।। বিদ্যুৎ
চক্রবর্তী ।।
(C)Image:ছবি-- মোহাম্মদ কিবরিয়া |
হাসপাতালে
মৃত্যুর মুখোমুখি শুয়ে
কী ভাবছিলে
রঞ্জনা ?
নদী থেকে তোমার
উত্তরণ ?
নাকি তুমি থেকে
নদী ?
ওই যে নদীর সাথে
তোমার সখ্যতা
ওটাই তো তোমার
পরিচয়।
তোমারও তো
প্রবহমান জীবন
আমৃত্যু কলকল
ছলছল।
না, মৃত্যুকে ভয়
পাওয়ার মেয়ে তুমি নও
তোমার ইচ্ছায়
মরণও পালায়।
জীবনকে যেখানে
তুড়ি মেরে করেছ পার
মরণ সেখানে কোন
ছার ?
পাহাড় ছাড়িয়ে
সাগর পথের জলোচ্ছ্বাস
বাঁধতে পেরেছে
কেউ কখনো ?
তোমার পথেও
খড়-কুটো সব
জ্বলতে চেয়েও
নিভেছে সব তুবড়ির মতো।
বাঁধা ছকের বাইরে
তোমার রোজনামচা
দৃপ্ত আপন খেয়াল
খুশি
শরিক হয়েছে ‘শক হুন দল’
তুমি কিন্তু
গেয়েছিলে সবারই গান, মনে আছে ?
নদীর দু’টো পাড়া ছিল-
তোমার ছিল দু’টো দরাজ হাত
শস্য শ্যামল দু’টো পারের মতোই
তোমার আনাচে
কানাচে কত সুখের পায়রা।
ধীর, অবিচ্ছেদ্য
ধারাকে ছিন্ন করে
এপার ওপার ‘যাত্রী গাদাগাদি’
রঞ্জনা তুমি
অগুনতি লোলুপকে
নির্দ্বিধায় করেছ
নপুংসক।
কুল ভাঙার ছলাৎ
ছল
ভূমির স্খলন, নিত্যদিনের
তালকাটা রব
তোমার আনাচে
কানাচে পতন
নাম না জানা কতই
কিশোর- যৌবন দূত।
ভরা ভাদরের
বর্ষাবনের গর্ভে প্রবেশ
চিরসবুজের
আলিঙ্গনে স্ফীতবক্ষ
তোমার- প্রিয়
রঞ্জনা, একুল ওকুল
সামলে নিয়ে সে কী
দৃপ্ত দুঃসাহস।
মীন-বিষধর একই
ধারায় সন্তরণ
অবাক করা চাতক
দৃষ্টি ক্ষেত মজুরের
এক, দুই, তিন কুসুমের
বৃন্ত তোমার নখদর্পণে
তোমার নিদান
স্বস্তি সুখের প্লাবন।
জুড়িয়ে ছিল পরাণ
ঐ কোল জুড়ানো
শীতল হাওয়ার পরশ
পেয়ে
তোমার ছোঁয়ায় ঐ
আগুয়ান
মিছিল গেল হারিয়ে
হাওয়ায়।
বক্ষ জুড়ে অবগাহন
অগুনতি
দু’ চার-পেয়ের
ক্লান্তি, শ্রমের অবসান
জীবনটাকে হারিয়ে
দিয়ে চৌদিশে
শীতলতার প্রলেপ
মাখা তোমার কাহন- কল্পনা।
এমনি জীবন বাঁচে
জলে অলক্ষ্যে
চরাচরের বৃক্ষ, মানব, তামাম সৃষ্টি যত
মানবতায়
নির্ভেজাল ঐ হৃদয় জুড়ে
তুমিই বাঁচাও
ধরণীরে শান্তি, সুখে।
অন্তরে ঐ স্বচ্ছ
কণা স্ফটিকসম
অন্তঃস্থলে অনন্ত
ঐ ভিত ভাণ্ডার
আস্তানার ঐ
উপাদানে স্বতঃস্ফূর্ত
অগুনতি ভিত, তুমিই গাঁথ
ভিত্তিপ্রস্তর।
আটকে রেখে ধারার-
সৃষ্টি অবাক করা
আলোকমালায় ঝলসে
উঠে তিন ভুবন
তোমার আলোয়
উদ্ভাসিত পৃথ্বী
অন্ধকারের অতীত
খোলে দীপ্ত একাধিক।
ওই স্বপ্নিল, ওই সর্পিল, ওই
ছান্দসিকের
সৃষ্টিকর্মে চঞ্চল
তুমি আপন
ছন্দসুধায় বর্ণমগ্ন
বসুন্ধরায় অনুভবে
তোমার স্পর্শ যত্রতত্র।
নাম না জানা ওই
নদীটার সাতকাহন
নিঃশেষহীন
দানছত্র যেমন যোজন
বিশ্বপ্রেমের
মূর্ত প্রতীক- প্রিয়
তুমিই নদী- নদীই
তুমি, তুমি
অবিচ্ছেদ্য।
ছিন্ন বাঁধন
মোহনায় ধীর বিলীন মত্ত
যাত্রাপথের
সালতামামির রোমন্থন
তোমার জীবন
সায়াহ্নের এই সন্ধিক্ষণ
নদীর কাছেই
নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ।
পূর্বাদ্রির বুক
চিরে সেই মসৃণ পথ চলা
আপনভোলা মন
মর্জির আপনি মালিক
এবার জীবন জোড়া
যোগবিয়োগের হিসেবনিকেশ
রঞ্জনা- তুমি
নদীর গানেই প্রতিষ্ঠিত সত্য।
মোহনা আর
হাসপাতাল আজ ছন্নছাড়া একাকার
আবার আসিবে ফিরে, রঞ্জনা- তুমি
ফের ওই নদীরই
নামটি ধরে
ভাসিয়ে বিশ্ব
ভালোবাসার সুখ প্লাবনে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন