মূল অসমিয়াঃ দিগন্ত শর্মা
বাংলা অনুবাদ: সুশান্ত কর
হিংসাত্মক ঘটনার কারণ :
প্রব্রজন, কৃষিভূমি গ্রাস, বাঙালি বিদ্বেষের নামে গোপন প্রচার, অশান্ত পরিস্থিতি সত্ত্বেও নির্বাচন
ভোটার তালিকাতে অবৈধ বিদেশীর নাম অন্তর্ভুক্তি এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির অস্বাভাবিক অস্বাভাবিক হার এই দুটোই ছিল বিদেশী বহিষ্কার আন্দোলন তীব্র রূপ লাভ করবার প্রধান কারণ। আন্দোলন নেতৃত্ব সত্তর দশকের শেষের দিকে কেন্দ্রীয় সরকারকে দেয়া এক স্মারক পত্রে জনসংখ্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং অবৈধ প্রব্রজন বিষয় দুটি কীভাবে পরস্পর সম্পর্কিত তা দেখিয়েছিল। সে সময় সারা আসাম ছাত্র সংস্থার শীর্ষ নেতৃত্ব প্রফুল্ল কুমার মহন্ত এবং ভৃগু কুমার ফুকন স্বাক্ষরিত একটি স্মারকপত্রেও একই কথার স্পষ্ট উল্লেখ ছিল। অর্থাৎ ‘প্রব্রজন’ ছিল বিদেশী বিতাড়ন আন্দোলনের অন্যতম ‘ইস্যু’।
শিলাপাথারের কাছের চিমেন চাপরি এলাকাতে সংগঠিত ঘটনার পেছনেও কি প্রব্রজনই অন্যতম কারণ ছিল? কামরূপ জেলার গোরেশ্বর, দরং জেলার চাউলখোয়া চাপরি, মরিগাঁও জেলার (আগেকার নগাঁও ) নেলির নিকটবর্তী ১৬টি গ্রামে সংঘটিত ঘটনার পেছনে কিন্তু প্রব্রজনই কারণ ছিল। দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত প্রব্রজনের ফলে বিভিন্ন এলাকার সরকারি তথা কৃষি জমিতে জনবসতি বেড়েছিল। অধ্যয়নে দেখা গেছে বাঙালি হিন্দু এবং মুসলমান প্রব্রজন স্থানীয়দের একাংশকে শঙ্কিত করে তুলেছিল। ‘প্রব্রজনে’র ফলে শিলাপাথারের আর্নে চাপরি, চিমেন চাপরিতে যে জনবসতি বা জনসংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছিল তা শুধু সত্তর দশকের কথা ছিল না। সেই প্রব্রজনের প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়েছিল স্বাধীনতার সময় বা তার পরে পরেই। পুব পাকিস্তান ছেড়ে আসা হিন্দু বাঙালির প্রব্রজন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের দিন অব্দি পুব বাংলা থেকে আসামে শরণার্থীদের চলে আসার এই যে বৃহৎ প্রব্রজন প্রক্রিয়া অসমের জনবিন্যাসে প্রভাব ফেলেছিল।
একই সময়ে প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিম বাংলা, ত্রিপুরা বা অন্যান্য রাজ্যের থেকেও বাঙালি হিন্দু বা মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের প্রব্রজন হয়েছিল। এমন কি বরাক উপত্যকার থেকেও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বিভিন্ন জেলার চর অঞ্চলগুলোতে, ভাটি অসমের গোয়ালপাড়া, ধুবড়ি, কামরূপ ইত্যাদি জেলার থেকে উজান অসমের বিভিন্ন জেলাতে প্রব্রজন হয়েছিল। বরপেটার বিভিন্ন এলাকার থেকে (আগেকার অবিভক্ত কামরূপ) ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষ গেছিলেন দরঙের চাউলখোয়ার বৃহত্তর চরঅঞ্চলে। ফলে চর অঞ্চলগুলোতে জনসংখ্যার হার বেড়েছিল। নদী ধ্বসেও অনেকে ‘দেশান্তরী’ হয়েছিলেন। সেই প্রব্রজনকারীদেরই একাংশ ষাটের দশকেই ধেমাজি জেলার বিষ্ণুপুর বা আর্নে চাপরিতে নতুন বসত গড়ে তুলেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপে বিষ্ণুপুরের হিংসাত্মক ঘটনার এক ভুক্তভোগী হরেন্দ্র বিশ্বাস জানালেন যে তারা গোয়ালপাড়া জেলার চলন্তপাড়া এলাকার লোক ছিলেন। চলন্তপাড়ার বহু পরিবার ষাটের দশকে নানা কারণে ধেমাজি চলে এসেছিলেন। একই ঘটনা আর্নে চাপরিতেও ঘটেছিল। আর্নে চাপরির পানবাড়ি শিবনগরে ২০শে ফেব্রুয়ারিতে সংগঠিত হিংসাত্মক ঘটনার বলিদের একজন লালমোহন দেবনাথ। এখন তাঁর বয়স ৬৬। তিনি বললেন, ১৯৬৬তে তারা সপরিবারে এখানে আসেন। তার আগে ছিলেন ত্রিপুরাতে। ত্রিপুরাতে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণি অব্দি পড়েছিলেন। ১৯৭১এ তিনি ভোটাধিকার লাভ করেন। তখন তারা ভোট দিয়েছিলেন আর্নে চাপরিরই মুক্তিয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি জানালেন, তাঁরা যখন আসেন বস্তিতে তখন ছটি মাত্র পরিবার ছিল। বন্যা বিধ্বস্ত এলাকাতে মিসিংদের সঙ্গে মিলে বড় কষ্টে তাদের জীবন যাপন করতে হতো। ধীরে ধীরে জনবসতি বাড়তে থাকে।
সেরকমই টঙানি-নলবাড়ি গ্রামের বয়োবৃদ্ধ সুনীল রায় প্রব্রজন সম্পর্কে জানালেন , তিনি পুববাংলার উদ্বাস্তু। উদ্বাস্তু প্রমাণপত্র তিনি দেখিয়েছিলেন। তাঁর বাবা উদ্বাস্তু হিসেবে সে প্রথমে অবিভক্ত কামরূপ জেলাতে বাস করেছিলেন। পরে তাদের সঙ্গে আরো অনেক উদ্বাস্তু পরিবার এই আর্নে চাপরিতে চলে আসেন।
এই তথ্যগুলো দেখায় প্রব্রজন সংঘাত জর্জর এলাকার জনবিন্যাসে প্রভাব ফেলেছিল। এক সময় ব্রহ্মপুত্রের পাড়ের বৃহৎ সীমাহীন ময়দান, চরঅঞ্চলগুলো ধীরে ধীরে জনবসতি পূর্ণ অঞ্চলে রূপান্তরিত হয়েছিল। শুধু যে বেদখল করে এরা বসেছিলেন তাই নয়, স্থানীয় মানুষের থেকে এরা অনেকে মাটি কিনেও নিয়েছিলেন। অর্থাৎ প্রব্রজন কৃষিজমি সংকুচিত করেছিল। তবে এই এলাকার সবাই যে প্রব্রজিত বা অন্য এলাকার থেকে স্থানান্তরিত মানুষ , তাও নয়। এমন অনেকে আছেন--- যারা এই এলাকাতে শতাধিক বছর ধরে বাস করছেন।
তার বিপরীতে বিদেশী বিতাড়নের নামে যারা হিংসাত্মক ঘটনা সংঘটিত করতে গেছিলেন, সেরকম কিছু মানুষের সাক্ষাৎকার নিতে গেলে সেই সব ‘আক্রমণকারী’রাও বেশ কিছু কথা জানিয়েছিলেন। তারা ঘটনার আগে নানা উপায়ে জেনেছিলেন যে চর এলাকার মাটি ‘বাইরে’ থেকে আসা লোকে দখল করে নিচ্ছেন। অতএব তাড়াতে হবে। অসমিয়াদের কৃষিজমি দখল করে নিচ্ছে, সেগুলো উদ্ধার করতে হবে--- সেসব কথা গোপনে প্রচার করা হচ্ছিল।
নাম-ঠিকানা প্রকাশ করতে মানা করে কিছু মানুষ জানিয়েছেন যে আন্দোলনকারী স্থানীয় নেতারা কিছু কথা প্রচার করে বেড়াচ্ছিল। কথাগুলো ছিল এরকম---বাঙালি হিন্দুরা আসামকে বৃহৎ বাংলাতে পরিণত করবার ষড়যন্ত্র করছে, আন্দোলনকারীদের নির্বাচন বয়কটের ডাক যে বাঙালি হিন্দু-মুসলমানেরা অমান্য করছেন তারা অসমিয়ার শত্রু, বাঙালি দোকান থেকে জিনিস কেনা, বাঙালিকে অত্যাবশ্যকীয় জিনিস বিক্রি করা বন্ধ করতে হবে---ইত্যাদি। হিংসাত্মক ঘটনা ঘটাবার আগে এইসব কথা প্রচার করে এরা বিদ্বেষ ছড়িয়েছিল। ...
স্মরণীয় যে শিলাপাথারের হিংসাত্মক ঘটনার সম্পর্কে আক্রমণকারী পক্ষের মানুষজন যা জানিয়েছিলেন তার সঙ্গে অসম আন্দোলনের নেতৃত্বের গোপন নির্দেশনার ( সিক্রেট সার্কুলার) বিভিন্ন দফাতে উল্লেখ করা কথার মিল রয়েছে। অন্যদিকে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ রূপ নেবার প্রধান কারণ ছিল জনগণের দাবিকে অস্বীকার করে ইন্দিরা গান্ধির নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের জোর করে নির্বাচন করিয়ে নেয়াটা। কেবল ক্ষমতার স্বার্থতে অসমের বেশিরভাগ মানুষের নির্বাচন বিরোধী স্থিতিকে অবজ্ঞা করবার পরিণতিতেই রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির জন্ম হয়েছিল। বিশেষ করে ১৯৮৩র ২ ফেব্রুয়ারি থেকে নানা এলাকাতে প্রতিবাদকারীদের উপরে পুলিশ বাহিনীর বর্বরোচিত আক্রমণে অসমিয়া জাতীয়বাদকে হিংস্রতার পর্যায়ে উন্নীত করিয়েছিল। ইতিমধ্যে ‘ভাষা’র নামে অসমিয়া জাতীয়তাবাদ উগ্র পর্যায়ে উন্নীত হয়েইছিল। ১৯৬০ শুধু মাত্র ‘মুখের কথা’র জন্যেই বাঙালিদের অনেকেই নির্যাতনের মুখে পড়েছিলেন। অসমিয়া মানুষের হিংস্র আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন।
১৯৮৩তেও বাঙালি হিন্দু-মুসলমানের একাংশ ‘নির্বাচন সমর্থনকারী’ বলে চিহ্নিত হয়ে অসমিয়া উগ্রজাতীয়তাবাদী শক্তির পরিকল্পিত আক্রমণের বলি হয়েছিল। অসমের ইতিহাসে মূলস্রোতের অসমিয়ার দ্বারা রচিত হয়েছিল ‘গণহত্যা’র মতো কলঙ্কিত অধ্যায়।
উগ্রজাতীয়তাবাদী শক্তিকে একঘরে করে শিলাপাথার-গোরেশ্বরবাসী গাঁথছেন সম্প্রীতির মালা
শিলাপাথারের কাছে বৃহত্তর আর্নে চাপরি, চিমেন চাপরি অঞ্চল, ধেমাজির উত্তরের বিষ্ণুপুর , শান্তিপুর অঞ্চল, এবং কামরূপ জেলার গোরেশ্বরের কাছের হাজল পাড়া, বেতনা, চিলকিঝার ইত্যাদি বাঙালী বসতি-পূর্ণ যে গ্রামগুলো ১৯৮৩তে ‘অসমিয়া’ তথা বিদেশী বিতাড়ন আন্দোলনকারীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল, সেখানে আক্রান্ত বহু মানুষের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় করেছিলাম। ক্ষেত্র অধ্যয়নের সময় আক্রান্ত গ্রামের নিপীড়িত , ভুক্তভোগী বহু মানুষ কথা বলেছিলেন। শোক-বিহ্বল, আবেগ-বিহ্বল হয়ে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তারা জানিয়েছিলেন তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তিও ভেঙ্গে পড়বার কথা। আক্ষেপ করেছিলেন, গেল তিন দশকে নির্যাতিতেরা কোনো ন্যায় পেলেন না বলে। এরই সমান্তরালে এই আক্রান্ত বাঙালিরাই বলেছিলেন আক্রামক অসমিয়া তথা অন্যান্য স্থানীয় বিভিন্ন জাতি-জনজাতিদের সঙ্গে এদের পরবর্তী সম্পর্ক কীরকম গড়ে উঠেছিল, তার গল্প। ১৯৮৩র ফেব্রুয়ারিতে অসমিয়া-বাঙালির ভঙ্গুর সম্পর্ক কি আবার গড়ে উঠেছিল? এর উত্তরে অনেকেই বলেছিলেন যে তারা সেই সব হিংসাত্মক ঘটনার কথা ভুলে যান নি। নির্যাতন –নিপীড়নের সেই ভয়াবহ দিনের দৃশ্যগুলো তাদের মনে গেঁথে আছে, থেকে থেকেই মনে পড়ে। সেসময় কিছু মানুষ আবেগিক হয়ে, উত্তেজিত তথা প্ররোচিত হয়ে আক্রমণ করেছিলেন। বিদেশী বিতাড়ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে যারা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল তাদেরই একাংশ এই প্ররোচনা যুগিয়েছিল। নির্যাতিতরা এই কথা উপলব্ধি করেন। নিপীড়িত বাঙালি হিন্দুরা আমাদের বলেছিলেন, আক্রমণকারী অনেককেই তারা চিনতে পেরেছিলেন। কিন্তু এখন সেই আক্রমণকারী গ্রামবাসীদের সঙ্গেই তাদের সম্প্রীতির ভাব গড়ে উঠেছে। সম্প্রীতির নতুন সম্পর্ক এবং পথ এরা নির্মাণ করে চলেছেন। একজন ভুক্তভোগী বললেন, আমরা প্রতিশোধ নিতে চাই না। হিংস্রতার আশ্রয় নিতে চাই নি। বরং অসমিয়া মানুষের সঙ্গে সম্প্রীতির মালাই গাঁথছি। আমাদের সন্তান অসমিয়া মাধ্যমের বিদ্যালয়ে পড়ছে। তার বিপরীতে অসম আন্দোলনের বহু নেতা অসমিয়া মাধ্যমকে অবজ্ঞা করছে।
বৃহত্তর আর্নে চাপরি অঞ্চলের বাঙালিদেরই চেষ্টাতে ১৯৯৪তে অসমিয়া মাধ্যমের উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। বাঙালি হিন্দু বহু মানুষ স্থাপন করেছেন জাতীয় বিদ্যালয়।
অন্যদিকে আক্রমণকারীদেরও অনেকে বললেন, বিদেশী বিতাড়নের নামে যে হিংসা হয়েছিল সে বড় ভুল ছিল। জাতীয়তাবাদী একাংশ নেতার সেসব ছিল ষড়যন্ত্র। আজকাল দেখা যাবে বাঙালিদের সঙ্গে শিলাপাথারে অসমিয়ারা একত্রে ব্যবসা বাণিজ্য করছেন। অসমিয়া বাঙালি বলে যে বিভাজন ছিল সে ধেমাজি, শিলাপাথার ইত্যাদি শহর এবং পাশের অঞ্চলগুলোতে ক্রমেই অস্পষ্ট হয়ে আসছে। অর্থাৎ ১৯৮৩তে আক্রান্ত এবং আক্রামক বলে চিহ্নিত সাধারণ মানুষ এখন বন্ধুত্বের বাঁধনে বাঁধা পড়ছেন। বিভিন্ন বাজারে এক সঙ্গে কেনাবেচা করছেন, পালা পার্বণেও একে অন্যের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন। উগ্রজাতীয়তাবাদ যেখানে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। যেমন আধুনিক মানব সমাজগড়ার নতুন আলোক উদ্ভাসিত হচ্ছে।
পরিশিষ্ট (১)
‘৮৩র ফেব্রুয়ারির ডায়েরি
ফেব্রুয়ারি---১
· আসু এবং গণসংগ্রামপরিষদের নেতৃত্বে নির্বাচনের বিরুদ্ধে সমস্ত আসামে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের
মিছিল
· আসামের নির্বাচন স্থগিত করবার জন্যে রাজনারায়ণের আদালতে জানানো আবেদন নাকচ।
· অসম এবং অসমের বাইরের যেসব কর্মী নির্বাচনে সহযোগ করবেন তাদের গ্রুপ ইনস্যুরেন্সের লাভ দেবার ঘোষণা।
· অসমের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন বিরোধীদের দ্বারা বোমা বিস্ফোরণ। অসম প্রদেশ কংগ্রেস (ই)র সভাপতি হরেন্দ্র নাথ তালুকদারকে পত্র বোমা প্রেরণ।
· অসমের শতাধিক সেতুতে আগুন দেয়া। চাপাগুড়িতে এক রাজনৈতিক কর্মীকে অপহরণ।
· শোণিতপুর জেলার ঢেকিয়াজুলিতে একটি বাজারে আগুন দেয়া।
· কামরূপ জেলার কমলপুরে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ।
ফেব্রুয়ারি –২
· মঙলদৈ মহকুমার বরদৌলগুরি, জোনারাম চৌকাতে নির্বাচন বিরোধী জনতার উপরগুলি চালনা। নিহত পাঁচ জন।
· শিপাঝাড় এলাকাতে তিন আন্দোলনকারী তরুণকে সেতুর জ্বলন্ত আগুনে ছেড়ে দিয়েছে সি আর পি জোয়ানরা---আসু এরকম অভিযোগ আনে।
· আসু –গণসংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে নির্বাচন বিরোধী উকিলদের মিছিল।
· মঙলদৈ এবং নগাঁওতে ৫টি সরকারী গাড়িতে আগুন দেয়া।
· দরং জেলার বুড়াতে নির্বাচন বিরোধী জনতার উপর পুলিশের গুলি চালনা। একজন নিহত।
ফেব্রুয়ারি—৩
· ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি অব্দি কর্মচারীদের ১৮ দিনের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা। রাতে সদিয়াতে গুলি চালনা। এক আন্দোলনকারী নিহত।
ফেব্রুয়ারি—৪
· উত্তর লখিমপুরের নাওবৈছাতে নির্বাচন বিরোধী জনতার উপরে পুলিশের গুলি চালনা। বেশ কজন আহত।
· নির্বাচন বিরোধিতাতে শিক্ষকদের মিছিল।
· কামরূপ, দরং, নগাঁও এবং উত্তর লখিমপুরে শতাধিক কাঠের সেতুতে আগুন।
· শিবসাগরের বাঙালি রিজার্ভের জঙ্গল থেকে সিপি আই (এম এল) প্রার্থীর দু’জন সমর্থকের মৃতদেহ উদ্ধার।
ফেব্রুয়ারি—৫
· কর্মচারী পরিষদের সর্বাত্মক অসহযোগ আরম্ভ। সমগ্র অসমে বে-সরকারী যান-বাহন বন্ধ, সরকারী কার্যালয়গুলোও বন্ধ।
· মঙলদৈ মহকুমার টংলাতে আন্দোলনকারীদের উপরে পুলিশের গুলিতে ৪ জনের মৃত্যু।
· নির্বাচন বন্ধের দাবিতে কার্বি আংলঙের দুটি ছাত্র সংগঠনের ডাকে ৩৬ ঘণ্টার কার্বি আংলং বন্ধ।
· গুয়াহাটির উজান বাজার, পল্টন বাজার এবং লখিমপুরে বেশ কটি বোমা বিস্ফোরণ।
· ডিব্রুগড় জেলা বন্ধ।
· কেন্দ্র থেকে অসমে অতিরিক্ত ৩০ ব্যাটেলিয়ন সি আর পি পাঠাবার সিদ্ধান্ত।
ফেব্রুয়ারি—৬
· গুয়াহাটি জজ ময়দানে পরদিনের ( ৭ তারিখ) বাম-গণতান্ত্রিক মোর্চার নির্বাচনী সভা ব্যর্থ করবার জন্যে কামরূপ জেলা ছাত্র সংস্থার জেলা বন্ধের ডাক।
ফেব্রুয়ারি—৭
· ছাত্র সংস্থার কামরূপ জেলা বন্ধ উপেক্ষা করে বাম-গণতান্ত্রিক মোর্চার গুয়াহাটি জজ ময়দানের জনসভা।
· তেজপুরের ছাগলি বাজারে নির্বাচন বিরোধী ব্যক্তির গুলিতে পুলিশের এস আই বিপিন মহন্ত নিহত।
· যোরহাটের দণ্ডাধিশ ম: নুরুল হক একদল দুর্বৃত্তের দ্বারা অপহৃত।
· ডিব্রুগড়ের টিংখঙে লব গগৈ নামের এক কংগ্রেস (ই) কর্মীর মৃতদেহ উদ্ধার।
· রঙিয়ার তিতকুড়ি এবং টিহুর নাথকুছিতে পুলিশ সি আর পির গুলি বর্ষণে বহু লোক আহত।
· অসমে অতিরিক্ত বি এস এফ এবং সি আর পি পাঠাতে কেন্দ্র সরকারে সিদ্ধান্ত।
ফেব্রুয়ারি---৮
· নলবাড়ি মহকুমার বেলশরে এক দল উত্তেজিত জনতার উপর গুলি চালালে ৭ জন মানুষ নিহত হন। নগাঁও জেলার ননৈতে এবং যোরহাটে সি আর পি-র গুলিতে ১ ব্যক্তি নিহত। হাজোর কাছে গুলি চালনাতে ২জন লোক মারা যান।
· নগাঁও জেলার লংকাতে একটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণের ফলে তিনজন মানুষ নিহত এবং ২৩ জন আহত হয়।
· ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের থেকে ৭০০০ নির্বাচনী আধিকারিকের অসমে যাত্রা।
· ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে চৌধুরী চরণ শিং, যশোবন্ত শিং এবং শ্যামানন্দনের উপস্থিতিতে জজ ময়দানে নির্বাচন বিরোধী সভা।
ফেব্রুয়ারি—৯
· অসম বিধান সভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ চান্দ মোহম্মদকে লক্ষ্য করে আগিয়াঠুরিতে বোমা নিক্ষেপ।
· নলবাড়ি মহকুমার কুমারকুছিতে এবং চামতাতে নির্বাচন বিরোধী জনতার উপর পুলিশের গুলি চালনাতে ৫ জন এবং বালিসত্রতে ২জন নিহত হন।
· শিবসাগরের ফুকন পুখুরিতে উত্তেজিত জনতার উপর গুল চালনাতে ১ ব্যক্তি নিহত।
· নগাঁও জেলার মৈরাবাড়িতে প্রধানমন্ত্রীর জন্যে হ্যালিপ্যাড নির্মাণ করতে অস্বীকার করলে গড়কাপ্তানি বিভাগের কার্যবাহী প্রকৌশলী এম রহমানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
· অসমে নির্বাচনী অভিযান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আগমনের বিরোধিতা করে ছাত্র সংস্থার নিষ্প্রদীপ কার্যসূচী ঘোষণা।
· পাতাছারকুছিতে পুলিশের গুলিতে ৫ ব্যক্তির মৃত্যু। পাঠশালার কাছে কেন্দুগুড়িতে আন্দোলনকারী জনতার উপর পুলিশের গুলি চালনাতে ৩জন, গোরেশ্বরে ১ জন, গহপুরে , উঃ লখিমপুরে, নগাঁওর ধিঙে ১জন করে ব্যক্তির মৃত্যু।
· জনতা সান্ধ্য আইনের ফলে জীবন যাত্রা অচল।
ফেব্রুয়ারি—১০
· পুলিশের গুলিতে নলবাড়ি মহকুমার ধমধমাতে এবং মসলপুরে ৩জন, বরপেটা মহকুমার শিনাবাড়িতে ৩জন ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
ফেব্রুয়ারি-১১
· অসমে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সূচনা। কামরূপ জেলার বকো থানার অন্তর্গত চমরিয়া এবং এর আশেপাশে বেশ কিছু নির্বাচন বিরোধী অসমিয়া গ্রামের মানুষ ভাষিক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু গ্রামে আক্রমণ নামিয়ে আনলে সংঘর্ষের সূচনা হয় এবং সংখ্যালঘুর প্রতি আক্রমণে চমরিয়া গ্রামে বেশ কিছু বাড়িঘর ভস্মীভূত হয়, ৯ জন ব্যক্তি মারা যান।
· গুয়াহাটির মালিগাঁওতে কঠিন নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির নির্বাচনী জনসভা।
· লখিমপুরের বধালরাতে এক গণহত্যা।
· তামোলপুরে অসমিয়া এবং জনজাতিদের মধ্যে সংঘর্ষ।
· যোরহাটে লাহদৈগড় এবং নগাঁওর রাইদিঙিয়াতে পুলিশের গুলিচালনাতে ২জন ব্যক্তির মৃত্যু।
· উত্তর লখিমপুর জেলার বাধাধরাতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে দুই পক্ষেরই ৫ ব্যক্তির মৃত্যু।
ফেব্রুয়ারি-১৩
· নগাঁও জেলার বকুলগুড়ি, জাগিরোড, লাহরিঘাট ইত্যাদি স্থানে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ। বহু মানুষ হতাহত। নগাঁও শহরে বোমা বিস্ফোরণে ২ ব্যক্তির মৃত্যু।
· মরিগাঁওর দন্দুয়া, জাজরি এবং রহাতে দুষ্কৃতিকারীর উপর পুলিশের গুলি চালনা। ১৩জন নিহত।
· উত্তর লখিমপুরের বহু জায়গাতে সংঘর্ষ। শতাধিক বাড়িঘর ভস্মীভূত, দু’জন মানুষ নিহত।
· বিহুপুরিয়াতে এক নির্দল প্রার্থীর উপর আক্রমণ চালালে দেহরক্ষীর আত্মরক্ষাত্মক গুলিতে এক ব্যক্তির মৃত্যু।
· কামরূপ জেলার বকোতে পুলিশের গুলিতে ১ ব্যক্তির মৃত্যু।
· ছয়গাঁওতে অসম প্রদেশ কংগ্রেস (ই) সভাপতি হরেন্দ্রনাথ তালুকদারের উপরে হাতবোমা নিক্ষেপ।
· গোগামুখে দলীয় সংঘর্ষে ৫ জন নিহত।
ফেব্রুয়ারি-১৪
· দরং জেলার গহপুরে জনজাতি অজনজাতিদের মধ্যে সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ নিহত, ৩০ টি গ্রাম পুড়িয়ে ফেলা হয়।
· নগাওঁ জেলার যমুনামুখ এবং কামরূপ এলাকাতেও ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ।
· প্রবল প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্যেই অসমের ৬১টি বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচন।
· টিহুর থেকে ৫ কিমি দূরে খাস সুরাপাড়াতে সি আর পি-র গুলিতে ৬ জন নির্বাচন বিরোধী ব্যক্তির মৃত্যু।
· নগাঁও জেলার ভুরভুন্দা, দলংঘাট এবং রাইদিঙিয়াতে নির্বাচন বিরোধী একদল উত্তেজিত জনতার উপর সি আর পির গুলি চালনা। ৮ জনের মৃত্যু।
· কামরূপ জেলার চমরিয়াতে হওয়া সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ব্যাপক রূপ নেয়, ত্রিলোচন, জামবাড়ি ইত্যাদি জায়গাতেও ছড়িয়ে পড়ে।
· উত্তর কামরূপের পাতাছারকুছি, ডিগবয়ে একটি ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে এবং যোরহাটের টিয়ক কেন্দ্রে নির্বাচন বিরোধী উত্তেজিত জনতার উপরে পুলিশের গুলি চালনাতে সব মিলিয়ে ১৯ জন মারা যান।
· ধেমাজির কাছে বিষ্ণুপুর-শান্তিপুরে বেশ কিছু গ্রামে আন্দোলনকারীদের আক্রমণ। দুই কুড়ির বেশি মানুষের মৃত্যু।
ফেব্রুয়ারি-১৫
· অসম বিধানসভা নির্বাচনে বিশ্বনাথ চারিয়ালি কেন্দ্রের কংগ্রেস (ই) প্রার্থী সত্য নারায়ণ রাম নির্বাচন বিরোধী একদল মানুষের হাতে নিহত।
· গোয়ালপাড়া জেলার কারাইখোয়া, নলঙা, মারকুলা ইত্যাদি জায়গাতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ। বেশ কিছু গ্রাম পুড়ে ছাই।
· বঙ্গাইগাঁও ভাক্রিভিটাতে পুলিশের গুলিতে ২জন ব্যক্তির মৃত্যু।
· চাবুয়ার কাছে রৌমারিইয়াতে পুলিশের গুলি চালনাতে ২ ব্যক্তির মৃত্যু।
· নগাঁও জেলার জুরিয়াতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, পুলিশের গুলিতে ১জন নিহত।
· শিবসাগরের বরহাটে পুলিশের গুলিতে একজন নিহত।
· দরং জেলার চাউলখোয়া চরাঞ্চলে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ । বহু লোকের মৃত্যু।
· চাউলখোয়া চাপরিতে সারা আসাম স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জয়নাথ শর্মার ভাই দয়ানাথ শর্মা নিহত, তাঁর সঙ্গে আরো অনেকের মৃত্যু।
ফেব্রুয়ারি---১৬
· ডুমডুমাতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে ৭ জন নিহত। লাকুয়ার কাছে শিলাকুটি মাণ্ডাও গ্রামে পুলিশের গুলিতে ১জন নিহত।
· গোয়ালপাড়াতে আসাম পুলিশ এবং সি আর পি-র সংঘর্ষে ৬ জন সি আর পি নিহত।
· ধুবড়ি মহকুমার গোলকগঞ্জে ২৩টি বাড়ি এবং নলবাড়ির ঘগ্রাপাড়ে ১৫টি বাড়ি পুড়ে ছাই।
· ১৪ তারিখে যে সব ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ সম্পূর্ণ করা যায় নি, সেরকম ১৩৭টি কেন্দ্রে আবার ভোট গ্রহণ।
· নগাবান্ধাতে হিটলারি পন্থাতে মুসলমান গণহত্যা। নগাবান্ধা হাইস্কুলে আশ্রয় নেয়া মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষকে স্কুল ঘরের বাইরে তালা লাগিয়ে আগুন লাগিয়ে হত্যা করা হয়।
ফেব্রুয়ারি-১৭
· দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোট গ্রহণ। ৩৬টি বিধান সভা এবং ১১টি লোকসভা কেন্দ্রে। মঙলদৈ মহকুমার হিরাপাড়া, খাটনিয়ার পাড়া ইত্যাদি অঞ্চলে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ। বহু মানুষের মৃত্যু, বহু মানুষের বাড়ি পুড়িয়ে ছাই।
· শিবসাগর জেলার ধলানসবা, চাপরি আলিতে এবং যোরহাটের তিতাবর, গোয়ালপাড়া জেলার কোকড়াঝাড়ে এবং বিলাসিপাড়াতে, নলবাড়ি জেলার বরমাতে, ডিব্রুগড় জেলার চাবুয়াতে নির্বাচন বিরোধী জনতার উপর গুলি চালনা। বহুলোক হতাহত।
ফেব্রুয়ারি-১৮
· নগাঁও জেলার নেলিতে সংখ্যালঘু মুসলমানের উপরে পরিকল্পিত আক্রমণ। প্রায় তিন হাজার মানুষের মৃত্যু। ১৬টি গ্রাম পুড়ে ছাই।
· দরং জেলার বিভিন্ন জায়গাতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ। এই সংঘর্ষে ২৬ জন এবং পুলিশের গুলিতে ৪ ব্যক্তির মৃত্যু।
· গোয়ালপাড়া জেলার বৈঠামারি এলাকাতে ৮টি, বিজনি এলাকাতে ৬ খানা, কামরূপ জেলার গোরেশ্বরে ৮টি, নগাঁও জেলার যমুনামুখ এবং কামরূপের ৭খানা গ্রাম পুড়িয়ে ছাই করে ফেলা হয়। ৩৯ জন মানুষ মারা যান, গৃহহারা হন ১২০০০ জন ।
· নগাঁও জেলার ধিং এলাকাতে বিভিন্ন ঠাইতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, গোয়ালপাড়া জেলার লখিমপুরে ৩টি মৃতদেহ উদ্ধার। জামুগুড়িতে একদল দুষ্কৃতিকারীর উপর সি আর পির গুলি বর্ষণের ফলে ১ ব্যক্তির মৃত্যু।
· শিবসাগরের নাওজানে একশটি মুসলিম পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত।
ফেব্রুয়ারি—১৯
· কামরূপ জেলার গোরেশ্বরে ভাষিক সংখ্যালঘুর উপরে আক্রমণ। অনেকে আহত।
· অভয়াপুরির কাওয়াদাঙ্গা ইত্যাদি এলাকাতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ।
· ২৪টি বিধান সভা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ।
· কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রীর নেলি এবং নগাবান্ধার গণহত্যার পৈশাচিক দৃশ্য পরিদর্শন।
· লখিমপুর জেলার ঢকুয়াখানাতে ৬ জন, কামরূপ জেলার সাউদে ভিটাতে ২জন লোক দলীয় সংঘর্ষে এবং পুলিশের গুলিতে নিহত।
· দরং জেলার খৈরাবাড়ির কাছে বরঙ্গাজুলির একটি ভাষিক সংখ্যালঘু গ্রাম পুরো পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নিহত দেড় শতাধিক।
· শিবসাগর জেলার থাওরা কেন্দ্রের খরহাটে ১জন, আমগুড়ি কেন্দ্রের বরমা বাগিচাতে ২জন ব্যক্তি পুলিশের গুলিতে নিহত।
· চতিয়াতে দলীয় সংঘর্ষে ৬জন মানুষের মৃত্যু। ঠেকেরাবাড়ি ধুলা চৌকা গ্রামে দুখানা পুড়ে ছাই।
ফেব্রুয়ারি—২০
· শিলাপাথারের কাছের আর্নে চরঅঞ্চলের বেশ কিছু বাঙালি গ্রামে আক্রমণ। কয়েকশ মানুষের মৃত্যু।
ফেব্রুয়ারি—২১
· প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির নেলি গোহপুর ভ্রমণ।
· কামরূপ জেলার গোরেশ্বর থেকে প্রায় দুই হাজার ভাষিক সংখ্যালঘু মানুষ পালিয়ে গিয়ে পশ্চিম বাংলাতে আশ্রয় নেন।
· কামরূপ এবং নগাঁওর বিভিন্ন জায়গাতে ৪৮টি মৃতদেহ উদ্ধার।
· ধেমাজি জেলার চিমেন চাপরিতে আন্দোলনকারীরা বাঙালিদের উপরে আক্রমণ করে। বহু লোক মারা পড়েন।
ফেব্রুয়ারি—২২
· অসমের ঘটনাতে রাষ্ট্র সংঘের সচিব প্রধান পেরেজ দ্য কুয়েলারের দুঃখ প্রকাশ।
· কর্মচারী পরিষদের ১৮ দিনের অসহযোগ সমাপ্ত।
· নব-নির্বাচিত সরকার গঠনের বিরুদ্ধে কর্মচারীর সর্বাত্মক অসহযোগ পালন।
ফেব্রুয়ারির পরের কিছু উল্লেখযোগ্য সাম্প্রদায়িক ঘটনা
মার্চ—৪
· সরুপেটাতে রফিকুল ইসলাম, আবদুল হালিম, আব্দুল মতিন এবং রাইজুদ্দিন আহমেদ নামের চার ব্যক্তিকে দোকানের জন্যে জিনিস কিনতে আসবার পরে দুষ্কৃতিকারীরা হত্যা করে।
মার্চ—৫
· গুয়াহাটি-আজারার অন্তর্গত গরল ভট্টাপাড়াতে কিছু দুর্বৃত্ত গাড়ি থামিয়ে ৭ জন মুসলমান ব্যক্তিকে নামায়। ৫ জনকে খুন করে। ২জন কোনো ক্রমে প্রাণ নিয়ে পালাতে সমর্থ হন। তাঁরা হলেন আবু সামা এবং শাজাহান। বাড়ি ছয়গাঁওর জাহিরপুরে।
মার্চ---৬
অসমের গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশে এগার দলের জোটের প্রতিবাদ।
মার্চ---৭
গুয়াহাটির দক্ষিণ শরণীয়ার হলধর পাঠকের বাড়ির ভেতরে একটি বোমা বিস্ফোরণ। এই ঘটনাতে অনিল ডেকা এবং মতিউর রহমানের মৃত্যু হয়।
মার্চ---১৭
· মঙলদৈ মহকুমার শিপাঝাড় এলাকাতে মিজাজুর রহমান নামের এক ‘ভূমিপুত্র’ মুসলমান তরুণকে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেই অঞ্চলে তুমুল আলোড়ন।
মার্চ---১৯
· কামরূপ জেলার ভেল্লার কাছে নগাঁওতে লাইন বাস থামিয়ে ৪ জন মুসলমান পুরুষ, ৩জন মহিলা এবং ১টি শিশুকে দুষ্কৃতিকারীরা অপহরণ করে।
· তেজপুরের পাণপুরে, ফেরিঘাট এবং লালটাপুতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়।
মার্চ---২৭
· গোলাঘাট মহকুমার বরগরীয়াতে ৪০টি মুসলমান পরিবারের বাড়ি পুড়িয়ে ছাই।
মার্চ---৩০
· হাজোর বুল্লুট বাজারে দুটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ। ২২জনের মৃত্যু।
· শিবসাগরের রংবাং চরঅঞ্চলে ২২টি মুসলমান পরিবারের বাড়িতে আগুন।
মার্চ---৩১
· কোকড়াঝাড় অঞ্চলে রাজবংশীদের দ্বারা ভাষিক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের গ্রামে আক্রমণ। ৩০টির বেশি গ্রাম পুড়ে ছাই। ১৭ জনের মতো মানুষের মৃত্যু।
এপ্রিল---১১-১২
· আসুর মুসলমান সদস্যদের আসুর শীর্ষনেতৃবৃন্দকে পনেরো দফার দাবি সনদ পেশ।
এপ্রিল—২০
· শান্তির নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিশ্বখ্যাত মানব সেবিকা মাদার টেরেসার সঙ্গে সারা আসাম মুসলমান সমাজের নেলি, চামাগুড়ি ইত্যাদি অঞ্চল ভ্রমণ।
মে---৪
· পনেরো দফা দাবি সনদ পেশের অপরাধে নুরুল হোসেন সহ বেশ কিছু আসু সদস্যকে আসুর থেকে বহিষ্কার।
(সে সময়ের বিভিন্ন সংবাদ পত্র থেকে সংগৃহীত )
পরিশিষ্ট (২)
স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর গোপন নির্দেশিকা
নির্বাচন প্রতিরোধের কার্যব্যবস্থা
১) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাওয়া যে কোনো রাজনৈতিক দলের অথবা নির্দলীয় প্রার্থীদের এবং সম্ভাব্য প্রস্তাবকদের
মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে বাধা দেবেন।
ক) ঘেরাও, খ) পিকেটিং, গ) আক্রমণ
নির্বাচনের কাজে লিপ্ত হতে পারেন সেরকম যেকোনো ব্যক্তিকে (যেমন প্রার্থীর পুত্র, কন্যা, পত্নী, আত্মীয়, পুলিং অফিসার, গাড়ির ড্রাইভার, গ্যারেজের মালিক, মেকানিক ইত্যাদি) স্থানান্তরের ব্যবস্থা করবেন।
২) ক) ভোট গ্রহণ কেন্দ্র, গাড়ি, দেশদ্রোহীর ঘর-দোয়ার ইত্যাদিতে অগ্নি সংযোগ করবেন।
খ) ভোট গ্রহণ কেন্দ্র স্থাপনে বাধা দেবেন, সরকারের নিয়োগ করা আধিকারিকদের প্রবেশে বাধা দেবেন।
গ) ভোটের বাক্স জব্দ করবেন, দূরে কোথাও সেগুলো নষ্ট করবেন। ভোটের বাক্স এবং ব্যালট পেপার বয়ে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তির যান-বাহনে আক্রমণ এবং অগ্নি সংযোগ।
৩) বাধা প্রদান
ক) বিভিন্ন পথের উপর গাছ কেটে পথ বন্ধ করা হোক।
খ) রাস্তার উপর পোলিঙের জন্যে গাড়ি যাতে না যেতে পারে সেজন্যে রাস্তা কেটে ফেলতে হবে।
গ) পরোক্ষভাবে রেল চলাচলে বাধা দিতে হবে। যেমন রেলের সিঁড়ি, ফিশপ্লেট উঠিয়ে দিতে হবে।
ঘ) পথে খুঁড়ে দিতে হবে, সেতু ভেঙ্গে দিতে হবে, ফাঁড়ি পথ তৈরি করলে সেগুলোও খুঁড়ে ফেলতে হবে।
৪) নির্বাচনী প্রচারে বাধা দিতে নির্বাচনী পোস্টার ছিঁড়ে দেবেন, দেয়াল লিখন মুছে পোস্টার লেখার লোকজনকে আটক করবেন।
৫) বিজলি তার বিচ্ছিন্ন করবেন।
৬) অন্যান্য কার্যব্যবস্থা
ক) সরকারি কার্যালয়ে অগ্নি সংযোগ।
খ) নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত লোকজনের খাবার থেকে শুরু করে ঠাণ্ডা জল অব্দি পাওয়া কঠিন করে তুলতে হবে।
গ) যে কোনো সরকারি যান-বাহনের পেট্রল এবং ডিজেল ট্যাংকে চিনি ঢেলে দেবেন।
ঘ) যান-বাহনের টায়ারে পেরেক ঢুকিয়ে দিতে পারার মতো যথেষ্ট পেরেক মজুত রাখবেন এবং কাঠের পেরেক ঢুকে পথের উপরে গোবর বা গাছের পাতাতে ঢেকে রাখবেন।
ঙ) পর্যাপ্ত পরিমাণে লংকাগুড়ো , চোতরা পাতার গুড়ো, ‘বান্দর কেঁকোরা’ (চোতরার মতোই জ্বালা ধরানো উদ্ভিদ), মৌমাছি, বোলতার বাসা জমা রাখতে হবে, এবং নির্বাচনী সভাসমিতিতে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে গিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
চ) তীরধনুক চালাতে নিপুণ ব্যক্তিদের স্বেচ্ছাসেবীরূপে তৈরি রাখতে হবে। গুলতিও তৈরি রাখতে হবে।
ছ) প্রতিদিন জায়গা বদল করে রেললাইনের ফিশপ্লেট সরিয়ে যেতে হবে।
জ) অপহরণ করে নেয়া অসম বিরোধী ব্যক্তিকে অকেজো করে নির্জন স্থানে রাখতে হবে।
৭) মুখ্য কার্যালয়ের থেকে ১২৬জন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত। তাদের কাজ হবে:
ক) গোপন নির্দেশের যোগান দেয়া এবং আবার মুখ্য কার্যালয়কে নির্বাচন কেন্দ্রগুলোর খবর জানানো।
খ) গোপন নির্দেশ প্রয়োগে আনা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
৮ ) জনসংযোগ ব্যবস্থা।
সংবাদ পত্রে যদি সেন্সর হয়, তবে---
ক) দৈনিক বুলেটিন (লিথো বা ছাপা) বিতরণ। সাইকেল বা অন্যান্য যানবাহনের মাধ্যমে---রাতের বাস, রেল, লাইন বাস, রিক্সা, মটর সাইকেল, ডিঙি নৌকা, ফেরি ইত্যাদিরও সাহায্য নেবেন। সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদেরও এই কাজে নিয়োগ করবেন।
খ) গ্রামীণ অঞ্চলে ঢোল বাজিয়ে প্রচার করবেন।
গ) যদি কোনো জরুরি ঘোষণা থাকে তবে অতর্কিতে সিনেমা হলের ভেতরেও ঢুকে যাবেন, এবং ঢোল বাজিয়ে জানাবেন।
বি: দ্র: বাড়িঘর জ্বালাবার জন্যে তির-ধনুক, নাগেশ্বরের গুটি, আমড়া গুটি, মরাপাট সংগ্রহ করে রাখবেন। একদিকে আগুন লাগিয়ে অন্যদিকে লেগেছে বলে ফায়ার-ব্রিগেডকে খবর দেবেন। এর বাইরেও কোনো ঘটনা না হলেও হয়েছে বলে খবর দিয়ে পুলিশ আর অগ্নিনির্বাপক বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবেন।
পরিশিষ্ট (৩)
অসম আন্দোলনের নেতৃত্বের গোপন নির্দেশগুলো ছিল
১) একজনের নেতৃত্বে গোপনে সদর জায়গা স্থির করে কঠোর শৃঙ্খলা এবং নিয়মাবলীসহ বিভিন্ন স্তরে সমিতি গঠন।
২) অর্থ সংগ্রহ।
৩) যে সব অসমিয়া রাজনৈতিক ব্যক্তি, দালাল, সরকারী চাকুরে, শোষণকারী প্রভৃতি এই সমিতির স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে যাবে তাদের চিনে বের করা।
৪) এই ধরণের কমিটির কাজের বিরোধী অনাসমিয়াদেরও চিনে বের করা।
৫) স্থানীয়ভাবে বিচার করবার জন্যে দিন নির্ধারণ করা।
৬) নাগা, মিজো, মণিপুরি, মেঘালয়, অরুণাচল, ত্রিপুরা এবং উত্তরপূর্বাঞ্চলের ভূমিপুত্রদের (খিলঞ্জিয়া) সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ রাখা এবং তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অঞ্চলটির উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করা।
৭) বদরপুর থেকে লামডিং অব্দি রেলযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে কাছাড় জেলাকে অসমের মানচিত্রের থেকে বাদ দেয়া এবং লোকবিনিময়ের মাধ্যমে অসমের বাঙালিদের কাছাড় জেলাতে সংস্থাপিত করা।
৮ ) লামডিংকে সব দিক থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া।
৯) অসমিয়া মুসলমানেরা বাঙালি মুসলমানদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখবেন না, এমন কি ধর্মের নামেও না।
১০)বাঙালি হিন্দুরা অসমকে বৃহত্তর বাংলা পরিণত করবার ধারণা পরিহার করুন। বাংলাদেশী মুসলমানেরা অসমকে মুসলমান রাষ্ট্রে পরিণত করবার ভাবনা বাদ দিন। তাঁরা আলীগড়, জামশেদপুর, নদীয়া ইত্যাদি জায়গাতে সংঘর্ষের কথা এবং আর এস এস-এর তাদের বিরুদ্ধে করা কার্যকলাপের কথা ভুলে যাওয়া তাদের জন্যেই মঙ্গলজনক নয়।
১১) বাঙালি হিন্দু –মুসলমান উভয়েরই উচিত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বন্ধ রাখা। এবং রাজ্য সরকারের চাকরিতে নিয়োগও বন্ধ রাখতে হবে।
১২) অসমের বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, অন্যান্য শিক্ষানুষ্ঠানে পাঠরত বাঙালি ছাত্রদের পাঠে বিঘ্ন ঘটানো।
১৩) বাঙালি দোকান থেকে জিনিসপত্র কেনা এবং তাদেরকে দরকারি জিনিস বেচাও বন্ধ করা।
১৪) বাংলা সিনেমা দেখানো বন্ধ করতে হবে।
১৫) কলকাতা ভিত্তিক সংবাদ পত্রের প্রচলন বন্ধ করতে হবে।
১৬) বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চল, শিল্পাঞ্চল এবং অসমের সীমান্তে শুধু অসমিয়া পুলিশ আধিকারিক নিয়োগ করা।
১৭) রেল, ব্যাঙ্ক, বিমা আদি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাঙালি নিয়োগে বাধা প্রদান।
১৮) সর্বত্র শুধু অসমিয়া নিয়োগ।
১৯) বাঙালিদের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক জীবন বিপন্ন করা। পুরোনো বাসিন্দাদের শান্তিতে বাস করতে দেয়া।
২০) স্থানীয় মানুষের ব্যবসা-চাকরি-ঠিকা ইত্যাদি করবার সুযোগ পেতে হবে। মিল, শিল্পকেন্দ্র আদিতেও শ্রমিকের কাজেও স্থানীয়দের নিয়োগ করতে হবে।
২১) সবাইকে পরম্পরাগত পোশাক পরতে হবে।
২২) চা, কয়লা, প্লাইউড, তেল এবং অন্যান্য সম্পদের উৎসগুলোর নিয়ন্ত্রণ রাজ্যসরকারকে নিতে হবে।
২৩) কলকাতা, দিল্লিকে জানাতে হবে যে জীবন ধারণের জন্যে অসমের তাদের থেকে শুধু নুনই দরকার। অথচ, তারা অসম থেকে চা, কয়লা, তেল ইত্যাদি না নিলেই নয়। অসমের উচিত তাদের বুঝিয়ে দেওয়া যে বিশ্বের বুকে অসমিয়া নিঃসঙ্গ নয়।
২৪) অসমিয়ার উচিত থাই বৌদ্ধদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখা।
পরিশিষ্ট (৪)
বিজ্ঞপ্তি
বিগত অসম আন্দোলনের সম্পর্কে যেসব ফৌজদারি মামলা আদালতে এখনো চলছে এবং বিচারাধীন হয়ে আছে, রাজ্য সরকার চায় সেগুলো অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে। ইতিমধ্যে সব মিলিয়ে ২০,৬২৫টি মামলা রাজ্য সরকার প্রত্যাহার করেছে। তবু সারা আসাম ছাত্র সংস্থার থেকে বলা হচ্ছে যে আরো অনেক মামলা প্রত্যাহৃত হয় নি। সেরকম মামলার বিবরণ দিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলার উপায়ুক্তের কাছে ৩০/১১/৮৯ তারিখের মধ্যে আবেদন করবার জন্যে নির্যাতিতদের কাছে এবং ছাত্র সংস্থাকে আহ্বান জানানো হলো। সেরকম আবেদনের প্রতিলিপি একটি অসম সরকারের অসম চুক্তি রূপায়ণ বিভাগের কাছেও পাঠাবার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে হওয়া আলোচনাতে সারা আসাম ছাত্র সংস্থা একমত হয়েছে।
সচিব
অসম চুক্তি রূপায়ণ বিভাগ,
তারিখ: দিসপুর, ১৬ নভেম্বর,’৮৯
পরিশিষ্ট (৫)
শিলাপাথারে নিহত কিছু মানুষের নাম
(আর্নে চাপরি, চিমেন চাপরি আদি অঞ্চলে)
সোনাই মণ্ডল (৪০), যুধিষ্ঠির রায় (৭০), সুরেন মালো (৬০), প্রাণ কুমার সরকার (৬৫), মদারি মণ্ডল (৬২), সুবল সরকার (৭৫), কাঞ্চন সরকার (৬০), মদন সরকার (৪০), সুনীল সরকার (৪৫), রতন বর্মণ (১০), যোগেন রাজবংশী (৭০), রমেশ ভৌমিক (৬৫), হেমন্ত শিকদার (৭২), রায়মোহন বিশ্বাস (৭৫), মইনা নমশূদ্র (৩১), শ্রীমতী নমশূদ্র (৪), বিজয় নমশূদ্র (৬), রাজকুমার নমশূদ্র (৩০), কুমুদিনী নমশূদ্র (৬০), চামেলি নমশূদ্র (৪), কাজল নমশূদ্র (২), দরিকা নমশূদ্র (৬০), সুখকান মালোদাস (৫), শেফালি সরকার (১৫), গুরুচরণ সেন (৫০), সুনীল ভৌমিক (৩৫), যজ্ঞেশ্বর সাহা (৪০), সাধুচরণ সাহা (৭০), ধীরেন শিকদার (৩৫), বনমালী শর্মা (৬০), উমা শর্মা (৭), সরস্বতী দেবী (৫০), দশরথ দেবনাথ (১৭), পঞ্চ সরকার (১০), যামিনী সরকার (৭০), রবি চক্রবর্তী (৬০), রতন দাস (১৬), সন্তোষ পাল (৫০), রমেশ চন্দ্র পাল (৬৭), মাণিক নমশূদ্র (২২), নরেশ ঘোষ (৬২), ফালো মণ্ডল (৮০), হেমন্ত দাস (৬৫), প্রায়বালা মালোদাস (৭০), মিলন নমশূদ্র (৫০), পবিত্র নমশূদ্র (৬০) , নৃপাবালা নমশূদ্র (৪০), শুলক্ষ নমশূদ্র (৭০), অশোক বালা নমশূদ্র (৬০), সুরেশ নমশূদ্র (৬০), বাজিলাল নমশূদ্র (৩৪), ক্ষোবা নমশূদ্র (৩৪), সুরেন্দ্র নমশূদ্র (৬০), সুকুমার নমশূদ্র (৫০), রাজবালা নমশূদ্র (২০), আসু কুমার নমশূদ্র (৪), চিত্তরঞ্জন নমশূদ্র (২), পিয়ালি নমশূদ্র (৫০), সঞ্জনা নমশূদ্র (৮), শৈব্যাবালা নমশূদ্র (১০), মুক্তা নমশূদ্র (২), মইনা নমশূদ্র (৮), সুকুতি নমশূদ্র (১৫), সুশইবালা নমশূদ্র (৩৬), লতিকা নমশূদ্র (১০), জ্যোতি নমশূদ্র (৫), দেবেশ্বর নমশূদ্র (৩০), জবা বালা নমশূদ্র (২), সুজাতা বালা নমশূদ্র (১০), টুকুরাম নমশূদ্র (৫), রেণুবালা নমশূদ্র (৪৮), প্রমিলাবালা নমশূদ্র (৬০), নিয়তিবালা নমশূদ্র (২০), বংশর নমশূদ্র (৪), মালন্তী নমশূদ্র (১৮), কমলাবালা নমশূদ্র (২২), তুলারাম নমশূদ্র (৩৫), জলন্দিনী (৮০), বিশ্বজিৎ (১), রঙ্গীবালা নমশূদ্র ( ৩৫), মাণিক নমশূদ্র (২২), স্বান্ত্বনাবালা নমশূদ্র (৫), মায়াবালা (৩০), ঝুনইবালা (৪৮), গোপাল নমশূদ্র (৬), দীনেশ নমশূদ্র (৫৫), শিবানী নমশূদ্র (২৮), ক্ষিতীশ নমশূদ্র (৪৫), রেবতী নমশূদ্র (২), সুজিত (৩), আহ্লাদ নমশূদ্র (৩৫) ইত্যাদি।
বিষ্ণুপুর , শান্তিপুরে নিহত কিছু মানুষের নাম
রেণু দেবনাথ (৩), অমর রায় (৬৫), সরস্বতী রায় (৫৫), ফালানি রায় (৫৫), কাশী রায় (৬০), রমা রায় (৬৫), ধীরেন বিশ্বাস (৩০), কনকবালা সরকার (৬০), রেণুবালা বিশ্বাস (৪৫), বিচু বিশ্বাস (১৩), শল্কী বিশ্বাস (১২), লক্ষীবালা মণ্ডল (৮০), খেপী বিশ্বাস (৪), দীনেশ দেবনাথ (৫৫), যাদব রায় (৬০), যদু রায় (৫৫), পরেশ ঘোষ (৪০) ইত্যাদি।
পরিশিষ্ট (৬)
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী/পত্র-পত্রিকা/ প্রতিবেদন
ইংরেজি :
১) Sanjay:Assam, A Crisis of Identity, 1980
২) Hussain, Dr Manirul, The Assam Movement: Class, Ideology and Identity, Manak Publication, 1993
৩) Barua, Sanjib: India Against Itself, Oxford, 1999.
৪) Verghese , B.G.: Northeast Resurgent, Konark Publication, 1996.
৫) Gupta, Shekhar, Assam: A Velley Divided, Vikas Publication House , 1984.
৬) Gohain, Dr. Hiren: Case of fathomless double-dealing, The Telegraph, 25 May, 1983.
৭) Gohain, Dr. Hiren: On the present Movement in Assam, 1980, Assam : A Burning Question, 1984.
৮ ) Hazarika, Sanjay: Rites of Passage; Penguin. 2001.
৯) India Today: 15th March and 31st May. 1983.
১০) Several Copies of ‘Economic and Political Weekly’
১১) Kimura, Dr. Makiko, ‘Agency of Rioteers’, 2009.
অসমিয়া :
১২) বরগোহাঞি, হোমেনঃ আশির দশকর দস্তাবেজ, স্টুডেন্ট স্টোর্স, ২০০১।
১৩) গোস্বামী , সবিতা : মন গংগার তীরত, অন্বেষা, ২০০৯।
১৪) অসম আন্দোলনঃ প্রতিশ্রুতি আরু ফলশ্রুতি, বনলতা, ২০০১।
১৫) বিভিন্ন অপ্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদন, অসম সরকার।
১৬) মেহতা আয়োগর তদন্ত প্রতিবেদন,
১৭) মুজাহিদ বিশেষ সংখ্যা, ১৯৮৩।
১৮) শর্মা, দিগন্ত : নেলী, ১৯৮৩, একলব্য প্রকাশন, ২০০৭।
১৯) অগ্রদূত, ১৯৮৩ সনের বেশ কিছু সংখ্যা।
~~~~~০সমাপ্ত০~~~~~
(লেখকের দূরভাষ: ৯৮৫৪৬-৩১৯২৮। লেখক ‘সাদিন’ কাগজের স্টাফ রিপোর্টার।)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন