“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ৪ জুলাই, ২০২০

একটু নিজের কথাই বলি – ২


।। সাদিক মোহাম্মদ লস্কর ।।

        র দশটা শিশুর মত আমার ছাত্রজীবন শুরু হয়নি। আমার বাড়ির সদর দরজা আর বাঁশকান্দি এম ভি স্কুলের প্রবেশদ্বার ছিল একেবারেই মুখোমুখি। শুধু রাস্তাটাই পার হওয়া। তখন এটা জাতীয় সড়কও ছিল না, এখনকার গলির মত ছিল। সেই এত কাছের স্কুলে ভর্তি হলেও আমি সেখানে গিয়ে পড়তে পারিনি। আমার মা চাকরি করতেন। বাড়িতে আমার ছোট ভাইবোনের দেখাশোনা করা ছিল আমার দায়িত্ব। আগলে রাখা, দুপুরের খাবার খাওয়ানো ইত্যাদি। স্কুলে না গিয়েও আমার রোল নম্বর এক হয়ে যেত। এভাবে তৃতীয় শ্রেণীতে ওঠার পর বাড়িতে চিঠি এল আমার নাকি নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। হেড পণ্ডিত নামর আলি বড়ভুঁইয়ার সামনে হাজির হলাম। অনুরোধ করলাম ভাই-বোনদের কথা বলে। কিন্তু তিনি জানিয়ে দিলেন, স্কুলে আসতেই হবে। সেই থেকেই স্কুল যাওয়া শুরু হল আমার। কিন্তু দুপুর হলেই ছুটে আসতাম বাড়িতে। একবার চিড়ে ভিজিয়ে রেখে গিয়েছিলেন মা। বাটির ঢাকনা খুলতেই কালো পিঁপড়ে আমার হাত মুখ সব ঘিরে ফেলল। কোনও ভাবেই এদের সরাতে পারছিলাম না। ভাই-বোন মুখ বেজার করে সেই দৃশ্য দেখছিল। রাগের মাথায় একটা বড় চামচ দুটুকরো করে ফেললাম। এর পর অনেক খুঁজে একজন কাজের মেয়ে পাওয়া গেল।

         স্কুলের ছোট্ট মাঠে কাবাডি কোর্ট বানিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু হাফ টাইমে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রীরা আমাদের মেরে সরিয়ে তারা খেলত। আমি, মইনুল, চয়ন, মাহমুদ, আমির হুসেন, আমির উদ্দিন, আক্তার মিলে ঠিক করলাম যেমন করেই হোক আমাদের কোর্টে এদের আর খেলতে দেওয়া যায় না। যেমন কথা তেমন কাজ। দায়িত্ব পেয়ে আমি কোদাল আনলাম বাড়ি থেকে। তারপর তছনছ হয়ে গেল কোর্টটি। হঠাৎ কে একজন একটা দারুণ বুদ্ধি দিল, ‘কিছু কাঁচ ফেলে দিলে কেমন হয়?’ তাই হল। পরদিন ধরাও পড়ে গেলাম। নীলমণি স্যার, ফজলু স্যার, মুক্তাদির স্যার, মইনুল স্যার মিলে হাত লাল করে ছাড়লেন। সব শুনে আব্বা শুধু বলেছিলেন, শাস্তি তো তোমার প্রাপ্য। আড়ালে গিয়ে মাকে বলেছিলেন, এক হাতে বিশটা করে বেত্রাঘাত বেশি হল না? মা বলেছিলেন, একটা শিক্ষা তো হল। আমারও মনে হয়েছিল কাজটা ভালো করিনি। কিন্তু আমার সঙ্গীরা বলত, আমাদের খেলার ব্যবস্থাটাও হল না, বেকার মার খেতে হল।

           স্কুল আমার ভালোই লাগত। বাড়িতে কড়া শাসন ছিল। আমাদের বাড়ির মুখে একটা কাঁঠাল গাছ ছিল আমাদের লক্ষ্মণরেখা। এই গণ্ডির বাইরে যাওয়ার সাহস ছিল না আমাদের। আমার তো একটু বেশিই নিষেধ ছিল। বাবার সঙ্গে বাজার যাওয়া বা ছুটি পেলে আত্মীয়বাড়ি যাওয়া ছিল আমার বাইরে যাওয়া। এই কারণেই বোধ হয় স্কুলের প্রতি একটা টান ছিল। রবীন্দ্রনাথ কেন যে স্কুল পালাতেন তার কারণ আমি অনেক চেষ্টাতেও খুঁজে পেতাম না। ভাবতাম জানলা দিয়ে বাঁশকান্দি আনুয়ার জলের ঝিকিমিকি দেখার সুযোগ পেলে হয়ত তিনিও স্কুল পালিয়ে নদীতীরে গিয়ে বসতেন না।

          এভাবেই কেটে গেল চতুর্থ শ্রেণী। বৃত্তি পরীক্ষা দিলাম শিলচরের কোন এক স্কুলে। মা আমাকে নিয়ে গেলেন রেহিমা আন্টির (বাবার মামাতো বোন) মধুরবন্দের ভাড়া বাড়িতে। তিনিও শিক্ষিকা ছিলেন। তাই আমার প্রস্তুতি হয়েছিল খুব। মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, দোকানের সাইনবোর্ডে ‘লক্ষীপুর রোড’ কেন লিখা। জানলাম, এই পথেই নাকি বাদ্রিঘাট হয়ে লক্ষীপুর যাতায়াত ছিল। শহরের প্রাণকেন্দ্র নাকি এটাই ছিল। যাই হোক বসলাম পরীক্ষায়। গণিতে সব যেন গুলিয়ে ফেললাম। বৃত্তি পাওয়া আর হল না।

           এম ভি স্কুল ছিল সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত। শিক্ষকদের আন্তরিকতাও ছিল। কিন্তু চতুর্থ শ্রেণীতে এক অজানা কারণে আমি পেছনে পড়ে যাই। পরে উত্তরপত্র পরীক্ষা করে আমার প্রথম স্থান বহাল হয়। বাঁশকান্দি নেনা মিয়া হাই স্কুলে (তখনকার) ভর্তি হলাম ক্লাস ফাইভে। দাদার হাত ধরে অনেক গল্প করতে করতে যাওয়া। দাদা এর আগে রামসুন্দর বালিকা বিদ্যালয়ে পড়েছিলেন, এছাড়াও তিনি তখন থেকেই মাঝে মাঝে বাজার খরচ করতেন। আমার থেকে তাঁর স্মার্টনেস বেশি ছিল। দাদা মস্তানদের থেকেও আমাকে বাঁচাতেন। আমি হাল্কা রোগা ছেলে ছিলাম। দাদা গোছের ছেলেরা আমাকে জ্বালাতন করত। আমি মুখ বুজে সহ্য করতাম। আস্তে আস্তে সব ঠিক হওয়া শুরু করল।


           বড় মাঠ, সুন্দর ঘর, লিচু গাছ, আমগাছ, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ঝকঝকে চেহারার শিক্ষক-শিক্ষিকা সব মিলে আমার কাছে স্কুলটি প্রিয় হয়ে উঠল। তখনকার প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন বড়ভুইয়া ছিলেন মার সম্পর্কিত মামা। শিক্ষকরা যেন শিক্ষকতার গণ্ডি ছাড়িয়ে কোনও একটা অভিযান চালাচ্ছেন মনে হত। কয়েকজন শিক্ষক যে খামখেয়ালি ছিলেন না তা নয়। শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন, কারণ আমিও খুব বাধ্য ছাত্র ছিলাম। দুটি সেকশনেই আমাদের ব্যাচটির প্রায় সবাই মেধাবি ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। সেই দলের সর্দার হয়ে গেলাম আমি। মানে আমাকে ক্যাপ্টেন করা হল। ষান্মাসিক পরীক্ষার আগে সহপাঠীদের উদ্বেগ দেখে কয়েকজনকে নিয়ে গেলাম প্রধান শিক্ষকের কাছে। বললাম, ‘আমরা খুব চিন্তিত। প্রশ্নগুলো যেন আমাদের পক্ষে কঠিন না হয়।’ মুচকি হাসার চেষ্টা করেও যেন পারলেন না তিনি, মুখটা হাঁ হয়ে গেল। রাশভারি একজন মানুষের পক্ষে এই হাসিটাও ছিল অট্টহাসির সমান।

            অনেক সমস্যা সত্বেও পড়াশোনা থামেনি। মাঝে মাঝে মরে যাওয়ার ইচ্ছে হত। তারপর ভাবতাম আমার মা-বাবার জন্য আমাকে পড়তে হবে, প্রথম সারিতে থাকতে হবে। আব্বা আমাদের নিয়ে খুব পরিশ্রম করতেন, এই একটা কাজেই যেন তিনি আত্মনিয়োগ করলেন। প্রতিযোগিতা ছিল মুলত তিনজনের – শাহারুল, হায়দর (বর্তমানে এই স্কুলেই বিজ্ঞান শিক্ষক) ও আমার। শাহারুলের হস্তাক্ষর ছিল ঈর্ষনীয়। এ ছাড়াও নিলোফার (বর্তমানে এই স্কুলের লজিক শিক্ষিকা), শামিমা (অধ্যাপক আব্দুস সহিদ স্যারের মেয়ে), নাসমিন (স্কুলের অধ্যক্ষের মেয়ে), রনি, ইকবাল, ইসমত, মঞ্জুশ্রী, ইন্দিরা সহ অনেকেই। ক্লাসে বা স্কুল চত্বরে ছেলেদের সঙ্গে মেয়েদের মাখামাখি তো দূর, কথা বলা বা তাকানোও ছিল অসম্ভব। মেয়েরা স্কুলে আসত ঘোমটা দিয়ে, তার উপর আবার ছাতা দিয়ে মুখ ঢেকে। এরপরও কিছু বখাটে ছেলে ইভটিজিং করত, তবে আড়ালে তীর্যক মন্তব্য পর্যন্ত সীমিত ছিল তা। আমরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠতে উঠতে ছেলে-মেয়েদের চোখে চোখ রেখে কথা বলা যেন আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শুরু করল। কিছু নতুন সমস্যাও দেখা দিল। এভাবেই মাধ্যমিক পরীক্ষা এল। আমি, হায়দর আর নিলোফার প্রথম বিভাগে পাস করলাম। অনেকেই সামান্যের জন্য দ্বিতীয় বিভাগে পাস করল। এরই মধ্যে স্কুলটি উচ্চতর মাধ্যমিক হয়ে গেল। সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল। অনেকেই এই স্কুলেই থাকল।

            তারপর আমার চোখ অপারেশন। দুবছর পড়া হল না। আর পড়াশোনা করার ইচ্ছে রইল না। দুবছর গ্যাপ দিয়ে ভর্তি হলাম নেনা মিয়া স্কুলেই। ক্লাস আর পাঠ্যপুস্তক ছাড়া অন্য প্রস্তুতি ছিল না। দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হলাম। ইংরাজিতে মাত্র ৮৪ মার্কের উত্তর লিখে পেয়েছিলাম ৭০। আসলে সেও আব্বার অবদান। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমাকে যে ইংরাজি ব্যাকরণ শিখিয়েছিলেন তার ফল এই। সুলতান স্যার ও ভারতী ম্যাডাম আমাকে শান দিয়ে ঠিক করলেন। ভর্তি হলাম কাছাড় কলেজে ইংরাজি সাম্মানিক নিয়ে। আবার নতুন পরিবেশ। ফাঁক পেলেই বসে যেত গানের আসর। পার্থ, সুব্রত, সিদ্ধার্থ, জয়দীপ, জন আরো অনেক। তারপর আড্ডা দিতে গিয়ে ক্লাস মিস। দোতলার ছাদে বসে জমিয়ে আড্ডা। পড়াশোনাও ছিল। একবার ছাত্র সংসদে সম্পাদক পদের জন্য নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচনটাই রদ হয়ে গেল। বাড়ি থেকে আসা যাওয়া করা সমস্যা। থাকলাম পঞ্চায়েত রোডে। সেখানেও পরিচয় আরো অনেকের সঙ্গে। আবার চোখ অপারেশন। আবার দুবছর গ্যাপ। এবার ভবঘুরে হয়ে গেলাম। পড়াশোনা আর করব না স্থির করলাম। ক্লাব, বিয়েবাড়ি, গানের আসর এসবে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। সাইকেলে চড়ে সোনাই, সোনাবাড়িঘাট, শিলচর চক্কর দেওয়া। মাঝে মাঝে লোন নিয়ে কী কী করার পরিকল্পনাও শুরু করে দিলাম।

            আব্বা তখন ফ্রি কোচিং ওয়ার্কশপ চালাতেন। সেই সময় আমাদের বাড়িতে এলাকার শিক্ষানুরাগী মানুষের আড্ডা জমত। এই আড্ডার মধ্যমণি জাফরুল হাসান আমাকে একদিন খুব জোরালো ভাষায় বোঝালেন। আমি রাজি হলাম আবার পড়াশোনা শুরু করতে। সঞ্জয়, বাহার, মাহমুদ, কবির পয়লাপুল নেহরু কলেজ থেকে ফর্ম আনল। আমাকে শুধু সই করতে হল। তারপর আবার আরেক যাত্রা। কিছুতেই পড়াশোনায় মন বসে না। বন্ধুসংখ্যা কম রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করলাম। এই সময় অধ্যাপক সুর্যকান্ত চক্রবর্তী, অ্যাকাউন্টেন্ট সুনির্মল নাথ, অধ্যাপক গণেশ দে, অধ্যাপক আবিদ রাজা মজুমদার চাইছিলেন শারদোৎসব আয়্যোজন হোক। বার বার চেষ্টা করেও হয়নি। আমরা এগিয়ে এলাম। নেহরু কলেজের ইতিহাসে এই প্রথম শারদোৎসব। আর লুকিয়ে থাকতে পারলাম না। দল বড় হয়ে গেল। বন্ধুদের অনুরোধে ভোটে লড়ে হারলাম। শুরু হয়ে গেল গান, আড্ডা, ঘোরাঘুরি। শ্যামলদার রেস্তোরাঁয় আড্ডা আর জয়পুর, হরিনগর, লাবক, জিরিঘাট, লক্ষীপুর চষে বেড়ানো। পাস করলাম দ্বিতীয় বিভাগে।

          এবার আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হলাম। অনেক চেষ্টা করলাম ধারে কাছে একটা মেস বা ভাড়াঘর খুঁজে পাওয়ার। কিন্তু নাম বলতেই বাড়ির মালিক অরাজি হয়ে যেতেন। খবর পেলাম, পয়লাপুলের শিবু কানুনগোর একটা বাড়ি আছে আইরংমারায়। কিন্তু কেয়ারটেকার নাম জিজ্ঞেস করে জানালো ঘর খালি নেই। অপু, বলাই, সব্যসাচীরা খুব চেষ্টা করেও পারল না। অবশেষে রাঙ্গিরখাড়ি আর মেহেরপুরে ভাড়া ঘরে থেকে পড়াশোনা করলাম। যে ঘরে ভাড়া পেলাম না মুসলমান বলে সেই ঘরেই কিন্তু রাত জেগে আড্ডা, গান আর ঘুম চলত আমাদের। পড়াশোনা যাকে বলে তা কিন্তু আমার দ্বারা তখনও হয়ে উঠছিল না। ফলে রেজাল্ট তেমন হল না। তপোধীর স্যারের বকুনি খেতে হয়েছিল। একবার বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় জয়শ্রী, অনির্বাণ, অনিরুদ্ধ, মণিদীপা, মনোজ, শতদল সহ এক বড় দল বিভিন্ন ক্ষেত্রে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয়ী হয়ে মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ পাই। ভারতের চারটি এলাকা ভিত্তিক প্রতিযোগিতার পূর্ব জোনের স্থল ছিল এই মেদিনীপুর। সেখানে জয়ী হয়ে দুজন জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় সুযোগ পেয়েছিল। বাকিরা ফিরে এলাম। কিন্তু সেই রেলসফর চিরদিন মনে থাকবে। আমাদের উৎপাতে যাত্রীরা পুরো একটা বগিই আমাদের ছেড়ে দিয়েছিলেন। এতটা হৈ হুল্লোড় করেছিলাম আমরা।

আর পড়াশোনা করব না ঠিক করলাম। একবার আইন পড়তে উদ্বুদ্ধ করল কবির আর মাহমুদ। তাদের সঙ্গে করিমগঞ্জ ল’ কলেজে ভর্তি হলাম। খরচ অনেক কম ছিল বলেই করিমগঞ্জ। সাহায্য করেছিলেন আব্দুল বাসিত স্যার। কিন্তু সে বছর পরীক্ষায় বসা আর হল না। কলেজে কাজ করার সময় মোরাদ আহমেদ লস্করের চাপে সমাজতত্ত্ব পড়তে ভর্তি হলাম কানপুরের ছত্রপতি সাহু জি মহারাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাস করলাম প্রথম বিভাগে। স্কুল পরিচালনা করতে গিয়ে আবার পড়তে হল ডিএলএড। কিছুদিন ধ্রুপদী সঙ্গীতও শিখেছিলাম।

আমি এখনও ছাত্র। কাজ করতে গিয়ে ছোট বড় অনেকের কাছেই শিখি বাধ্য ছাত্রের মতই। আর যত শিখি মনে হয় আমি তো আরো ছোট ছাত্র হয়ে গেছি। এ জীবনে আর জানা হল না, শেখা হল না; হবেও না। নিজেকে তথ্যের ভাণ্ডার বা জিকে বুক বানানোর চেষ্টা করি না। কিন্তু জ্ঞানের সার সত্যটা বুঝে না গেলে জীবনটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে – এই ভয় আমাকে কুরে কুরে খায়। এই বিশ্বজগত কি সত্যিই অসীম? সীমাহীন বলে কি কিছু থাকে? অনাদি অনন্ত সময়—সেও কি সম্ভব? ঈশ্বর বলে কেউ আছে যাকে আমরা কল্পনা করি আমাদের মত? তিনি কি আমাদের ডাক শোনেন, না স্টিফেন হকিং এর শরীরে বসানো যন্ত্রের মত আমদের মগজের সঙ্কেত বোঝেন? তিনি কি সত্যিই আমাদের মন্ত্রের ভাষা বোঝেন, না কোনও ভাষার দরকারই নেই তাঁর? তাঁর কি দূত পাঠানোর দরকার আছে? তাঁর কি কোনও আলাদা অস্তিত্ব আছে, না তিনিই সব? এসব প্রশ্নের উত্তর কোন বই পড়ে জানব? বাজারের সব বিক্রেতাই তো বলে, ‘আমারটাই ভালো।’

 ০৩ জুন, ২০২০

৩টি মন্তব্য:

Anjan_Mukho বলেছেন...

প্রথমটাও পড়লাম বেশ সুন্দর তো! আশাকরি আরও পাবো!
লেখার পর একমাস লাগলো পোস্ট করতে?

Sadique বলেছেন...

লেখা হয়ে গিয়েছিল। ছবি খুঁজে পাওয়া একটু মুশকিল। এদিকে আব্বার স্বাস্থ্য ক্রমে খারাপ হতে শুরু করল। ১১জুন তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তাই দেরি হল।

Sadique বলেছেন...

ধন্যবাদ Anjan_Mukho, লেখা তৈরি ছিল। কিন্তু প্রাসঙ্গিক ছবি খুঁজে বের করতে দেরি হয়ে গেল। আব্বার শরীর ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়ল, ১১ জুন তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। লেখালেখি আর হলো না। তাই এক মাস পর।