(অমিতাভ দেব চৌধুরীর
এই কবিতাটি উজান সাহিত্যগোষ্ঠী , তিনসুকিয়া আয়োজিত 'শুধু কবিতার জন্য' ২০১৫তে খ বিভাগে দ্বিতীয় পর্বে মনোনীত। তাই এখানে তুলে দিলাম। ---সুশান্ত কর )
(ব্যাস বললেনঃ)
আমার নিজের কোনো দেশ নেই৷
যে দেশ প্রতিটি ক্ষণে আমাকে সন্দেহ করে,
আমাকে বিদেশী বলে অপমান করে,
ঠেলে দেয় কুরুক্ষেত্রে,
বলে আমি প্রচ্ছন্ন পাণ্ডব,
আমার নারীর শাড়ি তুলে দেয় দুঃশাসনীয় এক
কৌরব বাজারে,
তারপর হাতে প্রশ্নপত্র তুলে ধরে বলে,
‘বলো তুমি এদেশেরই নাগরিক?
তোমার জন্মের আগে
মা-বাবার ঘাম ও বিলাস
কোন সে দেশের মাটি ছুঁয়েছিল?’
সে দেশ আমার আমার দেশ নয়৷
আমার নিজের কোনো দেশ নেই৷
একটি দেশের কাঁটাতার ছায়ার কিনারে
বেঁচে থাকবার চেয়ে
আরেকটি দেশে
শ্যাওলার মতো ভেসে যাওয়া ভালো-
ভেবেছিলাম মা-বাব আমার৷
এসব ভূগোলকথা৷
মানচিত্রে নেই৷
মানচিত্র এক জতুগৃহ
তোমাকে না পেলে
পোড়াবে তোমার হামসকল
বাবা-মাও ভেবেছিল
এদেশ তাদের সেই
পুরোনো দেশের হামসকল৷
২
নিজেদের জন্ম মনে পড়ে,
কুয়াশার মাঝখানে একটি রমণনৌকা
কোথাও স্থলের নেই নিশ্চয়তা,
চারদিকে জল,
নৌকারও দুপ্রান্তে জেগেছিল
দুটি দেশ
দ্বিখণ্ডিত, পারাপারহীন৷
আমার জন্মের মূলে স্থল নেই
আমাদের জন্মমূলে জল শুধু
আমরা এখনও তাই ভাসমান
নামহীন, পরিচয়হীন …
তুমি তাই কুরুরাজ, আমাদের পরিচয় নিতে
প্রমাণপত্র পেশ করবার অনুষ্ঠান কর?
যে আকাশ চোখে নিয়ে ফিরি
তা নয় আমার পরিচয়?
যে শ্বাসপাখিকে এই খাঁচায় ভেতরে নিয়ে ঘুরি
তা নয় আমার পরিচয়?
যে দুটি হাতে ও পায়ে
আঁকড়ে ধরে আছি এই মাটি
তা নয় আমার পরিচয়?
তুমি খোঁজ আমাদের ধর্মপরিচয়,
ভাষা আর পিতৃপরিচয়?
আমার নিজের দেশ আমার শরীরে থাকে৷
যে দেশ তোমার, তার ইতিহাসে
পাদটিকা করে
আমাকে অদৃশ্য করে দিতে চাও
মানচিত্র থেকে?
আমার নিজের কোনো দেশ নেই
যে দেশ প্রতিটি ক্ষণে আমাকে সন্দেহ করে,
আমাকে বিদেশী বলে অপমান করে,
ঠেলে দেয় কুরুক্ষেত্রে,
বলে আমি প্রচ্ছন্ন পাণ্ডব,
সে দেশ আমার দেশ নয়৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন