।। হেমাঙ্গ বিশ্বাস ।।
দেখেছ কি কলিঙ্গের কোনারকে
কালো প্যাগোডা?
কালের বিষ্ময়,
নিস্তব্ধ শিলায় মুখর ,কত
শতাব্দীর আবহ-সঙ্গীত?
সেদিন আমি দেখে এলাম বকো পাহাড়ে
গ্রানাইট পাথরের বুকে
শিকড় মেলে দাঁড়িয়ে থাকা
এক শালগাছ।
ঝড় ঝঞ্ঝা বজ্রপাত
আর ভূমিকম্প
প্রাণান্ত ঝাঁকুনি দিয়ে গেল; কত শতবার
সুপ্রতিষ্ঠিত তবু
দৃপ্ত ,শান্ত, দিগন্তপ্রসারী
সেই শাল গাছ,
যুগের বিষ্ময়।
কাঠাখানেক আদিম মাটিতে
তার বাস্তু ভিটে,
অন্ধকারে জোনাকির দেওয়ালি জ্বালানো
শিলাময় ঘর।
প্রাগঐতিহাসিক এক অরণ্যে জন্ম দিয়ে
কুড়ি শতকের নীল আকাশের পানে
মেলে দিয়েছে অজস্র সবুজ
পাতার অঞ্জলি।
ডালে ডালে বুনোপাখির
প্রভাতী উলুধ্বনি,
বাতাসে শীতের শিহরণ।
তবু একটুকরো মাটি থেকে তাকে
উচ্ছেদের কী চক্রান্ত।
ব্রহ্মপুত্রের পার-ভাঙা ধ্বস নয়,
তার থেকেও ভয়ঙ্কর ভূস্বামী।
পাগলা হাতির সরকারি উচ্ছেদ নোটিস।
কচি কোমল কুঁড়িগুলোকে
টেনে ছিঁড়ে পায়ের তলায় মাড়িয়ে মাড়িয়ে
বলে যায়,
এই মাটিতে তোর অধিকার নেই।
তবু সে দাঁড়িয়ে আছে
অপরাজেয়।
আবার অজস্র পাতা, ডানা মেলে দেয়।
বিক্ষত ডালে ডালে,
অসংখ্য পাখির কাকলি।
আমি তাকে দেখে এসছি,
গ্রাণাইট পাথরের বুক ফুঁড়ে
রস টেনে
দাঁড়িয়ে থাকা
সীমান্ত প্রহরী
সেই শাল গাছ।
মুখে তার দারিদ্র্যের ছাপ।
চোখে তার ভবিষ্যের আভা,
নাম তার
কমরেড রত্নেশ্বর রাভা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন