“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১২

ক্রমোজোম, প্রেম, আমার জিন্স এবং তুমি/ এক


কটা উল্কাপাত। একটা দুঃস্বপ্ন, পাতা ঝড়ার বেলায় সুখ বিলাসী আমার ভালোবাসা। ক'দিন ধরে আমার ব্রেন সেল গুলিতে জমাট বাঁধতে শুরু করেছে অসংখ্য শব্দ। তবে আমি শুধু একটি শব্দকেই চিনতে পারি, 'ছুটি'।
এক নিরুদ্দেশের ভাষা। যে শব্দের আকৃতিতে রয়েছে শুধু অন্ধকারের হাতছানি।

যুদ্ধক্ষেত্রের তাঁবু গড়ে উঠেছিল যে কাপড়ে, সেই কাপড়ে লজ্জা ঢেকেছিল আমেরিকান সৈন্যরা। এই কাপড়ে লজ্জা ঢেকে বব ডিলান বিপ্লব এনেছিল পৃথিবীতে। সঙ্গীতের মূর্ছনায় ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল প্রাচীন জীর্ণ পৃথিবীর। মানুষ ভাবতে শুরু করেছিল এবার একটা পরিবর্তন চাই। সঙ্গীত, কাপড়, যুদ্ধ আর ডিলানের পৃথিবী পাল্টে দিয়েছিল পৃথিবীর যাবতীয় মিথ।

 এক সময় ডারউইন সাহেবের মাথায় একই ভাবে খেলা করে গিয়েছিল কিছু ব্ল্যাক হোল। আর সেই অজস্র ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষ আর টানাপড়েন থেকেই ঘটতে থাকে শরীরের ভেতর একের পর এক বিপ্লব। নিজের চেনা শরীরের এই অদ্ভুত ভাষা জানার কোন ল্যাব নেই। সেই থেকেই দিনের পর দিন চলতে থাকে একের পর এক বিস্ফোরণ। খুব পরিচিত এই শরীর জুড়ে শুরু হয়েছিল তোলপাড়। বুঝতে পারছিলেন একটা জেনেটিক চেঞ্জ হচ্ছে কোথাও। নিজের শরীর ভাষা পাল্টে যাচ্ছে। মন সেই ভাষা বুঝতে পারছে। সেই ভাষা ভালোবাসার অথবা মৃত্যুর। শূন্যতার অথবা সুখের। একের পর এক আঘাতে শুধু বৈধব্য আর ক্ষুধা।

 আসলে আমাদের শরীরের জিন গুলির আকার, চলন, বলন আর পরিবর্তনের এই ভাষা শেখার পর থেকেই একটা অদ্ভূত বিহেভ করতে শুরু করেছিল প্রকৃতিও। মানুষের চেনা শরীরের এই হঠাৎ অবাধ্য হয়ে যাওয়ার খেলা, কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিলনা প্রকৃতি। মানুষের স্লোগান প্রতিনিয়ত আঘাত করছিল প্রকৃতিকে। গাছ, মাটি নির্বাক, কথা বলার অধিকার নেই। আওয়াজ না তুললে বিপ্লব সম্ভব নয়। প্রতিবাদ দরকার। প্রতিবাদের ভাষা বলার কণ্ঠস্বর তো নেই প্রকৃতির। নিঃশব্দে শুরু হল প্রকৃতির রক্তক্ষরণ। মানুষের সাথে নিজেকে পাল্টে নেয়ার অদম্য জেদ জন্ম দিল এক নতুন ভাবনার, শুরু হল নতুন করে গড়ার কাজ।

 সময় আর শতাব্দীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, মানুষের জেনেটিক বিহেভের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাল্টাতে শুরু করলো প্রকৃতি নিজেকেই। সেই থেকে জানা যায় প্রকৃতিরও একটা জেনেটিক বিহেভ আছে। প্রকৃতিরও একটা শরীর আছে। সেই শরীর বিপ্লব জানে, বিদ্রোহ জানে, ভালবাসতে জানে, জানে সঙ্গীতের নোটেশান। জানে নিজের ক্রমোজম গুলির বিভাজন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে তোলার এই প্রয়াস এবার দরকার বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রয়োজনে। সময়ের সাথে পাল্ল দিয়ে প্রকৃতির জিনগুলিও তাদের রুপ পাল্টায়, ব্যাবহার আর ভাষা বদলায়।

ভাষারও আছে ক্রমোজম জনিত বিন্যাস। ভাষা, মন, প্রেম, ঈশ্বর, প্রকৃতি আর শরীর মিলে তৈরি হয় একটা বন্ডেজ এই পৃথিবীতে। সে কারণেই মানুষ আর প্রকৃতির এই যূথবদ্ধ হয়ে থাকার অভ্যেস। এই অভ্যেস থেকেই মানুষ ভালোবাসে। পুরুষ চিনতে শেখে নারীকে। নারী পুরুষকে সহ্য করার অভ্যাস রপ্ত করে। আবার ছুটি চায় একসময়। এই ছুটি নতুন করে বাঁচার তাগিদ দেয়, স্নান করিয়ে দেয় মনের, শরীরের।

মানব শরীর, মানব প্রেম, মানব হৃদয় আর প্রকৃতির জিন গুলি সব একাকার হয়ে সৃষ্টি করে সভ্যতার।

 মানুষের মনের এই জেনেটিক পরিবর্তনকে সুরক্ষিত রাখতেই প্রয়োজন পোশাকি পরিবর্তন বা পোশাকের। ডারউইন সাহেবের জিন আবিস্কার আর লিওব স্ট্রসের জিন্স সেই তাগিদ থেকেই উদ্ভাবন হয়েছিল। কেউ পরিবর্তন চায় মনের, কেউ চায় পোশাকের পরিবর্তন। কেউ সমাজের, কেউ পরিবারের। ফ্যামিলি প্ল্যানিং, যৌথ পরিবারের ভেঙ্গে পড়া, প্রতিদিন যুদ্ধ বিদ্ধস্থ এই পৃথিবী কিন্তু পাল্টাচ্ছে, সয়ে নিচ্ছে সব। মরছে প্রেম। নিহত হচ্ছে শরীর আর ঋতু।

কেউ চায় জীবনের পরিবর্তন, কেউ চায় প্রসাধনের। এক্সপেরিমেন্টাল এই চাহিদা গুলি কিন্তু সবই ভালো থাকার জন্য। এই সভ্যতা রপ্ত করা শিখে গেছে মানুষের এই চাহিদাগুলি।

 আকাশের রঙে যেমন ঘন নীলের রহস্য, তেমনি আমার জীবনেও সেই একই রঙের রহস্য। এই রঙ দেখেই চিনে নাও আমার মন। আমার জিন্সেও সেই একই রঙের ছড়াছড়ি। আকশের হাতছানি। আমার বিপ্লব, আমার সভ্যতা, আমার ভালোবাসা আমার জিন্সের রঙে, আমার আকাশের রঙে, আমার স্বপ্নের রঙে। আমার একমাত্র পরিচিত শব্দ ছুটি। ছুটি চাই এই আকাশে, তোমার আকশে। আমার মৃত্যু, আমার বেঁচে থাকা এই স্বপ্ন সম্ভব আকাশকে ঘিরেই।

একটা উল্কাপাত মানেই একটা রহস্যের ঝরে পড়া। তোমার উল্কাপাত, আমার প্রার্থনা। তোমার মনের হদিস যেমন এই মুহূর্তে এসে আশ্রয় নিল আকাশ থেকে মাটিতে পড়ার আগেই কোন মনে। একটা আদিম বন্য আকাশের নড়াচড়া শুরু হয় ঠিক তখন থেকেই। আমার তখন ইচ্ছে করে অবাধ্য হতে।

কোন কোন সময় ছাইদানিতে সিগারেটের কাউন্টার পার্ট না ফেলে ঘরের মেঝেত বা কার্পেটে ফেলার সুখ আলাদা। স্বাধীনতাকে আর তোমাকে ছুঁয়ে ফেলার মতো। কোন কোন সময় অবাধ্য হওয়া মানেই ছুটি, আমার সুখ, তোমার বিশ্বাস আর উদ্দাম প্রেম। এরপর আকাশের রঙ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়া...। (চলবে)  
     

কোন মন্তব্য নেই: