“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৫

একটি গ্রামীণ পদ্য

















(শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর এই কবিতাটি উজান সাহিত্যগোষ্ঠী , তিনসুকিয়া আয়োজিত 'শুধু কবিতার জন্য' ২০১৫তে খ বিভাগে দ্বিতীয় পর্বে মনোনীত। তাই এখানে তুলে দিলাম। ---সুশান্ত কর )




মাদের গ্রাম থেকে শহর ছিল পঁচিশ মাইল দূরে
আমরা স্বপ্নে ছাড়া ট্রেন ও মোটর গাড়ি দেখিনি বহুদিন
তিন বাঁক উজানের একজন হোমিওপ্যাথ
সাত ইঞ্চি  শিশিতে করে শাদা জলের ওষুধ দিতেন আমাদের
আমাদের কোনো ডাকঘর বা ইস্কুল ছিল না
ইতিহাসের পাতায় যাকে সভ্যতা বলে
তা অনেকদিন আমাদের জানা হয় নি

তবু এবং আশ্চর্য
মায়ের উপুড় করা স্নেহের মতো আমাদের মাথার উপর আজন্ম আকাশ ছিল
দিগন্ত-ছোঁয়া মাঠের মধ্যে সবুজ ও সোনালি ছিল আমাদের প্রিয় রঙ
আমরা কাকের ডাক শুনতে শুনতে টিয়া পাখির নাম মুখস্থ করতাম
এতসব অসুবিধার মধ্যেও আমাদের ত্রিসীমানায়
একটি নদী ছিল
এবং আপনারা বিশ্বাস না-করলে সত্যিই দুঃখ হবে
নদীটির নাম ছিল , বিবিয়ানা

আকাশ এবং নদীকে সাক্ষী রেখে রিফিউজি লতার মতো একটি মেয়ে
অনাদরে বেড়ে উঠছিল আমাদের প্রতিবেশী বাড়িতে
আমরা ‘সুন্দর’ শব্দটিকে অভিজ্ঞতার মধ্যে টেনে আনছিলাম প্রতিদিন
আমাদের ঘ্রাণশক্তি সাবালক হওয়ার মুহূর্তে টের পেয়েছিলাম
মেয়েটির  শরীরে ছিল কচি ডুমুর পাতার গন্ধ

আমাদের নদীর নামটি যেমন উল্টোপাল্টা
সে জন্যেই বোধ হয় মেয়েটিকে কেউ ‘রঞ্জনা’ বলে ডাকত না
এবং উপসংহারে আমার একটিই বলার মতো কথা বাকি আছে
আমাদের গ্রামের নামটি ছিল খুবই অকাব্যিক, অনর্থক ও বিচ্ছিরি
এমনকি লিখতে লজ্জা করে।

কোন মন্তব্য নেই: