তিনসুকিয়ার ‘উজান সাহিত্য গোষ্ঠী’ জন্মলগ্ন থেকেই ২১শে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিনটি বহুভাষিক কবিতায়, কথায় এবং গানে দিনটি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করে আসছে। এবারেও করেছে ‘দুর্গাবাড়ি’
প্রাঙ্গণে খোলা মঞ্চে । বিগত কয়েক বছর ধরে তাঁর সঙ্গে বিশেষ বিষয়-নির্ভর বক্তৃতানুষ্ঠানেরও আয়োজন করে আসছে । এবারেও তিন শিক্ষাবিদ আমন্ত্রিত হয়েছিলেন এই বক্তৃতা করতে। তার মধ্যে দুজনই কবি --
নিশা গুপ্তা এবং নীলদীপ চক্রবর্তী। নিশা হিন্দিতে কবিতা লেখেন, নীলদীপ লেখেন
বাংলাতে। দু’জনেই তিনসুকিয়ার বিবেকানন্দ
কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তৃতীয় আমন্ত্রিত বক্তা ছিলেন বিপিন বরা বিদ্যালয়ের
প্রতিষ্ঠাতা এবং এখন অবসর প্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল রৌফ। তিনি রাজ্য সরকারের
‘শিক্ষারত্ন’ পুরষ্কারেও সম্মানিত হয়েছিলেন। ছিলেন অসম সাহিত্য সভার তিনসুকিয়া
জেলা শাখার সভাপতিও।
(দৈনিক যুগশঙ্খে ২৩শে প্রকাশিত সংবাদ) |
নিশা গুপ্তা |
শুরু যদিও হবার কথা ছিল
বিকেল আড়াইটায় প্রচণ্ড প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্যে লোকজন আসতে সামান্য দেরি হয়, ফলে অনুষ্ঠান
শুরু করতেও হয় সামান্য বিলম্ব। কিন্তু শেষমেশ দর্শকাসন একটিও খালি পড়ে থাকে নি। শুরুতেই প্রদীপ প্রজ্বলন করে এবং শহীদ বেদীতে
শ্রদ্ধার্ঘ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন ‘উজান সাহিত্য গোষ্ঠী’র সহ-সভাপতি
প্রশান্ত ভট্টাচার্য। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন অতিথি-ত্রয় সহ উপস্থিত সবাই। পাশাপাশি তখন চলতে থাকে উদ্বোধনী সঙ্গীত ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি’ । পরে পরেই বিরতি না দিয়ে চলতে
থাকে ‘চিরচেনেহী মোর ভাষা জননী’। পরিবেশন করেন উজান সাহিত্য
গোষ্ঠী এবং গীতিমঞ্জরীর শিল্পীরা যৌথভাবে। শিল্পীরা ছিলেন জীবন কৃষ্ণ
সরকার, শীলা দে সরকার, বর্ণালি সেনগুপ্ত, শিল্পী চক্রবর্তী, প্রিয়া পাল, অস্মিতা
মজুমদার, মিঠু মজুমদার , পাপিয়া বল, মঞ্জুরি ফুকন, নবনীতা দত্ত নেওগ, হীরামনি
বরুয়া, জ্যোতি গোঁহাই এবং অন্যান্যরা। তবলাতে সঙ্গত করেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
আব্দুল রৌফ |
এর পরে অতিথিত্রয় নিশা
গুপ্তা, আব্দুল রৌফ এবং নীলদীপ চক্রবর্তীকে ফুলাম গামোছা পরিয়ে সংবর্ধনা জানান
উজান পত্রিকার মুখ্য সম্পাদিকা সবিতা দেবনাথ। উপসভাপতি প্রশান্ত ভট্টাচার্যের
স্বাগত ভাষণের পরে উজানের শিল্পীরা পরিবেশন করেন আরেকটি সমবেত সঙ্গীত
“শুভকর্মপথে...” । এর
পরে বিভিন্ন ক্রমে ভোজপুরি কবিতা পাঠ করেন কৃষ্ণা উপাধ্যায়, অসমিয়া কবিতা পাঠ করেন
হীরামনি বরুয়া, ভাস্কর জ্যোতি চুতিয়া,
রুনমী শর্মা, নবনীতা দত্ত নেওগ, বাংলা কবিতা পড়ে শোনান পার্বতী দেব, নিহারিকা
দেবী, ভানু ভূষণ দাস, সবিতা দেব নাথ প্রমুখ। একটি অসমিয়া আধুনিক গান পরিবেশন করেন
শীলা দে সরকার, বাংলা গান পরিবেশন করে কিশোরী শিল্পী পৌষালি কর এবং দুটি লোকগান
পরিবেশন করেন বাবুল বিশ্বাস।
নীলদীপ চক্রবর্তী |
নিশা গুপ্তার বলবার বিষয় ছিল ‘ভারতীয় ভাষাও পর
গহরাতা সংকট’। তিনি
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ভাষাগুলো বিপন্ন হলে শুধু সাহিত্যই বিপন্ন হয় না। সঙ্গীত
নৃত্যাদি নিয়ে আমাদের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব বিপন্ন হয়। তাই ইংরেজিভাষা
আগ্রাসন নিয়ে আমাদের সচেতনভাবেই ভাবতে হবে। আব্দুল রৌফ বলেন ‘ বিভিন্ন ভাষা
গোষ্ঠীর সংঘাত এবং সমন্বয়’ বিষয় নিয়ে বলেন। তিনি বলেন, আমরা নিজের ভাষাকে সবাই
সম্মান করি, কিন্তু প্রতিবেশী ভাষা গোষ্ঠী তথা তাদের সাহিত্য সংস্কৃতিকে
অবজ্ঞা-উপেক্ষা করবার বুদ্ধিতে যেন না পেয়ে বসে। নীলদীপ চক্রবর্তীর বলবার বিষয় ছিল
‘ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাংলা কবিতা’। তিনি অমলেন্দু গুহ, সঞ্জয় চক্রবর্তী, দেবলীনা সেনগুপ্ত,
কমলিকা মজুমদারের বাছাই করা কবিতার নজির টেনে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার কবি এবং কবিতা
ভাবনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এখানকার কবিতা কেমন হচ্ছে আর কেমন হবে তার
মূল সুরটি তুলে ধরেন। অতিথি তিনজনকে স্রোতা দর্শকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন সুশান্ত কর।
বই বিক্রিতে দুই সম্পাদক অনুষ্ঠানের গুটি কয় গান |
মাঝে
উজানের সদস্যা পার্বতী দেবের একটি কবিতার বই ‘হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো’ এবং নীহারিকা
দেবীর প্রবন্ধ বই ‘হে শহীদ লহ প্রণাম’ উন্মোচন করেন যথাক্রমে আব্দুল রৌফ এবং নিশা
গুপ্তা। অনুষ্ঠানে উজান পত্রিকা ছাড়াও পূর্বত্তরের বিভিন্ন প্রকাশনীর বেশ কিছু বই বিক্রির ব্যবস্থাও করেছিলেন উজান পত্রিকা সম্পাদিকা সবিতা দেবনাথ , এবং গোষ্ঠী সম্পাদক ভানু ভূষণ দাস।
পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা
করেন ‘উজানে’র সদস্য ত্রিদিব দত্ত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন