“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

আন্তর্জালে, ফেসবুক, বাংলাকবিতা এবং লিটিল ম্যাগাজিনের নতুন দিগন্ত

।। চিরশ্রী দেবনাথ।।

বাংলা কবিতা এবং ফেসবুক, সরাসরি দাঁড়িয়ে আছে অনেক জিজ্ঞাসা নিয়ে এখন এই সময়ে। দু হাজার চারসালে ফেসবুক, তারও আগে থেকে শুরু হয়েছে আন্তর্জাল কেন্দ্রিক বাংলা সাহিত্যচর্চা। যখন থেকে ব্লগের যাত্রা শুরু হয়েছে, অনেকেই নিজের ব্যক্তিগত সাহিত্যচর্চার এক নতুন দিগন্ত খুঁজে পেলেন। এই সংখ্যা প্রথমে কম, তারপর আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো। আমি মূলত এখানে বাংলা ভাষা চর্চার কথা বলছি। উন্নত বিশ্বের অভ্যস্ত প্রযুক্তিতে, অনায়াস চর্চা নয়, এ হলো তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত প্রযুক্তির ভাঙা হাত ধরে, নিজের ভাষা নিয়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগ। এই সংযোগ ক্রমাগত হয়ে উঠছে বিতর্কিত,  প্রশংসিত, নিন্দনীয় এবং সমালোচিত। আর এই সমালোচনার তীরে সর্বপ্রথম বিদ্ধ হচ্ছে বাংলা কবিতা। কবিতা ...সম্পাদক এবং প্রকাশক এই ট্রিনিটির বাস্তবতা এবং গ্রহণযোগ্যতাকে রীতিমতো ধূলিসাৎ করে লেখক নিজেই হয়ে উঠছেন নিজের প্রকাশক। এটা উচিত না অনুচিত, এই নিয়ে পাঠকমহল এবং লেখকমহল সরগরম। থাকছেন প্রবীণ লেখক থেকে নতুন দাঁড়ি গোঁফ গজানো কোমল কবিটিও। এই বিষয়ে মাঝে মাঝে একটি প্রশ্ন প্রায়শই উঁকি দেয়, বাংলা কবিতার পাঠকসংখ্যা কি সত্যিই বিশাল? রবীন্দ্র, নজরুল, সুকান্ত, জীবনানন্দ, এবং স্কুল পাঠ্য বইয়ের আরো কয়েকজন কবি বাদ দিলে সাধারণ মানুষ কি কবিতা পড়ে? আর কোনো আধুনিক কবি নিয়ে কি তাদের মাথাব্যথা আছে?
           ফেসবুক "বিশ্বের আরো অনেকগুলো স্যোশাল সাইটের মধ্যে অন্যতম একটি স্যোশাল সাইট। কিন্তু বলা যায় এক একচ্ছত্র সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে, সে পৃথিবীতে।
            কিন্তু ফেসবুক কি বাঙালীর কবিতা প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম?
           অবশ্যই সেখানে প্রকাশিত হতে পারে, নতুন বইয়ের ঠিকানা, নতুন লিটিল ম্যাগাজিনটির প্রকাশিত হওয়ার সংবাদ, বইয়ের আলোচনা ইত্যাদি, কিন্তু কবিতা নৈব চ, নৈব চ।  এসব কিছুর মুখে ছাই দিয়ে, তরুণ তরুণী, মধ্যবয়সী, গৃহবধূ, বৃদ্ধ বৃদ্ধা, সবাই এই প্ল্যাটফর্মকে তাদের কবিতাভূমি করে তুললেন। কেউ কেউ বলছেন কি নির্লজ্জ এরা, অবশ্যই, এটা ক্ষমাহীন নির্লজ্জতা। কারণ, কবি এখানে জোড় করে নিজের কবিতা অন্যকে পড়াচ্ছেন। কবিতা সাহিত্যের কোমলতম মাধ্যম। কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দায় সত্যিই কার?
          কোন লেখকের কবিতা অকবিতা এবং কার কবিতা সুকবিতা, সেটাই বা কে বলবে। ফেসবুকে অবিরাম ছড়িয়ে পড়ছে আতসবাজি অথবা ছাইয়ের মতো হাজারো পঙক্তি...প্রতিদিন। কোনো কোনো লেখক বা লেখিকাকে নিয়ে তৈরি হচ্ছে একটি ব্যক্তিগত পরিমণ্ডল। কেউ যদি প্রতিদিন ফেসবুকে কিছুটা সময় দেন এবং অন্যের কবিতায় লাইক কমেন্ট করেন, বিনিময়ে তিনিও পাবেন সম পরিমাণ লাইক কমেন্ট। তার মানে কি হলো বাংলা কবিতার কোনরকম গুরুত্ব থাকলো না।
          আবার অন্যভাবে ভাবলে ফেসবুকের  এই চরম পরিস্থিতিতে পৌঁছুনোর আগে, নতুন কবিরা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতেন একটি লিটিল ম্যাগাজিনের, একজন সম্পাদকের, যিনি তার লেখাটি মনোনয়ন করবেন এবং তা ছাপা হবে, সেজন্য অপেক্ষায় কাটতো তিন চার মাস, ছয়মাস অথবা একবছর। কখনো কখনো হয়তো সেবারের সংখ্যাটি প্রকাশিতই হলো না।
একজন তরুণ লেখক কবির স্বীকৃতি পেতে পেতে লেখালেখিই ছেড়ে দিতেন হয়তো।
          আমরা আমাদের জীবনকে গতির সঙ্গে তাল মেলাতে অভ্যস্ত, খাগের কলম, পাতায় লেখা থেকে ছাপাখানা, বই, এখন কম্পিউটার, যতো দ্রুত পারা যায় এগিয়ে যাচ্ছি। অধিকাংশ লেখাই এখন কলমের পরিবর্তে, কম্প্যুটারে অথবা মোবাইলে  টাইপ করে, ই মেলে পাঠানো হয়। এতে ভুল হবার সম্ভাবনা কম, ইমেল সুনিশ্চিত ভাবে সঠিক ঠিকানায় পৌঁছুবে, হয়তো অতীত আমাদের নস্টালজিক করবে কিন্তু আমরা বর্তমানের সুবিধাটুকুই সাদরে গ্রহণ করবো।
একটু অপ্রাসঙ্গিক হলেও এটুকু বলতে হলো এজন্য যে, গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও হারিয়ে ফেলছি নিজেদের ধৈর্য। লজ্জাহীন ভাবে নিজের কবিতার এক একজন প্রকাশক।
           কারণ লেখাটি আন্তর্জালে আসা মাত্র কয়েকহাজার চোখ একে জরিপ করে, একটি লিটিল ম্যাগাজিনে ছাপানো লেখা নিঃসন্দেহে এতো লোকের চক্ষু গোচর হয় না। এই লোভ আমাদের ক্রমশ বেহায়া করে তুলছে। ফলত দেখা যাচ্ছে, কবি সম্মেলন, কৃত্তিবাস কিংবা দেশের মতো ম্যাগাজিনে ছাপানো কবিতাটিও সেই কবির ফেসবুকের ওয়ালে প্রকাশ পাচ্ছে, তখনো হয়তো সেই লিটিল ম্যাগ বা পত্রিকাটির সদ্যজাত সংখ্যাটি বিক্রির অপেক্ষায় কিংবা কোনো কবি সাদরে অপেক্ষা করছেন কখন কপিটি তার মফস্বল শহরের বইয়ের দোকানে এসে পৌঁছুবে এবং তিনি কিনবেন।
         সমস্যা বা সুবিধা এখানে একটাই, ফেসবুকে কবিতা দেওয়া যাবে না, এই নিষেধাজ্ঞা জারি করার লোকটি নেই। অসংখ্য মানুষ যারা লেখালেখি ভালোবাসেন কিন্তু সেই আলোটি ছড়াতে পারেননি সেভাবে কোথাও তারা হয়তো, আন্তর্জালের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক হয়ে উঠতে পারছেন। যে বা যে কয়জন তরুণ তরুণী কবিতা সত্যিই বোঝে, কবিতাকে ভালোবাসে প্রাণপণে, কিন্তু কিছুতেই একটি নিজস্ব বা নিজেদের কবিতাপত্র বের করতে পারছে না, তারা খুলে ফেলতে পারছেন একটি ব্লগ, একটি ওয়েব পত্রিকা কিংবা একটি ওয়েবজিন।
         এখন বাংলা কবিতার সঙ্গে প্রযুক্তির সংঘাত কতটা যুক্তিযুক্ত, হঠাৎ করে এই যে একদল লেখকলেখিকা "ফেবুকবি "আখ্যায় আখ্যায়িত হয়ে অবাধে লিখে যাচ্ছেন, এবং বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থাও, এই সুযোগকে, খুব ভালো ভাবে কাজে লাগাচ্ছেন, তাদের প্রচেষ্টায় নতুন লেখক লেখিকারা সহজেই বই বের করতে পাচ্ছেন। দুই মলাটের ভিতর  নিজেদের লেখক পরিচিতি খুঁজে নিতে চাইছেন ফেসবুক কেন্দ্রিক এইসমস্ত লেখকলেখিকারা। আন্তর্জাল এই পরিচয়, পরিচিতি এবং প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। খুব কি নিন্দার্হ?
           কিন্তু নিঃসন্দেহে মানের অধোগমন ঘটছে। কারণ ফেসবুকের  লেখায় যত্নের অভাব থাকে। আরো নানারকম ভুল, শব্দ ব্যবহারের, বাক্যগঠনের, কিন্তু তা শুধরোবার চেষ্টা না করেই বই ছাপা হয়ে যাচ্ছে, যা হয়তো কিছুদিন পর বাংলা কবিতার একটি ভুল ক্যানভাস হয়ে উঠতে পারে, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে।
           তবে এই সঙ্গে এটাও প্রবলভাবে ঠিক,  এইসব লেখকলেখিকাদের মধ্যে  হয়তো আগেও অনেকে কবিতা লিখতেন, কিন্তু প্রকাশের সুযোগ পাননি, এখন ফেসবুকে লিখে, কিছু সংখ্যক পাঠক তাদের লেখাকে কবিতার স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং খুব স্বাভাবিক ভাবে তারাও বই প্রকাশের উদ্যোগ নিচ্ছেন। ঠিক  তখনই  সমালোচনার  ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে , এইভাবে কবিতা নাম দিয়ে  সবকিছু ছাপিয়ে দেওয়া কি উচিত ?
        বাংলা কবিতা ক্রমাগত গভীর অসুখের দিকে যাচ্ছে নাতো?
        অথবা একেই কি বলে কবিতার স্বর্ণযুগ, যখন কিছু মানুষ ফেসবুকে অবিরাম অসংখ্য কবিতা লিখে, বাংলা কবিতাকে করে তুলছেন সার্বজনীন, জনপ্রিয়, জ্ঞানে অজ্ঞানে, বাংলা ভাষার চর্চা হচ্ছে।
       ভাষা স্রোতের মতো, থেমে থাকলেই তা মৃতনদী হয়ে যায়, ফেসবুক সেই কম জনপ্রিয় বাংলা কবিতাকে প্রতিদিন তুমুলভাবে বাঁচিয়ে রাখছে, এসবকিছুরই  উত্তর দেবে একমাত্র কাছের ভবিষ্যৎ এবং সময়ই বলবে আজকের ফেবু কবিদের গ্রহণযোগ্যতা।
       শুধু  নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে এটুকুই বলা যায়, বাংলা কবিতা আজ কিংকর্তব্যবিমূঢ়!
       তবে আন্তর্জালের  এই  লেখালেখি, নিঃসন্দেহে আগামীদিনের ছাপানো লিটিল ম্যাগাজিনগুলোর, অস্তিত্বকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেবে, বাস্তবের সঙ্গে তাল মিলিয়েই।
       আর পরিবেশবিদদের ভাষায় যদি বলি, বাদ দাও কাগজ, সেখানে লেখা আছে মৃত অরণ্যের কান্না। নাহ্, তা অবশ্যই নয়, ছাপানো কাগজের গুরুত্ব বরাবরই অসীম। কিন্তু সেই ছাপানো কাগজটি কি সব লেখকদের বাড়িতে সযত্নে সংরক্ষিত হয়। জায়গার অভাব,একবার উল্টেপাল্টে দেখার পর, হারিয়ে ফেলা কিংবা অবশেষে পুরনো কাগজের ঝুড়িতে। নিশ্চয়ই ব্যতিক্রমী মানুষও আছেন, যিনি, তিরিশ বছর আগের লিটিল ম্যাগাজিনটিও সযত্নে রাখেন, হয়তো বা সেটিই হয়ে উঠে আজকের একটি মূল্যবান ফেসবুক পোস্ট।
       এই শতকের শুরু থেকে যারা প্রযুক্তির এইসমস্ত সুবিধা নিতে চেয়েছেন, তারা কিন্তু বিস্তর হ্যাপা সামলেছেন। একটি সদ্য জাগ্রত ওয়েব পত্রিকায় লেখা পাঠানোর জন্য তাকে ইন্টারনেট কাফেতে যেতে হতো, এতো মোবাইল আর নেট সংযোগ তখন স্বপ্ন, স্মার্টফোন তখনো বিজ্ঞানীর চিন্তায়। অবশেষে কাঠখড় পুড়িয়ে রীতিমতো পয়সা খরচ করে তাকে পাঠাতে হতো লেখা। অকস্মাৎ এই স্মার্টফোন, ইউনিকোড বদলে দিল চোখের নিমেষে সব।
        বাংলা ভাষার প্রথম ওয়েব পত্রিকা, "পরবাস ", প্রথম বাংলা কবিতার ওয়েব পত্রিকা "কৌরব ওনলাইন "।
       বর্তমানে, আদরের নৌকা, দলছুট, ইচ্ছামতী, হাতপাখা, নতুন কবিতা, মাসকাবারি, মথ, গুরুচন্ডালী, বাউণ্ডুলে, দ্রঃ বিদ্রঃ, সৃষ্টি র মতো ওয়েবপত্রিকারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রত্যেকটি পত্রিকা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই, ই মেল বা স্যোশাল নেট ওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে পাঠক এবং লেখকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে সগৌরবে। কতজন পাঠক তা পাঠ করলেন সেই সংখ্যাটিও জেনে নেওয়া যাচ্ছে তখুনি। শুধুমাত্র একটি স্মার্টফোনকে অবলম্বন করে সম্পূর্ণ একটি ওয়েব পত্রিকা পড়ে নেওয়া যাচ্ছে, দরকার হচ্ছে না কম্প্যুটর বা ল্যাপটপের।
         একটি শীর্ণকায়  লিটিল ম্যাগ আজও একজন বা কয়েকজন তরুণ কবির স্বপ্ন, সামান্য টাকা জড়ো করে ছাপানো একটি কবিতাপত্র, এ হলো কবিতার জয়, গৌরব আর অহংকার, কিন্তু আজকের সেই তরুণ বা তরুণেরা কেন ছাপানো পত্রিকার খরচ বাঁচিয়ে একটি ঝকঝকে ওয়েব পত্রিকার স্বপ্ন দেখবে না। সেখানেও সে সম্পাদক। তার হাত দিয়ে কবিতার ঝাড়াইবাছাই হবে। সদ্য লিখতে আসা নবীনের বেশ কয়েকটি কবিতা বাদ যাওয়ার পর একটি কবিতা সেই ওয়েব ম্যাগে স্থান পাবে।এভাবে এখানেও  উপস্হিত হতাশা উদ্রেককারী একজন  নির্মম সম্পাদক। তাহলে তো কোয়ালিটির সঙ্গে আর কোন আপস রইল না।
তাই সম্পূর্ণ বিনাখরচে একজন কবিতাপ্রেমিক আজ খুলে ফেলতে পারেন একটি আন্তর্জাল পত্রিকা। একটি ব্লগপত্রিকা। ব্লগ খুলতে বিশেষ কোন কারিগরী বিদ্যা লাগে না, দরকার একটি টেমপ্লেট। যা নিজেরাই তৈরি করে নেওয়া যায়। ব্লগস্পট, উইবলি, ওয়ার্ডপ্রেস থেকে
      সম্পূর্ণ বিনামূল্যে একটি ডোমেইন নিতে হয়।খুলতে হয় একটি একাউন্ট,  দরকার একটি ইউজার আই ডি এবং পাসওয়ার্ড। ব্লগস্পটের ক্ষেত্রে তাও দরকার নেই। জি মেলের আই ডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়েই কাজ চলে যায়, কারণ এটি গুগোলের সাইট।
       দুইহাজার নয়  সালে চালু হয়েছিল, এমনই একটি ব্লগ পত্রিকা "বাক্ "।  ব্লগস্পট থেকে এটি তৈরি করা হয়। এটি হলো প্রথম ব্লগজিন। আন্তর্জালে যারা লেখালেখি করেন তারা এই ব্লগপত্রিকাটি সম্বন্ধে নিশ্চয়ই অবগত থাকবেন। মূল্যবান আলোচনা, কবিতায় সমৃদ্ধ ব্লগ পত্রিকা  "বাক্ "।
        এধরনের আরো কয়েকটি ব্লগ পত্রিকা হচ্ছে, অন্যনিষাদ,  অনলাইন কালিমাটি , ই -দুয়েন্দে, ক্ষেপচুরিয়ান্স, দুইহাজার বারো সালের পর থেকে ঘন ঘন আত্মপ্রকাশ করছে এইধরনের ব্লগ পত্রিকা।
       এই সমস্ত পত্রিকা গুলোর পাঠকসংখ্যা হাজার হাজার। নানাভাবে লেখালেখি পৌঁছে যাচ্ছে, পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে থাকা পাঠকের কাছে চোখের নিমেষে।
         ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের একটি পরিচিত কমিউনিটি ব্লগ "ঈশানের পুঞ্জমেঘ "উত্তর পূর্বাঞ্চলের বহু কবি, গল্পকার, ঈশানের পুঞ্জমেঘে নিয়মিত লিখছেন। এই ব্লগের একটি সহকারী ব্লগ হচ্ছে "কাঠের নৌকা "।যেকোন লিটিল ম্যাগাজিনের পি.ডি.এফ ফাইল টি এখানে আপলোড করা যায় , যা লিটিল ম্যাগাজিনটির একটি সুরক্ষিত ইতিহাসের দায়িত্ব নেয়।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে, বাংলাভাষার, বাংলাকবিতার চর্চা যে কত গুরুত্বের সঙ্গে করা হয়, তা সেই দেশের অসংখ্য ঝকঝকে ওয়েব পত্রিকা, ব্লগই প্রমাণ করে। আন্তর্জাল যোগাযোগ করে দিয়েছে, এবং দিচ্ছে, বাংলাভাষার  এইসময়ের লেখকলেখিকাদের সঙ্গে, তা তিনি যে দেশেই থাকেন না কেন।
           সবথেকে বড়ো কথা অর্থাভাবে কখনো একটি আন্তর্জাল পত্রিকার মৃত্যু ঘটে না, যদি ঘটে তবে তা ঘটবে যারা সেটি খুলেছিলেন, তাদের সদিচ্ছার অভাবে। অনেকেই বলেন আন্তর্জালে লেখা চুরি হয়। আন্তর্জালে আপনার লেখাটি খুব বেশী মাত্রায় সুরক্ষিত জেনে রাখুন। কারণ সেখানে সামান্য একটি বাক্যবন্ধ দিয়ে সার্চ করলেও কে কবে  কখন এ ধরনের পোস্ট করেছিলেন তা গুগোল খুঁজে বের করে আনে।
           তবুও অনেকেই এখনো বাংলা কবিতা, বিশেষ করে ফেসবুকে এই কবিতা প্রবাহ, ওয়েব পত্রিকায় কবিতার ঝকঝকে উপস্থিতি, সবকিছুর মধ্যেই বিতর্ক, খুঁজে পাচ্ছেন।  অকবিতা, নিম্নমানের লিটিল ম্যাগাজিন অতীতেও ছিল, বিতর্ক তখনও ছিল, এখন আরো অধিকমাত্রায় অকবিতা বোধহয় ভালো কবিতাকে আরো বেশী করে সামনে তুলে আনছে আর ছাপানো লিটিল ম্যাগের সঙ্গে একটি আন্তর্জালিক কবিতাপত্র বর্তমান সময়ে লিখিত কবিতার একটি  স্থায়ী ভাণ্ডার হয়ে উঠছে, যদি না কখনো সেই অসম্ভব দিন আসে  আন্তর্জালের ভবিষ্যতের সুনিশ্চয়তা বা স্থায়িত্ব নিয়ে।
তথ্য সূত্র ...আন্তর্জাল


কোন মন্তব্য নেই: