“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বুধবার, ৫ জুন, ২০১৯

দিদি

জানিস বল্টু, দিদিটা না
কেমন যেন পাল্টে গেছে
ভালো করে কথা বলে না,
খাওয়া দাওয়ায় নিয়ম নীতি নেই
অফিস আদালতে যায় না ,
ঘরে থাকে বসে, বাসন ধোয়
কাপড় কাচে আর ঘরদোর মোছে ।
দিদিটা না, দিনে দিনে
সত্যি বদলে গেছে ।

গ্রীষ্মকালে শহর জুড়ে
যখন গরম  ভীষণ পড়ে,
দিদি তখন শিকল টেনে
জানালা বন্ধ রাখে।
ভিতর থেকে আইবলেতে
চোখে চোখ রেখে দেখে
কখন গরম গেটটি খুলে
ভিতর বাড়িতে ঢোকে ।
বৃষ্টি এলে আবার দিদি,
অমনি পাল্টে যায় ।
ছাদে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি ভিজে
সঙ্গ দিতে চায় ।
গাছকে বলে, দেখ তাকিয়ে
আমিও আছি সঙ্গে
ফুলকে বলে , আনন্দ কর
আমিও তোদের সঙ্গে
পাখিকে বলে তোদের কিরে
বদমাস সব বৃষ্টির চতুরঙ্গে।

শীতের সকালে দিদি অন্য ,
কুঁয়াশাতে পথ খুঁজে খুঁজে ফিরে
কুজ্ঝটিকারা তখনও ঘুমায়
ঘাসফুলেদের ভিড়ে।

দিদিকে জানিস বুঝতে পারি না ;
এই যে যেমন যখন তখন,
যেখানে সেখানে যা মনে তাই বকে,
নিজেই নিজের ছবি আঁকে আর
অবাক চোখে দেখে।
হঠাৎই আবার সব কিছু ছেড়ে
দিদি, কবিতা লিখছে বসে ।
ভাবখানা যেন কবিতাই লিখবে
বাকি সব কিছু মিছে।
বইয়ের পর বই লিখছে,
পাতার পর পাতা,
সাতাশিখানা বই লেখা
চারটিখানি কথা।

এমনিতে দেখ্ , গানের গলা ,
দিদি গান  কত ভালবাসে।
যেখানে যত শিল্পীরা সব
বাড়ি ছুটে ছুটে আসে ।
জলসাতে যায়, বক্তৃতা দেয়
হোক ভুলভাল গাঁজাখুরি,
কারো ঘরে গিয়ে পাত পেড়ে বসে
ভীমরুলে সুড়সুড়ি ।
আসলে জানিস, মনটা দিদির
সত্যি খুব ভালো ।
মেয়েদের জন্যে অনেক করেছে ।
স্কুলে যাবার সাইকেল দিয়েছে,
বিয়ের জন্যে টাকা দিয়েছে
হোক সামান্য, সেও মন্দের ভালো ।
কিন্তু জানিস মাঝে মাঝেই
দিদির কি যেন কি হয়।
দিল্লী নিয়ে চেষ্টা হয়েছে
সাধু সন্ন্যাসীতে ভয়।
যখন দিদি রেগে যায় না
মেজাজটা পঞ্চমে বয়, 
ঔষধ তার মোক্ষম সে এক
বল রামচন্দ্রের জয়।
দিদি তখন শান্ত হবেই
গরাদ ঘরে গল্প হবেই
খাতিরদারি হতেই পারে
সেতো দিদিগিরিরই জয় ।

কোন মন্তব্য নেই: