।।পার্থঙ্কর চৌধুরী।।
‘তেল-চোরা’, পইতাচোরা’ এগুলো সবই দুর্মুখের মস্তিস্ক-প্রসূত। আসলে কি, ঐ যে পৈতা, তাতে সরসের তেল কি এক-আধটু লাগানো থাকে না? তা-থেকে শুং দিয়ে কিঞ্চিৎ চেটেপুটে নিলে কি অমন দোষের হয়ে গেলো? ছাই হবে! কচু ! বললেই হল? বরং এর থেকে ঐ ছাপার অক্ষরের দেশের লোকেরা অনেক ভালো। মোটামুটি তো একটা ভালো মানেই ডাকে। ‘আরশোলা’ । পেশা-টাকে ইঙ্গিত করে কোন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য নেই। সিলেট-আসামের লোকেরা কি ইচ্ছে করলে এই নামে ডাকতে পারে না? পারে, আলবৎ পারে। ডাকবে-ই না আসলে। বরং সবচেয়ে ভদ্রলোক বলতে হয় ইংরেজদেরকে। ওরা সত্যি সত্যি সাহেব, ভদ্রতার ষোলো-আনা এরা জানে। কি ভারি মিষ্টি নামে, সুন্দর নামে ডাকে… ‘পেরিপ্লেনেটা এমেরিকানা’’। একেবারে বুক ভরে যায়। এমন নাম দিয়েছে, মনে হয় আমেরিকা-বাসি। যেন খোদ ইংরেজদের দেশেই মেয়াদি-পাট্টা রয়েছে । ডাইরেক্ট, গ্রিন-কার্ড ।
নিন্দা-মন্দ করা লোকদের বিলকুল পছন্দ নয় সবার চির পরিচিত ঐ ষষ্ট-পদীর। ‘তেল-চোরা’ নামটায় ঘেন্না ধরে যায় ষষ্ট-পদীর। গোল্লায় যাক, ঐ সব নাম…। মনে মনে গালি পাড়তে থাকে সব দুষ্টদেরক। বিদ্যার জোর আছে বলে মনে মনে প্রচণ্ড ঈর্ষাও হয় ঐ লোকেদের। বিদ্যাজীবী আর বুদ্ধিজীবী নাম দিয়ে তো দিব্যি মোটা মাইনের মাসোয়ারা গুনছে মাস ফুড়োতেই। রোজগার যদিও প্রায় সমানই, তবুও ওর চাহিদাটা যে অনেক বেশী।
অনেকদিন থেকেই ইচ্ছা, বাড়িতে একটা পূজার আয়োজন করবে। করলোও। পূজার্চনায় একটা মোক্ষম লাভ হল ষষ্ঠপদীর। বলা যেতে পারে মগজ খুলে গেলো। আদত বদল না করে অন্য একটা পেশার নেশা তাকে পেয়ে বসলো। আসলে, বাড়িতে পুজার দিন লক্ষ্য করেছে, উপাচারের প্যকেট গুলো থেকে সারি বেধে পিঁপড়ার লাইন বেরিয়ে আসছে। এদিক থেকে কিছু যাচ্ছে, তো ওদিক থেকে কিছু আসছে। আসা যাওয়ার পথে একজন আর একজনের সাথে সুঙে সুং মিলিয়ে কিছু যেন কথা বলছে।
একদিন দাদাই-বাবা-কে জিগ্যেস করেছিল বিষয়টা। বলেছিলেন, ও তুই বুঝবি না; বুঝলে এ কাজটাকে তুইও এতদিনে পেশা করে নিতে পারতি। তোর দেহেও ঐ রসায়ন-টা আছে। জানিস, এটাকে বলে ‘ফে- রো –মো -ন’ (Pheromone) । দাদাই-বাবা আরও বলেই যাচ্ছেন...। আড়চোখে দাদাই-বাবার কথা শুনতে শুনতে একসময় মূর্ছা গেলো তেলাপোকা। চিৎপটাং হয়ে পা ছ’টা উপরে তুলে তিড়বিড় করতে লাগলো ষষ্ঠপদী। আশেপাশের সবাই ভাবল, হয়তো বা ব্যাটা অক্কা পেয়েছে।
‘তেল-চোরা’, পইতাচোরা’ এগুলো সবই দুর্মুখের মস্তিস্ক-প্রসূত। আসলে কি, ঐ যে পৈতা, তাতে সরসের তেল কি এক-আধটু লাগানো থাকে না? তা-থেকে শুং দিয়ে কিঞ্চিৎ চেটেপুটে নিলে কি অমন দোষের হয়ে গেলো? ছাই হবে! কচু ! বললেই হল? বরং এর থেকে ঐ ছাপার অক্ষরের দেশের লোকেরা অনেক ভালো। মোটামুটি তো একটা ভালো মানেই ডাকে। ‘আরশোলা’ । পেশা-টাকে ইঙ্গিত করে কোন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য নেই। সিলেট-আসামের লোকেরা কি ইচ্ছে করলে এই নামে ডাকতে পারে না? পারে, আলবৎ পারে। ডাকবে-ই না আসলে। বরং সবচেয়ে ভদ্রলোক বলতে হয় ইংরেজদেরকে। ওরা সত্যি সত্যি সাহেব, ভদ্রতার ষোলো-আনা এরা জানে। কি ভারি মিষ্টি নামে, সুন্দর নামে ডাকে… ‘পেরিপ্লেনেটা এমেরিকানা’’। একেবারে বুক ভরে যায়। এমন নাম দিয়েছে, মনে হয় আমেরিকা-বাসি। যেন খোদ ইংরেজদের দেশেই মেয়াদি-পাট্টা রয়েছে । ডাইরেক্ট, গ্রিন-কার্ড ।
নিন্দা-মন্দ করা লোকদের বিলকুল পছন্দ নয় সবার চির পরিচিত ঐ ষষ্ট-পদীর। ‘তেল-চোরা’ নামটায় ঘেন্না ধরে যায় ষষ্ট-পদীর। গোল্লায় যাক, ঐ সব নাম…। মনে মনে গালি পাড়তে থাকে সব দুষ্টদেরক। বিদ্যার জোর আছে বলে মনে মনে প্রচণ্ড ঈর্ষাও হয় ঐ লোকেদের। বিদ্যাজীবী আর বুদ্ধিজীবী নাম দিয়ে তো দিব্যি মোটা মাইনের মাসোয়ারা গুনছে মাস ফুড়োতেই। রোজগার যদিও প্রায় সমানই, তবুও ওর চাহিদাটা যে অনেক বেশী।
অনেকদিন থেকেই ইচ্ছা, বাড়িতে একটা পূজার আয়োজন করবে। করলোও। পূজার্চনায় একটা মোক্ষম লাভ হল ষষ্ঠপদীর। বলা যেতে পারে মগজ খুলে গেলো। আদত বদল না করে অন্য একটা পেশার নেশা তাকে পেয়ে বসলো। আসলে, বাড়িতে পুজার দিন লক্ষ্য করেছে, উপাচারের প্যকেট গুলো থেকে সারি বেধে পিঁপড়ার লাইন বেরিয়ে আসছে। এদিক থেকে কিছু যাচ্ছে, তো ওদিক থেকে কিছু আসছে। আসা যাওয়ার পথে একজন আর একজনের সাথে সুঙে সুং মিলিয়ে কিছু যেন কথা বলছে।
একদিন দাদাই-বাবা-কে জিগ্যেস করেছিল বিষয়টা। বলেছিলেন, ও তুই বুঝবি না; বুঝলে এ কাজটাকে তুইও এতদিনে পেশা করে নিতে পারতি। তোর দেহেও ঐ রসায়ন-টা আছে। জানিস, এটাকে বলে ‘ফে- রো –মো -ন’ (Pheromone) । দাদাই-বাবা আরও বলেই যাচ্ছেন...। আড়চোখে দাদাই-বাবার কথা শুনতে শুনতে একসময় মূর্ছা গেলো তেলাপোকা। চিৎপটাং হয়ে পা ছ’টা উপরে তুলে তিড়বিড় করতে লাগলো ষষ্ঠপদী। আশেপাশের সবাই ভাবল, হয়তো বা ব্যাটা অক্কা পেয়েছে।
সংজ্ঞা হারায় নি মোটেই। আসলে দিব্য-জ্ঞান লাভ করেছিল। দিব্য দর্শনে সে জানতে পারল, ঐ সুদূর মরু-আরবের কোন এক দেশে ওর মতই অন্য আরও এক ষষ্ঠপদী এই ‘ফে-রো-মো-ন’-কে কাজে লাগিয়েই খুব অল্প দিনেই কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে। মূল্যবান এই রসায়ন নাকি দূর-সংযোগে টেলিফোন-মোবাইল-ইন্টারনেট এর বিকল্প হিসেবে কাজ করতে সম্পূর্ণ-রূপে সক্ষম। ব্যস, আর কে পায়? যেমন ভাবা, তেমন কাজ। চটজলদি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল, সে দেশে যেতেই হবে। যাওয়ার দিন সঙ্গে নিয়ে গেলো, অপেক্ষাকৃত মোটা পেটলা এক সঙ্গীকেও। ওর বিচারে সহযাত্রী এই বিষয়ে ঢের পারদর্শী।
‘ফে-রো-জ্ঞা-নে’ পাণ্ডিত্য অর্জন করার পর মাস দিন পরেই দেশে ফিরে এলো দুজনে। এবার দেশের মাটিতে এই দুর্লভ তথ্য-প্রযুক্তি কে বেশ ভালই কাজে লাগান যাবে। মুনাফাও আসবে। ‘তেলচোরা’ নামটাও আর থাকবে না, অথচ, ‘ষোলো-আনা-চুরি’ বজায় থাকবে। এর চাইতে আর ভালো কি হতে পারে?
যথারীতি প্রচার শুরু হল। বিজ্ঞাপনে সব দিক ভরে গেলো। চারদিক ছয়লাপ। সবারই মুখে মুখে এক কথা। এখন থেকে আর কাগজ-কলম দরকার নেই। ‘নো পেপার-ওয়ার্ক’। যা হবে সব ‘ফে-রো-টেঁ-ক-নো-ল-জি’ দিয়ে। সব বাড়িতে, অফিস-আদালতে, স্কুল-কলেজে-হাসপাতাল প্রাঙ্গন সবজায়গায় তেলচোরা থাকবে। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কোন বার্তা, সংবাদ কিংবা তথ্যাদি এক তেলচোরা রিসিভ করে অন্যের কাছে পাঠিয়ে দেবে। দরকার নেই টেলিফোন-মোবাইল- ইন্টারনেটের। মাসে মাসে অনেক টাকা বেচে যাবে, আলবৎ...।
সর্বত্র ঢাকঢোল পিটিয়ে ফ্রেয়াম-সী অর্থাৎ ফে-রো-টেঁ-ক বিজনেস শুরু হল। স্ত্রী তেলচোরা ভাবল, এতদিনে হয়তো বা একটা সম্মানজনক কিছু একটা হল। তাহলে মনে হয় ‘দাদাই-বাবা’ সত্যি সত্যি সর্বশক্তিমানের কাছে ওদের জন্য প্রার্থনা করেছেন। এখন থেকে সাজগোজ করে রাস্তায় বেরুলেও কেউ আর কিছু তির্যক মন্তব্য কারার মতো কিছু পাবে না। কিন্তু না...।
কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রবল বিপত্তি শুরু হল। আসলে ঐ গোবিন্দপুরের লাগোয়া সুতানটি গ্রামের টেকনোক্রেট গোছের একজাতের পোকাকে দ্বায়িত্ব দিয়েছিল ফেরোমনের মেসেঞ্জার সাপ্লায়ার হিসেবে। ওর সাথে চুক্তি হয়েছিল, যদিও আমজনতা জানবে যে তেলচোরাই কাজটা করছে, কিন্তু আসলে কাজটা করবে সে। আর এর জন্য মাসে মাসে মাসোয়ারা হিসেবে সে বছরে কিছু একটা পাবে। চুক্তি অনুযায়ী ‘টেকনো-পোকা’ শুরু শুরুর বেশ কদিন ভালো ভাবেই কাজটা করেছিল। কিন্তু বেশ কিছুদিন হল, সে তার পারিশ্রমিক পায় নি। তাই মেসেজ সাপ্লাই বন্ধ! এই থেকেই সমস্ত বিপত্তির শুরু।
বন্ধ সব কাজ কর্মও। বাড়ি-ঘর, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ সবখানেই কাজ কর্মও স্থবির হয়ে পড়ে আছে। সব যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় গোটা এলাকায় দারুন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ি থেকে কেউ লাঠি, অফিসের কেউ ডাণ্ডা, স্কুল থেকে রুলার, স্কেল আর হাসপাতাল থেকে অপারেশনের ছুরি নিয়ে যে যেদিকে পারে বেরিয়ে ছুটাছুটি করছে। যেখানেই তেলচোরা পাবে, সঙ্গে সঙ্গে খতম।
এক অজানা আশঙ্কায় দিন কাটছে পইতাচোরার। সব শুনে তেলচোরা ভাবল, আবার বাড়িতে একটা সন্ধ্যা-পুজার আয়োজন করবে। সব বড় বড় মানুষ কে ডাকবে। বড় বড় লোকেরা তোর বাড়িতে আসলেই ঐ নিচু মনের লোকদের মুখ তালা-বন্ধ হয়ে যাবে, একদিনেই। যথারীতি, সন্ধ্যারতির আয়োজন হল। বিদ্যাটিল্লা থেকে স্বাত্বিক ভাবে পূজার সব উপাচার এলো প্যকেটিং হয়ে। বাঁশঝাড়ের মোড়ল বাঁশপোক্ত বাবুও এলেন। এলেন বড় মাপের আরও অনেকেই। সবাই প্রসাদ খেলেন। সে আরেক গল্প। আরও অনেক কথা। যাকগে...
সেই থেকে ‘গদা’ থেকে কক্ষনো দূরে রাখেনি নিজেকে...!
গোল্লায় যাক, বাকি সব...। আগে তো প্রানে বঁচি…!
গদা-সর্বস্য ষষ্ঠপদী-র আপাততঃ এটাই এজেন্ডা…! মনে মনে তাই মন্ত্রচ্চোরন করলো,…
গদা স্বর্গ, গদা ধর্ম… গদা হি পরমং তপঃ…
গদা'রই প্রিতিমা-পন্নে পলায়তি সর্ব বিপদঃ…
সন্ধ্যায় পুজা শুরু হয়েছে। পঞ্জিকা দেখে, তিথি ধরে। নিমন্ত্রিত ছোটবড় সবাই এসে গেছে। এরই মধ্যে চিৎকার দিতে দিতে বেচারা ষষ্ঠপদী আবার মূর্ছা গেলো। এবার ‘ফ্রেয়াম-সী’, ‘ফ্রেয়াম-সী’ বলছে না; বলছে, ‘তিন-তলা’, ‘তিন-তলা’ আর র…ড-বা…লু-সি… মে…ন্ট…। গভীর মূর্ছায় আচ্ছন্ন। আই মিন, আবার দিব্য দর্শন। দেখা দিলেন পরম-প্রিয়। পা ধরে আকুতি মিনতি করায় একটা মোটাসোটা ‘গদা’ দেখিয়ে পরম-প্রিয় বললেন, এটা তোর কাছে রাখবি, সবসময়। কক্ষনো হাতছাড়া করবি না। এর জিম্মাদার তুইই। আর কেউ নয়। এটাই তোর একমাত্র ‘রক্ষা-কবজ’।
কিন্তু না। একটু পরেই জ্ঞান ফিরে পেলো। ফ্রেয়াম-সী… ফ্রেয়াম-সী…বলে চেঁচিয়ে উঠল। সে কি চিৎকার! (অনেকটা ঐ নিউটনের ‘ইউরেকা’র মতো)। বেচারা ষষ্ঠপদী আবার মূর্ছা গেলো।
‘তেল-চোরা!’ নামটাই তো চূড়ান্ত তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের। ব্যটা সিলেটিরা কি আর অন্য কিছু পেলো না ডাকার জন্য। অন্যদের তো ভারি সুন্দর সুন্দর নামে ডাকে। ‘প্রজাপতি’, ‘কাকাতুয়া’ ইত্যাদি কত মিষ্টি মিষ্টি নাম। আর শুধু ‘সিলেটি’-দেরই বা কেন দোষ? অসমীয়ারাও তো ওরকম একটা বিশ্রী নামে ডাকে। ‘পৈতা-চোরা! শুনলে মনে হয় বেচারা যেন উপনয়ন চুরির দায়ে অভিযুক্ত। সব ব্যাটারাই হীনমন্যের গুষ্ঠি। নিপাত যাক। গুষ্ঠির পিণ্ডি…! বললেই কি আর কেউ বাজে হয়ে গেলো? আসলে বলছে কারা সেটাও তো দেখা দরকার…!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন