“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১২

সাম্রাজ্যবাদী সংঘাত, ‘লুক ইস্ট পলিসি’ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অস্থিরতা

                                                               ।। অরূপা মহাজন।। 
                                                       (রচনাকাল ঃ আগস্ট, ২০০৮)

             [এই প্রবন্ধটি প্রথম প্রকাশিত হয় শিলচার থেকে প্রকাশিত অরুণোদয় পত্রিকার ২০০৮-এর আগস্ট সংখ্যায় এবং পরবর্তীতে কলকাতা ও ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত দুটি পত্রিকায় এই লেখাটি পুনর্মুদ্রিত হয়। প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় এটা এখানে তুলে দিলাম। এই প্রবন্ধটিতে   সাম্রাজ্যবাদী রণকৌশলের ২০০৮ সালে প্রাপ্ত তথ্যের অলোকে রোহিঙ্গিয়া, অন্যান্য জনজাতি সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ভবিষ্যদবাণী করা হয়েছে। কিন্তু নতুন তথ্যের আলোকে এই লেখাটির পুনরায় যাচাই করার যেমনি প্রয়োজন রয়েছে, ঠিক তেমনি অভ্যন্তরিণ আধিপত্যবাদী রাজনীতির কারণ ছাড়া অন্য আরেকটি দৃষ্টিকোণ থেকেও বর্তমান পরিস্থিতির বিচার বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন রয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতটি গড়ে উঠেছে ২০০৭-০৮ সালের আমেরিকান সাব-প্রাইম সংকটের পরবর্তীতে। পুঁজিবাদের যে কাঠামোগত সংকটের কথা অর্থনীতিবিদেরা বলছেন সেই সংকটের মধ্যেও ফিনান্সিয়্যাল মার্কেটে বিনিয়োগের মাধ্যমে যে মুনাফা ও কেন্দ্রীভবন ঘটে চলেছিল তাতে বড়রকমের ধাক্কা আসে সাব-প্রাইম সংকটের মাধ্যমে। কিন্তু রাষ্ট্রের উপর ওলিগোপলিস্টিক (মনোপলিদের গ্রুপ) নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পাবলিক-প্রাইভেট ও বাজার সব স্পেসকে কর্পোরেট প্রয়োজনানুসারে পরিচালিত করে এলিট ও উচ্চ-মধ্যবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটিয়ে মুনাফাবৃদ্ধি ও পুঁজির কেন্দ্রীভবন প্রক্রিয়াটিকে বজায় রেখেছে। অন্যদিকে আমজনতার ক্রয়ক্ষমতা ও তার সাথে সম্পর্ক রেখে আমজনতার প্রয়োজনীয় সামগ্রীর উৎপাদন কমে চলেছে দ্রুত। সুতরাং আম জনতার বিপর্যয়ের মুখে রাজনৈতিক দলগুলির কর্পোরেট প্রভুদের মুনাফা বৃদ্ধির স্বার্থে নীতি নির্ধারণ করা ছাড়া জনগণকে কাছে টানার একমাত্র সম্বল হয়ে পড়ছে কর্পোরেট প্রভুদের দাক্ষিণ্যে পাওয়া অর্থবল। কর্পোরেট মুনাফার স্বার্থে কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্বের নামে যদি কিছু বিনিয়োগ হয়, তখন তারা আহ্লাদে আটখানা হয়ে জনগণের কাছে প্রচার করতে পারেন। অন্যথায় এই অর্থবলের সাথে সংকীর্ণ জাতি-সম্প্রদায়গত খেলায় মদত যোগানো ছাড়া তারা আর কোন পথ খুঁজে পান না এবং এভাবেই গণ-চাহিদার চাপকে তারা মোকাবিলা করেন। কারণ বিকল্প রাস্তাটি হচ্ছে উন্নয়ণের গণমুখী মডেল, তৃণমূল গণতন্ত্র ও পিরামিডাকৃতি ক্ষমতা-কাঠামোকে উল্টে দেওয়ার রাজনীতি এবং এই পথ অবলম্বন করা মানে নয়া-উদারবাদকে বিরোধিতা করা]

              কিছুদিন আগে অরুণাচল প্রদেশে নির্মাণশিল্পে কর্মরত দিনমজুরদের উপর হামলা হয়। এই দিনমজুরেরা যে বাংলাদেশি মুসলমান নয় –- নিম্ন অসমের বাসিন্দা, সেটা প্রমাণিতও হয়। এবারও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণের সূত্রপাত ঘটে উজান অসমে দিনমজুরদের হেনস্তার মধ্য দিয়ে। এই আক্রান্তরাও মূলত নিম্ন অসমের বাসিন্দা ও সড়ক নির্মাণের কাজে নিযুক্ত ঠিকা শ্রমিক। এই আক্রমণের মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারী ইস্যুকে গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে সচেষ্ট হয় আসু ও তার নতুন তৈরি মঞ্চ ‘নেরসু’। বাংলাভাষী মুসলমানরা তাদের মূল র্টাগেট হলেও বাঙালি হিন্দু, নেপালি, বিহারিরাও স্থানে স্থানে তাদের অক্রমণের লক্ষ্য হয়।

             অসমে ‘বিদেশি খেদার’ নামে সংখ্যালঘুদের আক্রমণের এক ধারাবাহিক ইতিহাস রয়েছে, রয়েছে মুসলমানদের গণহারে কোতল করারও ইতিহাস। এধরনের বড়মাপের মুসলিম গণহত্যার সর্বশেষ সংযোজন ১৯৮৩’র নেলির দাঙ্গা। সত্তরের দশকে অসমে যে ব্যাপক কৃষক আন্দোলন ও তার উপর ভিত্তি করে সত্তরের শেষের দিকে যে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল তাকে ধ্বংস করে দিতেই শুরু হয় আসুর ‘বিদেশি খেদা’ আন্দোলন। ১৯৮৩-তে নির্বাচন ঘোষণা করে আসু আন্দোলনের প্রতি যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া হয়, নেলি ছিল সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উগ্রজাতিয়তাবাদী প্রতিহিংসার বর্বরতম রূপ। নির্বাচনের পর স্বাভাবিকভাবেই স্তিমিত হয়ে পড়া উগ্রজাতিয়তাবাদী শক্তিরা অসম চুক্তির মাধ্যমে চাঙ্গা হয়ে উঠে। কিন্তু দীর্ঘ অগপ শাসন ও আলফা সন্ত্রাস অসমের জনজাতীয়দের মূল অসমিয়া সমাজ থেকে দূরে ঠেলে দেয়। আক্রান্ত হওয়ার ভীতিকে উপেক্ষা করে ন-অসমীয়ারা নিজেদের বাংলাভাষী পরিচিতেতে ফিরে যায়। উগ্রজাতিয়তাবাদী কার্যকলাপ অসমীয়া জাতির যে ক্ষতিসাধন করে তাতে উগ্রজাতিয়তাবাদীরা দ্রুত জনভিত্তি হারাতে শুরু করে। তাদের স্বাভাবিক মৃত্যু অনিবার্য হয়ে উঠা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে উঠার যে সম্ভাবনা দেখা দেয় তাকে প্রতিহত করতে নেওয়া হয় নতুন কৌশল। শুরু হয় জনজাতীয়দের ন্যায্য ক্ষোভকে সংকীর্ণতাবাদে রূপান্তরিত করে সন্ত্রাসের বাতাবরণ সৃষ্টি করার মাধ্যমে। নিম্ন অসমে বড়ো সন্ত্রাসীদের জাতি-নির্মূলীকরণের (Ethnic Cleansing) অভিযান স্বীকৃতি পায় বিটিসি গঠনের মধ্য দিয়ে। এবার জনগোষ্ঠীগত হিংসা ও ঘৃণাকে গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে অসমিয়া উগ্রজাতীয়তাবাদী ও জনজাতীয় সংকীর্ণতাবাদ এক মঞ্চে সামিল হয়েছে।

                উজান অসমে আসুর সংখ্যালঘু বিরোধী অভিযানে কংগ্রেস সরকার প্রথম দিকে মদত দেয়। কংগ্রেসিরা নির্বাচনকে সামনে রেখে ‘সাপ হয়ে কাটা ও ওঝা হয়ে ঝাড়ার’ – তাদের পুরোনো রণকৌশলটি প্রয়োগ করতে সচেষ্ট হয়, যাতে সংখ্যালঘুদের ত্রাতা হিসেবে তাদের হারানো মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক ফিরে পাওয়া যায়। বিশ্বায়নের নীতির ফলে দুরবস্থার দ্রুত বৃদ্ধিজনিত ক্ষোভ থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নিতেও অনুপ্রবেশকারী ইস্যুটিকে চাঙ্গা করাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু আসু-নেরসু ও সংঘ পরিবারের এবারের সংখ্যালঘু বিরোধী এই চালে রয়েছে বিশ্ব আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সাম্রাজ্যবাদী সংঘাতের ছায়াও।

                রাশিয়ার জর্জিয়া আক্রমণ প্রমাণ করে দিয়েছে যে বিশ্ব আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী রণনীতি রাশিয়ান অক্ষশক্তির চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। জর্জিয়াকে আমেরিকার সামরিক সাহায্য, পোলাণ্ডে আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন, কাসপিয়ান অঞ্চল ও কৃষ্ণ সাগরে ক্রমবর্ধমান সামরিক গতিবিধি, কিউবাতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন ইত্যাদি ঘটনার মাধ্যমে রাশিয়া-আমেরিকা সংঘাতের পারদ তড়তড় করে চড়ছিল। জর্জিয়াকে ন্যাটোভুক্তির আমেরিকান প্রচেষ্টা ও ৭-৮ আগস্ট আমেরিকার মদতে জর্জিয়ার সামরিক অভিযান ও দক্ষিণ ওসেটিয়ায় প্রায় ২০০০ সামরিক নাগরিককে হত্যার পর রাশিয়ার সেনাবাহিনী জর্জিয়ায় প্রবেশ করে। এই হত্যালীলার ভিডিও রেকর্ডিং এবং রাশিয়ান আক্রমণে সন্ত্রস্ত ও পলায়নরত জর্জিয়ান বাহিনীর মধ্য থেকে আমেরিকান ইংরেজিতে কথাবার্তার রেকর্ডিংও রয়েছে রাশিয়ার কাছে। ১৯ আগস্ট জর্জিয়া প্রশ্নে ন্যাটোর সভায় আমেরিকান আবেদনকে অগ্রাহ্য করে বেশীরভাগ ইউরোপিয়ান দেশই রাশিয়াকে সমর্থন করেছে। দক্ষিণ ওসেটিয়া ও অবখাজিয়ার স্বাধীনতার স্বীকৃতি প্রদানের পর রাশিয়ার মৃদু নিন্দা শোনা গেলেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধের আমেরিকান প্রস্তাবে বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশগুলি সম্মতি দেয়নি। কারণ, একদিকে রাশিয়ার তেল সরবরাহের উপর ইউরোপীয় দেশগুলির নির্ভরশীলতা এবং অন্যদিকে আমেরিকান বিশ্ব আধিপত্যকে খর্ব করার সাথে তাদের স্বার্থও জড়িয়ে থাকা। রাশিয়া ইতিমধ্যে ন্যাটোর সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছে এবং সফলভাবে নতুন প্রযুক্তির ‘টপল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র’ পরীক্ষণ করে আমেরিকার দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে আমেরিকার মিত্র হিসাবে পরিচিত তুরস্কও কৃষ্ণসাগরে সামরিক গতিবিধির জন্য তাদের বন্দর ব্যবহার করার আমেরিকান প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। চীন ও রাশিয়া সহ মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ‘সাংঘাই কোঅপারেশন অর্গেনাইজেশন’ রাশিয়াকে সমর্থন করেছে, যদিও নিজেদের অভ্যন্তরিণ কারণে স্বাধীনতার স্বীকৃতির প্রশ্নে কোন মন্তব্য করা থেকে চীন বিরত থেকেছে। এস.সি.ও’র সভায় পর্যবেক্ষক সদস্য হিসেবে ভারতীয় প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। ‘নিউক ডিল’-এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত এব্যাপারে কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে না। তবে একথা খেয়াল রাখা জরুরি যে শীতল যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ‘সোভিয়েত রাশিয়ার’ সাথে যে সম্পর্ক ছিল, প্রতিরক্ষা খাতে রাশিয়ার সাথে সে সম্পর্ক এখনও অটুট রয়েছে এবং সম্প্রতি ব্রাহ্ম এরোস্পেস যৌথ উদ্যোগের জন্য ভারত রাশিয়ার কাছে ২ বিলিয়্ন ডলার মূল্যের ক্ষেপণাস্ত্রের অর্ডারও দিয়েছে। জর্জিয়া আক্রমণকে কেন্দ্র করে সাম্রাজ্যবাদী সংঘাতের যে ছবি সামনে চলে এসেছে এ ধরণের সংঘাত আগামীদিনে দ্রুত বৃদ্ধি ঘটতে থাকবে। রাশিয়ান অক্ষশক্তির প্রধান এশিয়ান অংশীদার হচ্ছে চীন। সাম্রাজ্যবাদী সংঘাতের এপিসেন্টার হচ্ছে মধ্য এশিয়া। সে হিসাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং তাই সাম্রাজ্যবাদী সংঘাতের শিবির বিভাজনের ক্ষেত্রে ভারতবর্ষের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। ভারত সরকারের ‘পূর্বে তাকাও নীতি’ এবং চীন-ভারত ও আশিয়ান দেশগুলির বাণিজ্যিক-আর্থিক নৈকট্য স্থাপনের ক্ষেত্রে মায়ান্মার হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল এবং উত্তর-পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ করিডর। মায়ান্মার-বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস ভাণ্ডারের দিকেও রয়েছে সাম্রাজ্যবাদী শ্যেনদৃষ্টি। মায়ান্মারের আর্থিক-সামরিক ক্ষেত্রে ও জুন্টা সরকারের উপর রয়েছে চীনের প্রভাব। চীন পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয় দেশগুলির একটি আঞ্চলিক গোষ্ঠী তৈরি করতে এবং আতে জাপানকেও সামিল করে নিতে আগ্রহী। জাপানের সাথে আমেরিকার ক্রমবর্ধমান দূরত্ব এবং এই আঞ্চলিক গোষ্ঠীর সাথে আমেরিকার ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সংঘাত, মালয়েশিয়া-মায়ান্মার সহ আশিয়ান দেশগুলির সাথে আমেরিকার ক্রমবর্ধমান দূরত্ব এবং এই আঞ্চলিক গোষ্ঠীর সাথে জড়িত বাণিজ্যিক স্বার্থ জাপানকেও চীনের পরিকল্পনার দিকে আকৃষ্ট করছে। বাণিজ্যিক স্বার্থের সম্পর্কগুলি একমুখীন নয় এবং তাতে নানাধরনের জটিলতা রয়েছে, তথাপি আমেরিকা যে ক্রমশই এশিয়ার এই অঞ্চলে কোণঠাসা হচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই এবং চীন-ভারত সম্পর্কের উন্নতি এবং চীন-ভারত সহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় সমুদ্র পথের বিকল্প সড়ক ও রেল যোগাযোগ গড়ে উঠা এবং মায়ান্মার-ভারত ও মায়ান্মার-চীন গ্যাস পাইপলাইন গড়ে ওঠার সম্ভাবনা আমেরিকার শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

                 চীন-ভারত-আশিয়ান বা পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যিক পরিকাঠামো গড়ার ঐতিহাসিক বাস্তবতা ও বাস্তব অগ্রগতি বিচার করে দেখা যাক। সম্প্রতি চীন-ভারত যে প্রাচীন বাণিজ্য পথ রয়েছে সেগুলি চালু করা হচ্ছে। সীমান্ত বাণিজ্যের জন্য সিকিমের গ্যাংটক থেকে ৫৪ কিঃমিঃ দূরে নাথুলা-পাস খুলে দেওয়া হয়েছে। তিব্বতের ইয়াতুং শহর নাথুলা-পাস থেকে মাত্র ৫২ কিঃ মিঃ দূরে। ব্রিটিশ আমলে চীনের কিং-রাজত্বের সময়ে তিব্বত ও ভূটানের বাণিজ্য পথ হয়ে উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে বক্সা দিয়ে বাংলাদেশের রংপুর, গুয়াহাটির সন্নিকটস্থ হাজো থেকে তিব্বত হয়ে চীনের সিচ্যুয়ান প্রদেশের রাজধানী চেংগদুরের মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ ছিল। গুয়াহাটির কামাখ্যার সন্নিকটে ব্রহ্মপুত্র নদ বন্দরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল যা পুনরায় নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বাণিজ্য পথ নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে সেটি বিস্তৃত রয়েছে চীনের ঝেজিং, হিউয়ান, গুরহও এবং ইউনান থেকে মায়ান্মার পর্যন্ত। ইউনানের রাজধানী কানমিং থেকে মায়ান্মার সীমান্ত অঞ্চল মিইতিকিইনা পর্যন্ত রেলপথের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে এবং ২০০৫-এর এপ্রিলে মায়ান্মার সীমান্ত খুলে দিয়ে ইউনান-ভিয়েতনাম রেলপথ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ইউনান-অরুণাচল প্রদেশ-অসম-মণিপুর-মায়ান্মার সড়ক পথ নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। ইউনান থেকে মায়ান্মারের মিইতিকিইনা হয়ে অসমের লিডো এবং লিডো থেকে মণিপুর হয়ে মায়ান্মার হয়ে থাইল্যাণ্ড পর্যন্ত মায়ান্মার-ভারত-থাইল্যাণ্ড ত্রিস্তরীয় মহাসড়ক বা এশিয়ান হাইওয়ে এবং আন্তঃএশিয়ান রেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ব্যাপারেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মণিপুর মায়ান্মার সড়ক নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছে। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রেল-সড়ক যোগাযোগ গড়ে ওঠার সাথে সাথে দক্ষিণ চীন সমুদ্রে ও মায়ান্মারের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে চীনের উপস্থিতির পরিকল্পনাও আমেরিকা ভাল চোখে দেখছে না। ভারতও মিজোরামের কালাদান নদীর মুখে মায়ান্মারের পুরোনো ব্রিটিশ বন্দরের আধুনিকীকরণের মাধ্যমে নদীপথে বাণিজ্যেরও পরিকল্পনা করছে। আমেরিকা জাপান ও তাইওয়ানের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করলেও, জাপানের সাথে বাণিজ্যিক স্বার্থের সংঘাত তীব্র হচ্ছে এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আমেরিকার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে চীন-ভারত ও আশিয়ান গোষ্ঠীর সাথে জাপানকে সামিল করার চীনের পরিকল্পনার দিকেই জাপান ঝুঁকে পড়বে। সুতরাং এই পরিকল্পনাকে ভেস্তে দিতে ভারতই হবে আমেরিকার কাছে দাবার ঘুঁটি। সেক্ষেত্রে উত্তর-পূর্বাঞ্চলও একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়নের (DoNER) কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মন্তব্য করেছেন – “উত্তর-পূর্বাঞ্চল এখন আর স্পর্শকাতর অঞ্চল নয়, এই অঞ্চল শুধুমাত্র ভারতবর্ষের জন্য নয়, প্রতিবেশী রাষ্ট্র চীন, বাংলাদেশ, ভূটান মায়ানমারের জন্য একটি রণনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল”। বাণিজ্য মন্ত্রী কমল নাথ মন্তব্য করেন যে চীন-ভারতের সাথে আশিয়ানই এশিয়ার ভবিষ্যত। মায়ান্মারের উপর রয়েছে আমেরিকার অবরোধ (Sanction )। মায়ান্মার সরকারের বিরুদ্ধে ভারতকে ব্যবহার করতে আমেরিকা চাপ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু ভারত সরকার মায়ান্মারে বিনিয়োগ করতে এবং সে দেশের গ্যাস সরবরাহ পেতে আগ্রহী। মায়ান্মারের উপর রয়েছে চীনের প্রভাব। সেজন্য ভারত আমেরিকার প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। মায়ান্মারের ভূগর্ভস্থ গ্যাসের ড্রিলিং-এর কাজের ৩০ শতাংশে ভারতের অংশীদারীত্ব রয়েছে এবং ভারতের ইঞ্জিনিয়ার কারিগররা ড্রিলিং-এর কাজের সহায়তা করছেন। ওনজিসি ও গ্যাস অথরিটি অব ইণ্ডিয়া মায়ান্মারের বৃহত্তর গ্যাস ফিল্ড ‘শিউফিল্ড’ ডেভেলাপমেন্টের কাজে যুক্ত রয়েছে। অপরদিকে চীনের তেল কোম্পানীর সাথে বিভিন্ন দেশে যৌথ উদ্যোগ ইস্পাত সহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রসারিত হচ্ছে। চীন-ভারত বাণিজ্যের বৃদ্ধি ঘটছে এবং এক্ষেত্রে ভারতের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। আশিয়ানের সাথে ভারতের বাণিজ্য ২০০৫-০৬ সাল থেকে ২০০৬-০৭ সালে আমদানীর ক্ষেত্রে ৬৬% ও রপ্তানীর ক্ষেত্রে ২০.৬৭% বৃদ্ধি ঘটেছে (Source : Director General of Commercial Intelligence and Statistics) আশিয়ানের সাথে চীনের বাণিজ্য বৃদ্ধির হার ৩০%। ভারতের বাণিজ্য চীনের সাথেই সবচাইতে বেশি। ভারতের সাথে সম্পর্কের উন্নতির জন্য সিকিমকে ভারতের অঙ্গ বলে চীন সরকারীভাবে ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে গ্যাস রিজার্ভকে কেন্দ্র করে আমেরিকান তৎপরতা এবং বাংলাদেশ সমুদ্রবন্দরে সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলার জন্য আমেরিকার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ব্যাপক আমেরিকান সান্রাজ্যবাদ বিরোধী গণচেতনার উন্মেষ ঘটেছে। এই গণচেতনার ভয়েই বাংলাদেশের তদারকি সরকার এমনকী টাটাদের সাথেও চুক্তি করা থেকেও বিরত থাকে এবং সম্প্রতি টাটারা বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়। পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালে নতুন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন সূর্যের উদয় হয়েছে। গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলির বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ বঞ্চনাজনিত ক্ষোভ। চীন-ভারত-মায়ান্মার সবকটি দেশই অভ্যন্তরিণ ক্ষেত্রে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর গণতান্ত্রিক অধিকার মেনে নিতে অস্বীকার করে। ১৭৮৪-তে আরাকান অঞ্চল অধিগ্রহণের পর এবং পরবর্তীতে জাপানী ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের অধিগ্রহণ ও চক্রান্তের ফলে রহোঙ্গিয়া জনগোষ্ঠীর কোন অধিকার সাব্যস্ত হয়নি এবং বাংলাদেশের চট্টগ্রামের কক্সবাজারে এই মুসলিম জনগোষ্ঠীর বহু লোক এখনও রিফিউজি এবং মায়ান্মারে তারা অনুপ্রবেশকারী সমস্যার শিকার। মায়ান্মার সরকার বিভিন্ন বিদ্রোহী জনগোষ্ঠীর সাথে শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পুরো দেশে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করলেও রোহিঙ্গিয়া সহ বেশ কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে শান্তি চুক্তি এখনও হয়ে উঠেনি। মায়ান্মারের জুন্টা সরকারের কোনধরনের গণতান্ত্রিক রীতিনীতি না মানাই স্বাভাবিক, যদিও আশিয়ানভুক্ত দেশ হিসাবে তারা মানবাধিকার সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশের চাকমাদের প্রশ্ন নিয়েও রয়েছে জটিলতা এবং চাকমারা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু রাজ্যে বহিরাগত হিসাবে প্রায়শয়ই আক্রমণের শিকার। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মত চীনের ইউনান প্রদেশ বঞ্চিত ও অনুন্নত, তীব্বতীদের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি চীন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী ফ্যাসিস্টসুলভ।

            এই পরিপ্রেক্ষিতে জনগোষ্টীগত বঞ্চনার বাস্তবতার উপর দাঁড়িয়ে উগ্রজাতিয়তাবাদী, জনজাতীয় সংকীর্ণতাবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং থাইল্যাণ্ডের অস্ত্রব্যবসায়ী কুখ্যাত স্বর্ণ ত্রিভুজের (Golden Triangle) সাথে সম্পর্ককে ব্যবহার করে উত্তর-পূর্বাঞ্চল সহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করার পেছনে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ জড়িত থাকাই স্বাভাবিক। তিব্বতীদের সংগ্রামে যে আমেরিকানরা গণ্ডগোল পাকাতে চাইছে এটাও স্পষ্ট। এবারের অনুপ্রবেশ ইস্যু নিয়ে ঘটনা পরম্পরাও এদিকেই ইঙ্গিত করছে। আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাশিয়ান প্রতিনিধি দল অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করে পরিকাঠামো ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিনিময়ের ব্যাপার আলোচনা করে। বাংলাদেশ আমেরিকার চাপের কাছে নতি স্বীকার করছে বলে একটা ধারণা তৈরি হচ্ছিল, এখন আবার উল্টো ইঙ্গিত আসতে শুরু করেছে। বিশ্ব বাণিজ্য আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার জন্য চীন-ভারতকেই দায়ী করছে ওয়াশিংটন এবং অন্যদিকে আশিয়ানের সাথে ভারত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং এ’বছরের মধ্যেই চীন ও জাপানের সাথেও আশিয়ানের চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। অন্যদিকে আমেরিকার শর্ত মেনে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করছে আশিয়ানভুক্ত মালয়েশিয়ার মত দেশও। সুতরাং চীন-ভারত ও আশিয়ান দেশগুলির বাণিজ্যিক উদ্যোগ ও আঞ্চলিক জোট গড়ার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য এঅঞ্চলে অস্থিরতা ও নাশকতা সৃষ্টির পেছনে আমেরিকান মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীরা তৎপর থাকবে। এবং তাই আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দাদের মুখ্য কর্তব্য। এই কর্তব্য পালন করতে হলে এক বৃহৎ গণতান্ত্রিক জোট গড়ে তুলতে হবে। একটি গনতান্ত্রিক কর্মসূচীর ভিত্তিতেই এই জোট গড়ে উঠতে পারে, যে কর্মসূচীতে থাকবে বিদেশি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের প্রশ্ন, প্রতিটি জনগোষ্ঠীর সমান অধিকার – সমান মর্যাদার প্রশ্ন ও সম্প্রসারণবাদ, উগ্রজাতীয়তাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবাদের বিরোধিতা। গণআন্দোলন ও গণপ্রতিরোধই দেশীয় প্রতিক্রিয়াশীল ও সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের টুঁটি চেপে ধরবে।  

সাফিনা বিবিকে চিঠি


পাবেনঃ সাফিনা বিবি, করাচী, পাকিস্তান

প্রিয়,

         সাফিনাবিবি,
কেমন আছো! তুমি কি আরও সুন্দর হয়েছো। তোমার আব্বাজান আজও কি রহমত করেননি তোমার উপর! ডান হাতের পোড়া লাকড়ির দাগের ক্ষতটা কি সেরেছে অনেকটাই! এখনও কি আছে সেই সাদা মখমলি চাদরটা! মনে আছে এই সাদা চাদরটাই প্রমাণ করেছিল তোমার কুমারিত্ব!
ভয় পেয়োনা আমি তিহারের জেলে বসে কুরান শরিফ পড়ি দু'ওক্ত। ইনসানের জন্মের যেমন একটা ফর্য থাকে, মৃত্যুরও একটা কারণ থাকে।

সাফিনাবিবি, আমার মৃত্যু খোঁদার মর্জিতে এবং পূর্ব পরিকল্পিত। জেহাদি কোন আকাশ দেখার ইচ্ছে ছিল না। বুঝতাম না, এটাই পথ নয় বেঁচে থাকার। একটা মুক্ত আসমান চেয়েছিলাম। বেঁচে হয়তো থাকলাম না সেই আকাশে, জানি মৃত্যুটা আমার মুক্ত আকাশেই হবে। তাই ভয় পেয়োনা। তবে মাটিটা আমার দেশের হলে ভালো হত। তুমিই বলেছিলে, ঈশ্বর সব মাটিতেই আছেন।
আমার মৃত্যুর প্রহর গুনছে পৃথিবী। আমি জেহাদি কিনা তাই।
আমি নাহয় কিছুদিন আগেই এবং অসময়ে গেলাম সেই নিরুদ্দেশে। আমার জন্য তৈরি হচ্ছে সরকারি নির্দেশে ফাঁসির দড়ি। এই মৃত্যুটাই আমার কাম্য ছিল। শহীদের মৃত্যু। তবে জানি আমায় ভুল বোঝানো হয়েছিল, কোন মৃত্যুই ঈশ্বরের কাছাকাছি থাকার পথ দেখায় না।
আমায় মেরে ফেলা যেতেই পারত ২৬/১১'র দিন। এতগুলি মানুষের মৃত্যুর পর আমিও সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলাম।
গুলি করেও আমাকে বাচিয়ে রাখা হয়েছে ঈশ্বরের নির্দেশেই হয়তো! আমাকে যারা গুলিবিদ্ধ করেছিল তাদেরও তো বিচার হওয়া উচিত ছিল। কোন ইনসানকে গুলি করার কোন নির্দেশ ভারতের মতো রাষ্ট্র দিতে পারেনা। এটাই আমার বিশ্বাস ছিল। আমার জেহাদি দল আর এই দেশের পুলিশে কোন ফারাক নেই।
যে লোকটি আমায় ফাসি দেবে, সেই জল্লাদ এসে দেখে গেছে আমায়। আমার গলার মাপ নিয়ে গেছে চামড়ার ফিতে দিয়ে। বলেছে আমি নাকি সুন্দর পুরুষ। আর সুন্দর পুরুষের মৃত্যু তার কাছে উপভোগ্য! রাষ্ট্র অর্থ দিয়ে জল্লাদ পোষে!
প্রাণ ভিক্ষা দেয়নি আমায় এই দেশ, তাহলে বাঁচিয়েই বা রাখল কেন বলোত! আমায় নিয়ে চলছে ট্রপিজের খেলা দুই দেশের। মিডিয়া আজও আমার আব্বাজান, আম্মাজানের খোঁজ পায়নি। ভালোই হয়েছে, কোন মানুষ আমায় জন্ম দেয়নি কাগজে কলমে অথবা কোন আম্মাজানের শরীরে। আমার জন্ম হয়েছিল দুই মাটির সংসর্গে।

তুমি আমায় কোনদিন ভালোবাসনি, আমি জানতাম। আমার ফাঁসির আদেশ শুনেই আমায় ভালবাসতে শুরু করেছ। আমার মৃত্যু, আমার কাছে এনে দিয়েছে তোমায় সাফিনা বিবি। তাই আমি সুখি পুরুষ। আমি জানি যে মৃত্যু ভালোবাসাকে কাছে এনে দিতে পারে সেই মৃত্যু সুখের।
আমি জানি এখন শুধু আমাকেই ভালবাসবে তুমি, এবং শেষ দিন পর্যন্ত তাই হবে। এরপর এক আকাশের নীচে আবার কোনদিন দেখা হবে, অথবা মৃত্যু হবে। এই দেশ আমায় মেরে ফেলুক, কিন্তু আমার ভালবাসার কোন মৃত্যুদণ্ড দেয়ার সাহস নেই কোন বিচারকের। বাতাশ, আল্লাহ্‌ আর তোমায় আমি ভালবাসি। এই দেশের পানি, অন্ন আর আমার দেশের পানি আর মানুষে কোন বিভেদ নেই।
তাই ভুল ছিল আমারই। তাই মেনে নিলাম আমার মৃত্যু, কিন্তু মেনে নিলাম না আমার ভালবাসার মৃত্যুকে। আমার আত্মার মৃত্যুকে।
যদি ভালবাসতে আমায়, হয়তো আজ আমি এই কুঠুরিতে বসে প্রহর গুনতাম না মৃত্যু সকালের। সাফিনা, এবার তোমার প্রহর গোনা শুরু। 'এ টাইম টু লাভ এন্ড এ টাইম টু ডাই'।
ভালবাসার সাথে মরণের খেলা যে খেলতে পারে, বাঁচার আনন্দ তারই থাকে। তোমার প্রত্যাখান থেকেই আমার বিপ্লব, আর ভালবাসা থেকেই আজকের মৃত্যু। মনে হয় আমি আজ বেঁচে আছি, ভবিষ্যতেও বেঁচে থাকব, কিভাবে বেঁচে থাকবো তা নির্দেশ করবে তুমি। আমার ভালবাসা।
আমি মৃত্যুর কাছেই চাইব তোমাকে। জানি আমায় দেবেন তোমার বুকে থাকার অনুমতি, এবং আমি তাই থাকবো। তাই মৃত্যুই আমার প্রিয়, বেঁচে থাকার চেয়েও অনেক অনেক বেশী সুখের।

ইতি,
কাসভ,
তিহার জেল, নিউদিল্লী, ভারতবর্ষ।

মঙ্গলবার, ২৮ আগস্ট, ২০১২

‘আম্‌গো ভাহা অহইম্মা’ বনাম ‘আম্‌গো বাসা কইলকাত্তা’?

                                                                                              ।। সপ্তর্ষি বিশ্বাস।।

           ‘‘রক্ত ঝরাতে পারিনা’ক একা   তাই লিখে যাই এ রক্ত লেখা
            বড় কথা, বড় ভাব আসেনাক মনে, বন্ধু বড় দুখে,
           অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছো সুখে ...’’
                                                নজরুল ইসলাম, আমার কৈফিয়ৎ
কাতারে কাতারে ছেলে মেয়ে পালিয়ে চলেছে বেঙ্গালোর, পুণা, হায়দ্রাবাদ, বোম্বে থেকে। প্রাণের ভয়ে । এরা সব উওরপূর্বের মানুষ। মূলতঃ আসামের।হয়তো এর পেছনে রয়েছে গুজব, হয়তো ‘রাজনীতি’। সে প্রসঙ্গে পরে যাবো। তার আগে বলে নিই যে, যেহেতু আমিও ‘অফিসিয়ালি’ ‘আসাম’এর, যেহেতু আমিও থাকছি এই বেঙ্গালোর শহরেই, ফলতঃ এই ঘটনা ঠিক ‘তাত্ত্বিক’ বা ‘দার্শনিক’ ভাবে নয়, আমাকে আক্রমন করে রক্তে-মাংসে। আমি টিভিতে খবর শুনি, ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখি কোন দিকে যাচ্ছে ঘটনার গতি এবং অন্তিমে ফোন করি, ই-মেইল্‌ করি বেঙ্গালোরবাসী অন্য চেনা পরিচিতদের। তারা বলে, মনেহয় ঠিকই বলে, কেননা সেটাই স্বাভাবিক, যে, ‘আমাদের ভয় নেই, মেইন্‌লী ট্রাইবেল্‌রা’ই টার্গেট’ তারপর সামান্য থেমে ‘আর আমাদের চিন্তা কি? কেউ বললে বলবো আমরা কলকাতার’ ... ফোন রেখে দিই। নানান ভাবনা এসে ভিড় করে মগজে। 
          বলা হয়েছিল মাতৃভাষা ‘অসমীয়া’ হলে কোনো ‘ডর’ নেই। ভোটাধিকার পাক্কা। কেননা এতে আসামে ‘অসমীয়া ভাষী’ জনতার পরিসংখ্যানে যে প্রভাব তা’তে প্রমাণিত হবে আসামে ‘অসমীয়ারা’ই সংখ্যা গরিষ্ঠ। অতএব ‘আপার আসাম’ (ধেমাজি, ডিব্রুগড়,লখিমপুর, গোলাঘাট, শিবসাগর ও তিনসুকীয়া) এর নানা স্থানে বসবাসকারী  বঙ্গভাষী জনতার এক বৃহৎ অংশ ‘তোমার মাতৃভাষা কী’ এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন ‘আম্‌গো ভাহা অহইম্মা’। তথাপি  ঘটে গেলো ‘নেলী’। ১৯৮৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী প্রকাশ্য দিবালোকে নগাঁও’এর নেলীতে খুন হলেন ২১৯১ মানুষ ( বেসরকারী হিসেবে ৫০০০ এর’ও বেশী)। এঁরা মূলতঃ বাংলাভাষী মুসলমান। এঁদেরকে খুন করা হলো কেননা এঁরা চলেছিলেন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে। হয়তো আসামের অসমীয়া ‘প্রভু’দের পক্ষে ঐ ভোটাধিকারের প্রয়োগফল হতোনা তেমন সুবিধা জনক সুতরাং ঘটে গেলো এই গনহত্যা। অর্থাৎ ‘আম্‌গো ভাহা অহইম্মা’ বলেও জান বাঁচাতে পারলেন না আসামের অনসমীয়া জনতা। এই মুহুর্ত্তে আমরা যারা ‘অফিসিয়ালি’ আসামের, বাস করছি বেঙ্গালোর এ , আমরা যারা নন্‌ট্রাইবেল, আমাদের কে কি জান বাঁচানোর জন্য  ‘আম্‌গো ভাহা অহইম্মা’র প্রতিধ্বনি তুলে বলতে হবে ‘আম্‌গো বাসা কইলকাত্তা’? আর যদি বা তা বলিও তাহলেও কি আখেরে বাঁচবে জান? বাঁচলেও তা আর কতদিনের জন্য?
             না বেশি দিনের জন্য বাঁচবে না আমাদের জানও কেননা আসামের অসমীয়া ‘প্রভু’রা যখন অনসমীয়া মুসলমানদের দিয়ে  দিয়ে ‘আম্‌গো ভাহা অহইম্মা’ বলিয়েছিল তখন তার উদ্দেশ্য ছিল আসাম থেকে অনসমীয়া মধ্যবিত্তদের উচ্ছেদ কেননা অসমীয়া ‘প্রভু’দের বিচারে তখন এ’ই মনেহয়েছিল, যে, অনসমীয়া মধ্যবিত্তরা’ই আসামের সমস্ত মধ্যবিত্ত সুলভ পেশা ইত্যাদি নিয়ে বসে আছে কাজেই এদের তাড়ালেই আসামে তাদের আর কোনো প্রতিদ্বন্দী থাকবেনা। সেই ‘অনসমীয়া মধ্যবিত্ত’দের নব্বই শতাংশই যেহেতু ছিল হিন্দু বাঙ্গালী সুতরাং  অসমীয়া প্রভু’রা যাকে বলেন ‘আসাম আন্দোলন’ তা মূলতঃ ছিল ‘বঙ্গাল খেদা’ আন্দোলন। ( হ্যাঁ, কিছু অসমীয়া মানুষ এর প্রতবাদ করেছিলেন, নিগৃহীত হয়েছেন এঁরাও তবে এ’তে ‘আন্দোলন’এর চরিত্রের সংজ্ঞা বদলায় না)। সেই বঙ্গালখেদা’র আঁচে পুড়ে গিয়েছিল বরাক উপত্যকাও।
               সেসব পঞ্চাশের দশক আর ষাটের দশকের কথা। এরপর নেলী ঘটলো আশির দশকে। ঘটলো কেননা এবার অসমীয়া ‘প্রভু’রা টের পেলেন মধ্যবিত্ত নয়, নিম্নবিত্তদেরকে নিয়েই সমস্যা। কেননা বাঙ্গালী তাড়িয়ে যে কেরাণীর পদটি খালি হলো তাতে ঢুকতে ‘পাশ করিব লাগে’। কিন্তু মুটে-মজুর হতে গেলে তা লাগেনা। কাজেই এবার দেখো মুটে-মজুর কারা। সেই মুটে-মজুরের তালিকায় যেহেতু ছিল নেলীর মুসলমানরা তাই তাদের জান দিতে হলো এইবার। আমরা, আসামের বর্ণহিন্দুরা স্বস্তি পেলাম। যা বাব্বা। এবার লেগেছে অসমীয়ায় আর মুসলমানে। আমাদের নিশ্চিন্তি।
                কিন্তু এরও পরে আমরা দেখলাম, না, নিশ্চিন্ত থাকা গেলোনা। এলো ১৯৮৬। ২১ শে জুলাই। অগপ’র আমল। বরাকের করিমগঞ্জে চল্লো অনর্থক গুলি। মারা পরলো মানুষ। কেন? কেননা আমরা যেমন জানি, তেমনি জানেন অসমীয়া ‘প্রভু’রাও, বরাক উপত্যকা বাঙ্গালীর উপত্যকা। আমরা মনে প্রানে অনসমীয়া। তাইতো বার বার এতো ফরমান জারি “অহমীয়া মিডিয়ামে পড়িব লাগে”, “মাইলষ্টোনত্‌ অসমীয়া ভাহায় লিখিব লাগে”। কিন্তু তাতেও সাবুদ হয়না ‘বঙ্গাল বিলাক’। অতএব এই ‘উপত্যকা’টির মাজা না ভাঙ্গলে শান্তি নেই। ... যাই হোক, মাজা ভাঙ্গলো কি’না বোঝা গেলোনা, তবে ২১ জুলাই’র পর আবার কিছুদিন সব দিক রইলো থমথমে। বোড়ো ল্যান্ড ইত্যাদি আন্দোলন চলতেই থাকলো পাশাপাশি... কখনো ঢিমেতালে কখনো বেশ রমরমায় ...
                       তারপর? তারপর ২০০৩ সালে আবার দাঙ্গা। আসামে। এবারে লক্ষ্য বিহারের মানুষ। যেহেতু এই ঘটনাটি খুব বেশী দিন আগের নয় তাই Frontier এর Volume 20 - Issue 25, December 06 - 19, 2003 থেকে সামান্য তথ্য সূত্র দিয়েই ছেড়ে দিচ্ছিঃ
On November 9, candidates from outside the State who had travelled to Guwahati for tests conducted by the Railway Recruitment Board, Guwahati, for appointment to Class III and Class IV jobs (now re-designated Category C and Category D jobs) were prevented from writing their tests. According to some reports, they could not write their tests because some local aspirants for these jobs seized and destroyed their entry cards. Among those affected were candidates from Bihar and Tripura.

           অর্থাৎ  এবারে অসমীয়া ‘প্রভু’দের ধারনা হলো যে ‘বঙ্গাল বিলাক’কে তাড়ানো যখন গেলোই না তো এবার অন্যদের সঙ্গে ‘কাজিয়া’ বাধিয়ে দেখাযাক কতোদূর কি হয়। ... আর বেশী কাদা ঘাঁটবোনা, সোজা চলে আসবো সাম্প্রতিক ঘটনায় যেখানে দাঙ্গা বেঁধেছে বোড়ো আর বাঙ্গালী মুসলমানে আর সেই বাঙ্গালী মুসলমানদের ‘”নিয়ো এসামিজ্‌” ’ বলে ভূষিত করছেন আল্‌ফা নেতা পরেশ বরুয়াঃ “The ULFA leader said the violence has harmed the interest of the "greater Assamesse society". ... He also termed the Bengali-speaking Muslim immigrants from erstwhile East Bengal region as "neo-Assamesse".
আর তারি জেরে সারাদেশে ছড়িয়ে পরছে অস্থিরতা ...  
              বেঙ্গালোর ছেড়ে  যারা চলে গেছে, চলে যাচ্ছে তারা কারা? তারা কি আমার মতো ‘আইটি প্রো’? না। একদল ছাত্রছাত্রী আরেকদল নানান ফ্ল্যাটের বা মলের সিকিউরিটি বা এরকমই কোনো জীবিকা নির্বাহ করা মানুষজন যাদের ‘খেদা’ দিলে সেই শূন্যস্থানে সহজেই ঢুকে যেতে পারে কন্নড়, তামিল, মারাঠি ... মানে যে সব কাজ করতে ‘পাশ দিব নালাগে’ ... ঠিক যেমনটা ছিল অসমীয়াদের মাথায় নেলীর সময়ে বা পরে বিহারি নিধনের কালে ...
                     না, আমার, আমাদের, মানে অফিসিয়ালি ‘আসাম’এর বাঙ্গালীদের, বেঙ্গালোরে আপাততঃ বিপদ নেই। আমরা ‘মিড্‌ল্‌ ক্লাস’, আমরা টিঁকে যাবো। আমরা নিরাপদে বসে বড় বড় জাতিয় সংহতির বুলিও দেবো। ফ্ল্যাট্‌ করবো বেঙ্গালোর নইলে কলকাতায়। ...কিন্তু যারা তা নয়, যারা এই দেশের ৯৯ ভাগ, যারা অশিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত তারা বাঁচবে কিভাবে? আজ না হোক কাল টিঁকে থাকার জন্য হয় তাদের বলতে হবে ‘আম্‌গো বাসা কইলকাত্তা’ ... আর নাহলে আসামে থাকলে, মুখে কিংবা কায়দায়  ‘আম্‌গো ভাহা অহইম্মা’ বলে, ভূপেন হাজারিকা’কে রবীন্দ্রনাথের চেয়েও বড় বলে সালাম ঠুকে ‘অহইম্মা’ হয়ে।
হ্যাঁ, এ’ই আমাদের, পূর্ব বাংলা থেকে  উদ্বাস্তু হয়ে আসা বাঙ্গালীদের নিয়তি।
[ সূত্রঃ
নেলীর হত্যাকান্ডঃ
http://en.wikipedia.org/wiki/Nellie_massacre
http://www.ummah.com/forum/showthread.php?203713-Recalling-Nellie-1983-Assam

রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১২

দুটি কবিতা


তা ধিন তিনা
………………………………………………………………….












মাদের হাতেই ছিল  সাজানোর দায়িত্বভার
ডিজনির বাগান জুড়ে   ভুতুড়ে চিত্রমালা ।

লিকপিক জ্যান্ত হয়ে   সদাশিব ধরলো কী রূপ !
তিন ইটের উনোন ঘিরে  ফুটপাত যাচ্ছে ভরে
কে ছেলে কাঁদছে ক্ষুধায়  কে মেয়ে নামছে পথে !
পথ খুব খুবলে নিলে      সারারাত ফুপিয়ে কারা
ভেজালো ময়লাবালিশ    বলো তো পেপসি কোলা !
বলো ভাই ইন সুজুকি    কম দামি করুন রঙে
বসে আঁকো বাচ্চারাসব আঁকে যে রঙিন ছবি
সে ছবির ঠোঙায় কারা  কিনে খায় ঝালমুড়ি
আর পার্কে গ্যাঁজায় বসে থিয়েডোর বাখ দেরিদা
          সুবিমল এন্টি নভেল ।
ঊহাদের হাতেই ছিল মোটা ব্রাশ রঙের ডিবি
লিখেছে মুক্ত দশক   মুছে কে লিখছে এখন
ছাপ দাও , ছাপ্পা ও ছাপ ।

ছাপ দিই , দিতেই হবে   আমরা তো সামান্য নই
দরকারে ছড়াই পথে       বাতাসা আর শুয়া খই ।
হরি বোল , বল হরিকে    কোন পায়ে ধরবো কাকে ,
দুই পা বাড়িয়ে সবাই      যেতে চায় জয়ের দিকে ।

জয়ে ভয় নেই আমাদের    ভয়ে জয় লুকিয়ে আছে
আমাদের মন্দ ভালো        ঠাকুরের পায়ের নিচে ।
ঠাকুরের পা-ই বা কোথায়   তিনি তো অপাণিপাদ
দরকারে ছড়িয়ে রাখেন      ফড়ফড়ি ঝরোখা ফাঁদ ।
ফাঁদে রোজ পড়ছি , পড়ি
উপরে ঘুরছে ছরি
নিচে সেই আমরা কজন
জড়িয়ে থাকছি শুধু
স্বজনের রুগ্ন দেহ    সজনীর বুকভাঙা শোক ।

আমরা তাধিন তিনা    বেঁচে রোজ থাকছি কিনা
বুঝি না , চাইছি তবু    আমাদের জন্য কিছু
সাজানোর ব্যবস্থা হোক ।



খাদ্যাখাদ্য
……………………………………………………………..
পল্লব ভট্টাচার্য

আকাশ বাতাস ভরছে ক্ষুধায় , কানছি আমি , কানছে মেয়ে
শূন্য দিয়ে ভরাচ্ছি পেট , কানছে মা ও কানছে মেয়ে ।

হং যং বং রং লং সব দিচ্ছি তোকে , পেট পুরে খা
পেট পুরে খা মেয়ে আমার , মাথায় রেখে ক্ষুধার্ত পা ।

ছাইপাশ সব গিলছি আমি , রক্ত চুষছি , স্তন্যধারা
খেয়ে দেয়ে তাগড়া হলে , তোর বুকে মা থাকবো খাড়া

কোলে নিয়ে জুড়াও শরীর , সহবাসে তৃপ্ত করো ,
কুসুম দিচ্ছি , কুসুম দিচ্ছি , পাতালভান্ড তুলে ধরো ।

পর্দা ফাটছে , বিছনা উড়ছে , কানছি আমি কানছে মা
বামুন আমি পৈতে খাচ্ছি , শূদ্রাণী তুই আমায় খা --



'শুধু কবিতার জন্যে' দুটি দিন--তিনসুকিয়াতে ২৯শে এবং ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২

'উজান' সাহিত্য গোষ্ঠী, তিনসুকিয়া এই প্রথম আয়োজন করছে 'শুধু কবিতার জন্যে' উজান অসম ভিত্তিক বাংলা কবিতা আবৃত্তি  প্রতিযোগিতা ২০১২। দুটো বিভাগে, তিন পর্যায়ে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রথম কোনো বাংলা কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতার বিষয় সম্ভবত হচ্ছে কেবল পূর্বোত্তরের কবিতা। দুটো বিভাগেই দ্বিতীয় বিভাগে নির্বাচিত পূর্বোত্তরের কবিদের কবিতাই আবৃত্তি করতে হবে শিল্পীদের। সেই কবিতাগুলোর সব ক'টাই পেয়ে যাবেন এই ব্লগে। বিস্তৃত জানতে নিচের ছবিতে দু'বার টিপুন। ছবি বড় হবে, একে একে পড়তে থাকুন।





কাটাকুটি খেলা...


- মোসলমানের পূত লুঙ্গি তোল। নিজেরে কাইট্টা তো তিন বিয়া করছত। অখন দেশটারে কাইট্টা ফালাফালা করতি!
লুঙ্গি তোল...'

এই শরীর ভাগের গল্প ঠিক কোন পর্যায়ে পড়বে আমি জানিনা। শরীরে জাত নামের কোন জীন জন্ম লগ্ন থেকেই ঈশ্বর ইঞ্জেক্ট করেন না এটা আমি জানি।
রক্তপাত করেই আমার শরীরের দখল নেয় ঈশ্বর অথবা আল্লাহ্‌।

আমার এই ঘটনার দুই চরিত্র অনিতা আর মুনির ভাই দুজনেই জন্ম লগ্নের অনেক পরে শরীরে জাতের ষ্ট্যাম্প সেঁটেছে। অনিতা জন্মেছে হিন্দুর ঘরে। তাই শাঁখা নোয়া পড়ে চলেছে পতিগৃহে ভারতীয় রেলের কামরায় চেপে।
আর মুনিরভাই জন্মের সাত বছর পরে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে মুসলমানি করে সাচ্চা মুসলমান হয়েছে।
অর্থাৎ ঈশ্বর তাদের দখল নিয়েছেন। ব্রহ্মা নিয়েছেন অনিতার শরীর আর আল্লাহ্‌ নিয়েছেন মুনিরের শরীর। ওয়ান ইজ টু ওয়ান ভাগাভাগি করেই চলে দেশের মানুষ গুলির জাতপাত বিচার। রাষ্ট্রের কাছে তাই কেউ সংখ্যালঘু কেউ সংখ্যাগুরু অংশের মানুষ। শুধু ভোট চাই।

- আপনারা বিশ্বাস করেন না কেন আমি হিন্দুর বউ। আপনারা যাকে বলছেন মুসলমান, তিনি মুসলমান নন, আমার স্বামী। আমার জেলা কাছাড়। থাকি শিলচর।

পুরুষ জাতের কাছে নারীর শরীর মানেই সাপলুডো খেলার ছক। বাংলার মেয়েদের নাকি স্বাস্থ্য ভালো। তাই সাদা ঘর, কালো ঘর সব সমান। তাই সহজেই শিকার হয়, পুরুষের দানে লেগে যায় ছক্কা, পাঞ্জা।
অথচ অনাহারে, অনীদ্রায় থেকেও অনিতাদের অবিরাম তিন দশক ধরে চলে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ নিঃশব্দে। এরপর একসময় রক্তাল্পতায়, আয়োডিনের অভাব, পুষ্টির অভাবে শুস্ক হয় বুক। শিশুর বুকে স্তন চেপে মারা পড়া একসময়।
নিহত মায়ের সিঁথির সিঁদুর, কপালের লাল টিপ আর হাতের লাল পলা সেই সধবার রক্তক্ষরণেরই ইঙ্গিত। যার ইতি হয় কবরে অথবা চুলায়।
পুরুষের কি দম্ভ। একটি আস্ত নারীর দখল পেয়ে প্রতিরাতে নিলাম চলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে, এপাশ থেকে ওপাশে।
কোন অসুস্থ মানুষও বজ্জাত হয়না, বজ্জাত হয় আমাদের বোধ, ইন্দ্রিয়, ধর্ম।

- বেটির সাহস দেখ। বেজাইত্যা মাগী। হিন্দু হইয়া আবার মুসলমানেরে নিকা! চল আগে মালটারেই...

বাথরুমেই ফালাফালা করে চলল হিন্দু বউয়ের শরীর ভাগাভাগি। দেশটা তাই বেঁচে গেল আরেকবার, তৃতীয়বার ভাগ হওয়ার হাত থেকে।

সৃষ্টি কে বাঁচাতে নাকি নারাণ ঠাকুর টুকরো টুকরো করে দিয়েছিল সতীর দেহ। পোড়ামুখির আজও সৎকারও হলোনা ঠিকঠাক। স্বয়ং ঈশ্বরেরও বোধহয় সাহস ছিলনা সতী নারীর শরীর দাহ করার। সুন্দর শরীরকে মিটিয়ে দেয়ার স্পর্ধা আর লোভ তাই থেকে যায় আজও একান্নপীঠে।
কালীঘাটের বেশ্যা পট্টী দরকার। সমাজে যত্রতত্র অপরাধী পুরুষের স্খলন বন্ধ করতে।

হিন্দু বউয়ের শরীরের কাছে সেদিন নির্জীব হয়ে পড়েছিল দুষ্কৃতিরা। সেদিন ট্রেনের কামড়া থেকে ছুরে ফেলে দেয়া হয়নি মুনির ভাইকে।
নারীর আর কিছু কাঁটার থাকে না তো, শুধু শরীর আর লজ্জা ছাড়া। মেয়েমানুষের জাত লাগেনা। ধর্মেও তাই নারীর যৌনাঙ্গ কাঁটার কোন নির্দেশ নেই। পুরুষের আছে।
ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ইন্দ্রদেবের বিচার এখনও ফাইল বন্দী। আমাদের বিচারবিভাগ কি শুধু হিন্দুদের জন্যই! গান্ধারীর কালো কাপড় বাধা মূর্তি, অশোক স্তম্ভ, গান্ধীজী শোভা পায় আদালতে। কোরানের কোন সূরা বা আয়াত নেই কেন এজলাশের দেয়ালে! ক্রশবিদ্ধ যীশুর ছবি মনে হয় পৃথিবীর তাবৎ বিচারব্যাবস্থার সিম্বল হতে পারে। এমন নির্মম হত্যাকান্ডের পিকচারাইজেশান কোন ধর্মে নেই!

অনিতার কপালের সিঁদুর আর শঙ্খ নোয়া খুলে নেয়া হলো হাসপাতালের ওটি তেই। একটা সবুজ কাপড়ের আড়ালে একটা মানুষের রক্তক্ষরণ চলছে। এই সবুজ উপত্যকার শরীর খারাপ হয়েছে আজ অসময়ে, দেবী কামাখ্যা ঋতুবতী হলেন আবার! কেউ প্রস্তুত ছিলেন না। ভেসে যাচ্ছে কামরূপ পাহাড়।

বিয়ের প্রথম রাতেও এভাবেই ভেঙ্গেছিল অনিতার নথ। মত্ত স্বামী উল্লাসে বিবস্ত্রা করেছিল অনিতার শরীর।
- শাঁখা পরিয়ে তোমার হাতে হাতকড়া বাঁধলাম সই। এবার আমার বশ্যতা স্বীকার করে নাও। আনন্দোল্লাসের রাত্রি আমার বিয়ের রাত্রি, খাইয়ে পড়িয়ে ধর্ষণের বৈধতা দেবে তুমি প্রিয়ে... অন্যথায় অবিবাহিতা আর সন্তানহীনা স্ত্রীজাতির মুখ দেখলেও পাপ! যাও অন্যথা পাকের পথে!
সতী তাই একান্ন টুকরো হয়। যৌনাঙ্গ থেকে জন্ম নেয় কামের দেশ। অনিতাদের দেশ অসম।

অনিতার সিঁথিতে বীরভুমের লাল মাটি। এই মাটির সোঁদা গন্ধ যখন নাকে এল তখনই ছাড়া পেয়েছিল অনিতা।

মুনিরভাইয়ের লুঙ্গির নীচে জাতকাটা দেখার সাধ ছিল বাহানা। সাধ ছিল পাহাড়িয়া কামরূপের বুক থেকে ভাদ্রের শস্য কেটে নেয়ার। আজকাল কচি তালের শাঁস দুফালা করে বিক্রী হয় বাজারে।

মুনির ভাই, এসেছিল বাড়ি ফিরে। অনিতা এখনও রেল হাসপাতালেই।
চার রাত্রি পার হয়ে গেছে, অনিতার শরীর থেকে রক্তপাত এখনও বন্ধ হয়নি। মুনির ভাই তিন রাত্রি কাটিয়েছে রেলের হাসপাতালেই।
রোজার শেষ দিনগুলি কেটেছে হাসপাতালের বারান্দায়। অনিতার জ্ঞান ফিরতে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল একবার। তখন ঈদের চাঁদ ছুঁয়েছে পৃথিবীকে। এই উপত্যকায় এবার ঈদের চাঁদও ছিল ফ্যাঁকাসে।
হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়েছিল।

অনিতা আবার চোখ বন্ধ করেছিল। আজও জ্ঞান ফেরেনি।

ট্রেনের কামড়ায় সহযাত্রী ছিল তাঁরা। অনিতা একাই দিল্লি ফিরছিল স্বামীর আব্দারে। মুনিরের পরীক্ষা ছিল।
মুনিরকে বাঁচাতেই দুষ্কৃতিদের সেদিন পরিচয় দিয়েছিল নিজের স্বামী বলে। শেষরক্ষা হলোনা।

কাটাকুটির খেলায় এক অনির্বচনীয় সত্যি। একজনকে কাটতেই হবে। সবুজ উপত্যকার ভাগ নেয়াটা জরুরী। নরম মাটির মানুষ, নরম ধানের দখল সহজ। তাহলেই বেঁচে যাবে হয়তো অনেক মুনির। অঙ্কটা হবে টু ইজটু ওয়ান। দখল নিশ্চিত হবে মসনদের আর দেশটার।

অনিতারা আজও হেরে যায় বন্ধু। কাটাকুটি খেলা চলুক, বাজী ধরেই হোক না আরেকবার! তবে কাপড় খুলে নামতে হবে মাঠে, একটাই নিয়ম এই খেলার।

লাশে তাজ পরালে সম্মান জানানো হয় না, কাপড় পরালে মনোরম হয়না কফিন, অপমান হয় মৃত্যুর।
অনিতা এখন কোমায় আছে। তাই একটা কাপড় দেয়া যেতেই পারে, চলুন না আপাতত নাহয় অনিতার মৃত্যুটাই নিশ্চিত করি আমরা।

শুক্রবার, ২৪ আগস্ট, ২০১২

বিষগাছ



                    ( ৯৮৩র , ১৮ ফেব্রুয়ারী সংঘটিত হয়েছিল স্বাধীনতা উত্তর কালের সবচে ভয়াবহ অথচ অধুনা বিস্মৃত 'নেলি' হত্যাকাণ্ড। প্রায় তিনহাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছিলেন। লাখো লোক হয়েছিলেন গৃহহারা।  অসমে। গোটা দেশের বিবেক তখন কেঁপে উঠেছিল। বাংলা-অসমীয়া সহ ভারতের বিভিন্ন ভাষাতে কবিরা ব্যক্ত করেছিলেন তাঁদের ব্যথা। তেমনি এই কবিতা লিখেছিলেন আজকের বাংলা সাহিত্যের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কবি গৌতম চৌধুরী। পরে সেটি তাঁর কবিতার বই, 'অমর সার্কাসে'  প্রকাশিত হয়েছিল। অসমের মাটিতে এখন যে হত্যালীলা চলছে তাতেও প্রচণ্ড বিব্রত কবি। ই-মেলে আলাপ হচ্ছিল গেল একমাস ধরেই এই নিয়ে। মনে পড়ল তাঁর সেই কবিতার কথা। প্রাসঙ্গিক ভেবে আবারো পড়ালেন, আমরাও সেই ভেবেই তুলে দিলাম এখানে।আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে)
                                                                                   ।। গৌতম চৌধুরী।। 
কোথায় বুনেছ বীজ, এতদূরে জেগে ওঠে চারা-ঘন নীল মুখর উদ্দাম
কোথায় বুনেছ বীজ,এতোদূরে বেড়ে উঠে পাতা
আঠালো জিভের মতো বেগুনি জিভের মতো রাশি রাশি লক্ষ লক্ষ পাতা
ইঁদুরের চেয়ে আরও দ্রুত ছোটে শেকড়ের দাঁর , বোনে জাল শুষে নেয় রস
ফুটে ওঠে ফুল—আদিম জন্মান্ধ রঙ ছোঁড়ে হল্কা
ফেটে পড়ে ফল—মাদক নিষ্ঠুর তীব্র অখণ্ডমণ্ডল
বিষগাছ

পালাও আগুন লাগল, ঘিরে ফেলল টাঙি ও বল্লম
ওগো মধ্যরাত তুমি কতদূরে বিছিয়েছ ঘুম
সেতু ভাঙা, কিলবিলিয়ে বয়ে যাচ্ছে নদী
শুনতে পাচ্ছ চিৎকার, শুনতে পাচ্ছ?সেতু ভাঙা
কে ভেঙেছে সেতু? তুমি তুমি তুমি তুমি তুমি তুমি তুমি
নদীর দুর্বোধ্য জলে ফণা তোলে হাওয়ার বিদ্রূপ
আর শিশু ভেসে যায় ভাষাহীণতার রাত্রি জুড়ে
সুতোর মসৃণ টান বাঁধা আছে দূরে, হিমঘরে
প্রতি টানে গড়ে ওঠে ছন্দোহীন নাচের কঙ্কাল
হাড়ের সোপান বড় পিচ্ছিল হয়ে আছে রক্তিম শ্যাওলায়
রবু শীর্ষে ওঠা চাই
আশি কোটি সুড়ঙ্গের গর্ভ থেকে টেনে আন তেল
টেনে আন শঙ্খ চক্র গদা পদ্ম বোধি সংবহ্ন
আশি কোটি সুড়ঙ্গের বুকের নিঃশ্বাসে দাও নিশাদল-ধোঁয়া
তারা ভেঙে টুকরো হোক, তারা ভুলে যাক পরিচয়
জাগো বিষগাছ জাগো

ষোড়শ শতক থেকে বিভক্তি স্বতন্ত্র হয়ে গেছে
আজ বোন, তোকে আর চিনতেই পারি না
আজ বোন, তুই এসে গিলে নিতে চাস
আমার পাহাড় নদি চর ডাঙা বন বনান্তর
তুই আর বোন নস, তুই ডাইনি—মর তুই মত
জাগো জাগো বিষগাছ জাগো

কোথায় বুনেছ বীজ, এতদূর বেজে ওঠে চারা
হাওয়ার সর্বাঙ্গ উঠল নীল হয়ে ফুসফুসে ঢুকেছে হলাহল
বনশুয়োরের দাঁত ছুটে আসছে কলিজা মাড়িয়ে
ভুট্টার ক্ষেতের ঘাড়ে উঠে এল রক্তমাখা চাঁদ
হেই বিষ আরও আয় ঢেকে ফেল মুখ চোখ গভীর জড়ুল
যেন ওরা কেউ কাউকে চিনতে না পারে কোনোওদিন
যেন ওরা ছিঁড়ে ফ্যালে মুখশ্রীর অফুরন্ত ডানা
যেন ওরা নিজেদের অভিশাপে প্রতি-অভিশাপে ঝলসে মরে নিজেরাই
হেই বিষ আরও দ্রুত ছড়িয়ে যা ধর্মাধর্মে ভাষা-বিভাষায়

ছিল দেশ
তাকে তুমি দেশান্তর বানিয়েছ প্রগাড় খেয়ালে
আজ প্রতি টুকরো থেকে শরীরের ছিন্ন রেখা উঠে আসে, যেন প্রেতযোনি
মাথার ওপরে ঘোরে গোল হয়ে প্রশান্ত শকুন নশ্বর নখের ধৈর্য দিগন্ত ছাড়িয়ে চলে গেছে
চড়ুই ভাতির চিতা জ্বলে ওঠে সারি সারি
সারি সারি কালো গর্ত মেলে ধরে বিপুল হামুখ
কত মাটি চাপা দেবে, কত ছাই করবে পুড়িয়ে
কাদামাখা ধানক্ষেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে আরও
 ঝোপের ছায়ায় আছে, আছে মুগ্ধ নদীর খাঁড়িতে
সংখ্যা নেই, সেই ভালো
প্রখর শান্তির নখ বুঝে নেবে স্বাদের সমাস
কী ছিল মাংসের নিচে—সাদা হাড়?
তাতে কি প্রমাণ হয় দেশ?
তাতে কি গজায় আজও ক্লান্তিহীন স্বপ্ন—দূর্বাদাম?

জাগো জাগো জাগো বিষগাছ।

সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১২

ধর্মপাখী


মেঘনার কালো বুকে দাঁড়িয়ে সকাল বেলায়
প্রার্থনা করো- ইমান আনো বন্ধু।

আবাবিলের নীল পাখায় চড়ে
উড়ে চলো ঈশ্বরের কাছে

স্মরণ করো কেয়ামতের কথা

ইন্দুরিয়ার উষ্ণ চড়ে
পাক পবিত্র করার ইন্ধন

সুদূর উত্তরপূর্ব এশিয়া থেকে উড়ে আসা
ধর্মপাখীর দল

জেনারেলের কামড়ায় গাদাগাদি
গগোঁই সাহেবার সংসার

ঈদের উপত্যকায় মৌসুমি বায়ু চলে গেছে অনেককাল
প্রজনন নিষিদ্ধ তাই।

হে ঈশ্বর,
ইন্দুরিয়ার চর থেকে আবাবিলের দলকে পাঠাও এবার
এই উপত্যকার ঈদ মেহেফিলে

রবিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১২

রাজনীতি...

 
 
 
 
 
 
তোমার হাতে যেমন পিণাক
আমারও আছে তেমন কিছু
আর একটু তফাতে যে সারাক্ষণ দাড়িয়ে থাকে
তার হাতে কোন অস্ত্র নেই
আছে ফুল, হরেক রকম বর্ণহীন ফুল
আর আছে তার রহস্যময় নীরবতা
তার হয়তো কিছু লাল রং চাই ফুলগুলো রাঙ্গাতে।

তারপর একদিন রাস্তাটা টুকটুকে লালে পিচ্ছিল হয়ে যায়
এরপর ফুলওয়ালা মানুষটি গুটি গুটি পায়ে কাছে আসে
শিকারি গিরগিটির মত
তারপর কুম্ভিরাশ্রু ঝরিয়ে বিজয় নিশান ওড়ায়
লাল ফুল ছড়িয়ে।