।। হুমায়ুন আজাদ।।
( হুমায়ুন আজাদের এই কবিতাটি পড়ে ভালো লাগল বলে মনে হলো, এই ভালো লাগাকে কেন 'মায়ের ডানার নিচে মুরগীর বাচ্চা'র মতো আলগে না রাখি। তাই ব্লগে তুলে দেয়া। আপনাদেরও ভালো লাগুক এই আশায়...প্রীতিভাজন ব্যক্তি। )
আমাদের মাকে আমরা বলতাম তুমি, বাবাকে আপনি।
আমাদের মা গরীব প্রজাদের মত দাঁড়াতো বাবার সামনে,
কথা বলতে গিয়ে কখনই কথা শেষ করে উঠতে পারতোনা।
আমাদের মাকে বাবার সামনে এমন তুচ্ছ দেখাতো যে-
মাকে আপনি বলার কথা আমাদের কোনদিন মনেই হয়নি।
আমাদের মা আমাদের চেয়ে বড় ছিলো, কিন্তু ছিলো আমাদের সমান।
আমাদের মা ছিলো আমাদের শ্রেনীর, আমাদের বর্ণের, আমাদের গোত্রের।
বাবা ছিলেন অনেকটা আল্লাহ'র মত, ত
তার জ্যোতি দেখলে আমরা সেজদা দিতাম।
বাবা ছিলেন অনেকটা সিংহের মত, তাঁর গর্জনে আমরা কাঁপতে থাকতাম।
বাবা ছিলেন অনেকটা আড়িয়াল বিলের প্রচন্ড চিলের মত, তার ছায়া দেখলেই
মুরগীর বাচ্চার মত আমরা মায়ের ডানার নিচে লুকিয়ে পড়তাম।
ছায়া সরে গেলেই আবার বের হয়ে আকাশ দেখতাম।
আমাদের মা ছিলো অশ্রুবিন্দু-দিনরাত টলমল করতো,
আমাদের মা ছিলো বনফুলের পাপড়ি-সারাদিন ঝরে ঝরে পড়তো,
আমাদের মা ছিলো ধানক্ষেত-সোনা হয়ে দিকে দিকে বিছিয়ে থাকতো।
আমাদের মা ছিলো দুধভাত-তিনবেলা আমাদের পাতে ঘন হয়ে থাকতো।
আমাদের মা ছিলো ছোট্ট পুকুর-আমরা তাতে দিনরাত সাঁতার কাটতাম।
আমাদের মার কোন ব্যাক্তিগত জীবন ছিলো কিনা আমরা জানিনা।
আমাদের মাকে কখনো বাবার বাহুতে দেখিনি।
জানিনা মাকে জড়িয়ে ধরে বাবা কখনো চুমু খেয়েছেন কিনা
চুমু খেলে মার ঠোট ওরকম শুকনো থাকতোনা।
আমরা ছোট ছিলাম, কিন্তু বছর বছর আমরা বড় হতে থাকি,
আমাদের মা বড় ছিলো, কিন্তু বছর বছর মা ছোট হতে থাকে।
ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ার সময়ও আমি ভয় পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরতাম।
সপ্তম শ্রেনীতে ওঠার পর ভয় পেয়ে মা একদিন আমায় জড়িয়ে ধরে।
আমাদের মা দিন দিন ছোট হতে থাকে, আমাদের মা দিন দিন ভয় পেতে থাকে।
আমাদের মা আর বনফুলের পাপড়ি নয়, সারাদিন ঝরে ঝরে পড়েনা।
আমাদের মা আর ধানক্ষেত নয়, সোনা হয়ে বিছিয়ে থাকেনা।
আমাদের মা আর দুধভাত নয়, আমরা আর দুধভাত পছন্দ করিনা।
আমাদের মা আর ছোট্ট পুকুর নয়, পুকুরে সাঁতার কাটতে আমরা কবেই ভুলে গেছি।
কিন্তু আমাদের মা আজো অশ্রুবিন্দু, গ্রাম থেকে নগর পর্যন্ত
আমাদের মা আজো টলমল করে।
(c)Picture: ছবিঃ সামহোয়ার ইন ব্লগ
মাকে আপনি বলার কথা আমাদের কোনদিন মনেই হয়নি।
আমাদের মা আমাদের চেয়ে বড় ছিলো, কিন্তু ছিলো আমাদের সমান।
আমাদের মা ছিলো আমাদের শ্রেনীর, আমাদের বর্ণের, আমাদের গোত্রের।
বাবা ছিলেন অনেকটা আল্লাহ'র মত, ত
তার জ্যোতি দেখলে আমরা সেজদা দিতাম।
বাবা ছিলেন অনেকটা সিংহের মত, তাঁর গর্জনে আমরা কাঁপতে থাকতাম।
বাবা ছিলেন অনেকটা আড়িয়াল বিলের প্রচন্ড চিলের মত, তার ছায়া দেখলেই
মুরগীর বাচ্চার মত আমরা মায়ের ডানার নিচে লুকিয়ে পড়তাম।
ছায়া সরে গেলেই আবার বের হয়ে আকাশ দেখতাম।
আমাদের মা ছিলো অশ্রুবিন্দু-দিনরাত টলমল করতো,
আমাদের মা ছিলো বনফুলের পাপড়ি-সারাদিন ঝরে ঝরে পড়তো,
আমাদের মা ছিলো ধানক্ষেত-সোনা হয়ে দিকে দিকে বিছিয়ে থাকতো।
আমাদের মা ছিলো দুধভাত-তিনবেলা আমাদের পাতে ঘন হয়ে থাকতো।
আমাদের মা ছিলো ছোট্ট পুকুর-আমরা তাতে দিনরাত সাঁতার কাটতাম।
আমাদের মার কোন ব্যাক্তিগত জীবন ছিলো কিনা আমরা জানিনা।
আমাদের মাকে কখনো বাবার বাহুতে দেখিনি।
জানিনা মাকে জড়িয়ে ধরে বাবা কখনো চুমু খেয়েছেন কিনা
চুমু খেলে মার ঠোট ওরকম শুকনো থাকতোনা।
আমরা ছোট ছিলাম, কিন্তু বছর বছর আমরা বড় হতে থাকি,
আমাদের মা বড় ছিলো, কিন্তু বছর বছর মা ছোট হতে থাকে।
ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ার সময়ও আমি ভয় পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরতাম।
সপ্তম শ্রেনীতে ওঠার পর ভয় পেয়ে মা একদিন আমায় জড়িয়ে ধরে।
আমাদের মা দিন দিন ছোট হতে থাকে, আমাদের মা দিন দিন ভয় পেতে থাকে।
আমাদের মা আর বনফুলের পাপড়ি নয়, সারাদিন ঝরে ঝরে পড়েনা।
আমাদের মা আর ধানক্ষেত নয়, সোনা হয়ে বিছিয়ে থাকেনা।
আমাদের মা আর দুধভাত নয়, আমরা আর দুধভাত পছন্দ করিনা।
আমাদের মা আর ছোট্ট পুকুর নয়, পুকুরে সাঁতার কাটতে আমরা কবেই ভুলে গেছি।
কিন্তু আমাদের মা আজো অশ্রুবিন্দু, গ্রাম থেকে নগর পর্যন্ত
আমাদের মা আজো টলমল করে।
(c)Picture: ছবিঃ সামহোয়ার ইন ব্লগ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন