“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৫

শব্দ

॥ নীলদীপ চক্রবর্তী ॥ 



















ব্দ নভোতে শব্দ বাতাসে ভাসে
শব্দহীনতাও তীব্র শব্দে বাজে
দুর্বোধ্য শব্দেরা বিদ্রোহ জানায় কবিতায়
ক্ষত বিক্ষত কবিতা শব্দের ওড়নাতে সাজে ।
শব্দ লুকোয় প্রেমে অভিমানে ক্রোধে
শব্দেরা হতাশাতে ডুবে যায়
থিকথিকে শব্দেরা কামনায় ভেসে ওঠে
পাশবিকতায় শব্দ নিজেকে হারায় ।
শব্দ বেঁচে থাকে ভূমিহারাদের মাঝে
নিঃশব্দতার গানেও পৃথিবী শব্দময়
অস্তিত্ব খোঁজে শব্দেরা এই শহুরে বেড়াজালে
তবু প্রতিনিয়ত কিছু শব্দের মৃত্যু হয় ।

বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৫

ব্রাত্য

॥ নীলদীপ চক্রবর্তী ॥













 





মরা সাহিত্য সৃষ্টির পর
অপেক্ষা অন্য বাংলার মুখ চেয়ে
তাঁদের স্বীকৃতিতে প্রস্ফুটিত হয়
আমাদের কাব্য গল্পের সলজ্জ প্রতিভা ।

তাঁরা সাহিত্য বাসরে এলে
আমাদের সজাতীয় গর্ব ফেঁপে ওঠে
পরিচ্ছন্নতা বলতে তাঁরা খুঁটিয়ে দেখেন
মোহন-বাড়ি বড়ঝার আর
কুম্ভীরগ্রামের ঝাঁ চকচকে পথটি
সুনীল শীর্ষেন্দু জয় গোস্বামী বলে আমি থামি,
হাততালি কুড়ই !
আবার বিপন্ন বিস্ময়ে দেখি
সঞ্জয় দেবলীনা বা চিরশ্রীর
নামোল্লেখে অজ্ঞ সহবাসীদের
কুঁচকানো চোখ নাক !

ঈশানের স্বজাতি নিয়ে
আমি শঙ্কিত পথ হাঁটি
ব্রহ্মপুত্র গদাধর ডিহিঙ আর বরাকের
অন্ধকার তীর ধরে ।

প্রতি পক্ষকালে খড়কুটোর মতো
ভেসে যেতে থাকে, নূতন সেতুর নিচে
আমাদের সাহিত্য বৈঠক !


মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫

বাজুবন্ধ

চিরশ্রী দেবনাথ 

(C)Image:ছবি


























................

বাজুবন্ধ আজকাল আর
পরে না কেউ,
আমি বলি,
এখনো যেন সে কামড়ে আছে
সব যোদ্ধা ছেলের হাত ,
বাজুবন্ধ...... নীল যুদ্ধজমি,
খেয়ালি মেয়ের সব দাবি,
ত্বক বিছিয়ে রাখা মিছিলের কারুপথ,
বিপ্লবের সাজ, দুধসাদা গ্রীবায়
রঙিন পাথর, পাথরের রঙে
প্রতি মুহূর্তে ভালোবাসার ওঠানামা,
বাজুবন্ধ ছুঁয়ে হিংসার তরবারি,
সাদা জ্যোৎস্নায় বিধবা শষ্যভূমি,
রাত হলে,
বেঁচে থাকা যোদ্ধা ছেলের,
বাজুবন্ধ থেকে বেরিয়ে আসে
আনত চোখের মেয়ে,
সব ঘাম তার শীত হয়, হতেই থাকে,
লাল বধ্যভূমিতে সে হাঁটতে থাকেহাঁটতেই থাকে,
কত বাজুবন্ধ নিশি মেখে
মরে পড়ে  আছে কবে থেকে,
কত খেয়ালি মেয়ে ঠোঁটে করে
নিয়ে যায় অসমাপ্ত চুমু,
সব যুদ্ধক্ষেত্রে তারা একদিন জলপাখি হবে.......
বাজুবন্ধের খেয়ালী মেয়ে,
তুমিও ঠোঁটে নিও ধানের শীষ,
ভিজে যেতে হবে তোমাকেও ভাঙা জ্যোৎস্নায়. ....

বেত্রাঘাত



(মূল অসমিয়া কবিতাটি লিখেছেন  অজয় লাল দত্ত  ।   এই সময়ে কথাপ্রধান এই কবিতাটির গুরুত্ব অনুধাবন করে অনুবাদ করে ফেললাম। ---সুশান্ত কর)
(C)Image:ছবি




















খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে উদাত্ত কণ্ঠে
যখন মানুষকে ঘৃণা করবার জন্যে ভাষণ দিতে পারে
তখন আর বেত্রাঘাতের প্রয়োজন নেই!

বেত্রাঘাতের দরকার সেই ওদের পিঠে
যারা খিদের কথা বলে,
পেটের দায়ের কথা বলে,
জীবনের জ্বালার কথা বলে,
যে জ্বলন্ত মানুষগুলোকে হাতে হাত ধরে এক হতে বলে!
কারণ ভয় এদের থেকেই, যার পেটে আগুন আছে
হাতে এসে পৌঁছুতে আর কতই বা দূর?
হয়ে উঠতে পারে ভয়ঙ্কর...

যার অভাবের কোনো ইতিহাস নেই
যে বর্ণের গালিচাতে কাটিয়েছে শৈশব
যে বাতানুকূল ঘরে ‘ ঘামে স্নাত শরীরে’র কবিতা লিখে জুটিয়েছে বৈভব
লেহন অথবা ভক্তি, ক্ষয় সমস্ত শক্তি
নজির হিসেবে নিন, দুই এক উক্তি!

আসলে বেত্রাঘাত সেই ওদের জন্যেই
যারা হয়তো ভুল করেছে
হয়তো পরের ভুল ধরেছে
হুঁশিয়ার করতে করেছে দুঃসাহস
ভয় এই এদের থেকেই...
যার পেটে ইঁদুর আছে
শাসনের দড়ি কেটে যদি ফেলে পাছে?

বিভেদকামীকে শক্তি যোগানো
প্রেমের বদলে ঘৃণা বিলোনো,
এরাতো কুটুম্ব, খেলোয়াড়ের, পাশা খেলার
আছে পুরস্কার-টুরস্কার, মুক্তোর মালা,
তাঁরাইতো মুখ্য অতিথি, খেলা শেষের ভোজসভার......


000~~~~~~~~~~~~~~~000

মুল অসমিয়া কবিতাও এখানে রইল।

000~~~~~~~~~~~~~~000

বেত্ৰাঘাত
--------
মুকলি মঞ্চত থিয় হৈ উদাত্ত কণ্ঠৰে
যেতিয়া মানুহক ঘৃণা কৰাৰ ভাষণ দিব পাৰে
তেতিয়া আৰু বেত্ৰাঘাতৰ প্ৰয়োজন নাই!
বেত্ৰাঘাতৰ প্ৰয়োজন সেই সকলৰ পিঠিত
যিয়ে ভোকৰ কথা কয়,
পেটৰ দায়ৰ কথা কয়,
জীৱনৰ জ্বালাৰ কথা কয়,
যিয়ে জ্বলি থকা মানুহবোৰক এক হোৱাৰ কথা কয়!
কাৰণ ভয় এই সকলৰ পৰা, যাৰ পেটত অগনি আছে
হাত পাবলৈনো কেত পৰ?
হৈ পৰিব পাৰে ভয়ংকৰ...
যাৰ অভাৱৰ ইতিহাস নাই
যিয়ে বৰ্ণৰ দলিচাত কটাইছে শৈশৱ
যিয়ে বাতানুকুল ৰূমত 'ঘামে ধোৱা গা'ৰ কবিতা লিখি গোটাইছে বৈভৱ
লেহন অথবা ভক্তি, ক্ষয় সকলো শক্তি
উদাহৰণ হিচাবে লওক, দুই এটা উক্তি!
আচলতে বেত্ৰাঘাত সেই সকলৰ বাবেহে
যি সকলে হয়তো ভুল কৰিছে
হয়তো আনৰ ভুল ধৰিছে
সঁকিয়াই দিবলৈ দুঃসাহস কৰিছে
ভয় এইসকলৰ পৰা...
যাৰ পেটত নিগনি আছে
শাসনৰ জৰী কুটি দিয়ে যদি পাছে?
বিভেদকামীক শক্তি যোগোৱা
প্ৰেমৰ সলনি ঘৃণা বিলোৱা,
এইসকলটো কুটুম, খেলুৱৈৰ, পাশা খেলৰ
আছে বঁটা-বাহন, মুকুতাৰ ধাৰ,
তেওঁলোকেইতো মুখ্য অতিথি, খেলৰ শেষৰ ভোজমেলৰ.....