।। অশোকানন্দ রায়বর্ধন ।।
আগামী এগারো ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে আগরতলা পুস্তকমেলা ৷ আকারে বড়ো না হলেও আন্তরিকতায় বিশাল এই মেলা৷ এখানকার বইয়ের স্টলে বড়ো হাউস আর ছোটো প্রকাশনের বিভাজন তেমন প্রকট নয় ৷ পাঠক অনায়াসে সব স্টলে সমানভাবে যেতে পারেন ৷ কোলকাতায় দেখলাম বড়ো প্রকাশকদের জৌলুসী স্টলের পাশে নিতান্ত ম্রিয়মান ছোটো প্রকাশকরা ৷ বিভিন্ন মনীষীদের নামাঙ্কিত ঢাউশ শিবির করে তার ভেতরে কইতরের টঙের মতো খুপরি সেলে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে ছোটো প্রকাশকদের৷ আগরতলার মেলায় 'S' ক্যাটাগরির যে স্টলগুলো তার প্রায় অর্ধেক হবে এগুলোর সাইজ ৷ প্যাভেলিয়নের ভেতরে তেমন সমাগম হয় না মেলায় আগত মানুষের ৷ লিটিল ম্যাগাজিনের প্যাভেলিয়নের তো আরো দৈন্যদশা ৷ শ্রাদ্ধের নেমন্তন্নের পাতপিঁড়ির মতো সারি সারি টেবিল আর দুখানা করে চেয়ার বরাদ্দ প্রতিটি লিটিল ম্যাগাজিনের জন্যে ৷ তাও আবার গায়ে গায়ে এমন জড়িয়ে যে বসতে গেলে ওঠা দুঃসাধ্য, উঠতে গেলে বসা দুস্কর ৷ দুই সারির মাঝখানে হাঁটাচলা রীতিমতো শরীরচর্চার ব্যাপার ৷ আসলে ছোটো প্রকাশকরা মাৎস্যন্যায়ের শিকার ৷ পরোক্ষে বড়ো প্রকাশকরা গিলে খাচ্ছে ছোটো প্রকাশকদের ৷ বইমেলা অথচ তেলেভাজা থেকে টিভি সিরিয়ালের উপর ক্যুইজ চলছে ৷ বিশেষ একটা খবরের কাগজ তো রীতিমতো নহবৎ বাজিয়ে সবাইকে জাগিয়ে তুলছেন অহরহ ৷ অথচ ছোট্ট আগরতলায় প্রবেশপথ থেকে শুরু করে মেলার সর্বত্র একটা মার্জিত শান্ত সমাহিত পরিবেশ লক্ষ করা যায় ৷ শুরুই তো হয় মেলার অস্থায়ী সীমানাপ্রাচীরের গায়ে রাজ্যের কবি ও শিল্পীদের কবিতার উদ্ধৃতি ও চিত্রাঙ্কন দিয়ে ৷ মঞ্চ ও স্টলের সজ্জায় থাকে রাজ্যের শিল্পকলার বৈশিষ্ট্য ৷ আমরা গর্ব করি আগরতলার পুস্তকমেলার ৷ তবুও মনে হয় সাহিত্যচর্চার প্রসূতিসদন লিটিল ম্যাগাজিনকে আরো একটু গুরুত্ব দেওয়া দরকার ৷ একটু প্রশস্ত মন্ডপে প্রতিটি ম্যাগাজিনের জন্যে আলাদা আলাদা বসার জায়গা করে দিলে সাহিত্যের অঙ্গনে স্বকীয়তা নিয়ে বসাও যায় ৷ আড্ডাও হয় জমাটি ৷ মেলা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি ভেবে দেখার আবেদন করছি ৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন