“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭

বাতিদান







৷৷ অর্পিতা আচার্য ৷৷



বাতিদান আলো দিচ্ছে |

এমনই মায়াবী আলো একশ বছর আগে
প্রপিতামহের ঘরে কুলুঙ্গীতে জ্বলে উঠত
শুভ্র শাড়ি, লালপাড়, আমার প্রপিতামহী
হাতের আড়ালে তার সুবাতাস বইত মন্দ মন্দ
পানে ঠোঁট লাল করে দু'টো কথা
বলে নিত রাতের অবসরে,
কেননা সারাটাদিন অকারণ কত কাজ
খুঁটিনাটি বেঁচে থাকা বিচ্ছেদে ও প্রেমে -
নাকফুল ঝিকিমিকি বাতিদানে, আলোতে ছায়াতে |

যে রাতে বইত ঝড়, অবিশ্বাস্য
ধুপধাপ টিনের চালেতে শিলাবৃষ্টি
সেইসঙ্গে সুপুরি গাছের যত ঘুরপাক,
মরণ কীর্তন ! শীতল বর্ষণে শান্ত
বিশ ইঞ্চি মাটির দেওয়াল | সেই রাতে
দীপাধারে ছোট বাতিদান,আশ্বাসের সুরে
গাইত | জ্যৈষ্ঠের অসহ সন্তাপ
বুকের গহনে নিয়ে ছায়াটুকু মেলে দিত
পিতামহী, জনতা শাড়ির প্রান্তে
কচি কচি আমের নিক্কন নিয়ে
ঝড় শেষে ঘরে ঢুকত, তক্তপোষ তলে
বেতের ঝুড়ির মধ্যে তুলে রাখত
যত্ন করে আচারের ক্ষুদ্র আয়োজন, দীপশিখা
কেঁপে কেঁপে হেসে উঠত, ঠান্ডা ঘর -
স্নিগ্ধ, নম্র ঘর !

তারও পরে একদিন আমার মায়ের মত
মিষ্টি মিষ্টি,শান্ত শান্ত লক্ষ্মীছাপ
আলপনা আঁকা | কোজাগরী রাত জুড়ে
পটের লক্ষ্মীর মূর্তি আগলে আগলে
প্রদীপের শিখা জ্বলে যেত ...
রক্তিম আঁচলখানি ঢাকাই জামদানির
বলখোঁপা ঢেকে দিত | চিঁড়ে ভেজা ঠান্ডা
জলে, উপোস ভাঙ্গতো সেই পূর্ণিমার রাতে
সারারাত লক্ষীমন্ত মৃদু দীপ জ্বলে যেত
বাতিদানে,বাতিদানও ভালবেসে
খেলাধুলো করে যেত, নিবিড় আঁধারে |

এখনও দিচ্ছে আলো বাতিদান -
বিক্ষুব্ধ অন্ধকারে ঘনকালো পিচ্ছিল যাপন
রক্তাক্ত অঞ্চল জুড়ে প্রতিদিন দুঃখ ফুল তোলা
নির্যাতন, আত্মহত্যা,অসম্মান, শ্লীলতাহরণ
কন্যাভ্রূণ হত্যা আর, বিচ্ছেদের গোপন কথন
ধর্ষিতা নারীর দেহ পড়ে থাকে অধোমুখ
ম্লান ছড়া জলে

নির্লজ্জ বাতিদান নিরবচ্ছিন্ন তবু জ্বলে !

কোন মন্তব্য নেই: