“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৫

পাখির পাঁচালি




(বিজয় ভট্টাচার্যের এই কবিতাটি বেরিয়েছে, দৈনিক যুগশঙ্খের 'রবিবারের বৈঠকে' ১৯ জুলাই, ২০১৫ সংখ্যাতে বিজয়ের কবিতার পয়ার ছন্দ সবসময়েই পাঠক টানে। তার উপরে সমকালীন ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে একটা আলাদা ভালোলাগাতো আছেই। কবিতাটি তাই এখানে তুলে দিলাম। -সুশান্ত কর)



(C)যুগশঙ্
কে বা ভূমিপুত্র আর কে যে ভাসমান।
তুমি বুঝি এই দেশে পাখি খিলঞ্জিয়া?
কোত্থেকে এসেছো? শুনি প্রিয় নাম গান---
গানে ঘুম ভাঙ্গো বুঝি, ঘুম ভাঙ্গানিয়া?

পা রাখার মাটি নেই, একটু জমিন,
বাড়ি ঘর নেই, আমি, পাখি যাযাবর---
প্রব্রজনে খুঁজি সুখ, আকাশ রঙিন,
খাস জমি খুঁজে বাস করি, বাঁধি ঘর।

রিফিউজি লতা মানে যে-লতা জাপানি---
অবিকল তার মতো জীবন আমার,
কে দ্যায় আমাকে নিত্য পানি, জলপানি?
আছে শুধু তাড়া খেয়ে পথ পালাবার।

আমি পাখি , উড়ে যাই, আমার শাবক---
নষ্ট নীড়ে থাকে একা, নীড় , নষ্ট নীড়,
ভাসায় কখনো জল, পোড়ায় পাবক,
আমাকে ভালোই চেনে তীর, নদীতীর

আমাকে বলতে পারো সত্য, বেদুইন,
তাঁবু মানে, নীলাকাশ—নীল শামিয়ানা,
আলো- ছায়া-মেঘ-জলে সময় কঠিন,
আমার কোথাও নেই নিজের ঠিকানা।

কবে ভূমিপুত্র হলে? কোন ইতিহাসে?
পরম্পরা লেখে কোন বংশ দলিল?
 খণ্ডিত বাংলা শুধু বেনোজলে ভাসে---
মধুকর ডিঙা ডোবে সমাধি সলিল!

হাজার আলোকবর্ষে আমার উড্ডীন—
আকাশ গঙ্গাতে কারা টেনেছে সীমানা?
আমার ভুবন মানচিত্রবিহীন,
তুমি কে হে বলো, ওড়া মানা না, না-মানা?

যদি ভালোবাসা থাকে, থাকো এ আকাশে,
তুমিও উড়তে পারো, নীড়ে বাঁধো বাসা---
নয়তো বিদেয় হও বিরুদ্ধ বাতাসে,
আমার ঠোঁটেও আছে মা মাটির ভাষা।

সে-ভাষা হতেই পারে জোর প্রতিরোধ,
সব গান জনজাগরণে ও মিছিলে,
আনতে পারেই ঝড় মেঘ বৃষ্টি রোদ,
নিজেই ভুলতে পারো কোন দেশে ছিলে!

কোন মন্তব্য নেই: