(C )Image:ছবি |
------------------------------
© সুনীতি দেবনাথ
নীল সমুদ্রের চোরাবালিতে ডুবো পায়ে
সেদিন দৌড়োতে দৌড়োতে ওরা
হুমড়ি খেয়ে ঠিক পড়েছিল ঢেউয়ের কোলে।
তারপর ভিজে গেলো, ঢেউয়ে নাচলো
সাঁঝের ছায়াঘেরা অস্পষ্ট আলোয়--
টলেটলে ঢলেঢলে ফিরে গেলো ঘরে।
সেই চান্দ্রমাসে ছেলেটি কথা দেয়
আগামী পূর্ণিমার প্রথম ভোরে প্রথম আলোয়
মেয়েটিকে সে সাজিয়ে দেবে দেবেই
গুচ্ছ গুচ্ছ কৃষ্ণচূড়ার স্তবকে স্তবকে।
তারপর তারার আলোয় সে কী যুগল নৃত্য!
সেদিন পূর্ণিমার ভোর
আকাশের আঙিনায় লেগেছে লালের ছোঁয়া
সাতসকালে মেয়েটি ডুব ডুব দিঘীর জলে
স্নান শেষে সবুজ শাড়ি পরলো
হলুদ ব্লাউজে সোনালি চুমকির
চিকন কারুকাজ
কপালে হলুদ ছোট্ট এক চিলতে
টিপ!
খোলা দরজায় হেলান দিয়ে কোণার্কের প্রতিমা!
এরপর অসহনীয় প্রতীক্ষা _
সকাল গড়ালো দুপুরে গনগনে আগুন সূর্য,
দুপুর ছুটলো ক্লান্ত বিকেলের ম্লানিমায়
সেতো এলোনা -- আর মেয়েটি?
ঝনাৎ ঝনাৎ কাচের টুকরো ভেঙ্গে ভেঙ্গে।
গেটের ওপাশে হুডখোলা পক্ষীরাজ জিপ
কত সফরের রোমাঞ্চ গায়ে মেখে!
ঝনঝনিয়ে উঠলো সারাটি শরীর ছুটলো মেয়েটি।
ছুটছে পক্ষীরাজ হুড খোলা জিপ ছুটছে নাকি উড়ছে
নাকি বোল্ডার ছড়ানো পাহাড়ি পথে
উঠছে নামছে দোল দোদুল দুলছে
দুলছে যেন পার্কের দুরন্ত নাগরদোলায়,
উড়ছে খোলা চুল উড়ন্ত আঁচল
মনটা ছুটছে বাজছে দুরন্ত মাদল।
ওখানে যেতে হবে যেতেই হবে
পাহাড়ের খাঁজে নিচে ঝর্ণা ছলোছল নটিনী,
ওখানে সেই ছেলেটি ক্যানভাসে ছবি আঁকে
ওকি ভ্যান গগ নাকি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি?
জানা হলো না!
মেয়েটির একটা ছবিও আঁকেনি সে, একদিনও না!
কি যে আঁকে সেই জানে।
মনে হয় দেখে আদিম মানবের গুহাচিত্র যেন
ছেলেটিকে মনে হয় বহুকাল আগের
সেই আধামানুষ, সেও নিজে তেমনি মানবী।
মন চাইতো বলে, আমাকে আঁকো না!
আর তখনই ভোরালি সিঁদুরে লজ্জা আঁকতো মুখে,
না বলেনি কোনদিন।
যখন আঁধার নামছে ভরা পূর্ণিমা নিটোল --
অরণ্য ঝর্ণা জ্যোৎস্না স্নানে মগ্ন
মেয়েটি কাঁপা পায়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে চললো
পৌঁছে গেলো সেখানে, ডাগর চোখ আরো বড় করে তাকালো
সুবিশাল ক্যানভাসে সেই তো শুয়ে
অবিকল সে, তার দীঘল গোছা চুলে
সাজানো কৃষ্ণচূড়ার গুচ্ছ, ওডিসি নৃত্য মুদ্রায় এলিয়ে আছে
বাহুবল্লরী
অলক্তক সিঞ্চিত দুটি পা,
আধবুজানো আঁখি দুটি!
সে যেন নারী নয় স্বর্গনদী সুরধুনী!
ছেলেটি শুয়ে আছে পদতলে
যেন দেবাদিদেব মহেশ্বর!
এ কী অপরূপ দৃশ্যপট!
মুহূর্তে সে ছবি হয়ে গেলো
গঙ্গোত্রী থেকে সহস্র ধারে আনন্দে তরঙ্গ তুলে সে নেমে আসছে
ভেসে যাচ্ছে দিগ্ দিগন্ত বেগের তাণ্ডবে,
আর হাসিমুখে ছেলেটি ছড়িয়েছে জটাজুট
মস্তকে ধারণ করছে বেগবতীর ধারা।
মেয়েটি গলে যাচ্ছে কেবলই যাচ্ছে,
ছেলেটি হাসিমুখে তাকে
জটাজুটে আটকে রাখছে শুধু রাখছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন