“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৫

আয়স কাল ০৫


(দক্ষিণ আফ্রিকীয় লেখক জে এম কোয়েটজি-র লেখা 'এজ অব আয়রন'- উপন্যাসের  বাংলা অনুবাদের পঞ্চম ভাগঃ -- শিবানী দে )
(C)image:ছবি

        তিনবছর আগে আমার বাড়িতে চুরি হয়েছিল। (তুমি হয়তো মনে করতে পার, আমি চিঠিতে লিখেছিলাম )। চোরেরা যতটুকু বয়ে নিয়ে যেতে পারে, নিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু যাবার আগে তারা প্রত্যেকটি ড্রয়ার ভেঙ্গে ফেলেছিল, সবকটা তোষক ফালা ফালা করেছিল, বাসনপত্র বোতল ভেঙ্গেছিল, রান্নাঘরে  সব খাবার মেঝেয় ফেলে দিয়েছিল ।

          আমি বিহ্বল হয়ে গোয়েন্দা পুলিশকে জিগ্যেস করেছিলাম, 'এরকম কাজ করে  ওদের কি লাভ হল ?' সে বলেছিল, 'ওরা এইরকমই, জানোয়ার।'

           সেই ঘটনার পর আমি জানালাগুলোতে গরাদ বসালাম । গরাদগুলো একজন মোটাসোটা ভারতীয় লোক বসিয়েছিল । সে স্ক্রু এঁটে ফ্রেমের মধ্যে গরাদগুলোকে আঁটল, প্রত্যেকটা স্ক্রু-র মাথায় একরকমের আঠা লাগিয়ে দিয়ে ব্যাখ্যা দিল, 'এখন আর স্ক্রুগুলো কেউ খুলতে পারবে না ।' যাবার সময়  আমার মাথা চাপড়ে সে বলল, 'এখন তুমি নিরাপদ ।'

          'তুমি এখন নিরাপদ'----কথাটা যেন একজন চিড়িয়াখানার পশুরক্ষকের, যখন সে রাত্রির জন্য কিছু পাখা ছাড়া, উড়তে না পারা পাখির খাঁচা বন্ধ করে; যেমন একটা ডোডো----শেষ ডোডো পাখি, বুড়ো, ডিম পাড়ার বয়স যার চলে গেছে । 'এখন তুমি নিরাপদ'-----খাঁচা বন্ধ, কারণ হিংস্র শিকারিরা বাইরে ঘোরাফেরা করছে । একটা ডোডো নিজের বাসায় কোঁকাচ্ছে, এক চোখ খোলা রেখে ঘুমোচ্ছে , ক্লান্ত চোখে প্রভাতকে বরণ করছে । কিন্তু সে আছে নিরাপদ খাঁচায়, জানালার গরাদ, টেলিফোনের, টেলিভিশনের তার সব ঠিকঠাক । টেলিফোনের তার, যাতে চরম কষ্ট হলে সে সাহায্যের জন্য কাঁদতে পারে, টেলিভিশনের তার, যার মধ্য দিয়ে দুনিয়ার আলো এসে পৌঁছোয়, আকাশের তার, যা দিয়ে তারার সঙ্গীত এসে পৌঁছোয় ।

            টেলিভিশন ! কেনই বা দেখি ? প্রতি সন্ধ্যায় রাজনীতির লোকেদের মিছিল। শৈশব থেকেই ভারি ভারি মুখগুলো দেখে আসছি যা দেখলে শুধুই নিরাশা আসে, বমি পায় । স্কুলের একেবারে পিছনের বেঞ্চে বসা মোটাসোটা হাড়ওলা মাংসল ছেলেরা, এখন বয়স হয়ে যাবার পর দেশ শাসন করতে এসেছে । তারা আর তাদের মা বাপ কাকা মামা মাসি পিসি ভাই বোন যেন পঙ্গপালের ঝাঁক, কালো পঙ্গপালের ঝাঁক অনবরত সব কিছু খেয়ে গিলে সারা দেশটাকে নষ্ট করে দিয়েছে । মনের মধ্যে ভয় ও ঘৃণা নিয়ে আমি কেন তাদের দেখি ? কেন তাদের আমার বাড়ির মধ্যে আনি ? কারণ পঙ্গপাল পরিবারের  রাজত্বই দক্ষিণ আফ্রিকার বাস্তব, আর এই বাস্তবই কি আমাকে পীড়িত করে? বৈধতা দাবি করার বালাই তাদের নেই । যুক্তিকে তারা বিসর্জন দিয়েছে । ক্ষমতা এবং ক্ষমতার মৌতাত তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে । খাওয়া ও বকবক করা, চিবোনো ও উদ্গার তোলা, ভরা পেটের সুস্থিরতায় কথা বলা, গোলবৈঠকে বসে একগুঁয়ে তর্ক, হাতুড়ির ঘায়ের মত বিচারহীন ডিক্রি----মৃত্যু, মৃত্যু, মৃত্যু । মড়ার দুর্গন্ধে ওদের নাড়া দেয় না । ভারি চোখের পাতা, শুয়োর চোখ, কয়েক প্রজন্মের চাষাসুলভ ধূর্ততা । নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে । তাও চাষাদের অলস চক্রান্ত, যা কয়েক দশক লেগে যায় পাকা হতে । এই নতুন আফ্রিকানরা, ভুঁড়িওলা, মাংসল-থুতনি লোকগুলো এখন গদিতে আসীন । কেটশোয়াও, ডিঙ্গানের* মত নরঘাতক ওরা, শুধু চামড়াটা সাদা । ওরা দেশটাকে শুধু নিচের দিকেই টানছে,কারণ শরীরের যত ওজন ততই ওদের ক্ষমতা । ওদের ষাঁড়ের মত মস্ত অণ্ডকোষ বৌ-বাচ্চার উপর চেপে ধরে তাদেরও সব তেজ  নিংড়ে ফেলছে । নিজেদের মধ্যে বীর্যের আগুনের লেশমাত্র নেই । জড় ভরতের হৃদয়, রক্ত দিয়ে বানানো পুডিং-এর মত ভারি ।

             ওদের বার্তাও তাই সব সময় নির্বোধের মত একবগগা । বছরের পর বছর শব্দার্থের অনুশীলন করে নির্বুদ্ধিতাকেই গুণ বলে তুলে ধরাই তাদের একমাত্র কীর্তি । কারণ, নির্বুদ্ধিতা, ইংরাজিতে যাকে বলে stupidity, তার সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত শব্দগুলোর একটা হল stupefy----অনুভূতিহীন করে দেওয়া, বিবশ, মৃতবৎ করে দেওয়া। আরেকটা শব্দ হল stupor, যার অর্থ হল অনুভূতিহীনতামনের অসাড়তা । stupid ---- পার্থক্য বুঝতে না পারা ব্যক্তি, চিন্তা ও অনুভূতির অভাব যার আছে তেমন লোক । ল্যাটিন শব্দ stupere- এর মানে হল আশ্চর্য হয়ে যাওয়া, পাথর হয়ে যাওয়া, সেটা থেকেই ইংরাজিতে stunned, তা থেকে astounded-----শেষ অবধি দাঁড়ায়, পাথর হয়ে যাওয়া । তাই, যা বলেছিলাম, এই শাসকদের বার্তা হল----- বার্তা বদলাবে না । ওদের বার্তা মানুষকে পাথর করে দেবে।

             সাপ পাখিকে গিলতে এলেও পাখিটা তার দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে থাকে; আমরাও তেমনি আমাদের শাসকদের দিকে তাকিয়ে থাকি । রাত আটটা থেকে নটার মধ্যে আমরা টেলিভিশনের সামনে জড়ো হই আর তারা দেখা দেয় । ফ্রাঙ্কোর যুদ্ধের সময় হুড পরা বিশপদের** শোভাযাত্রা যেমন নিয়ম ছিল, তেমনি নিয়মিত এই দর্শনদান । তবে এ হল মৃত্যুর দর্শন। 'মৃত্যু দীর্ঘজীবী হোক' ----- এই হল তাদের ভীতিপ্রদ রণসঙ্গীত,  'যৌবনের মৃত্যু হোক, জীবনের মৃত্যু হোক ' । তারা হল সেই সব শুয়োরের মত যারা নিজের বাচ্চাকেও খেয়ে ফেলে । Boer  নয়, boar, মানে শুয়োর, শূয়রের যুদ্ধ হচ্ছে দেশে ।

         আমি মনে মনে বলি, আমি মিথ্যাকে দেখছি না, তার পেছনে যে সত্য আছে, তাকে দেখার চেষ্টা করছি । কিন্তু তা কি সত্য ?

        আমি ঘুমে ঢুলছিলাম ।(এখনো গতকালকের কথাই লিখে চলছি। ) উঠে আবার বই পড়লাম, আবার ঢুলতে থাকলাম। চা করলাম, তারপর একটা রেকর্ড চালালাম । বাখ-এর গোল্ডবার্গ ভেরিয়েশনের সুরগুলো ধীরে ধীরে মাথা তুলতে লাগল । জানালার কাছে দেখলাম, প্রায় অন্ধকার । গ্যারেজের দেওয়ালের কাছে দেখলাম লোকটা নিচে বসে আছে , ওর মুখের সিগারেটের আগুন জ্বলজ্বল করছে । হয়তো সে আমাকে দেখছে, হয়তো দেখছে না । আমরা দুজনে শুনছি ।

             সেই মুহূর্তে আমার মনে হল আমি জানি নিশ্চয় লোকটার মনে হচ্ছে  আমি আর সে যেন প্রেম করছি ।

           যদিও চিন্তাটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছিল, তাতে এসেছিল এক বিস্বাদের অনুভূতি, তবুও আমি বিনা দোলাচলে তাকে মনে মনে নাড়াচাড়া করতে থাকলাম । সে ও আমি দুজন দুজনকে বুকে বুকে পেষণ করছি, চোখ বন্ধ করে পুরোনো পথে দুজনে ! অভাবিত দুই সাথি ! সিসিলিতে ভিড় বাসে যেমন হয়, কোন অচেনা লোকের মুখে মুখ, শরীরে শরীর চেপে যায় । পরকালে বোধহয় এই রকমই হবে---- কোন লবিতে আরাম কেদারা নয়, সঙ্গীত নয়, একটি ভিড়ঠাসা বাস, যার কোন ঠিকানা নেই, কোন গন্তব্য নেই । শুধুমাত্র দাঁড়ানোর জায়গা, অচেনা লোকের সঙ্গে ঠেসে নিজের পায়ের উপর সারাক্ষণ খাড়া হয়ে থাকা । বাতাস দুর্গন্ধে ভারি, মধ্যে মধ্যে 'দুঃখিত', 'দুঃখিত' ক্ষমা প্রার্থনা । শরীরে লালসাময় স্পর্শ, অন্যের দৃষ্টি । জীবনে নিজস্বতার, গোপনীয়তার অবসান ।

         উঠোনের অন্যদিকে লোকটা বসে আছে, ধূমপান করছে, সঙ্গীত শুনছে । সেই মাধুর্যে তার ও আমার দুটো আত্মা যেন যৌনতার  আনন্দে বাঁধা পড়ে গেছে । যেন যৌনসঙ্গমরত দুটি পতঙ্গ লেজে লেজ মিলিয়ে মুখের দিকে মুখ করে আছে । বুকের দিকে দেখা যাচ্ছে শ্বাসপ্রশ্বাসের মত একটা ওঠাপড়া। শান্ত অথচ পুলকিত ।

       সে তার  সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলল । জমিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকগুলো আগুনের ফুলকি , তারপর আঁধার ।

       এই বাড়ি, আমার মনে হল, এই জগৎ ! এই বাড়ি, এই সঙ্গীত ! এই !



         'এই হল আমার মেয়ে,' আমি বললাম, 'ওর কথাই আমি তোমাকে বলেছিলাম, এখন আমেরিকায় থাকে ।' ওর চোখ দিয়ে ছবিতে তোমাকে দেখলাম : এক মিষ্টি, হাসিমুখ মহিলা, বয়স ত্রিশের কোঠায়, সবুজ মাঠে দাঁড়িয়ে আছে , হাওয়ায় ওড়া চুলগুলি জায়গায় রাখতে একটা হাত চুলে । আত্মপ্রত্যয়ী । এইরকমই তুমি এখন হয়েছ , এমন এক নারী যে নিজেকে খুঁজে পেয়েছে ।

      'এই বাচ্চাগুলো এদের ।'

      দুটো ছোট ছোট ছেলে, তাদের মাথায় টুপি, গায়ে কোট, হাতে হাতমোজা, পায়ে বুটজুতো, একটা স্নোম্যানের পাশে দাঁড়িয়ে ক্যামেরার ক্লিকের অপেক্ষা করছে ।

       একটু নীরবতা । আমরা রান্নাঘরের টেবিলে বসেছিলাম । আমি ওর সামনে চা রাখলাম, আর মারি বিস্কুট । মারি বিস্কুট, বুড়োদের, দন্তহীনদের খাদ্য ।

        'আমি যখন মরে যাব, তখন আমার জন্য একটা কাজ করে দিও । আমার মেয়ের কাছে কিছু কাগজপত্র পাঠানোর আছে । কিন্তু সেটা আমার মরার পর, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ । সেজন্যই আমি নিজে পাঠাতে পারছি না । বাকি সব কাজ আমি করে যাব । আমি কাগজগুলো খামে ভরে ঠিকঠাক স্ট্যাম্প লাগিয়ে রাখব । তুমি শুধু এই কাজটুকু করবে----- পোস্ট অফিসের কাউন্টারে গিয়ে পার্সেলটা দিয়ে আসবে । এই কাজটা করে দেবে ?'

       সে বিব্রতভাবে সরে বসল ।

       'আমি যদি পারতাম, তাহলে তোমাকে বলতাম না । কিন্তু আমার তো উপায় নেই, আমি নিজে যখন থাকব না ।'

       সে জিগ্যেস করল, 'তুমি কি আর কাউকে বলতে পার না ?'

        'হাঁ, তা পারি, কিন্তু আমি তোমাকেই ভারটা দিচ্ছি । এগুলো হল নিজস্ব কাগজ, নিজস্ব চিঠিপত্র । এসব হল আমার মেয়ের উত্তরাধিকার । এই-ই মাত্র আমি ওকে  দিতে পারি, যা সে গ্রহণ করতে পারে, যা এই দেশের জিনিষ । আমি চাই না আর কেউ এগুলো খুলুক বা পড়ুক ।'

        নিজস্ব কাগজপত্র । এই কাগজগুলো, এই লিখা, যা তুমি এখন পড়বে, অথবা কখনো পড়বে না । এগুলো কি তোমার কাছে পৌঁছাবে ? তোমার কাছে  পৌঁছেছে ? দুভাবেই প্রশ্নটা জিগ্যেস করা যায়, যদিও উত্তরটা আমি কখনো জানতে পারব না, কখনোও না । আমার কাছে এই চিঠিটা হবে যেন ঢেঊয়ে ভাসিয়ে দেওয়া বাক্য । যেন একটা বার্তা যাচ্ছে একটা বোতলে-----যার গায়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গণতন্ত্রের স্ট্যাম্প, আর তোমার নাম লিখা ।

      চামচটা নাড়তে নাড়তে লোকটা বলল, 'জানিনা ।'

     সে কোন কথা দেবে না । কথা যদি দেয় ও, তাহলেও তা-ই করবে যা সে নিজে চায় । শেষ নির্দেশ, কিন্তু লাগু করা অনিশ্চিত । কারণ যে মৃত, সে আর ব্যক্তি নয় । সেটাই আইন । মৃতের সব চুক্তি তামাদি হয়ে যায় । মৃতকে প্রতারণা করা যায় না, মৃতের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা যায় না, যদি না তুমি তাকে মনে রেখে  সেই অপরাধটা না কর ।

         আমি বললাম, 'কিছু মনে করো না । আমি ভেবেছিলাম তোমাকে বলে যাব বাড়িতে এসে বেড়ালগুলোকে খাইয়ে যেতে । কিন্তু আমি অন্য ব্যবস্থা করে নেব ।'

        কী সেই অন্য ব্যবস্থা ? ইজিপ্টে  মৃত প্রভুর সঙ্গে ওরা বেড়ালকেও পুঁতে দিত । আমি কি তাই চাই, যে হলুদ চোখ গুলো এদিকওদিক ঘুরছে, অন্ধকার গুহা থেকে বেরিয়ে আসার কোন রাস্তা খুঁজছে ?

      'আমাকে ওদের এখানেই রেখে যেতে হবে। বেড়ালগুলোর বয়স হয়েছে, ওরা এখন আর অন্য কোথাও গিয়ে থাকতে পারবে না ।'

        পাথরে পড়া জলের মত আমার কথাগুলো ওর নীরবতার দেওয়ালে ঠেকে ছড়িয়ে গেল ।

       'আমাকে ওদের জন্য কিছু করে যেতেই হবে,' আমি বললাম । আমার জায়গায় তুমি হলে তুমিও ভাবতে ।'

       সে তার মাথা নাড়ল । সত্য নয়, আসলে সত্য নয় কথাটা । কোন এক শীতের রাতে, সেটা শীঘ্র হোক বা বিলম্বে, যখন তার শরীরে তরল আগুন আর উষ্ণতা যোগাতে সমর্থ হবে না, সে ধ্বংস হয়ে যাবে । সে হয়তো কোনও দরজায়, কোনও পথের উপর হাত জড়ো করে পড়ে থাকবে । লোকে হয়তো দেখবে তার কুকুরটা, কিংবা অন্য কোন কুকুর তার পাশে দাঁড়িয়ে কুঁইকুঁই করছে, মুখটা চেটে দিচ্ছে । তারা তাকে ঠেলা গাড়িতে তুলে নিয়ে যাবে, কুকুরটা রাস্তায় পড়ে থাকবে------এই হবে শেষ। কোন শবযাত্রা নেই, কোন উত্তরাধিকার নেই, কোন সমাধি নেই ।

       সে বলল, 'তোমার পার্সেলটা আমি পোষ্ট করে দেব ।
(চলবে)


-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
 *কেটশোয়াও, ডিঙ্গানে :
কেটশোয়াও : (১৮২৬----১৮৮৪) দক্ষিণ আফ্রিকার জুলু উপজাতীয় শাসক । ক্ষমতা ও রাজ্যের লোভে পিতা জীবিত থাকতেই নিজের মা, বিমাতা, বেশ কজন সহোদর ও বৈমাত্রেয় ভাই এবং তাদের পক্ষীয়দের হত্যা করেন । রাজা হবার পরও হিংস্রতা এবং নৃশংসতায় তাঁর জুড়ি ছিলনা । ঔপনিবেশিক বুওর এবং ইংরেজদের সঙ্গে তাঁর কয়েক বার যুদ্ধ হয়, এবং যুদ্ধে ইউরোপীয়দের সঙ্গে তিনি সমানে টক্কর দিয়েছিলেন ।
ডিঙ্গানে : (১৭৯৫----১৮৪০) জুলু উপজাতীয় সর্দার , পরবর্তীকালে রাজা। বৈমাত্রেয় ভাইকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেন । বুওরদের সঙ্গে চতুরতার সঙ্গে যুদ্ধ করে  নারীপুরুষ শিশু নির্বিশেষে  অসংখ্য মানুষ হত্যা করেন । এঁকেই উৎখাত করে কেটশোয়াও-এর পিতা ম্‌পান্ডে রাজ্য দখল করেছিলেন।

ফ্রাঙ্কোস্পেনদেশীয় একনায়ক । শাসনকাল  ১৯৩৯---১৯৭৫।  তিনবছরের  গৃহযুদ্ধের সময়   স্পেনে কম্যুনিস্ট শাসন ছিল । সেই সময়ে ধর্মীয় সমস্ত কিছুর উপর প্রচণ্ড নিগ্রহ চলছিল, অনেক চার্চ ধ্বংস অথবা দখল করা হয়েছিল, ধর্মযাজকদের শোভাযাত্রা করিয়ে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হত । শত শত ধর্মযাজককে হত্যা করা হয়েছিল । গৃহযুদ্ধের পর ফ্রাঙ্কো স্পেনের ক্ষমতা দখল করেন ।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------


কোন মন্তব্য নেই: