“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

কোলকাতা বইমেলা ও আমরা

।। অশোকানন্দ রায়বর্ধন ।।

 গামী এগারো ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে আগরতলা পুস্তকমেলা ৷ আকারে বড়ো না হলেও আন্তরিকতায় বিশাল এই মেলা৷ এখানকার বইয়ের স্টলে বড়ো হাউস আর ছোটো প্রকাশনের বিভাজন তেমন প্রকট নয় ৷ পাঠক অনায়াসে সব স্টলে সমানভাবে যেতে পারেন ৷ কোলকাতায় দেখলাম বড়ো প্রকাশকদের জৌলুসী স্টলের পাশে নিতান্ত ম্রিয়মান ছোটো প্রকাশকরা ৷ বিভিন্ন মনীষীদের নামাঙ্কিত ঢাউশ শিবির করে তার ভেতরে কইতরের টঙের মতো খুপরি সেলে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে ছোটো প্রকাশকদের৷ আগরতলার মেলায় 'S' ক্যাটাগরির যে স্টলগুলো তার প্রায় অর্ধেক হবে এগুলোর সাইজ ৷ প্যাভেলিয়নের ভেতরে তেমন সমাগম হয় না মেলায় আগত মানুষের ৷ লিটিল ম্যাগাজিনের প্যাভেলিয়নের তো আরো দৈন্যদশা ৷ শ্রাদ্ধের নেমন্তন্নের পাতপিঁড়ির মতো সারি সারি টেবিল আর দুখানা করে চেয়ার বরাদ্দ প্রতিটি লিটিল ম্যাগাজিনের জন্যে ৷ তাও আবার গায়ে গায়ে এমন জড়িয়ে যে বসতে গেলে ওঠা দুঃসাধ্য, উঠতে গেলে বসা দুস্কর ৷ দুই সারির মাঝখানে হাঁটাচলা রীতিমতো শরীরচর্চার ব্যাপার ৷ আসলে ছোটো প্রকাশকরা মাৎস্যন্যায়ের শিকার ৷ পরোক্ষে বড়ো প্রকাশকরা গিলে খাচ্ছে ছোটো প্রকাশকদের ৷ বইমেলা অথচ তেলেভাজা থেকে টিভি সিরিয়ালের উপর ক্যুইজ চলছে ৷ বিশেষ একটা খবরের কাগজ তো রীতিমতো নহবৎ বাজিয়ে সবাইকে জাগিয়ে তুলছেন অহরহ ৷ অথচ ছোট্ট আগরতলায় প্রবেশপথ থেকে শুরু করে মেলার সর্বত্র একটা মার্জিত শান্ত সমাহিত পরিবেশ লক্ষ করা যায় ৷ শুরুই তো হয় মেলার অস্থায়ী সীমানাপ্রাচীরের গায়ে রাজ্যের কবি ও শিল্পীদের কবিতার উদ্ধৃতি ও চিত্রাঙ্কন দিয়ে ৷ মঞ্চ ও স্টলের সজ্জায় থাকে রাজ্যের শিল্পকলার বৈশিষ্ট্য ৷ আমরা গর্ব করি আগরতলার পুস্তকমেলার ৷ তবুও মনে হয় সাহিত্যচর্চার প্রসূতিসদন লিটিল ম্যাগাজিনকে আরো একটু গুরুত্ব দেওয়া দরকার ৷ একটু প্রশস্ত মন্ডপে প্রতিটি ম্যাগাজিনের জন্যে আলাদা আলাদা বসার জায়গা করে দিলে সাহিত্যের অঙ্গনে স্বকীয়তা নিয়ে বসাও যায় ৷ আড্ডাও হয় জমাটি ৷ মেলা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি ভেবে দেখার আবেদন করছি ৷

কোন মন্তব্য নেই: