ছবিতে দু'বার ক্লিক করে এলবামে চলে আসুন।বাকি ছবি দেখুন। |
১৯৪৭এ দেশভাগের মধ্যি দিয়ে ভারত –পাকিস্তান
স্বাধীন হবার পরে পরেই উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করা হলে পূর্ব
পাকিস্তানের মানুষ তৎক্ষণাৎ তার বিরোধিতা করে বাংলার জন্যেও সমানাধিকার দাবি করেন।
১৯৫২ সালে তাঁদের ক্ষোভের চরম প্রকাশ ঘটে।
২১শে ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে
বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল
জব্বার, আবদুস সালামসহ কয়েকজন ছাত্রযুবা হতাহত
হন। এর পরেও দীর্ঘ লড়াই শেষে ২৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ সালে বাংলা পাকিস্তানের দ্বিতীয়
রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পায়। সেই থেকে দিনটি বাংলাদেশেই ভাষা শহীদ দিবস
হিসেবে পালিত হয়ে আসছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রস্তাবে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত
ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে
ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসঙ্ঘের
সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।
তিনসুকিয়ার ‘উজান সাহিত্য গোষ্ঠী’ জন্মলগ্ন থেকেই বহুভাষিক কবিতায়, কথায় এবং গানে দিনটি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করে
আসছে। এবারেও করেছে ‘দুর্গাবাড়ি’ প্রাঙ্গণে খোলা মঞ্চে । বিগত চার বছর
ধরে তাঁর সঙ্গে বিশেষ বিষয়-নির্ভর বক্তৃতানুষ্ঠানেরও আয়োজন করে আসছে
। এবারেও দুজন বিশেষ বক্তা আমন্ত্রিত হয়ে
এসেছিলেন তিনসুকিয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এবং সাংস্কৃতিক কর্মী ড০
ভুবন গগৈ এবং গুয়াহাটি থেকে রাজ্যের বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী এবং অভিনেতা গৌতম
ভট্টাচার্য ।
শুরু যদিও
হবার কথা ছিল বিকেল আড়াইটায় প্রচণ্ড প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্যে লোকজন আসতে সামান্য
দেরি হয়, ফলে অনুষ্ঠান শুরু
করতেও হয় সামান্য বিলম্ব। কিন্তু শেষমেশ দর্শকাসন একটিও খালি পড়ে থাকে নি। একদিকে
ডিব্রুগড় , অন্যদিকে ডিগবয়
থেকেও অনেকে এসে যোগ দেন। শুরুতেই প্রদীপ
প্রজ্বলন করে এবং শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ
জানিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন ‘উজান সাহিত্য গোষ্ঠী’র সভাপতি সুজয় রায়। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন অতিথি-দ্বয় ড০ ভুবন গগৈ, গৌতম ভট্টাচার্য
সহ উপস্থিত সবাই। পাশাপাশি তখন চলতে থাকে
উদ্বোধনী সঙ্গীত ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি’ । পরে পরেই বিরতি না দিয়ে চলতে থাকে ‘চিরচেনেহী মোর ভাষা জননী’। পরিবেশন করেন
উজানের শিল্পীরা। দ্বিতীয়টি পরিবেশন করেন নিরঞ্জন হাজরিকা।
মাঝে অতিথি-বরণের একটি ছোট্ট পর্ব থাকে। অতিথিদ্বয়
কে গামোছা পরিয়ে এবং উপহার দিয়ে বরণ করেন গোষ্ঠীর সম্পাদক ভানু ভূষণ দাস এবং ‘উজান’ পত্রিকা সম্পাদিকা
সবিতা দেবনাথ। এর পরেই উজানের শিল্পীরা যথাক্রমে জীবন সরকার, তুহিনা ভট্টাচার্য, বর্ণালী চৌধুরী, শতাব্দী গাঙুলি, মুনমুন চৌধুরী
সমবেত ভাবে পরিবেশন করেন একটি রবীন্দ্র সঙ্গীত
‘শুভ কর্ম পথে’। তবলায় সঙ্গত করেন
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
সভাপতি সুজয় রায়
স্বাগত ভাষণ দেবার পরে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান । একে একে নিজের লেখা কবিতা পড়ে শোনান
কৃষ্ণ উপাধ্যায়, নীলদ্বীপ
চক্রবর্তী,রামপ্রসাদ দুবে , স্বস্তি চক্রবর্তী,
হিরামনি বড়ুয়া , তৃপ্তি দাস,
পার্বতি দেব, পার্থসারথি দত্ত, মানবরতন
মুখোপাধ্যায়, অরুণজ্যোতি তাঁতি
প্রমুখ। আবৃত্তি করে শোনান বিদ্যুৎ রক্ষিত , সৌমেন ব্যানার্জি , নমিতা ঘোষ প্রমুখ।
মাঝে একটি ভাষা এবং দেশের গান গেয়ে শোনান তুহিনা ভট্টাচার্য। সাবিনা ইয়াসমিনের
কণ্ঠে বিখ্যাত সেই ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না, আমি গাইবো গাইবো
বিজয়েরই গান’ সম্ভবত এই প্রথম তিনসুকিয়ার
কোনো মঞ্চে পরিবেশিত হলো। মাঝে এক ছোট্ট
অনুষ্ঠানে ড০ ভুবন গগৈ উন্মোচন করেন কবি ও কথাশিল্পী নীলদীপ চক্রবর্তীর
নতুন প্রকাশিত গল্পের বই ‘কাহিনি পঞ্চক’। বইটি গুয়াহাটির ভিকি পাব্লিসার্স থেকে প্রকাশিত
হয়েছে।
এই সমস্ত কিছুর
মধ্যেই চলে বিশেষ বক্তৃতানুষ্ঠান। ড০ ভুবন গগৈর বলবার বিষয় ছিল ‘কামরূপী সংঙ্গীতর ধারা’। তিনি এই বিষয়টি
নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা করছেন। তাঁর দাবি ভারতীয় ধ্রূপদী সঙ্গীতের ধারাতে ‘কামরূপী সঙ্গীত’ও একটি । শুধু তার সেই স্বীকৃতিটুকু নেই।
কেন তা পাওয়া উচিত সেই সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক আভাস দিয়ে শ্রোতাদের ভাবনাকে উস্কে
দেন। গৌতম ভট্টাচার্যের বলবার বিষয় যদিও ছিল ‘নাটক এবং আবৃত্তি: একে অন্যের হাত ধরে চলা’ তিনি এই দুই শিল্প
মাধ্যমে ভাষার সঠিক ব্যবহার যেখানে জরুরি
সেখানে সমাজ যখন ভাষার কণ্ঠ রোধ করে তখন কাজ কতটা কঠিন হয় সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন
। প্রথম জনের বক্তব্যের গাম্ভীর্য যদি শ্রোতাদের ভাবনাকে উস্কে দেয় তবে
দ্বিতীয়জনের গম্ভীর কণ্ঠ এবং সরস উপস্থাপনা শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রাখে।
পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ‘উজানে’র সদস্য ত্রিদিব দত্ত। বিকেল ছটা
নাগাদ সুশান্ত করের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের
মধ্যি দিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন