“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৮

ঠিকানা


।। সুপ্রদীপ দত্তরায়

















বন্ধু,
আমার অনাগত কালের অচেনা অতিথি
ইটের জঙ্গলে কেন খুঁজছো আমায় ?
প্রাণহীন পাথরের প্রকাণ্ড পাহাড়ে ,
খোপে যার বাস করে সহস্র সওদাগর ,
দেওয়া আর নেওয়া নিয়ে কাঠ চেরা হিসাব
জীবনটা বাঁধা রাখা শুভঙ্করী ফাঁদে ।
বন্ধু , আমায় বুঝি তুমি খুঁজছো সেথায় ?
সেই গেরুয়া রঙের বাড়ি, তার বৈঠকখানা,
লালকুঠির ঐ বাগানবাড়িতে গোলটেবিল ঘর
কিংবা মোল্লা মৌলবির মহাফেজখানা ।
বাতাস যেখানে বাতাস নয়, আলাউদ্দিনের জীন
তুফান তোলা তর্কে ভাসে কালো কফির কফিন
মানুষ নিয়ে ভাবনা নয় ফানুস নিয়ে ভাবা
জীবন এখানে শ্যাওলা বন, নামেই মক্কা কাবা
ভারী ভারী শব্দগুলো দেখো দেওয়াল ছুঁয়ে যায়
ডুকরে কাঁদে আন্দোলন প্রতিবাদের ভ্রূণ হত্যায়।
আমায় তুমি খুঁজতে যেও না, মিছিলের শুরুয়াতে
মাইক হাতে কোন সভা , বুদ্ধিজীবীর কলমে
কবির কল্পনায় কিংবা কাব্যের কোন কর্মশালাতে ;
সাহেব সাজার ইঁদুর দৌড়ে কোথায় মানায় আমায় ?
গিরগিটীদের হট্টমেলায় গা ঘষানো দায় ।
আমাকে খুঁজতে যেও না বন্ধু পালের সেই পালঙ্কে
আমি থাকি বারুণীর ঘাটে, ভুবনমেলার বাঁকে।
আমার ঠিকানা শেফালিকা জানে , ভোরের শিশির মাখা
লিখেছি ঠিকানা পাথরের পায়ে কলংমার কুলে রাখা ।
আমি কোথায় জানে শুধু কলমি লতা শাক
ডোবার গায়ে লুকিয়ে থাকা ডাউক পাখির ডাক ;
ধানের শীষে সবুজ শস্য, বকুল ফুলের ঘ্রাণ
আমার ঠিকানা রেখেছে লিখে, শেষ শ্রাবণের বান।
ভোটার তালিকায় ঠিকানাটি নেই, জাগ জনতা জাগ
লিগ্যাসি ডাটা যেন যমের কাঁটা , ভাগ বিদেশী ভাগ।
তবুও যদি আমায় তুমি কোথাও খুঁজে না পাও
দেশ বিভাগের রক্ত খাদে পিছন ফিরে তাকাও
কাঁটা তারের কাঁটায় কাঁটায় আমার মাংস গাঁথা
বন্ধু, আমি ছিলাম, আমি আছি, এই শেষ কথা।


কোন মন্তব্য নেই: