“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৫

জ্বলছে যাবো কোথায়

(C)Image:ছবি



















।। সুনীতি দেবনাথ।।


পাখিরা হারিয়ে যায় বনানী সবুজ হারায় 
কেবলি হারায়, যাবো কোথায়
অতলান্তিক সমুদ্র ডাক দেয় এসো এসো 
সব কিছু ফেলে এখানে এসো!
কি করে সেই ডাকে সাড়া দিই বলো ?
আমার সব বসন্ত হারিয়ে গিয়েছে কবে
বয়স বেঁধেছে বাসা অস্থি মজ্জা মাংসের ঘরে 
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত,
একদিন যুবতী ছিলাম তখন তো ডাকেনি
তখন বলেনি এসো।
তখন জানতাম পৃথিবীটাকে
দুমড়ে মুচড়ে ইচ্ছে মত পাল্টে
নতুন আর এক মহান পৃথিবী
গড়ে নেওয়া কঠিন নয় মোটে,
আজ মনে দুরন্ত আবেগের মত্ত ঝড়
ঝঞ্ঝার বিক্ষোভ, আশা সব কুহেলি আচ্ছন্ন 
নির্জন দ্বীপে নির্বাসিত যেন
হাজারো বছরের জমানো 
পাপের দায়ভাগ বিষাদিত করে শুধু। 
তখন ছিল শুধু দুঃসময়
সেটা ছিল করুণ এক দুঃখী সময়,
এখন সময় মৃত্যুর কঠিন প্রহরায়
এখন মানুষ কোনো আশা বুকে নিয়ে
কোনো স্বপ্নের পানসি বেয়ে চলেনা
আশাবতী নদীটির তীরে ঘরের সন্ধানে।
বুঝে গেছে আজকে মানুষ সবুজ প্রান্তরে 
শুধু পড়ে থাকে বেওয়ারিশ লাশ স্তূপ স্তূপ 
আর মাংসাশী শকুনি বদহজমের শিকার।
পচাগলা দুর্গন্ধ নিয়ে বাতাসও নির্বিকার
ওবাড়িতে ঢাকঢোল সানাইয়ের তানে
বিসমিল্লা খানের করুন বিলাপ
কোনো এক অনিন্দিতা অথবা নাজমা
স্বপ্নের পশরা সাজায়ে দুরুদুরু কাঁপে।
আর এ বাড়ির সোমত্ত ছেলেটি
খণ্ড খণ্ড লাশ হয়ে বস্তাবন্দি পড়ে
উঠোনের ওপাশে রক্ত ঝরিয়েছে সব। 
বাপ তার পাথর চোখে আকাশ চোখে
আঁচলে রক্ত মুছে মুখখানি খুঁজে মরে 
কান্না ভুলে বিবশা জননী শেষবার
সন্তানের কপালে ঠোঁটের ছোঁয়া দেবে
দু ' হাতে রক্তপদ্ম মুখে চুমু খাবে বলে 
আদরে জড়াতে চায় হায়। 

চলছে উৎসব খানাপিনা গোলাপি সম্ভাষণ
মেলার বাজারে বই বেচাকেনা
আড়চোখে যুবক কবি প্রথম প্রকাশিত
বাহারি মলাটের কবিতার বই 
কেউ কেনে কিনা চেয়ে দেখে উৎকণ্ঠায়,
আঁচল উড়িয়ে হেসে ঢলে একঝাঁক 
প্রজাপতির মত যুবতী মেয়ে, হেসে চলে যায়
দুই বাংলায় আর ত্রিপুরায় 
চলছে বইয়ের মেলা। 
চলছে জ্যান্ত মানুষ পুড়ানোর
প্রতিযোগিতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে 
বইমেলা নামক উৎসবকে বিদ্রূপ করেই 
বর্বরতার কুৎসিত ব্যভিচারী আক্রমণ! 

এমন ধর্ষক সময়, এমন ব্যভিচারী কালের আস্ফালন 
মনে হয় এর আগে আসেনি কখনো।
তাই জ্বলছে আগুন দাউদাউ।
তাই জ্বলছি আমি দাউদাউ। 

ফেব্রুয়ারি! ফেব্রুয়ারি!
শহীদের মাস!
একুশে ফেব্রুয়ারি এসেছিল 
শিমূল পলাশের রঙ মেখে আর
শহীদের টাটকা রক্তে রঙিন
কার্পেটে দৃপ্ত পদক্ষেপে পা ফেলে ফেলে
আকাশে উড়েছিল বাংলা ভাষার
বিজয় পতাকা পতপতিয়ে
সে পতাকার ঢেউ শহীদ মিনারের
শীর্ষকে চুম্বন করে গর্বিত হয়ে একদিন
সারাটা বিশ্বকে দামামার দ্রিমি দ্রিমি ধ্বনিতে 
স্পষ্ট কণ্ঠে বলেছিল আমরা
হ্যাঁ এই আমরা ভাষার বিজয়ী সৈনিক।
সেই প্রথম সেই ঐতিহাসিক দিনটিতে
স্বাক্ষরিত হলো নতুন বর্ণমালায় 
একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস! 
ফেব্রুয়ারি বিজয় উৎসবের মাস
এমাসে এতো আগুন কেন
আক্রোশ এতো দেশ জোড়া কেন
কেন জ্যান্ত মানুষের টাটকা মাংসের
পোড়া গন্ধ আকাশে বাতাসে তোমার
আমার উঠোনে আর মানুষের কান্না
বুক ফাটিয়ে গলিত লাভায় ঢেকে দিচ্ছে
বাংলার মাখনের মত পেলব কোমল,
স্নেহের মতো অমিয় মাটির স্তর?
আমি সুস্পষ্ট বাংলায় বলতে চাই
তারজন্য দায় কেউ এড়াতে পারবে না,
দেশের সুরক্ষার জন্য যাদের দায়
ক্ষমতায় আসীন বা ক্ষমতা প্রত্যাশী
সকলকেই হ্যাঁ সকলকে দায়ী করি আমি,
মানুষকে এখনো ভালবাসুন
ওদের কাছে দায়বদ্ধতার দায় আছে,
দায়িত্ব আছে। একথা বলার অধিকার
আমার জন্মের অধিকার, শিকড়ের টান! 
আর নয়তো বলুন আমি
যাবো কোথায়

বাংলা আমার মাতৃভাষা,
আমার মায়ের মুখের অমৃত ধারা
এই ভাষা আমাকে নতুন জন্ম দিয়েছে
আমি নিজেকে চিনেছি, পৃথিবীকে জেনেছি
মানুষের সাথে মিতালি পেতেছি
আমার অধিকার আর বিক্ষোভ
প্রতিবাদ প্রতিরোধ,
ভালবাসা বেদনার প্রকাশ
এই ভাষাতেই পেয়েছে শাশ্বতের স্পর্শ!
তাই আজ প্রশ্ন জ্বলছে যাবো কোথায়?

 

........................................................................................................
কবিতাটির আবৃত্তি এখানে  শুনতে পাবেন! করেছেন জনাব বদরুল আহসান খান সাহেব, বাংলাদেশের বিখ্যাত আবৃত্তি শিল্পী। 

কোন মন্তব্য নেই: