তোমার ঠোঁটে কুয়াশাদের আশ্রয়, কপালে লেপ্টে থাকা চাঁদ, কপালে লেপ্টে থাকা এলো চুল আমার স্বপ্ন সম্ভব পৃথিবীর উপমা।
সামনে একটা কলম, তুমি আর কুয়াশার শামিয়ানায় ঢেকে থাকা চাঁদ, সেও তোমারই কথা বলে।
অষ্টাদশ শতাব্দীতে ক্রীতদাস তুলো চাষির দল তাদের ভালোবাসার নারীকে উপহার দিতে একটা বিপ্লবের জন্ম দিয়েছিল। সেটাই ছিল বোধহয় পৃথিবীর প্রথম বিপ্লব কোন পুরুষের, তার ভালোবাসার নারীর জন্য।
বিপ্লব জয়ী পুরুষ ক্রীতদাসের দল সেদিন মেতে উঠেছিল উৎসবের রাতে। আকাশ জুড়ে উড়িয়ে দিয়েছিল কোটি কোটি তুলোর নরম কোষ। নরম তুলোর দল হারিয়েছিল আশ্রয়। যেমন অবৈধ সুখী জন্মের পর অবাঞ্ছিত কোন শিশু আশ্রয় পায় ডাস্টবিনে। সভ্য আলোর মুক্তি নেই অচেনা এই নিয়মসর্বস্ব পৃথিবীতেও।
সেদিন প্রেম আর যুদ্ধ জয় শেষে পুরুষ তছনছ করে দিয়েছিল বিস্তীর্ণ তুলোর মাঠ।
প্রকৃতির সহ্য হয়নি পুরুষের এই জয়োল্লাস। তাদের ভালোবাসার নারীরা সেদিন প্রত্যাখান করেছিল তাদের যোদ্ধা পুরুষকে। নারীর হৃদয় চাই, পুরুষের শরীর আর চাই জয়, চাই অধিকার।
উপহার চাইল নারী শীতের রাতে আশ্রয়, চাইলো উষ্ণতার জন্য একটি পুরুষের পশমহীন কালো বুক। একটা খোলা পিঠ। উদ্দেশ্য একটাই অসংখ্য নির্মম প্রেমের অত্যাচার দেখে পরখ করে নেবে তার ভালবাসা আর বিশ্বাসকে।
যোদ্ধা পুরুষ ভালবেসে বড় অসহায়।
রিক্ত নিঃস্ব হাতে থাকেনা কোন উপহার।
সেই থেকে শুরু নতুন ভাবনার পুরুষের। অন্য চিন্তা। মিলন পিয়াসী পুরুষ জড়ো করতে শুরু করে পৃথিবীর সব জঞ্জাল। রিক্ত পুরুষের আর কিছুই নেই দেয়ার, তাই জঞ্জালের উপহার নিয়ে আবার নতুন করে বেঁচে থাকার গান ধরে ক্রীতদাসের দল। প্রেমিক পুরুষ প্রত্যাখান হলেই তার মধ্যে শুরু হয় একটা জেনেটিক পরিবর্তন। অসম্ভব শক্ত হয়ে ওঠে মাংশপেশী। পাল্টে যায় ঘামের গন্ধ, চামড়ার রঙ। চুলের রঙে গ্রীষ্ম দুপুরের আগুনে আভা দেখা দেয়।
পরিচিত নীল আকাশে সিঁদুরে মেঘের দাপাদাপি।
অশান্ত পুরুষকে শান্ত করতে সেদিন তাদের প্রিয় নারীরা দিয়েছিল সিঁদুর রঙা শিমূল ফুল।
অশান্ত পুরুষ হৃদয় দিয়ে, সেদিন জঞ্জাল আর শিমূল ফুলের তুলো দিয়ে সৃষ্টি করলো নারীর জন্য প্রথম উপহার। সবুজ শীতচাদর।
অসংখ্য পুরুষ ক্রীতদাস আর তাদের প্রেয়সীরা সেদিন আশ্রয় পেল শিমূল তুলোর সুখে আর উষ্ণতায়।
পুরুষ পেল নতুন আশ্রয়। জেনেটিকেল একটা পরিবর্তন এলো পুরুষ আর নারীর সম্পর্কের। পৃথিবীর সব আগ্নেয়গিরির সুখ শুধু গলছে। হাওয়াই দ্বীপের, মওনা লোয়া নিঃসৃত লাভা গড়িয়ে পড়ছে প্রকৃতির সবুজে। আশ্রয় চাইছে এক নিভৃত ফুল ভাঙ্গা জলের।
মানুষ উষ্ণতায় ভাষা খোঁজে, শীতার্ত হলেও ভাষা খোঁজে। অনুচ্চারিত শব্দ গুলির সুখ খোঁজে শিমূল ফুলের কুসুমে।
এক আকাশ সুখ চাই। এক আকাশ কথা চাই। কিছু নিঃশব্দ উচ্চারনের আজ প্রয়োজন ঝড়ে পড়ার সুখ, তোমার আকাশ থেকে।
স্তব্ধ হয়ে যাওয়া সমুদ্র আড়াল চায় পৃথিবীর কাছে। পৃথিবী আশ্রয় চায় মাটির কাছে। যুদ্ধজয়ী ক্রীতদাস পুরুষ স্পর্শ চায় তার প্রিয় নারীর। শূন্য স্তব্ধ দুই হাত দারুণ অবাধ্যতায় ঢেকে রাখে প্রকৃতির সব লজ্জা।
ক্রীতদাস প্রেমিক পুরুষ জানলো উপহার দিতে। তাদের নারী জানলো তাদের প্রিয় পুরুষকে অভ্যাস করার প্রথম কৌশল।
তোমার আকাশে ভেসে যাওয়া মেঘের দল আমার নিঃসারিত নিকোটিনের অবশিষ্ট। তোমার আকাশের অসংখ্য তারায় আমার উচ্চারিত শব্দের ভিড় করে থাকা। তোমার আকাশে লেপ্টে থাকা আলোকরশ্মি তে আমার উষ্ণতা। তোমার ঘিরে থাকা উত্তুরে হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়, সারাদিনের কাজের শেষে ঝড়ে পড়া ঘামের গন্ধ। তোমায় ঘিরে থাকা রাতে, আমার ক্রীতদাস শরীরের কালো চামড়ায় জমাট বাধা অন্ধকার।
এবার একেকটি জমাটবাধা কালশিটে চাবুকের দাগে খুঁজে নাও তোমার প্রত্যাখ্যানের গল্প, তোমার শেষ হয়ে যাওয়া সুখের শেষ প্রহর। কষ্ট, যন্ত্রণা আর নষ্ট আদর।
এই নিয়েই থাকি। চোখের তারায় তুমিই এসে দাড়াও বারবার।
আমার জিন্স, আমার স্বপ্ন, আমার আকাশ, তুমি, আর আমার শব্দ। আমার বেঁচে থাকা, আমার ক্রমোজোম আর এই জেনেটিক পরিবর্তনের জন্য তুমিই দায়ী। নিন্দিত এক সন্ধ্যায় শুধু খুঁজে চলা উপুড় করা সুরাপাত্রের শেষ বিন্দু। আমার নেশা ধরেনা।
আমার শব্দেরা থেমে যায়। শুধু নীরবতাই আমার শাস্তি। তোমার অসুখ। আমার বেঁচে থাকার জন্য তোমার বরাদ্দ উপহার।
পৃথিবী আজ পাল্টেছে। আজ ক্রীতদাসেরা উপহার দেয় তাদের প্রিয় নারীকে, লাল শিমূল ফুল। বিদ্রোহ হয়না আর আকাশ জুড়ে। তাই আরেকটা পরিবর্তন হয়না শিমূল ফুলের জমিতে। আরেকটা পরিবর্তন হয়না এই স্বপ্নের উপত্যকায়।
শুধু তুমি চাওনা বলে।
শুধু তুমি নেই বলে।
শুধু আমি জানি তাই... তুমি আছো বলেই......... (চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন