===========
© সুনীতি দেবনাথ
আজ কেন জানি তোমার কথাই
সারাদিন আমাকে জড়িয়ে আছে।
গ্রীষ্মের আকাট গরমে ঘরে টেঁকা দায়
তুমি কাঁঠালের নিচে চুপটি বসে
আকাশ দেখে যেতে আনমনা --
মাথার কল্কেপাড় আঁচল উড়ে গেছে
খোলা একঢাল চুল নদী হয়ে লুটিয়ে
কাঁপছে পিঠ পেরিয়ে মাটির কাছাকাছি
ডাগর বিষাদীআকাশ চোখে ছায়া
কিসের জানিনা! আমার পলকহীন চোখে
মনে হতো মা দুগ্গা যেন।
আমি পা টিপে এগিয়ে পাশে বসে
কত যে ভেবেছি, নিরুচ্চারে মা মাগো
বলে কত যে ডেকেছি তুমি জানো না।
তোমার সেই উন্মনা ছবি মনের ক্যানভাসে
এঁকে দিলেন যামিনী রায়,
তোমার চোখ দুটি পটচিত্র যেন।
আর অবনঠাকুর নিরীক্ষণ শেষে
তুলি হাতে ভুরু কুঁচকে দিলেন জলরঙে
দুচারটি আঁচড়, ফিনিশিং টাচ্!
অবাক হয়ে দেখি তুমি হয়ে গেছো
একেবারে ঠিকঠাক অবিকল ভারতমাতা
যেমনটি দেখেছি ছবিতে ।
এদিক ওদিক তাকিয়ে চুপিচুপি বুকের
মাঝখানটিতে ঝিনুক কৌটোয় সেদিন
তোমাকে রেখে দিলাম - আমার মা!
শেষের সে দিনে প্রচণ্ড ঝড়ের রাত
আকাশে একটিও তারা নেই শব্দেরা সব
নিস্তব্ধ, হারিকেনের নিঝ্ঝুম আলো
তোমাকে ঘিরে বুক ঢিপঢিপ আমরা
শঙ্খমালার মত তোমার দুটি হাত এলানো
কঙ্কাল যেন চামড়ায় ঢাকা।
চোখ দুটি কালো আবর্তে মরাজোনাকি!
মরা নদীর অন্তর থেকে হঠাৎ ক্ষীণধারা
স্রোতের আশ্লেষে তোমার দুচোখের জল
মহাপ্লাবনের মত উথলে উঠলো।
স্তব্ধতার স্তবকে স্তবকে অন্য এক দাহ!
জল নয় এযেন আগুনের শিখা
লকলকে। যামিনী রায় এলেন তিনিও
এলেন অবন ঠাকুর, ছুঁড়ে ফেললেন রঙ তুলি
ক্যানভাস, বাইরে স্তিমিত ঝড়,
এমন দেশমাতার ছবি লেখা- আঁকা
অসম্ভব বুঝে গিয়ে চোখ বুজলেন তাঁরা
সে রাতে আমার মা মরে গিয়েছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন