“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বার্বড্ ভার্জিনিয়া

।পার্থ প্রতিম আচার্য।।

ভার্জিনিয়া ----- ভার্জিনিয়া উল্ফের সাথে আমার সখ্যতা বেশিদিনের নয় ---- এলিয়টীয় ভক্ত আমার ভার্জিনিয়ার ( বহু মতান্তর থাকলেও ) সঙ্গে প্রেম পর্বের শুরুটা এক ছাত্রীর হাত ধরে। তাকে ভালবেসেছি ---- তার পিতৃতন্ত্রের বহুল বহিঃপ্রকাশে ক্ষত বিক্ষত জেসাসসুলভ আভঙ্গই চোখে ভেসেছে।
বার্বড (কাঁটাতারে বেষ্টিত ) ভার্জিনিয়া তাকেই নিবেদিত। একটা ঘরের ভেতরেই তার সাথে কাটিয়েছি অনেকটা সময়।
ভাবনাটাকে ধরতে চেয়েছি দু'দিন পরে । মৃত্যুর ওপারে প্রেয়সী ভার্জিনিয়া 'রক্তস্নাত পেরেকে' ক্রুশবিদ্ধ। রোমান্টিসিজমে নারীর বর্ণনা অনেক হয়েছে (সুগার কোটেড ) বহুকাল। তার মরম বেদনাকে ছুঁয়েছে ক'জন ? ( তনিষ্কের হীরকেদ্যুতি ঝলমল হাসির আবডালে লুকিয়ে থাকা কান্না ?) শ্রেণী বিভক্ত সমাজে নারীও শ্রেণী প্রতিনিধি ---- আমার প্রেয়সী কেটি পেরি নয় ( conspiracy theorists যাকে ইলুমিনাটি নামে বিশ্বরাজের কর্পোরেট দুনিয়ার মুখোশ বলেন ) । আমার প্রেয়সী শান্তি খোঁজেনা নিছক রোমান্টিসিজমে ( বিদিশা থেকে অনেক দূরে ?) কিংবা ভালোবাসাহীন দৈহিক রতিতে ( চুগ চুগের শ্লীল অশ্লীলতার দায় গুরু এলিয়টের )। শুধু প্লেটো মিথ্যাচার । শধু বাৎস্যায়ন সূত্র কুকুরীয়-কাম-সদৃশ।
             নারীকে সন্দেহের আগুনে পুড়তে হয়েছে অনেক ----- আজও বহু বহু পুড়ে চলেছে। সন্দেহপ্রবণ পুরুষটি বুঝতে না পারা পুরুষতান্ত্রিকতার উত্তরাধিকার নিয়ে অধিকৃত প্রেয়সীর উচ্ছলতায় মেটামরফসিস (কাফকা) অনুভব করে হীন গূঢ়ৈষায় গুটিয়ে যায়।
            হে প্রেয়সী ভার্জিনিয়া , আমি সে লোক নই। স্থবিরতা আর মৃত্যু তো একই। উদ্দীপনায় সাড়া দেয়াই তো প্রমান ----- বেঁচে থাকা। তাই দোল খাওয়া অশান্ত জলাশয় ঢের ভালো। ভার্জিনিয়া উল্ফ , এ আমার লেখা তোমার eulogy --- নিজেকে আরেকবার দেখে নেয়া মধ্যরাতের চেতনাস্রোত।
-
বার্বড্ ভার্জিনিয়া
              বার্বড্ ভার্জিনিয়া ---- তুমি এখন মৃত । খচখচ ... ব্যথা ...উষ্ণ কাঁটা , পার্থিব পাপ নিয়ে এখনও রক্তস্নাত পেরেক সদৃশ। তুমি দূরদ্বীপবাসিনীর প্রেতাত্মাকে বুঝতে পেরেছিলে । দারুচিনি দ্বীপে দারু ছিলো কিনা জানিনা ----- চিনি তো ছিলো । সুগার কোটেড ভালোবাসা ছিলো ----- চেতনার বল্গাহীন স্রোত ছিলো ----- জয়েসের অর্গলহীনতা ছিলো । কিন্তু ছিলো না অনেককিছুই । তুমি না বললে আমরা কি জানতে পারতাম , ভার্জিনিয়া দুঃখী দ্বীপবাসিনীকে ? উষ্ণ ---- সাদা সাদা ---- না , ঝলকানো তনিষ্কের হীরকদ্যুতি--ঝলমল হাসির আবডালে লুকিয়ে থাকা গাঢ় ... গাঢ় ... গাঢ় নোনতা ? জেনেছি ... ভালোবেসেছি ...।
              প্রিয়তমা , তোমায় একচোখ ঢাকা চুলে কেউ ইলুমিনাট্টি বলতেই পারে ---- কেটি পেরি আর তোমার খেয়ালী আধ-কালো-ঈষৎ-বাদামী ছড়িয়ে দেয়া একরাশ মেঘের পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা ক'জনের আছে বলো ?
            আমি বুঝি ---- তুমি বিদিশা থেকেও অনেকদূরে ... এমনকি কোন চুগ চুগ শব্দ তোমার বুকে প্রশান্তি আঁকে না । কেবল ভালোবাসাই চাই । সেটা প্লেটো কে ছুঁয়ে ক্রমশঃ যেতেই পারে কোন সূত্র লেখকের পদতলে।
                কাফকা'র মতো পতঙ্গে পরিণত হবো না আমি । কেননা ---- কাফকা হ্যাজ গন ।
আমি নতুনের , কুঁড়ি থেকে সবুজ-কচিপাতার-গাছ হয়ে ওঠার স্বপ্ন-দেখা লোক । সৃষ্টিশীল মনন যদি সাধারণ জীব সর্বস্ব জীবনের মতো নিস্তরঙ্গ সমুদ্র হয় , তবে তাতে থুতু । এ দোল খায় প্রতি উদ্দীপনায়-- ঝড় ওঠে সমুদ্রের বুকে ---
             এই উন্মত্ত সমুদ্রই আমার ভালোবাসা । কোন পেইন্টেড সি নয় , ঢেউ যেখানে ভুলে গেছে ভেতর থেকে লাভা স্রোতের মতো উদগীরণ । কান পেতে থাকি , কোন এক অশান্ত জলাশয়ের , দোল খায় যা প্রতিটি ছোঁয়ায় --- সেইতো আমার আকাঙ্খার --- কামনার --- চিকণ সুরের মূর্চ্ছনার ভালোবাসা ।
               ভার্জিনিয়া , তোমাকে সেলাম। তুমি আমায় চিনতে শিখিয়েছো আমার মানসীকে । হাজারো বছর ধরে বদ্ধ জলায় আটকে থাকা , মানসী আমার আজ কথা বলে , দুলে ওঠে--- লজ্জাবতীর মতো নয় ---- আরও অন্যরকম --- প্রতিটি স্পর্শে ।
------- সেইতো আমার ভালোবাসা ।।

কোন মন্তব্য নেই: