,
কিন্তু তবুও,
বাতাসের মত আমি
জাগব ।
আমার যৌনতা কি
তোমাদের উদ্বেগ বাড়ায়?
তোমাদের কি
আশ্চর্য লাগে
যে আমি নাচছি
এমনভাবে যেন
আমার দু উরুর
সন্ধিতে হিরে রাখা আছে ?
ইতিহাসের লজ্জার
কুটির থেকে
আমি জাগি ।
বেদনার মূল
প্রোথিত যে অতীতে, সেখান
থেকে
আমি জাগি ।
আমি এক কালো
সাগর, ছুটন্ত এবং আয়ত,
আমি স্রোতকে
একবার ভেতরে টানি, আরেকবার
ফুলে উঠি,
সন্ত্রাস ও
ভীতির রাতকে পেছনে ফেলে
আমি জাগি,
অদ্ভুত পরিষ্কার
এক সকালে
আমি জাগি,
আমার পূর্বজরা
যে দান দিয়েছিল তা নিয়ে এসে
আমিই দাসদের
স্বপ্ন এবং আশা,
আমি উঠি,
আমি উঠি,
আমি উঠি ।
খাঁচার
পাখি মায়া এঞ্জেলো
_____________________________
স্বাধীন পাখি
বাতাসের পিঠে
চড়ে
শরীর ভাসিয়ে চলে
বায়ুস্রোত
যতক্ষণ চলে
ততক্ষণ ।
সূর্যের কমলা
রঙে ডানা চুবিয়ে
আকাশ অধিকার
করার স্পর্ধা দেখায় ।
কিন্তু যে পাখি
তার সংকীর্ণ খাঁচায়
পায়চারি করতে
থাকে,
তার খুব কমই
দেখবার আছে
খাঁচার ক্রোধিত
শিকের ফাঁক দিয়ে ।
তার ডানার
পালকগুলো ছাঁটা, আর
তার পা দুটো
বাঁধা,
তাই সে গলা খোলে
গান গাইতে ।
খাঁচার পাখি গান
করে
তার স্বরে তীব্র
কাঁপন অজানিতের প্রতি ভীতির,
অথচ আকর্ষণের,
আর তার স্বর
শোনা যায়
দূর পাহাড় থেকে,
কারণ খাঁচার
পাখি স্বাধীনতার জন্য গান করে ।
মুক্ত পাখি অন্য
বাতাসের কথা ভাবে
দীর্ঘশ্বাস ফেলা
গাছগুলোর মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু বাণিজ্যবায়ুর কথা
মাঠে অপেক্ষারত
ভোরের আলোয় চক্চকে মোটা পোকাদের কথা
আর সে আকাশকে
নিজের বলে দাবি করে ।
কিন্তু খাঁচার
পাখি দাঁড়িয়ে থাকে স্বপ্নের কবরের উপর,
তার ছায়া
দুঃস্বপ্নের চিৎকার করে
কিন্তু তার
পাখনা কাটা, তার
পা বাঁধা,
তাই সে তার গলা
খোলে গান গাইতে ।
খাঁচার পাখি গান
গায়
গলায় তার ভীতির
কাঁপন অজানিতের,
অথচ আকর্ষণের
আর তার স্বর
শোনা যায়
দূর পাহাড় থেকে,
কারণ খাঁচার
পাখি
স্বাধীনতার গান
গায় ।
---------------------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন