দৈনিক সংবাদের ৮ অক্টোবর, ১৫তে বেরুলো |
বৈদিক ধর্মমতের অপরিহার্য বিশেষত্ব হচ্ছে, বহু ইশ্বরবাদ। ঈশ্বরদের মধ্যে নরত্ব আরোপ করে, প্রচুর সংখ্যক দেবদেবী ও অবতারের পূজা অর্চনা এই ধর্মমতের
মূল প্রতিপাদ্য। বৈদিক যুগে ভারতীয়রা নানা প্রাকৃতিক ঘটনাবলী এবং দেবদেবীদের উপর
আরোপ করতেন মানবিক গুণাবলী ও দোষত্রুটি। মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পায় প্রত্নতাত্ত্বিকেরা পেয়েছেন অনেক মন্দির। সেখানে যেসব
দেবতার চিহ্ন পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায়, পুরুষ থেকে নারী দেবতারই আধিক্য। একমাত্র শিবেরই আরাধনা করা
হয়েছে বলে, অনুমান করা হয় সেখানে। এর থেকে ধরে নেয়া
যায়, তখন মাতৃতান্ত্রিক সমাজের শেষ পর্যায়ে এই
দুটি সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। ওখানে শিবের পশুপতি মূর্তি ও সঙ্গে অনেক পশু আবিষ্কৃত
হওয়ায়, বোঝা যায়, শিব তখন পশু সম্পদের দেবতা ছিলেন।
একটা বিষয় এখানে উল্লেখযোগ্য যে, এই দুটি মাত্র সভ্যতাই আবিষ্কৃত হয়েছে বলে, ধরে নেয়া যাবেনা যে, ঐ সময়ে অত্রাঞ্চলে অন্য কোন সভ্যতা গড়ে উঠেনি। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা
যায়, সমসাময়িক অনেক সভ্যতাই ভারতে ছিল। এমনকি, এই দুটি সভ্যতার সাথে দক্ষিণ ভারতেরও যোগাযোগ ছিল। যাইহোক, ‘ডেন্ড্রোক্রোনোলজি’ ও ‘তেজস্ক্রিয় কার্বন-চৌদ্দ’ পদ্ধতিতে প্রমাণিত হয়েছে, এই দুটি সভ্যতা মোটামুটি খ্রিষ্ট-পূর্ব কুড়ি শতাব্দী থেকে পনের শতাব্দীতেই
ধ্বংস হয়ে যায়। ঐ দুটি সভ্যতা বার বার বন্যা কবলিত হওয়াতেই পরিত্যক্ত হয়, এবং সব কিছুই বন্যার পলি-মাটির নীচে চাপা পড়ে যায়।
পরবর্তীতে, খ্রিষ্টপূর্ব বার
শতাব্দী থেকে এগার শতাব্দীতে ইন্দো-আর্যদের প্রথম আকর সাহিত্য, ঋকবেদ রচিত হয়। এসব প্রথমে মুখে মুখে প্রচলিত ছিল, যা তখন লিপিবদ্ধ করা হয় গ্রন্থাকারে। প্রায় এক শতটি গ্রন্থে বৈদিক সাহিত্য তথা
বেদ রচিত হয়েছিল। এর প্রধান চারটি ধারা আছে। এগুলো হচ্ছে সংহিতা বা সংগ্রহ, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং
উপনিষদ। ঋকবেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ আর অথর্ব বেদকে বলা হয় সংহিতা।
ঋকবেদই হচ্ছে বেদের সবকটি রচনার মধ্যে সবচেয়ে পুরানো। খ্রিষ্ট পূর্ব ৭ থেকে ৬ শতাব্দীতে
বাকি বেদগুলো রচিত হয়েছিল। বেদে সমন্বিত মতবাদই হচ্ছে, ভারতে উদ্ভূত ধর্মবিশ্বাসগুলোর মধ্যে, সব থেকে প্রাচীন একটি সুসংহত মতবাদের রূপ। এই মতবাদ ভারতীয়
উপমহাদেশে পরবর্তী কালের ধর্মীয় মতামত এবং দার্শনিক চিন্তা ভাবনায় অসাধারণ প্রভাব
বিস্তার করে। তবে বৌদ্ধ ধর্মের মত এর প্রভাব দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েনি।
ঠিক ওই সময়েই দোয়াব অঞ্চলের ইন্দো-আর্য
সমাজে, মাতৃতান্ত্রিক যুগের অবসান ঘটে। বংশের
ধারা পিতার দিক থেকেই গণ্য করা হতে থাকে। এমতাবস্থায়, স্বাভাবিক ভাবেই এর প্রভাব পড়ে দেবতাদের কল্পনাতেও।
পিতৃতান্ত্রিক যুগে তাই প্রাধান্য পেয়ে যায় দেবতারা। মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা সভ্যতায়
আমরা যা পেয়েছি ঠিক তার বিপরীত চিত্র পরিলক্ষিত হতে থাকে শিল্পে সাহিত্যে, এমনকি দেব-দেবী কল্পনাতেও। পুরানো তিন দেবতা বরুণ, রুদ্র এবং ব্রহ্মা আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেন, এমনকি তাদের নূতন নূতন নামেও পরিচিত হতে দেখা যায়। ব্রহ্মা
আর শিবের মধ্যে পার্থক্য ঘুচতে থাকে। যেমন, শিবকে দেবাদিদেব মহাদেব বলতে দেখা যায়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নূতন নূতন
দেব-দেবীদের আবির্ভাব ঘটতে থাকে। তবে একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, এই ভারতীয় উপমহাদেশের বৈচিত্র্য অনুযায়ী বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর
অগ্রগমন একই সাথে ঘটেনি। আর্য অনার্যের মিলে-মিশে একাকার হয়ে গড়ে উঠা জাতিগোষ্ঠীগুলো
দোয়াব অঞ্চলেই তাদের আধিপত্য বিস্তার করে সবচেয়ে বেশি। বৈদিক ধর্মবিশ্বাস পরিণত হয়ে উঠতে অর্থাৎ
বিশিষ্টতা অর্জন করে নিতে অনেক দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়। এই অঞ্চলের বাইরে এই ধর্ম
বিশ্বাসের প্রসার ঘটলেও, সমস্ত জাতিগোষ্ঠীতে
তার প্রভাব সমান ভাবে পড়েনি।
তাই এখনো দেখা যায়
অনেক ট্রাইব সেই মান্ধাতার আমলেরই নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস নিয়েই চলছে। ঠিক এমনটাই
সমস্ত বিশ্বেও দেখা যায়। তবে
বৈদিক ধর্ম এত সময় নেয়ার কারণে ঐ সময়ের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও সামাজিক প্রগতির
বিভিন্ন স্তর থেকে বিভিন্ন যতো বিষয় আত্তীকরণ করেছে, তা এই সাহিত্যেরও বিভিন্ন সময়ের স্তরে স্তরে প্রতিফলিত হয়েছে। ঋকবেদে আরাধ্য
দেবতাদের শ্রেণী-বিন্যাস করার একটা প্রয়াসও লক্ষ্য করা যায়। বৈদিক ভারতীয়দের
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে স্বর্গ মর্ত ও অন্তরীক্ষ, এই তিনটি ভাগে ভাগ করে কল্পনা করার যে তত্ত্ব ছিল, তার ফলস্বরূপ দেবতাদেরও সেইভাবে মোটামুটি তিনটি গোষ্ঠীতে
ভাগ করে নেয়া হয়েছিল। এই তিনটি অংশের আলাদা আলাদা দেবদেবী ছিলেন।
বৈদিক সাহিত্যে সাধারণ মানুষের মতই, এই সব দেবতাদের এক দিকে যেমন দয়া, করুণা, ভালবাসার কথা উল্লেখ আছে; ঠিক তেমনই অন্য দিকে আছে প্রচণ্ড ক্রোধ, লোভ, হিংসা বিদ্বেষ,
কামনা বাসনা,
যৌন আকাঙ্ক্ষা,
জিঘাংসার মূর্ত
বর্ণনা। প্রায় প্রত্যেক শক্তিশালী দেবতা কল্পিত হত তেজস্বী দুর্ধর্ষ বীরযোদ্ধা
রূপে। এই রকম বৈদিক এক দেবতা রুদ্র ছিলেন শক্তিশালী ঝড়, তুফান, বন্যার দেবতা
হিসেবে। অপর দিকে শিব
অনার্য দেবতা হলেও, শিবের মধ্যে
ধ্বংসকারী শক্তি কল্পিত হয়েও, ধর্ম সমন্বয়ের
ফলে তিনি আর্য দেবতা হয়ে উঠেন।
দুই ভিন্ন বড়
দেবতা রুদ্র ও শিবকে আলাদা না ভেবে, একই দেবতা হিসাবে
কল্পনা করা হতে থাকল।
অবশ্য দুই ভিন্ন
দেবতা এভাবে এক হওয়ার দৃষ্টান্ত বৈদিক ধর্ম সাহিত্যে এটাই একমাত্র ঘটনা নয়। এর
আগে বৈদিক সাহিত্যে অগ্নি ও রুদ্র দুই দেবতা এক হবার ইতিহাস আছে। নিরুক্তি নামের গ্রন্থে বর্ণনা আছে, অগ্নিকে রুদ্রে অঙ্গীভবনের কথা। ঋগ্বেদেও রুদ্রের বর্ণনা
আছে। যজুর্বেদ অনুযায়ী শিব একদিকে ভয়ংকর, অন্যদিকে দয়া ও মঙ্গলের প্রতীক। মহাভারতেও শিব দুর্জয়, ভয়ংকর আবার সম্মান ও মহত্বের মিলিত
সত্ত্বা হিসাবে কল্পিত হয়েছেন। ধাপে ধাপে এভাবে শিবের মর্যাদা বেড়ে যায়। শিব
পরিচিতি পান একই সাথে সৃষ্টি, স্থিতিশীলতা ও ধ্বংসের সর্বোচ্চ দেবতা রূপে। অন্যদিকে নিজের
স্বকীয়তা হারিয়ে রুদ্র বিলীন হয়ে যান শিবের মধ্যে।
বৈদিক যুগের শুরুর দিকে বিষ্ণু ও শিব
ছিলেন অপেক্ষাকৃত অপ্রধান দেবতা। বরং ইন্দ্রের
স্থান ছিল অনেক ঊর্ধ্বে আর্যদের কাছে। এক হাজার খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ থেকে সাতশ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে, ব্রাহ্মণ রচনার কাল থেকে তাদের গুরুত্ব, তেজ ও প্রভাব
বাড়তে থাকে। এক সময়, এই দুই দেবতাকে
সামনে রেখে দুই পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে গড়ে উঠে বৈষ্ণব ও শৈব নামে দুটি পৃথক
সম্প্রদায়। হিন্দু ধর্মে শাক্ত সম্প্রদায় নামে আরো একটি শাখারও উদ্ভব হয়েছিল।
বিপরীতে অনার্য নৃ -গোষ্ঠীগুলোতে
মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা তখনো টিকে থাকায়, তাদের জীবনে প্রাধান্য ছিল দেবীদের। এই দেবীরা প্রায়শই পূজিতা হতেন
আদ্যাশক্তির প্রতীক রূপে।
মাতৃতন্ত্রের
পরিবারের গঠন ও উর্বর শক্তির সমন্বয়ের কথা বিবেচনায় এনে, অনার্য সমাজে গড়ে উঠে মাতৃ প্রধান দেবী সংস্কৃতি। মাতৃপ্রধান পরিবারের আর্দশকে সামনে রেখে
দেবী বিশ্বাসে গড়ে উঠে শাক্ত সম্প্রদায়। এই মত অনুসারে দেবী হলেন শক্তির রূপ, তিনিই তাদের পরব্রহ্ম। শাক্ত মতে কালীই বিশ্বসৃষ্টির আদি
কারণ বলে কল্পনা করা হত।
ভাবা হত, অনান্য দেব-দেবী মানুষের মঙ্গলার্থে তাঁর বিভিন্ন রূপের
প্রকাশ মাত্র। প্রধান শাক্ত ধর্মগ্রন্থ দেবীভাগবত পুরাণে, দেবীই সমস্ত শক্তির উৎস। এখানে বলা আছে- “আমিই প্রত্যক্ষ
দৈবসত্ত্বা, অপ্রত্যক্ষ দৈবসত্ত্বা, এবং তুরীয় দৈবসত্ত্বা। আমিই ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব। আবার আমিই সরস্বতী, লক্ষ্মী ও পার্বতী। আমি সূর্য, আমি নক্ষত্ররাজি, আবার আমিই চন্দ্র” ইত্যাদি।
শাক্ত ধর্মাবলম্বীরা ব্রহ্মের বিকল্প শক্তিরূপে
দেবীর পূজা করতে শুরু করে। এই সমস্ত দেবীদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে, চণ্ডী বা কালী। তবে পুরুষতন্ত্রে বিশ্বাসী আর্যদের আগমনের
পর এই সব অনার্য দেবীদের একক প্রভাব আস্তে আস্তে কমে গিয়ে আর্য পুরুষ দেবতাদের
সাথে সমন্বিত হয়ে তারা পাশাপাশি অবস্থান নেয়। তাই শাক্তমতে ব্রহ্মের পুরুষ রূপটি শিবের
মধ্যে প্রতিফলিত হতে দেখা যায়।
ঐ সময়ে শাক্তদের
নির্ধারিত, এই দেবী-শক্তির একক নেতৃত্ব, পুরুষ তান্ত্রিক শৈব জনগোষ্ঠীর পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব হয়নি। তাই শৈব ও শাক্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে
প্রথম দিকে প্রচণ্ড বিরোধ ছিল।
কালক্রমে একটা
গ্রহণযোগ্য সমাধানে অর্থাৎ সমন্বয়ে এসে তা স্থিত হয়। শিবের সাথে সম্পর্ক সমন্বয় করে কেউ
হয়েছেন শিবের স্ত্রী, কেউ বা কন্যা, আবার কারো স্থান হয়েছে পুত্রবধূ রূপে।
শাক্ত ধর্মাবলম্বীদের প্রধান দেবী হলেন
কালী। বাংলায় কালীর বিভিন্ন রূপের কথা বলা আছে। যেমন, দক্ষিণা কালী, শ্মশান কালী, ভদ্র কালী, রক্ষা কালী, গুহ্য কালী, মহা কালী, চামুণ্ডা ইত্যাদি। বাংলায় ঠিক কবে থেকে, শক্তির আদি বলে খ্যাত কালী পূজার প্রচলন শুরু হয়েছিল, তার কোন স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় না। মনে করা হয়, খ্রিষ্টীয় ৭ম শতাব্দী থেকে বাংলায় কিছু কিছু অঞ্চলে কালী
পূজার প্রচলন শুরু হয়েছিল। এই রকম আরেক শক্তিশালী দেবী ছিলেন মনসা। মনসা পূজা ছিল
কিছুটা প্রাচীন। দুর্গার আগে থেকেই নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা মনসা পূজা চালু করে।
নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের এই সব পূজিতা দেবী উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের কাছে কখনো গুরুত্ব
লাভ করেনি। ফলে মনসা দীর্ঘ দিন উচ্চ বর্ণের সেবা থেকে দূরেই থাকেন। খ্রিষ্টীয়
চতুর্দশ শতাব্দী থেকে মনসাকে শিবের কন্যারূপে কল্পনা করে তাঁকে শৈবধর্মের
অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হলে, মনসার গুরুত্ব
কিছুটা বেড়ে যায়। শিবের কন্যা বিবেচিত হওয়ার পর উচ্চ বর্ণের কাছে মনসা কিছুটা
মর্যাদা পেয়ে যায়, কিন্তু অপেক্ষাকৃত
কম শক্তিধর দেবী হিসাবে। অন্যদিকে চণ্ডী, দুর্গা বা কালী শিবের স্ত্রী কল্পিত হওয়ায়, প্রভূত মর্যাদার অধিকারিণী হয়ে যান। তারা বিবেচিত হন অসীম
শক্তির অধিকারিণী দেবীর ভূমিকায়। মহাভারত অনুসারে দুর্গা বিবেচিতা হতে থাকেন কালী
শক্তির আরেক রূপ হিসেবে। নানা অমিল ও বৈচিত্র্য থাকা স্বত্বেও কালী দুর্গার রূপের
সাথে মিশে এক হয়ে যান।
মার্কেণ্ডয় পুরাণ মতে, অসুর স্বর্গ থেকে দেবতাদের বিতাড়িত করে স্বর্গ অধিকার করলে,
দেবতারা ব্রহ্মার
শরণাপন্ন হন। ব্রহ্মা এর প্রতিকারের জন্য মহাদেব ও অন্যান্য দেবতাদের নিয়ে
বিষ্ণুর কাছে উপস্থিত হলে, বিষ্ণু দেবতাদের
পরামর্শ দেন যে, প্রত্যেক দেবতা নিজ নিজ তেজ ত্যাগ করে একটি নারীমূর্তি সৃষ্টি করবেন। এই ভাবে
মহাদেবের তেজে মুখ, যমের তেজে চুল, বিষ্ণুর তেজে বাহু, চন্দ্রের তেজে স্তন, ইন্দ্রের তেজে কটিদেশ, বরুণের তেজে জঙ্ঘা
ও উরু, পৃথিবীর তেজে নিতম্ব, ব্রহ্মার তেজে পদযুগল, সূর্যের তেজে পায়ের আঙ্গুল, বাসুদেবের তেজে
হাতের আঙ্গুল, কুবেরের তেজে নাসিকা, প্রজাপতির তেজে দাঁত, অগ্নির তেজে ত্রিনয়ন, সন্ধ্যার তেজে
ভ্রূ, বায়ুর তেজে কান এবং অন্যান্য দেবতাদের তেজে শিবারূপী দুর্গার সৃষ্টি হয়।
মূল বাল্মীকির রামায়ণে দুর্গা পূজার কোন
অস্তিত্ব আমরা দেখতে পাই না। মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তশালী কবি
কৃত্তিবাস ওঝা, সংস্কৃত রামায়ণ বাংলা অনুবাদ করেন
কৃত্তিবাসী রামায়ণ নামে। যা বাংলাভাষী হিন্দু সমাজে জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় দ্রুত।
সেখানে তিনি কালিকা পুরাণের ঘটনা অনুসরণে, ব্রহ্মার পরামর্শে রামের দুর্গা পূজা করার কথা উল্লেখ করেছেন। শক্তিশালী
রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় নিশ্চিত করতেই, রাম দুর্গা পূজা করেন বলে বর্ণনা করা হয়েছে । তবে দুর্গা পূজার সব চাইতে ভাল বর্ণনা
পাওয়া যায় মার্কণ্ডেয় পুরাণে।
এই পুরাণের মধ্যে
তেরটি অধ্যায় দেবীমহাত্ম্যম নামে পরিচিত। বাংলায় শ্রীশ্রী চণ্ডী নামে সাতশত শ্লোকের দেবী মহাত্ম্যম পাঠ, দুর্গা পূজার প্রধান ও অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে পূজার
অনুষ্ঠানে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন