[Photo from http://www.freepik.com/ ] |
© সুনীতি দেবনাথ
-------------------------- ------
--------------------------
এবং তাঁকে হত্যা
করা হল-
লা ইগেরার ছোট্ট
স্কুল ঘরে
পাহাড় অরণ্যের
যুগলবন্দীর মাঝখানে।
হত্যাকারী রেঞ্জার
ছদ্মবেশী তিন অফিসার
সাম্রাজ্যবাদীর
তল্পিবাহক আর এক সি আই এ এজেন্ট।
তিনি হেঁটে
পেরোচ্ছিলেন বলিভিয়ার পাথুরে পাহাড়
রুক্ষ সব প্রান্তর
আর জটলা করে থাকা বিশাল অরণ্য
একা একেবারে একা।
তাঁর বিরুদ্ধে
ভয়ানক নৃশংস অভিযোগ-
তাঁর কাঁধের
বন্দুক বিপ্লবে আগুনঝরা ছিল,
মেক্সিকো কিউবা
সাক্ষী আছে তার।
এখনও তাঁর কাঁধে
বন্দুক, পিঠে রুকস্যাক
সারাটা পৃথিবীর
বিপ্লবীপথে অভিযাত্রী তিনি।
ফিদেল কাস্ত্রোর
পাশে পাশে চলে
কিউবার বিপ্লবী
অগ্নিপথে বহু যুদ্ধ করে
কত স্বজনকে
রক্তভেজা মাটিতে ঘুমিয়ে যেতে দেখে
আঁখ চাষির
নিষ্প্রভ চোখে স্পষ্ট আলো জ্বেলে
হাতে বন্দুক তুলে
নেবার প্রোজ্জ্বল মশাল তিনি।
মৃত্যুর মিছিল
রক্তের স্রোতস্বিনী
অপরিমেয় নিকষ কালো
বেদনা-
কালো মানুষের কালো
চামড়ার চেয়েও কালো,
এতোসব কিছুর মাঝে
সবল পায়ে হেঁটে
মৃত্যুকে
বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে উত্তুঙ্গ পর্বত অতিক্রম করেন
কিউবার মরে মরে
বেঁচে থাকা মানুষের জন্য
গেরিলা কায়দায় লড়ে
মুক্তির শান্তির সূর্যটাকে
ছিনিয়ে আনতে,
অবশেষে বিজয়ী হলেন
তাঁরা।
বিপ্লবী বাহিনীর কমান্ডার
তিনি
আর্জেন্টেনিয়ান
সাচ্চা কম্যুনিস্ট বিপ্লবী
বিশ্বজোড়া
মহাবিপ্লবীদের একজন
আগাপাশতলা বিশুদ্ধ
বিপ্লবী-
তিনি এরিয়েন্তো চে
গেভারা!
ক্ষমতার কোন
উচ্চাসন
তাঁর পথ আগলে
দাঁড়াতে পারেনি,
বলা উচিত তাঁর
বিপ্লবী সত্ত্বার কাছে তুচ্ছ ছিল তা-
তখনো যে বিশাল সে
মহাদেশ শোষণের আঁধারে নিমগ্ন।
তাই কাঁধে বন্দুক
পিঠে রুকস্যাক চে গেভারা
বিপ্লবের কাছে
বন্ধক জীবন হেঁটেই চলেন
কঙ্গোর পথে
বলিভিয়ার অরণ্য অন্দরে-
বিশ্ববিপ্লবীর
দৃপ্ত পদচারণা মুক্ত বিশ্বের স্বপ্নে।
বিপ্লব মানে তো
শুধু ধ্বংস কিংবা মৃত্যু নয়
নয় শুধু রক্ত নিয়ে
পৈশাচিক ক্রীড়া-
বিপ্লব মানে
মুক্তির বিজয়গাথা আর সৃষ্টির উন্মাদনা-
বিপ্লব মানে
বিশ্বের শোষিত মানুষের মুক্তি
আর সকলের
সমানাধিকারের বিশ্বস্ত লড়াই।
প্রাণ আর রক্তের
বিনিময়ে
পদানত মানুষের
অত্যাশ্চর্য অভ্যুত্থানে বিপ্লব
নতুন সৃষ্টির
শ্লোকগাথা হয়।
বহু দূরপথ হাঁটলেন
তিনি
মৃত মানুষের
হাড়গোড়ের পাশ দিয়ে
সাম্রাজ্যবাদীর
আস্ফালিত শোষণের ঠিক মধ্য দিয়ে
নির্যাতিত বঞ্চিত
মানুষের কান্নার ভেতর দিয়ে
পার হলেন কত পর্বত
পাথুরে অরণ্য ভয়াল অভিশপ্ত
স্যাঁতস্যাঁতে
বিশালকায় নদী উপত্যকা বিষাক্ত কীটেদের ভূমি-
অবশেষে বলিভিয়ার
ঘন এক অরণ্য যখন পার হচ্ছিলেন
সেই ঘাতক ছদ্মবেশী
অফিসার আর সি আই এ –র শকুনি চর
তাঁকে বন্দি করে
নিল।
সেদিন সেই
কান্নাঝরা দিনে
সেই স্কুল বাড়ির
ছোট্ট এক কক্ষ বন্দিশালা হল-
শুরু হল সূচ্যগ্র
নোংরা তল্লাশী।
বারোটি রিল ফিল্ম,
অকেজো এক পোর্টেবল
রেডিয়ো-
রঙিন পেনসিলে
সংশোধিত বিশটির মত মানচিত্র
দু’টি একান্ত
ব্যক্তিগত ডায়েরি আর একটি সবুজ নোটবুক-
বিশ্ব বিপ্লবীর
মহামূল্য একান্ত সম্পদ ভাণ্ডার!
জরুরীভিত্তিক তল্লাশিতে
ডায়েরি দু’টো
গুরুত্বপূর্ণ
দলিলের মান্যতা পেলো-
চটজলদি ফোটোকপি
করা হল
সাকুল্যে সবকিছু
এক কর্ণেলের জিম্মায়
হেলিকপ্টারে উড়ে
রাজধানী লা-পাজ চলে গেল।
এরি মাঝে হত্যা-
এক বিশ্ব
বিপ্লবীকে হত্যার কলঙ্কিত ইতিহাস-
বিষণ্ণ সঙ্গীতে
বিষাদিত সুরে সারা পৃথিবীকে বিষাদিত করল।
আর সবুজ নোটবুক-
সেটি ভরা ছিল
কবিতায়,
তাঁর নিজহাতে লেখা
কবিতায়,
সেই কবিতা তাঁর
নিজের নয় তাঁর প্রিয় কবিদের কবিতা।
কবিতার মহান পাঠক
বিপ্লবী পথে হেঁটে যেতে যেতে নিতেন
লিখে নিঃসঙ্গ পথের
সাথী প্রিয় কবিতা সব।
সব কবি বিপ্লবী নন
সব বিপ্লবীই কবি।
বিপ্লবী কবিতার
আত্মার গভীরে সৃষ্টিকে খুঁজে পান,
বিপ্লবের শৈল্পিক
সৃষ্টির পথে
শত পুষ্প বিকশিত
হয়-কবিতার জন্ম হয়।
সেসব কবিতা রচে
বিপ্লবের মহাকাব্য।
আজীবন কবি চে
গেভারা আজীবন কবিতার মহান পাঠকও তিনি।
ধ্বংসের মাঝে
বিপ্লবের সৃষ্টির মাঝেও চে গেভারা
বিপ্লবের অগ্নিপথে
কবিতায় রচেছেন বিপ্লব চেতনা-
শেষ নিঃশ্বাসেও
তাই বিপ্লবী কবি থেকে শহীদ হলেন!
পাবলো নেরুদা
নিকোলাস গিইয়েন
সেসার ভাইয়েহো আর
লেওন ফেলিপে
সবুজ নোটবুকের
পাতায় পাতায় গেভারার সাথে
বিপ্লবের
বার্তালাপে মুখরিত, কবিতায় মগ্ন ।
পৃথিবীর মহান
সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদের সঞ্চয়ী গেভারা-
স্যালুট্ তোমাকে
কবি বিপ্লবী চে গেভারা!
হাজারো স্যালুট!
***
কবিতাটির আবৃত্তি এখানে শুনতে পাবেন! করেছেন বদরুল আহসান খান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন