ইচ্ছা মাস্টারের খুব ফুটানি
। পাতে মাছ না হলে চলে না একবেলা। বলে,
---আমি অইলাম দুধপাতিল ঘাটর কাড়ারি। পাটনির
বেটা পাটনি আমি। আমার উঠান অইল গাঙ। অউ কালা পাত্থর ইখানোর নিচে যত মাছ আছে,
যত কিছিমর আছে সব আমার। হাবুই
গাঙ হিচলেও পাইতায় নায় ইলাখান মীন।
নিজের তো রান্নাবান্না করার মুরোদ
নেই। কিন্তু মাছ খাওয়ার পরিপাটি আর তরিবতিতে আছে ষোল আনা দড়। বলে,
---বাচা মাছর ভাজা রান্দতা আমার
মায়ে, গাউআলা মাইনষে কইতা অউ রান্দের সুবন্যয়। মাছরে
আঞ্জানিউ আলেদা, দা র উপরে তেড়া করি মারতা চাইর পোছ ইদিকে
চাইর পোছ হিদিকে। পোছ মারারও আছে নমুনা, উল্টাউল্টি
না মারলে আর কিওর আঞ্জানি? কেনে আবার কিতা? মায় কইতা তেল মশল্লা তো ঢুকত।
পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীর
জলের কম বেশি হয়। তাই কখনও ভেসে থাকে কখনও ডুবে যায় ইচ্ছা মাঝির কালো পাথরের ব্যক্তিগত
গোদারা। ওই পাথরের গায়েই সে ভিড়িয়ে রাখে তার ডিঙি নৌকা। দুপুরবেলা
যখন খেয়া পারাপারে ভাটা থাকে তখন সে বঁড়শি নিয়ে বসে। শিলের
নিচে ঠান্ডা জলে মাছ ধরে। কিন্তু যখন বালিগড়া কিংবা গুতুমের মতো অপছন্দের মাছ ওঠে বঁড়শিতে কিংবা
হাগাটালু ঠোক্কর মারে ফাৎনায় তখন ইচ্ছা রাগে। বডশি
থেকে মাছ খুলে ফেলে দেয় জলে। বলে,
---যা বেটা বাচি গেলে। ইতা
নিরক্তা মাছ খায় না ইচ্ছা ঠাউকরে। মাছ কুনু কম নি আমার গাঙো। ইতা
আমরা খাই না, বেজান ভালা ভালা মাছ আছে বরাক নদীত। মিঠামাছর
গিরস্থালি ই গাঙো। লেংটা বেটার হোটেলোও ইতা মাছ নিতে নায়। হেউ
ফালাই দিব। তানও লজত কম নায়, পরতি বেলাত মাছ লাগব
জিন্দা। বিয়ানে মাছ হাঞ্জাতও মাছ। সব মাছ অউ শিলর তল থাকি আয়। আমার
বরি আর গামছার অউগদা।
এমনভাবে কথা বলে ইচ্ছা যেন সেই
বরাক নদীর মালিক, একমাত্র ইজারাদার। তবে
এও সত্যি, লেংটা বেটা মানে শিবুদার হোটেলের সব মাছের জোগানই
কিন্তু দেয় ইচ্ছা। আসলে হোটেল টোটেল কিচ্ছু নয়, শিবুদাও
পাটনি, ঘাটোয়াল দুধপাতিল ঘাটের। খেয়ামাঝি। বাপের
বয়সি লোকটাকে ডাকে শিবুদা, ডাকে লেংটা বেটা। বাপের
মতো মান্যও করে। বলে,
---তুমি বেটা নৌকা বাইতায় কিতা
? অখন তুমি বাড়িত থাকবায়, বুড়া
অইছ নানি? কলা কয়ফল কাকরুল ঝিঙা আর উরির গাছ লাগাইবায় বিচরাত। পানিউনি
দিবায়। বাশর করুল ঢাকি দিবায় টুকরি দিয়া, উদলাইয়াও দিবায়। রান্দবায় মাছর ভাজা কড়ু ঝোল চচ্চড়ি,
আমি খাইমু নানানি রান্দা তোমার হোটেলো। মাছ
দিমু মাঙনা, পয়সাও দিমু যেতা পাই আধাআধি। আইচ্ছা
আমার লাগত নায় আধা, তুমি রাখি দিও সব আমার নামে। বারুণির
মেলাত যখন যাইমু চৈত্র মাসো তখন দিলাইও। দিও কিন্তু।
ছোট ছোট চুনা মাছ ধরে প্রিয়জনদের মধ্যে ভাগ বাঁটোয়ারা করা,
খাওয়া, খেয়া পারাপার আর বছরে একবার বারুণি
মেলায় সিদ্ধেশ্বর যাওয়া চারদিনের জন্য, এই সামান্য ধন নাড়চাড়া
করেই কাটে ইচ্ছার জীবন। আর একটা চক্কর নিয়েও আছে তার আতান্তর,
সে কথা সবাইকে বলা যায় না। সব
যে বড় বড় মানুষ। তবে, বড় মাছ ধরার মতো মাছুয়াও
নয় ইচ্ছা মাঝি। যদিও গল্প করার সময় একটু আধটু মাপে বহরে বড় করে নেয়। বলে,
---কানি পাবিয়া ধরলাম আইজ দেড়
আলি, ছয়টা। অউ অলা ঝলঝলা।
রকম দেখানোর হাতের মাপ যে বোয়ালকেও হার মানায়। তবে
বঁড়শি দিয়ে পুঁটিমাছ ধরায় সিদ্ধহস্থ ইচ্ছারাম। তখন
টপাটপ ভরে যায় তার খলুই। বঁড়শি আর গামছা দিয়ে যে শুধু পুঁটি দাঁড়কিনা গুতুম মকা আর বালিগড়া
ধরে ইচ্ছা এর জন্য তার দুঃখ নেই। মাঝে সাঝে পাবিয়া টেংরা বাচাও তো ধরে। তবে
এসব নিয়ে কেউ কথা শোনালে রাগে ইচ্ছা। পুঁটি মাছের মহিমা কীর্তন করে শুনিয়ে দেয়
শতনাম। বলে,
---কত কিছিমর পুঁটি ধরলাম আইজ। তেরি
পুঁটি কতটা উঠাইছলাম গামছাত, লই গেল গি কাছামির পুড়িয়ে। ভারি
পুটি ডিমাল আছিল, লেংটা বেটায় রান্দরা চড়চড়ি,
পুটার অইব ভাজা, বাবু মাইনষে কইন সরপুটি। ফুটানি
পুটি, মলাপুটি, গিলিপুটি,
মকা ইতা মিলাইয়া বাক্কা অতটা মনা মাস্টররে দিয়া অইলাম। কাঞ্চন
পুঁটি পাইছলাম একেবারে সোনার বর্ণ দিলাম সোনা পিররে। জানি,
পিরে কুনু অততা খাইন নি মাইনষে গামছার হেরে দি বার অই যায়। তেও
রাখছি, খাইব নে আমার বিলটুরিয়ে।
ইচ্ছার পোষ্য সমাজের প্রধান হল বিলটুরি। হুলো
বিড়াল। অন্য বিড়ালের নামও রেখেছে মাছের নামে। বাখাইর,
রাজপুতি, বেকাউটি, হেফতানি আর ছেবলি। কুমিরর খিল নামের পথকুকুরও তার মাছের ভাগ
পায়। কাঁচা মাছে খিল বাবাজির ঘোর আপত্তি। তাই
কখোন খায় কখনও শুঁকেও দেখে না। তবে ইচ্ছা ঘাটোয়াল অন্যায্য কাজ করে না,
বে আইনি করে না। বড় বড় মাছ ধরার উপায় থাকলেও ধরে না। বলে, আমার ই নাইকুলকুলিত বড় মাছ ধরত
নায়। মকা পুঁটি অতাউ ভালা। বেশি অইলে কানি টেংরা নুনা টেংরা পাবিয়া
টেংরা ধারিয়া খাইলাইমু, এর বড় দি কিতা করতাম?
রান্দাত কে? লেংটা বেটায় কাটতউ পারত নায়
তার চাক্কু দিয়া। আনাজও কাটে মাছও কাটে, কাচা গুয়াও
কাটে অউ এক কর্তরি দিয়া। পির বাবাজি আর কলিও অল্পে সন্তুষ্ট। মনা
মাস্টরে খাইন হুনছি রউ বাউশ। মাস্টর মানুষ তান পয়সা আছে,
কিনিয়া খাইবা নে।
ইচ্ছা মাঝির সততায় নদীর ইজারাদারও নিশ্চিত। জানে
ইচ্ছার পাহারায় মাছ চুরির ভয় নেই নদীতে। তাই, মাঝে মাঝে মাছ দিতে চায় বড় দেখে। ইচ্ছা
নেয় না। বলে,
---আমি নিয়া কিতা করতাম। খাওয়াইতাম
কারে ? বিয়া করলে দেইন যে।
ইচ্ছার এখন বিয়ে করারও শখ হয়েছে। মনা
মাস্টারকে বলেছে একটা টাইটেল ঠিক করে দেওয়ার। মাঝি
পাটনি কৈবর্ত এসব টাইটেলে কোন ফুটানি নেই। দুধপাতিলের ওপারে শিলচরে অনেক
ভদ্রলোকের বাস। রায়বাবু সেনবাবু চক্রবর্তী ভট পুরকায়স্থ আছে,
নাথ লস্কর দেব দাশও শুনতে মন্দ নয়। নছিবালি
হাকিম গাভরু মিয়ার মতো সুন্দর নামও আছে। তবে ইচ্ছার সবচেয়ে সুন্দর লাগে মাস্টর। বলে,
---আমারে মাস্টর টাইটেল দিলাইন। ইচ্ছা
মাস্টর কইলেও বেশ গাট্টাগোট্টা লাগে। পির সাহেবে পির দিলাইলেও নিমুগি। ইচ্ছা
পির ভালা না নি কইন ?
এরকম এক আতাভুতা ঘাটোয়ালের নাম ইচ্ছা কে রেখেছিল জানে না কেউ। মনা
মাস্টরও জানে না, সোনাপির তো সাধু মানুষ নিজের
নামটাও জানে না। তবে ইদানীং লেংটা বেটা আর ইচ্ছার সম্পর্কে একটা সংকট দেখা দিয়েছে। কলিকে
নিয়ে একটা বিবাদ দানা বাঁধছে শিবুদার সংগে। মনা মাস্টরও পছন্দ করছে না ইচ্ছার বাল্যসঙ্গিনীর
এমন দুমদাম বেড়ে ওঠা, যখন তখন এপার থেকে ওপারে
গিয়ে নবযুবক ইচ্ছার ঘরদোর পরিস্কার করে দিয়ে আসার। সোনাপিরের
কথা আলাদা, তবু তো ভগবানের প্রতিভু কলিও ছোটবেলা
থেকেই তার কাছে মানুষ, পূর্ণ অধিকার তারা রাগ করতেই পারেন। কলিরও
কোন নাম ছিল না ছোটবেলায়, কোথা থেকে এসেছে তাও জানে
না কেউ। 'এই' 'ওই' করে ডাকত সবাই। পির
সাহেব অবজ্ঞা করেনি কখনো। একবার বারুণি মেলা থেকে ফিরে এসে ধুম জ্বরে পড়ল ইচ্ছা,
সেই মেয়েটি আর লেংটা বেটাই শুশ্রুষা করে সারিয়ে তোলে তাকে। তারপর
খুশি হয়ে ইচ্ছা শিবুদাকে ডাকল লেংটা বেটা। সে না কি একটা মজার গল্প,
কাউকে বলে না ইচ্ছা, শুধু হাসে আর বলে,
লেংটা বেটা। আর 'এই'
'ওই' নামের দূরছাই মেয়েটিকে ডাকল কলি। কলিও
সাড়া দিল হাসি মুখে, উঁ।
দুধপাতিল খেয়াপাথরের নিচে মাছের সাম্রাজ্যের অধিপতি আর কলিকে নিয়ে ঘর
বাঁধার স্বপ্ন দেখা ইচ্ছা মাঝিরও আছে এক গুরু। মনা
মাস্টর সোনাপির লেংটা বেটা ছাড়াও আছে তাঁর এক মনের টান। সেই
মানুষের টানে ইচ্ছা যায় প্রতিবার বারুণি মেলায়। পায়ে
হেঁটেই যায় দীর্ঘ পথ। মেলায় যাওয়ার প্রস্তুতি তার অনেক দিনের। মধুবনের
চালতাগাছে ফুল ধরতে শুরু করলেই হয় তাঁর মন উচাটন। সময়ে
অসময়ে যায় মনা মাস্টরের বাড়ি। কখনও পাঠশালার ঘরেই চলে যায়। বলে,
---একাদশী কোন দিন ই মাসো ?
ইও, অমাবস্যার একাদশী আরি।
কৃষ্ণা একাদশীর দিন তার যাত্রা শুরু হয়। উল্টোপাকে
যায় মাছুঘাট নানিকে দেখতে। মায়ের মাসি। এখন
আর নানি সঙ্গে যাওয়ার বায়না ধরে না, নড়তে চড়তেই
পারে না বুড়ি। তবু ছোটবেলার গল্প করে একহালি সপরি কলা হাতে দেয় নানির,
প্রণাম করে গুরুজনকে। নানির
হাসি আর আশীর্বাদ সম্বল করে যায় তোপখানা। বন্ধু খলিলের সঙ্গে দেখা করে কেনে একবান
খলিল বিড়ি। এ নিয়েও হাসি মস্করা দুই বন্ধুতে। দুধপাতিলে
খেতে পারে না বিড়ি। তাই বন্ধুকে বলে,
---তোর নামে বিড়ির বান,
কিনি লাইলাম। অখন খাই একটা। এর
পরে তো আর পারতাম নায়। সব বড় বড় মানুষ।
আসলে বন্ধুকে বিড়ির বান ঘুষ দেয় ইচ্ছা। তার
বিয়ের প্রতিকূলতা কাটানোর বুদ্ধি চায়। বলে,
---কিতা বে কলির লগে দিতা নায়
নি বিয়া ? গাউআলা হকলে কিতা কইন? কলি বাঙাল, মুছরমান নানি? এক পিরর বাড়িত থাকে এর লাগি নি অই গেল বাঙাল? বোবা বেটার বোবা পুড়ি। গুঙার আবার কিওর ধর্ম ক?
ফুলবাড়ির বড়গোঁসাইয়ের আখড়ায় মাসিমণির আদরের লোভও আছে ইচ্ছার। মাসিমনি
তার আপন কেউনা, পিং ডাকো মাসি সে মণি জুড়ে দেয়। বয়স
বেশি না, দুপাঁচ বছরের বড় হবে, তবু কী স্নেহ আদর। পঞ্চব্যঞ্জন খাওয়ায় আখড়ায়,
ডাল ভাত লাবড়ার নিরামিষ কোনদিন খায় না ইচ্ছা, গপগপাগপ মাছ ভাতের মুখে আলুনি রোচে না। তবে
মাসির কথা ভিন্ন, আদরে অমৃতে অরুচি করে না
কখনও পপমানন্দে খায়। মাসিমণি বলে ধীরে খেতে,
একে একে পরিুপাটি করে পাশে বসিয়ে খেতে দেয় শাক ডাল ভাজা পাঁচ তরকারি
আর রসা। একটুখানি দুধভাতের মিষ্টান্ন দেয়। বলে
সবদিন নাকি হয় না, ভাণ্ডারা পড়েছিল তাই এত
পদ। মাসিমণি ভাল লেগে যায় তাই ইচ্ছা চেটেপুটে খায়,
পেটে খিদে ছিল, কিন্তু খেতে তো যায়নি আখড়ায়। পিং
মাসির ঠিকানা দিয়েছিল,বিশ্রামের চটি হিসেবে। ফুলবাড়ির
অনেক ভিতরে আপাঞ্জালি গ্রামের চাষি গোবিন্দ দাসের বাড়ি। ডাক
নাম পিং। পিং লাকড়ির মতো চ্যাটাং চ্যাটাং কথার হুল,
তাই গোবিন্দ নাম ঘুচে গেছে তার। বারুণি
মেলায় জিলিপির দোকান লাগায় মস্ত বড়। ঠেলাগাড়িতে দুই বন্ধ যায় মেলার মাঠে। শুধু
খাওয়া আর রাতের ঘুম দুজনের এক সঙ্গে, ফুলবাড়ি
থেকে মেলার মাঠে আসা যাওয়ার ঠেলা চালিয়ে দেয় ইচ্ছা মাগনায়। মেলার
কদিন ইচ্ছা তো তার গুরু খামসিনের খিদমতেই কাটিয়ে দেয়। খাসিয়া-সিন্টেং সাধু তাকে রাতের আশ্রয় দেয় না।
মাঘ ফাল্গুনে দুধপাতিল ঘিরে ঘটে যায় এক বিভ্রাট। পঞ্চায়েতি
পুকুরের জলে ভেসে ওঠে মাগুর আর পাঁচটা মাঝারি মাপের রিঠা। মরেনি,
হাঁসফাস করছে। মনা মাস্টার বলল পুকুরে শুঁটকির গুঁড়ো
ছড়িয়ে দিতে, আওলা পাতা আর আওলা কেটে জলে ফেলতে,
ভিটামিন সি-র অভাব। অক্সিজেনের
অভাব হয়েছে জলে। বলেছে ধুমধাম সাঁতার কাটতে জলে, পানি নাড়ালে
জলে হাওয়া হবে। ইচ্ছা সব করে। আবার অবিস্বাসও করে। বলে,
---ইতা কিতা ডাক্তারি,
পুকইরো কুইরমস্তলি করলে মাছ মরত নায়। মাছে
কুনু মাছ খায় নি যে হুকইন কুটিয়া ফালানি লাগব। তে
আওলা কাটিয়া দিলে পানি মিঠা অইত পারে।
পরদিনও মাছ ভেসেনওঠে। এবার মরা মাছ। মাস্টার
বলে মাছের উকুন হয়েছে। বলে কেরোসিন আর গোল্লা সাবান দিতে হবে জলে। অবিশ্বাসী
ইচ্ছা এবারও হাসে। কিন্তু কথা রাখে মুরব্বি মানুষের। বলে,
---
ইতা হুনছি না বাপর জন্মে,কেরেছ আর গোল্লা
সাবানে তো মাছ মরি যাইব। কি জানি বা।
পরদিন পুকুরের মাছ শেষ। বরাক
নদীতেও মাছ মরে প্রচুর, মাছের গায়ে চাকাচাকা দাগ। জেলা
প্রসাশন থেকে চুঙা লাগিয়ে সর্তক করে দেওয়া হয় কেউ যেন মাছ না খায় তিনমাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা
আপাতত।
ইচ্ছা কোন ডিসি উসির গোলাম নয়। সে
মানে না চুঙাওলার মাতব্বরি। নদীর মাছ কখনোই নষ্ট হতে পারে না। তার
খেয়াঘাটে, কালো পাথরের নিচে মাছের কোনো অসুখ হয়নি কোনদিন। ভেসে
ওঠা মাছ সবকটা উঠিয়ে নেয় নৌকোয়। অনেক মাছ। মনা
মাস্টারকে দেয় একভাগা, মাস্টার নেয় না। সাবধান
করে দেয় ইচ্ছাকে, বলে সরকারের কথা মানতে,
মাছ না খেতে। বেমারি মাছ ফেলে দিতে বলে। মাস্টারের
কথা মেনে নেয় ইচ্ছা। কিন্তু মনে মনে গজ্ গজ্ করে। লেংটা
বেটাকে বলে,
---সব মাছ রান্দো চাইন। খাইমু
দেখি কিতা অয়, সোনা পিররেও রান্দা মাছ দিয়া আইমু,
কলিয়েও খাইবা। আর তো একমাস,
বারুণি মেলাত যাইমু, কালা পাত্থর খুজিয়া
বার করমু, ছওয়াইয়া আইমু মাছ, সব জি
উঠব, দেখবায় নে।
মনা মাস্টার না খেলেও পির কিন্তু খায়। হাসতে
হাসতে খায়। কিন্তু মনের ভিতর এক উচাটন, আশঙ্কা
ইচ্ছার। কলিকে বলে,
---মাস্টরে না করছইন। তুমার কিচ্ছু অইলে আমি কিতা করমু ?
এক কাম করবায় নি, আমার বিলাইটাইনরে দেখবায়
নি? খাওয়াইও মাছর কাটা উটা। বিলটুরি
ইগুর লগে লাগিও না বেশি, যে খুঙা উলা, চঙলাই উঙলাই দিলে আর এক বিপদ ডাকিয়া আনবায়।
ইচ্ছা একমাস আগে থেকেই বারুণি মেলায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। তার
সংসারের বিলি ব্যবস্থা করে। যদিও তার মনে অন্য একটা গুপ্ত বাসনা অনেক
দিন থেকেই। পূর্ণ হয় না কলিকে নিয়ে একবার মেলায় যাওয়ার হাউস। এক
বোতল আলতা, হাতভর্তি কাচের চুড়ি আর একটা লালরঙের
সুতির শাড়ি কিনে দেওয়ারই তো ইচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই হয়ে ওঠে না। কাউকেই
যে বলতে পারে মনের কথা। মনা মাস্টরকে বললে রে রে করে ওঠে, রায়ট লেগে যাওয়ার ভয় দেখায়। সোনাপির
তাকে স্নেহ করে, কিন্তু কলির কথা শুনলেও কী হাসবে যেমন
হাসে। কলিও তো বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নুইয়ে থাকে না,
আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। তবু ইচ্ছা কলিকেই বলে,
---তুমিও গো মাই,
এমনে তো দেখি কিচ্ছু ডরাও না, জ্বরজারি অইলে
কততা করো, ভালামন্দ রান্দলে আমারে না দিয়া খাও না,
আমার কিতা জাত নাই নি ? লেংটা বেটায়ও কইছইন
তুমার হাতে খাইলে জাত খাইব। কইলাম চলো মেলাত যাই,
না যাইতায় নায়। বেটনতর অউ এক রগ তেড়া আর ভেড়া। কইলাম
বিয়া করি, কিচ্ছু মাতো না। ইবার
দেখবায় নে সাধুয়ে দিবা তাবিজ, তখন দেখি না করো কেমনে?
সিন্টেং সাধু খামসিনের সঙ্গে পরিচয়
বেশিদিনের নয় ইচ্ছা মাঝির। বছর তিনেক আগে,
খাসিয়া সাধুদের এক দলে ছিল খামসিন। সিন্টেংরা
কী ভাষায় কথা বলে ইচ্ছা বুঝে না। সার্ট প্যান্ট পরা সাধু দেখে ইচ্ছা তো থ,
কতরকমের তাবিজ নিয়ে বসে আছে খামসিন, সঙ্গে
নানান রঙের পাথর। ইচ্ছার তো নিজের তেমন বড় সমস্যা নেই যে সাধুর সমস্যা চাইবে। তবে
খাসিয়া মানুষের মুখে কাছাড়ি কথার টানে মুগ্ধ হয়ে শোনে। শুনতে
শুনতে মনে পড়ে সমস্যা কথা। বিলটুরি আর ছেবলির ঝগড়া। হুলো
আর মিনি দুটো মুখোমুখি হলেই ঘোৎঘোতি। জল না ছেটানো পর্যন্ত শ্বাস পাল্টায় না
কেউ। মনা মাষ্টারকেও বলেছে, সমাধান
দিতে পারে নি, হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। বলেছে
হুলোর রাগ থাকবে না তো কী ইচ্ছা মাঝির থাকবে। অবশ্যি,
খামসিন গুরু সব শুনে বলেছে, রাগ কমবে। সোওয়া
টাকা লাগবে। ওদের মিল করানোর জন্য তাবিজ কিনেছে, বিলটুরির গলায় বেঁধে দিয়েছে। আর
সত্যি চমৎকার কাণ্ড হয়েছে। বিলটুরি হুলোর সঙ্গে ছেবলি মিনির ভাব হয়ে
গেছে। এখন তো ছেবলির বাচ্চা কাচ্চাও হবে।
খামসিন সাধুরও ইচ্ছাকে
ভালো লেগে যায়। ইচ্ছাকে নিয়ে ঘোরে এদিক ওদিক। সিদ্ধেশ্বর
শিবের বাড়িতে যায়। গাঁজা খায় খুব, ইচ্ছাকে ধরাতে পারেনি
চিলিম। খামসিন ইচ্ছাকে নিয়ে যায় পাহাড়ে, কত রকমের পাথর খোঁজে বের করে, ঝুলি ভর্তি করে নিয়ে
ফেরে সন্ধেবেলা। পরদিন ভোরবেলা বারুণি স্নান, কত মানুষ
আসে দূরদূরান্ত থেকে। স্নানের পর সাধুর তাবিজ পাথর বিক্রি হয়
ধুমধাম। ইচ্ছা মনে মনে জানে বুজরুকি। যখনই ওর মনে সন্দেহ হয়,
অমনি সাধু ধরে ফেলে। বলে,
বুজরুকি নায় বাবাজি, বিশ্বাস। কী
করে যে মনের কথা বুঝতে পারে সাধু। ভেবে অবাক হয় ইচ্ছা মাঝি। ইচ্ছা
অবাক হয় মানুষটার সন্মোহনী কথাবার্তায়। সারাদিন যে কত কথা বলে কত পুণ্যার্থীর সঙ্গে। কত
ইতিহাস কত ঠাকুর দেবতার কথা।
ফুলবাড়ি থেকে পিঙের ঠেলা চালিয়ে যেতে যেতে গুরুমুখের গল্প বলে ইচ্ছা। বন্ধুকে
বলে তার মনোবাসনা কথা। বলে,
---অইব নি বিয়া ? তুই কলিরে দেখলে কইলে নে। খালি
মাতত পারে না। মাত দিয়া কিতা অইত আমার ক? তাই কিতা
তাইও জানে না, মাইনষে কয় তাই বুলে মুছরমান। বোবার
কুনু ইতা আছেনি ক ছাইন? আমি বিয়া করমু অউ। গাউআলা
হকলে ঠারেঠুরে কইন খেদাই দিবা। আমি বুঝি নানি?
কইন তেউ খাইমু কিতা ? আমার ইতা ভালা লাগে
না।
পিংও ইচ্ছা মাস্টরের জটিল
সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারে না। সেও বোবা হয়ে থাকে। ইচ্ছা
রাগ করে বলে,
---তুইও দেখি আব্রা অই গেলে
? তুই বুলে পিন লাকড়ির মতো কথা কছ খোচা খোচা। চুপ
যারে কেনে? হিন্দু কুনু বোবা হয় নিবে? বুঝছি তরে মাতানি যাইত নায়। আমার
গুরু খামসিনেউ ব্যবস্থা করবা যেতা করার। তাইন কেনে পরতি বছর সিদ্ধেশ্বরো আইন জানছ
নি?
পিং খাসিয়া খামসিনকে পছন্দ
করে না। বলে লোকটা ঠগ। ইচ্ছা মানে না,
ইচ্ছার সাদা মনে কাদা নাই। বলে,
---ধুর বেটা কিচ্ছু না জানিয়াউ তোর ফরফরানি পুটিমাছর লাখান। সিদ্ধেশ্বর
অইল সিদ্ধপীঠ। ইখানো শিবোর ইচ্ছাত চমৎকার হয়। লালকাপড়
আর গেরুয়া না পিন্দলে সাধু অয়না নানি? তাইন পেন্টসাট
পিন্দইন, গাইঞ্জা খাইন। খাইন,
সবর সামনেউ খাইন। আমি জানি,
রাইত মদও খাইন। এর লাগি কিতা অইছে। তান
লাগিউও আমার বিলটুরি আর ছেবলির বাইচ্চা অইছে। তাইন
পাহাড়ে পাহাড়ে খালি ঘুরঅইন, আর পাত্থর আনইন। পাত্থর
দেইন, তাবিজ দেইন, মাইনষে বিশ্বাসে
লই যায়, আবার আয় পরর বছর। একবার
তো নায়, ভাগি যাইরা না তো! শিবোর
বর আছে রে ই পুণ্যভূমিত। তাইন কত কথা জানইন সিদ্ধেশ্বরর। মানুষরে
কইন। এক রাজার কথা কইছইন গেলবার। পুরা বদরপুর পাচগ্রামর মালিক আছলা শুটকি
রাজা। তাইন আবার রাজা কইন না কইন রাভা। খাসিয়া
না জৈন্তিয়া না রাভা না ভুটিয়া কী জানি কিতা। তাইন
রাজা আছলা আরি। অউ গাঙোর নিচে তান এক পাত্থর আছিল, পরশ পাত্থর। পাত্থরো মরা মাছ ছওয়াইলেউ জিতা অউ যায়,
শুটকি মাছেও ফরফরায়। তে
কইবে অখন পাত্থর কৈ? পাত্থর চুরি অই গেছে,
ডাকাতি অইছে। এক ডাকাইত আইছিল বড়খোলা থাকি। রোজ
রাইত আইত ডাকাতি করি যাইত গি। একদিন রাজার বাড়িতও ডাকাতি করাত আইল। রাজার
আছিল এক সুন্দরী কন্যা, পরমা সুন্দরী। নাম
ফুলকলি। কইল লই যাইব গিয়া। রাজায় কইল দিত নায়। ডাতাইতে
কইল মারি লাইব।
ওই পর্যন্ত বলেই থেমেছিল ইচ্ছা। কারণ
সেও জানত না এর পর কী ঘটেছে। শুরু খাসমিনের এই দোষ,
কথা শেষ করে না। উৎসাহ জাগিয়ে ছেড়ে দেয়। পরের
বছর আবার বন্ধুর ঠেলাগাড়ি ঠেলতে ঠেলতে, মেলার মাঠে
নদীর চরে যেতে যেতে বলে,
---হুনতে নানি গতবছরর গপ। ফুলকলির
গপ। রাজা শুটকি রাভায় কইলা দিবা এক আজব পাত্থর। মরা
মাছ জিন্দা হয়,শুটকি উটকি সব জিন্দা অই যায় ছওয়াইলেউ। দিলাইলা
আধখান, পুড়ি তো বাচল। বাকি
আধখান দিয়া অউ শিবলিঙ্গ। কিন্তু পুড়িবে যে বাঁচাইলা রাজায় বাচল নি পুড়ি?
ডাকাইতর ডাকাতি নু তিনগুন বাড় গেল। রাজায়
কিচ্চু মাতইন না ডরাই ডরাই থাকইন। তখন অউ নালিশ গেল বাপর কাছে। সিলেটোর
দরগা মহল্লার বাদশায় হুনিয়াউ আইলা ঘুড়া লইয়া, আউলিয়া
লইয়া। পির সাহেবে হিগুরে মারিয়া তেউ গেলা। বদর
বদর করিয়া আইছলা এর লাগিয়াউ বদরপুর। ডাকাইতর হাত থাকি বাচাইলা রাজারে রাজ্যরে। পিং
পাথরের গল্প শুনেছে এর আগে, ডাকাতের গল্পও শুনেছে কিন্তু
হজরত শাহজালালের কথা বিশ্বাস করে না। কারণ পিং জানে শাহজালাল এসেছিলেন স্থানীয়
মানুষকে ধর্মান্তরিত করতে। তাই পিং এর মতে তিনি ডাকাত থেকেও সাংঘাতিক। পিং
লাকড়ির গা জ্বালানো কথা শুনে ইচ্ছা বন্ধুর ঠেলা থামিয়ে বলে,
---আর ঠেলতাম নায়। যেমন পারছ লই যা তোর কালাইর ডাইল বাটা আর
চাউলর গুড়ি। যেতা মুখে দি আয় অতা মাতরে। পির, তাইন জোল করি যদি মুছরমান করতা তে কিতা আইজ অউ সিদ্ধেশ্বর থাকলানে ?
কপিল মুনি উবাই রইলা নে? কার কথাত যে নাচচ। কিন্তু
হাও কথাও ঠিক, ডাকাইতর হাত থাকি পুড়ি বাচাইলেও ইচ্ছা
শেখর হাত থাকি নি পারলা বাচাইতা? ইছা শেখর চউখ পড়ল ফুসরলির
উপরে। ফুলকলিয়েও চাইয়া দেখলা আরবি বেটারে। গাট্টাগোট্টা
লম্পা চওড়া গৌরবর্ণ ইছা শেখরে দেখিয়া ফুলকলিয়ে কইলা বিয়া করলে এনেউ করমু,
নাইলে না। অখন কইবে কিতা অইল?
অইল নি বিয়া হিন্দুয়ে মুছরমানে? অইত না কেনে?
তখন কুনু আর ইলা কামড়া কামড়ি আছিল নি অখনকুর লাখান। পাটনিয়ে
হালুচা দাশে অখন যেলা বিয়া হয়, তাই গেল মুছরমান ছোকরার
লগে। রাজার তো এক অউ পুড়ি কিতা করতা ক?
বরাক নদীর চরে মেলার মাঠ জমজমাট। হ্যাজাক
বাতি আর লন্ঠনের আলোয় দোকানি আর পুণ্যার্থীদের হাঁক ডাকে রাত নিশুতি হওয়ার কোনও লক্ষণই
নেই। এরমধ্যেই পিং দুই বন্ধুর ভোজের আয়োজন করে আলু আর বেগুনপোড়া ভাত দিয়ে। পিং
ইচ্ছা বন্ধুর তেতোমুখের দিকে তাকিয়ে বলে সে এক গুপ্তধন এনেছে সঙ্গে। পাবিয়া
আর এলেং মাছেরনশুটকি। পোড়ানোর চেষ্টা করেনি সরকারি নিষেধাজ্ঞার কথা মনে রেখে। শুটকি
সমাচার শুনে ইচ্ছার মুখ উজ্বল হয়। নৈশাহারের ইচ্ছা প্রবল হয়। বলে,
---কইবে তো আগে ? দেখিছ আবার কইছ না শুটকি গিয়া পাত্থরো
লাগাইয়া আইতাম। সিদ্ধেশ্বর মহাদেবের লিঙ্গ বানানি হইছে বে আধা পাত্থর দি। আইছলা
করতাম নি ক? আর বাকি আধখানি যে ডাকাইতে লইগেছিল,
সাধু খামছিনে কইছইন অখনও পাওয়া যাইব টুকরা টুকরা। পয়সা
বেশি লাগব, ইবারঅউ আনি দিবা কইছলা তো। দেখি
আনলে দিমুনে তোরেও এক টুকরা। চল অখন শুটকি পুড়ি লাই,
মরিচ পিয়াইজ আছে নি ক? না থাকলেও কিতা অইব
মচমচাইয়া খাইলাইমু। আমি ইতা চুঙা আলারে ডরাই না,
কাইল মারমুনে মাছ, রান্দতে পারবে তো?
শুটকি পোড়ার গন্ধে উষ্ণা
চালের ভাত কম পড়ে যায়। তবু ঘুম হয় বালুর চরে অন্ধকার। ইচ্ছা
ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে পরশপাথরের। সকাল হলেই তো চলে আসবে সাধু খামসিন। নিয়ে
আসবে পাথরের টুকরো। যদি সত্যি সত্যি মরামাছ বেঁচে ওঠে। কলির
মুখটা মনে পড়ে ইচ্ছার, কথা বলতে পারে না স্পষ্ট
করে, কিন্তু ইচ্ছা ওর মুখ দেখেই বুঝতে পারে কলিরও খাবারে রুচি
হয় না মাছ ছাড়া। সারা বছর ধরে এবার কলিকে বলবে শুটকি দিতে,
জমিয়ে রাখতে মাটির হাঁড়ি কলসীতে। মড়কের
সময় যখন চুঙাওলার বাধানিষেধ থাকবে তখন পাথর ছুঁইয়ে দেবে কলি আর তার সংসার ভরে উঠবে
গাঙের ঝলমলানো মাছে। শুকনো মাছ সব তাজা হয়ে কানে হেঁটে চলে আসবে কলির বটির ডগায়। ছোট
ছোট আঙুলের মাখানো ছাইয়ে।
স্বপ্ন সার্থক হয়। পঁচিশ
টাকায় পাঁচটা পাথর কিনে বড় আহ্লাদ হয় ইচ্ছার। একটা
সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেয় পিংকে। একটা নিজের জন্য রাখে। মনা
মাস্টার আর কলির জন্য একটা একটা দুটো। সোনাপিরকে দিয়ে লাভ নেই,
পির নিজেই তো ভগবান, ঈশ্বরের প্রতিভু,
যখন ইচ্ছা বাঁচাতে পারে মাছ মানুষ সবকিছু। লেংটা
বেটা শিবুদার কাছে একটা রাখবে।
পাঁচটি পাথরের টুকরো হাতে নিয়ে ইচ্ছা পিঙের কাছে গচ্ছিত রাখে বাকি চারটে। গুরু
খামসিনকে বলে, ---চলো যাই নদীর ওপারে।
যায়। কপিলমুনির
মুর্তির গায়ে হাত দিয়ে ইচ্ছা বলে,
---
সাধু তুমি তো কততা পারো ? বিয়া দিতায় পার
নানি?
গাঁজার নেশায় বুঁদ খামসিনের মাথা
নড়ে। ইচ্ছা বলে,
---আমার আর কলির বিয়া করাই দেও না কেনে ? পাত্থর উত্থর
যদি থাকে তোমার পাহাড়ো লইয়া আইও আগর বার। বড়
পাত্থর আনিও। অউ নেও আমার কাছে যত টেকা আছে সব নেও। সব
তুমার। আলতা চুড়ি শাড়ি ইতা পরে কিনমুনে। আনবায়
নি সাধ?
ইচ্ছার আকুল আবেদন আর অনেকগুলো টাকার নোট দেখে খামসিন সাধুর নেশা ভাঙে
সাময়িক। টাকাগুলো পকেটস্থ করে। সাধুর মাথা নড়ে নেশার ঘোরে। ইচ্ছার
প্রাণে আনন্দ, গুরুকে দণ্ডবৎ করে, কপিল মুনির পায়ে যায় প্রণাম।
খুশিতে আনন্দে ফিরে আসে। বারুণি
স্নানের আনন্দ যেন এবার একটু বেশিই হয়। কারণ ফিরে আসার পরই যে আবার চুঙা নিয়ে বেরিয়েছে
প্রশাসনের লোকজন। মাছের মড়ক শেষ হয়েছে তিনমাসের আগেই। মাছ
খাওয়ায় আর নিষেধ নেই। গুরু খামসিনের চমৎকার অবাক হয় ইচ্ছা। শুণ্যে
প্রণাম জানায় সাধুকে। লেংটা বেটার কাছ থেকে টাকা ধার করে ইচ্ছা। ধারের
টাকায় আলকাতরা কেনে, নৌকৌয় রং করে। একবছর
এবার শুধু মন দিয়ে বৈঠা বাওয়া। অনেক টাকা রোজগার করতে হবে তাকে। এক
বছর পর যাবে বারুণি মেলায় আবার। সাধু আনবে এবার বড় পাথর। পাথর
ছুঁইয়ে দিলেই ফুলের মতো ফুটে উঠবে তার কলি।
(দৈনিক যুগশঙ্খ, রবিবারের বৈঠক)
*******************
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন