“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৫

রাজনীতি হলো একধরণের necessary evil

(C)Image:ছবি


রাজনীতি কি? রাজনীতি ছাড়া কি সমাজ অচল? রাজনীতিবিদরা কি সমাজের শত্রু? এই ধরণের প্রশ্ন আমাদের মাথায় আসে। এতদিন এই নিয়ে যা কিছু আপন মনে ভেবেছি তাই আজ এখানে খোলসা করবো। আপনারা পাগলের প্রলাপ ভেবে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে পারেন।  আমার শুধু প্রলাপ বকার স্বাধীনতা থাকলেই হলো। রাজনীতি নিয়ে এযাবৎ স্বনামধন্য ব্যক্তিরা বহু কিছু বলেছেন। সেসব শিরোধার্য। জর্জ বার্নার্ড শ' বলেছেন “Politics is the last resort of a scoundrel”। স্বামী বিবেকানন্দ রাজনীতি করাকে বেশ্যাবৃত্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাসে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী রাজনীতিবিদদের চরিত্রহীন লম্পট হিসেবে দেখিয়েছেন। এই চরিত্রহননে রবীন্দ্রনাথ যদি বা কিছুটা কার্পণ্য করে থাকেন তাহলে এর ভরপাই করে ষোল আনা পূর্ণ করেছেন সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘ঘরে বাইরে’ সিনেমায়। এখানে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের রাজনীতিককে প্রায় হিন্দি সিনেমার ‘প্রেম চোপড়া’ বানিয়ে তবেই ক্ষান্ত হয়েছেন তিনি। কাজেই দেখা যাছে যে কবি-সাহিত্যিক, ধর্ম প্রচারক, শিল্পী সকলে মিলে রাজনীতিবিদদের জুতো মারতে কখনও কুণ্ঠাবোধ করেন নি। এর ফলে তাঁদের কপালে জনপ্রিয়তাও জুটেছে প্রচুর। এখন প্রশ্ন হলো রাজনীতি যদি এতোই খারাপ তাহলে এই জিনিসটা টিকে আছে কী করে? রাজনীতি ছাড়া কি আমাদের চলবে না? সত্যজিৎ রায়ের ‘জন অরণ্য’ সিনেমায় যখন একজন রাজনীতিবিদকে গণ্ডমূর্খ হিসেবে দেখানো হলো তখন হলের মধ্যে প্রচুর হাততালি পড়তে শুনেছি। তবে আমি হাততালি দিতে পারি নি কারণ এর আগে এমন কিছু লোকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিলো যারা রাজনীতি করলেও ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী ও প্রতিভাবান। এরমধ্যে অচিন্ত্যকুমার ভট্টাচার্যের নাম করব সবার আগে। এই মার্ক্সবাদী নেতার সংস্পর্শে আসার সৌভাগ্য আমার জীবনের এক অমূল্য সম্পদ। তবে শিলং-এর রণজিৎ দে-র সংস্পর্শে আসাটাও আমার জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্টের মতই। এই সব অসামান্য প্রতিভাবান ও গুণী ব্যক্তিরাও তো রাজনীতি করতেন। তাহলে রাজনীতি এতটা খারাপ হবে কেনো? মহাত্মা গান্ধি, নেহরু, সুভাষচন্দ্র, চিত্তরঞ্জন দাশ, বিপিনচন্দ্র পাল, সর্দার প্যাটেল, বালগঙ্গাধর তিলক, জর্জ ওয়াশিংটন, মার্টিন লুথার, লেনিন সহ আরও কত শত রাজনীতিবিদরা ছিলেন সারা বিশ্বজুড়ে যারা আজও নমস্য। তাই একটা কথা মানতেই হবে যে রাজনীতি শুধুমাত্র scoundrel-দের জন্যই নয়। এই ক্ষেত্রের অনেক মহাত্মারাই সমাজে পূজিত। রাজনীতি জিনিসটা কি, এই প্রশ্ন আমাকে কেউ করবে না জানি, তাও আগ বাড়িয়ে নিজের মতটাই এখানে ব্যক্ত করবো। আমার মতে রাজনীতি হলো এক ধরণের ‘necessary evil’। অর্থাৎ সমাজের এক অত্যন্ত ‘প্রয়োজনীয় খারাপ দিক’। গণতন্ত্র ও রাজনীতি দুটোই একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। গণতন্ত্র থাকলে রাজনীতিও থাকবে কারণ রাজনীতি ছাড়া গণতন্ত্র অচল। এখন প্রশ্ন হলো আমাদের রাজনৈতিক সজাগতার প্রয়োজন কেনো? এর উত্তরে বলবো, কারণ যে বিষয় নিয়ে রাজনীতি হয় না সেই বিষয় সমাজে অবহেলিত হয়ে থাকে। উদাহরণ দিয়ে বলছি, যেহেতু এদেশে জনস্বাস্থ্য নিয়ে রাজনীতি হয় নি তাই সরকারের বাজেটে এ বাবদ মোট ঘরোয়া উৎপাদনের মাত্র ১.৪ শতাংশই বরাদ্দ করা হয়। যেখানে ইউরোপীয় দেশগুলিতে তা গড়ে প্রায় ৭.৯ শতাংশ। প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে না দেখে বর্তমান সরকার সর্বশিক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে প্রায় অর্ধেক করা দিয়েছে। কারণ সর্ব-শিক্ষা কোনও রাজনৈতিক ইস্যু নয়। তাই যে বিষয় রাজনৈতিক ইস্যু হয় না সেই বিষয় সরকারিভাবে প্রাধান্য পায় না। আজ দুর্নীতি একটি রাজনৈতিক ইস্যু হওয়ার ফলে দেশে দুর্নীতি কিছুটা হলেও কমবে। এর বিপরীতে রাম মন্দির যদি ইস্যু হয়ে যায় তাহলে তো দুর্নীতিবাজদের পোয়াবারো। তাই দেশের প্রতিজন নাগরিকের রাজনৈতিক সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন। বর্তমান সরকার একদিকে যেমন সর্ব-শিক্ষা খাতে ব্যয় কমিয়ে প্রায় অর্ধেক করা দিয়েছে। তেমনি কর্পোরেট ট্যাক্স ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করারও প্রস্তাব রেখেছে। রাজনৈতিক সচেতনতা আরো বেশি থাকলে সরকার কি এতটা সাহস করতে পারত?



কোন মন্তব্য নেই: