“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০১৯

প্রতারণ

   রফিক উদ্দিন লস্কর
ইচ্ছেরা আজ মরছে পুড়ে
দহন বুকের মাঝে,
পাঁজর ভাঙার শব্দ আছে
শুনি প্রতি কাজে।

ভাবনাগুলো ছুটছে দেখি
হাওয়ায় ভেসে ভেসে,
দেয়নি ধরা নীল পারাবত
উড়ছে হেসে হেসে।

জীবন ভেলা যে ছন্নছাড়া
পায়নি খুঁজে কূল,
পরখ করলে দেখতে পাই
সবখানে তার ভুল।

মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০১৯

কেদারনাথে, ৫ জুন


কেদারনাথে, ৫ জুন

শিবানী ভট্টাচার্য দে
----------------

কেদারনাথের পাহাড়ের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম সকালবেলা
সুনীল প্রেক্ষাপটে তুষারধবল শৃঙ্গ সদ্য আলোস্নাত
স্পষ্ট দেখলাম, ওখানে ধ্যানমগ্ন রজতগিরিনিভ মহেশ্বর
অর্ধমুদিত নয়নে তাঁর চোখের মণি নিচের উপত্যকার দিকে স্থির
তাঁর মাথার জটা থেকে নামছে মন্দাকিনী,
পায়ের ধারে চঞ্চলা সরস্বতীর মধুর মন্দিরা
অধিত্যকায় তাঁর গম্ভীর মন্দির, সামনে নন্দী,
পেছনে সেই রক্ষক বিশাল পাথরটি মন্দিরকে আড়াল করে---
অনন্ত জনস্রোত পার্বতী নদীর মতই বিসর্পিল
এগিয়ে চলেছে, এগিয়ে যাচ্ছে,
তাদের আশা, অভিলাষ একমুখী আজ
ধ্যানী মহাদেবের  সঙ্গকামী।

স্তব্ধ দাঁড়িয়ে রইলাম পাহাড়ের মুখোমুখি অনেকক্ষণ---
সন্ধ্যায় যখন নামছিলাম পাহাড় থেকে
দেখলাম, শুভ্র পাহাড়ের মাথায় শিশু চাঁ
সূক্ষ্ম তার শরীর, বালিকার কানের স্বর্ণসূত্রের মত কোমল সোনালি
মনে পড়ল, এমনি জনস্রোত জমা হয়েছিল আজ সকালে মাঠে ময়দানে
ঈশ্বরকে প্রণাম জানাতে,
কারুণিকের ইচ্ছের সঙ্গে নিজের অভিলাষকে মেলাতে,
সেই চাঁদ ওরাও দেখেছিল কাল
সেই ইদের চাঁদকে আজ মাথায় ধরে রেখেছেন
স্বয়ং কেদারনাথ।





সোমবার, ২৪ জুন, ২০১৯

সেইবেলা


আমার সেইবেলাটাই বেশ ছিল
পাশে আমার বাবা ছিলেন,
হাতখানা তার ধরা ছিল
পথে অনেক কাঁকড় ছিল
তবুও মনে সাহস ছিল,
বাবা আমার পাশে আছেন
এই একটা ভরসা ছিল
আমার সেইবেলাটাই বেশ ছিল।

মোড়ের মুখে স্কুল ছিল
স্কুলগুলোতে প্রাণ ছিল
দিদিমণির শাসন ছিল
ভীষণ রকম ভয় ছিল
একটানা এক টান ছিল,
আঁচল ভরা স্নেহ ছিল
শাসন শেষে বুকে টানা---
মায়ের গায়ের ঘ্রাণ ছিল।
দুদিন যদি যেতাম না কেউ
বাড়ি এসে খোঁজ নিতেন,
কি এমন সে কাজ ছিল ?
আমার সেই বেলাটাই বেশ ছিল।

আমার যারা বন্ধু ছিল
লালজামা আর নীল জামা-
ভীষণ মিষ্টি, পুতুল যেন
আমার সাথে ভাব ছিল
কথা যে খুব হতো তা নয়
তবুও ভীষণ ভাব ছিল।
টিফিন কৌটায় যা খুশী থাক
আমার তাতে ভাগ ছিল,
আমায় খাইয়ে তবেই তাদের
টিফিন খাওয়া স্টার্ট ছিল।
আমার সেইবেলাটাই বেশ ছিল।

মামার বাড়ি বাগান বাড়ি
শহর থেকে অনেক দুর,
ধানের গোলা, গোয়াল ঘর
ময়না টিয়ার মিষ্টি সুর।
গাড়ি ঘোড়ার চল ছিল না
পায়ে হাঁঁটাই মূল ছিল
পূজোর সময় নাচঘরেতে
যাত্রাগানেের চল ছিল।
অনেক অনেক আগের কথা
পূজোয় আমরা মামার বাড়ি
পাশের গায়ে যাত্রা দেখবো
তাই চেপেছি ঘোড়ার গাড়ি।
দাদু যাবেন দিদিমা আর
রাঙ্গামাসী, মিষ্টিমা
সহিসচাচা, বাবুর্চি ভাই
আমি বাবা সঙ্গে মা।
ছুটছে গাড়ি টগবগিয়ে
ঘোড়ার মাথায় টর্চ ছিল
ঝিঝি পোকা অন্ধকারে
ভয়ে ভয়েই ডাকছিল।
হঠাৎ গাড়ি থমকে দাঁড়ায়
আর এগুনো যাচ্ছে না,
সহিস বলে ফিসফিসিয়ে
সামনে দেখুন নড়ছে না।
কাঁপছে দাদু, কাঁপছে দিদা
কাঁঁপছে সহিস বাবুর্চি
আমার তখন বয়স কত
এই সবেতে চার ছুঁয়েছি।
বিশাল শরীর চকচকে গা
ভোরাকাটা দাগ ছিল
মায়ের কাছে শুনেছিলাম
রয়েল বেঙ্গল বাঘ ছিল।
দুপাশ ঘেরা চায়ের বাগান
জনবসতির চিহ্ন নাই
টুস করে যে পালিয়ে যাবো
কাঁপছে যে পা, শক্তি নাই।
দাদু বললেন সবাই চুপ
একটি আওয়াজ‌ও তুলবে না
একটুখানি কেউ নড়েছো
একটি লোক‌ও বাঁচবো না।
দাঁঁড়িয়ে আছি শক্ত কাঠ
নড়বো যে তার উপায় নেই
প্রাণ নিয়ে যে ফিরবো বাড়ি
সেই আশাতে ভরসা নেই।
সময়--পিঠে সময় চড়ে
সময় বুড়ি এগিয়ে যায়,
কাঁপছে সবাই থরথরিয়ে
এই বুঝি বাঘ হাড় চিবায়।
দাঁড়িয়ে আছি নড়ছি না
বাগবাবাজী সরছে না
হঠাৎ বাঘের দয়া হলো
পলক খুলেই দেখছি না।
দাদু বললেন জোর বেঁচেছি
এমন কম্ম আর হবে না
কিছু একটা ঘটে গেলে
মুখ দেখানো আর যাবে না।
সহিস বললে ওকথা নয়
মৃত্যুটাতো লিখাই ছিল
বরাত জোড়ে এই শিশুটি ---
শিশু যীশুই বাঁচিয়ে দিল।
ঘোড়ার গাড়ি, বাঘের ভয়
তবুও মনে সুখ ছিল
মন্দলোকে যে যাই বলুক
সেইবেলাটাই বেশ ছিল।

আমি যখন স্কুলে পড়ি
আমার বন্ধু তিনকড়ি
গরীব ছেলে ভীষণ শান্ত
পাশের পাড়ায় ঘর ছিল,
সাত চড়েতেও রা করে না,
এমনটি তার ভাব ছিল।
আমি বসতাম প্রথম সারি
ওটাই আমার পছন্দ খুব,
সে বসতো পেছন সারি
আমার ছিল তাতেই ক্ষোভ ।
কোনদিন সে পাশে বসেনি,
পড়াশুনায় খুব সাধারণ
কিছু বললে হাসতো শুধু
বলতো আমার হবেখন।
সেবার আমার অসুখ হলো,
ভীষণ জ্বর ,গায়ে ফোড়া
সবাই বললে সাবধান সব
ও কিছু নয়, মায়ের দয়া।
যত আমার বন্ধু ছিল
কোথায় যেন হারিয়ে গেল
তিনকড়িটাই স্কুল পালিয়ে
আমার পাশে বসেছিল।
সবার কত নিষেধ ছিল
মায়ের নিষেধ বাবার নিষেধ
ওদের বাড়ি রাগারাগি
তারপরেতেও তিন তিনটে দিন
আমার কাছেই এসেছিল।
চতুর্থ দিন খবর পেলাম
মায়ের দয়ায় সেও কাবু
বদ্যি, পথ্যি টুটকা--শক্তি
যম মানুষে লড়েছিল।
ভীষণভাবে কাবু হয়েও
এই যাত্রায় সে বেঁচেছিল।
যেদিন আমি সুস্থ হলাম
প্রথম ওদের বাড়ি গেলাম
আমায় পেয়ে সেকি খুশী
আনন্দেতে হাসছিল।
শুধু আমার চোখে জল‌ই জল
সে যে একটি চোখেই দেখছিল।
আমার সেই বেলাটাই..........।

রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৯

পথের আলো

পথের আলো পথেই ফিরে পাই
নুড়ি পাথর আর ধুলোর মাঝে ।
একা পথচলা আনন্দ সদা
নীরব থাকাই সাঁজে ।

অন্তর মোর আনন্দে উচ্ছলিত
 ঘাসের ছুঁয়া পেয়ে ।
গোধুলি বেলায় রঙিন আকাশ
স্বৰ্গের পথ যায় দেখিয়ে ।

শনিবার, ২২ জুন, ২০১৯

আনন্দলহর

                আনন্দলহর
                 রতন দাস 

ভিতরে এক নীরব  সুর বাজে নির্জনে
সেই সুরের মাঝে স্বর্গ, সুরের তালে প্রাণচঞ্চল গোপনে
মহাকালের আনন্দলহর  তারই মাঝে, ডাকি যে অকাতরে
তার প্রাণস্পর্শ তবে থাকে কেন  যে দূরে দূরে

মহাকালির মহানৃত্য নিরন্তর সৃষ্টির আড়ালে
নাচে নক্ষত্রগুলি,  ডঙ্কার  অহরহ শব্দধনীতে
ছন্দময় এ বিশ্বজগৎ  তার সাকার প্রকাশে
আলোময় ভিতর বাহির, তার নিরাকারের আবেশে

শুক্রবার, ২১ জুন, ২০১৯

যোগমায়া

।। অভীককুমার দে।।

এতদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেননি বা উঠতে পারেননি। বুঝি, ভোররাতের শিহরণের পর বুকের ছাদে শিশিরের ঘাম জমা মিষ্টি অনুভূতি। জানি, ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলে জানালায় উঁকি দিয়ে ঘুম ভেঙেছে সূর্যসোনা।

এখন মাঝরাতেও ভীষণ গরম। মশাও বেড়েছে, কানের কাছে রাতভর বাইক চালিয়ে ঘুরে বেড়ায়। নির্ঘুম রাতের শেষে কাঙাল ভোর, ভদ্রাসনে বসে আছে পূবের ঘরের চাতালে।

শরীর কাঁপছে। শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। তবুও জীবনের জন্য একপায়ে গাছ হতে পারেন। এখন সকাল। এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকুন, লাইনে। বন্ধ চোখের দরজায় হাজার সূর্য এসে চলে যাক। কেবলমাত্র কান সজাগ রাখুন এবং প্রতিশ্রুতির আসনে দাঁড়িয়েই চোখ বন্ধ রাখুন ঘুমন্ত মুদ্রায়। কিছুক্ষণ পরপর হাত পা ছুঁড়ে মারলেই আপনি জীবিত।

রোদ উঠে গেলে উঠে যাওয়া যাক। সামনে, আরও সামনে যে মানুষগুলো জটলা পাকিয়ে চেয়ে দেখছে সুস্বাস্থ্যের মুখ, তাদের শরীরে শক্তি নেই। যে অসুখে পরিবেশ পরিয়াবরণ, সে অসুখের জন্য হাতের মুঠো খোলা রাখুন।

আপনি গাছ। খোলা আকাশের নিচে। আকাশে মেঘ জমছে। বৃষ্টি হবে। আপনার নড়াচড়ার সুযোগ নেই। বজ্রাহত হবেন এবং শূন্য ধারণ করতে পারেন।

গতিবিধি

।। অভীককুমার দে।।

চন্দন, আমরা যে প্রেম করছি সমাজ মেনে নেবে তো ?

--- কেন নেবে না ? আমরা তো ভুল কিছু করছি না !

না, মানে তোমার বাড়ি থেকে আমার মত মেয়ের কাছে তোমাকে বিয়ে দেবে ?

--- কেন দেবে না ?  না দিলে আমি তোমার হাত ধরে পালিয়ে যাবো।

চন্দন, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।

--- মীরা, আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি।

আচ্ছা, আমাদের সংসার হলে তুমি কী করবে ? মানে, তোমার ভাবনার কথা বলছি।

--- হি হি হি....

বলো না।

--- আমি তোমার জন্য রান্না করে বসে থাকবো, তুমি বাজারে আড্ডা দিয়ে যত রাত করেই বাড়ি আসো আমার কোনও আপত্তি নেই। তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বে, তারপর ছেলে মেয়ে গুলোকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে তোমার বুকে মাথা রাখবো। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে যখন আমি ঘরের কাজে মনোযোগী হবো, তুমি তখন ট্রাক্টর নিয়ে জমি চষতে যাবে অথবা মানুষের কাজে। মীরা, আমি তোমার জন্য ভাত নিয়ে মাঠে যাবো। তুমি ঘর্মাক্ত শরীরে জমির আলে খেতে বসলে আমার জামা দিয়ে তোমার মুখ মুছে দেবো। যতক্ষণ না তোমার খাওয়া হচ্ছে আমি তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবো। আমি যখন বাড়ির পথে রওনা দেবো, তুমি আমার হেঁটে যাওয়া দেখবে দাঁড়িয়ে। হাঁটতে হাঁটতে যখন আমি মাঠ থেকে বহু দূরে, আমাকে আর দেখা যাবে না, তুমি আবার কাজে মনোযোগ দেবে। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি এলে তোমাকে চা করে দেবো। চা খেয়ে তুমি বাজার খরচ করতে গেলে আমি সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালবো । তোমার পেছনে বাচ্চারা মা মা বলে চেঁচিয়ে উঠলে আমি ওদের বুকে জড়িয়ে নেবো।

***

ওগো, শুনছো ?

--- হুম, বলো চন্দন।

এবছর শেষে আমাকে একটি গাভী কিনে দিও।

--- কেন ? বাড়িতে কাজ কম নাকি !

না, মানে...

--- মানে কী বলো।

আমি পুরুষ বলে বাচ্চাগুলোকে বুকের দুধ তো খাওয়াতে পারি না। তুমি তো বাড়িতেই থাকো না। কাজেকর্মে বাইরে থাকো। ওদের কান্না আমার সহ্য হয় না।

--- আচ্ছা, ঠিক আছে। এনে দেবো।

আচ্ছা, আরেকটা কথা...

--- কী ?

সেদিন জল আনতে গিয়ে কলসির সাথে লেগে আমার একটা শাঁখা ভেঙে গেছে। আমাকে একটা শাঁখা এনে দাও না।

--- তুমি একটু দেখেশুনে কাজ করতে পারো না ! এমনিতেই কষ্টে আছি। আমার ব্লাউজটা ছিঁড়ে গেছে সেদিন বাজারে মাল নামাতে গিয়ে। ব্রায়ের ফিতা গিঁট দিয়েই চলছে, এখনও আনতে পারিনি আরেকটা, আর তুমি এখন শাঁখার কথা বলছো ?

তোমাকে কোনও জিনিসের কথা বললেই কথা শোনাও!

--- আচ্ছা বাবা, দেখা যাক্, কি করতে পারি। এখন ঘুমাও। সকালে আবার কাজে যেতে হবে।

সম্ভাবনা

।। অভীককুমার দে।।

আকাশ ভালো নেই,
মাটিরও জ্বলছে বুক;

মন পুড়ছে
শান্তি ভাঙছে
মেঘ জমছে

ছন্নছাড়া মেঘেরা এক হলে
সশস্ত্র বিপ্লব,

আগুন জ্বলবে
তুফান উঠবে
ভিজে যাবে পোড়াবুক।

পিঁপড়ে

।। অভীককুমার দে।।

গাছের ডালে পিঁপড়ে বাসা
জীবন কাটে ভালো,
সুতোর প্যাঁচে বেঁধে রাখে
বাসায় প্রাণের আলো।

হঠাৎ করেই মেঘলা চোখে
আকাশ যদি কাঁদে,
বৃষ্টি ঝড়ে ভাঙতে দেখি
পিঁপড়ে পড়ে ফাঁদে।

গর্তে থাকা পিঁপড়গুলোর
জীবন সুখে কাটে,
ভালো খাবার খুঁজে পেলেই
একই সাথে খাটে।

কীটের সাথে লড়াই কীটের
সমাজ ধ্বংস হয়,
ছন্নছাড়া পিঁপড়েগুলো
কীভাবে যে সয় !

দলে দলে ছুটতে থাকে
মাটি বুকের লাইন
ছলে বলে ভাঙে কারা
বিশ্বজোড়া আইন ?

সন্ধ্যা নেমেছে নদীর চোখে

।। অভীককুমার দে।।

বারুদের উপর বসে আছে কার শিশু ?
প্রয়োজন মেটাবে বলেই তো বিধান নামের কেউ নেমেছিল পথে,
খাবার- ঘর- চিতা- কবরের হিসাব দেখেই
ঝুলে আছে বাদুড়ঝোলায় !

সিন্ধু ছেলেটি ভার কাঁধে নরকের দিকে হাঁটছে, অথচ
বাদুড়ের মত উল্টো ঝুলে কোন সিন্ধুকে দেখছে বিধান ?
কেউ পথ দেখে না !
কেউ দেখো না পথ ?

পথ খোঁজে হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ
বুকের কোথাও মরু জেগে,
আকাশের চোখে ঘুম নেই, গোলকে মরুমেঘের দেশ,
সন্ধ্যা নেমেছে নদীর চোখে।
নদী জানে, আবারও পুনরাবৃত্তির খেলা,
সিন্ধুরই মৃত্যু হবে অথবা আরেকটি সভ্যতা...

বাউন্ডুলে তারাদের শূন্য আকাশবাড়ি।

শব্দের নাবিক আমি

।। অভীককুমার দে।।

তুমি ভাবছো পারোর মত পাড়ি দিতে হয়েছে বলে
দেবদাসের মতই অন্য কোনও কোঠাঘরে আমি অথবা
আগুন গিলে পুড়িয়ে দেবো
বুকের কার্ণিশে ঝুলিয়ে রাখা তোমার ছবি !
না, সেকালের দেবদাস আমি হতে পারি না, বরং
কবিতার মুখে তোমার ছবি এঁকে শব্দের নাবিক আমি
ডুবে যাবো নদীর উজানের গান শুনেই।

যেদিন ভাটির দিকে যৌবন হারাবে নদী
দুলতে থাকবে অচল শরীর
হয়তো কবিতাও চিনবে না আগের মত,
আমিও না হয় কৃষ্ণচূড়ার বদলে শিউলি তলায়...

মঙ্গলবার, ১৮ জুন, ২০১৯

আমি


কয়েকটা দিন থেকে ভাবছি --
একটা প্রশ্ন -- আমি কে?  কি পরিচয়?
ভাবনাটা অদ্ভুত বটে, তবে অবান্তর নয় ।
মনে সংশয় , নিরন্তর চাপা জিজ্ঞাসা,
কে আমি ? আমি কে হ‌ই।
জানার সেই চেষ্টা থেকেই 
যত সমস্যার শুরু ।
আমার যিনি গুরু, বললেন, বল তুই কে ?
বিনম্রে বলি, "আমি অমুকের ছেলে
ক্ষত্রিয় সন্তান ।" "সেতো এজন্মের সন্ধান ---। "
আমি থমকে দাঁড়াই, এজন্ম মানে ?
আরো জন্ম আছে তবে অন্য কোনখানে?
এক জন্মেতে এত জ্বালা ,
তায় জন্ম জন্মান্তরের পালা ----,
হে গুরু, একি শুভঙ্করী ধাঁধা
নাকি নতুন প্রহসন। যদি সত্যি হয়,
আমি তবে কে ? কি পরিচয় ?
কখন সৃষ্টি আমার? কিসে হবে লয় ?
এ জন্ম আমার আজ কত জন্মের ফল ?
কত জন্ম আরো যেন বাকি পড়ে রয় ।
আয়নাতে দাঁড়িয়ে দেখি নিজের সত্বাকে
কখনো খুঁজিনি যে, এভাবে নিজেকে
চুলচেরা কখনো করিনি বিচার ।
আমার মধ্যে যত ভাল মন্দ সব
সেতো অপরের মুখে নেওয়া
মিষ্টি বা ঝাল ।
বারবার ফিরে ফিরে তাকাই নিজেই নিজেতে।
যতদুর দৃষ্টি যায়, শুধু অন্ধকার,
আমার ভেতরে কে সে কুৎসিত, কদাকার।

সোমবার, ১৭ জুন, ২০১৯

দিদির দেশে


হচ্ছেটা কি
দিদির দেশে
আন্দোলন
আর হুড়ুস্থুল,
স্টেথো গলায়
ডাক্তারেরা
বেজায় পাকায়
গন্ডগোল।
যখন তখন
বন্ধ কাজ
গেটের কাছে
আন্দোলন,
মিটিং মিছিল
স্লোগান যেন
দিদির জন্যে
সুদর্শন।
বামঘেষা সব
কার্যকলাপ
কাজের কাজ
করছে না,
কেউ যদি এক
ছুঁয়ে দিল
ব্যস তবে আর
পারছে না।
রাজ্য জুড়ে
কোটি লোক,
কজন আছেন
ডাক্তার হে ।
কজন তাদের
মার খেয়েছে
হিসেবখানা
বুঝিয়ে দে।
তোরা ছাড়া
চলবে না তাই
ফন্দি ফিকির
বেশ এটেছিস।
লোকগুলো নয়
দিদির ঘাড়টা
নুইয়ে দিবি
পণ করেছিস।
দিদির সঙ্গে
পাঙ্গা নিস না,
দিদি ভীষণ
রাগ করে,
দিদির দেশে
দিদিই শেষ
আর বাকি সব
পোঁ ধরে।
রাস্তা ঘাটে
একসিডেন্ট
রোজ‌ইতো হয়
নয় কি বল ?
এই ঘটনাও
একসিডেন্ট
এই কথাটা
মেনে চল।
একটা দুটো
মারামারি
কোথায় কখন
হচ্ছে না।
তাই বলে দেশ
বন্ধ হবে,
এই ব্যাপারটি
মানছি না।
মারলো যারা
ভাবিস কি রে
সবাই ওরা
সুস্থ লোক,
দিদির মত
ওরাওতো সব
বদরাগী আর
চন্ডাশোক।
দিদি তো দেখ
মেয়ে মানুষ
কখন কি সব
বলে ফেলে,
তারপরে দেখ্
বুড়ি হয়েছে
মেজাজটাকেই
গুলিয়ে ফেলে।
ঘটলো যা তা
নিন্দনীয়,
একেবার‌ই
কাম্য নয়।
তাই বলে সব
ফাঁকি দিবি
এইটা কোন
কথা হয়।
এখন যারা
হাসপাতালে
ওদের কথা
ভাববি না ?
তোদের পক্ষে
ওরাও আছে
তাইতো কিছু
বলছে না।
দিদির কথায়
রাগ করিস না,
মাথার কি আর
ঠিক আছে ?
আরশি ভাাঙ্গছে
কুরশি ডাঙ্গছে
দল ভাঙ্গবে
চান্স আছে।
দিদির উপর
রাগ করিস না,
সময়টা তার
পক্ষে নয়,
এখন সে আর
আগের মত
পুরোপুরি
সুস্থ নয়।

শনিবার, ১৫ জুন, ২০১৯

প্রশ্নচিহ্ন

                   রফিক উদ্দিন লস্কর
যারাই গড়ে মানবসম্পদ তারাই আজ ড্রাইভার,
বিদ্রূপতায় সংযোজিত নতুন একটা  উপহার। 
যিনি চালান শিক্ষা বিভাগ তিনি দিলেন ফরমান,
শিক্ষকের ঐ সার্টিফিকেটটা লাইসেন্সের সমান।
ত্যাগের জাতি শিক্ষকরা আজ পদেপদে লাঞ্ছিত,
সর্ব কাজে এরাই প্রথম, কিন্তু ন্যায় থেকে বঞ্চিত। 
নিষ্ঠা নিয়ে একটা জাতি কাজ করে যায় দিনরাত,
দাবি দাওয়া করলে কিন্তু উঠতে পারে গায়ে হাত।
আজ মহান পেশার গুরুদায়িত্ব ওদের কাঁধে চাপা,
আছে মানসম্মানের প্রশ্নচিহ্ন বুঝলেন বাবু ক্ষ্যাপা।
বাবুমশাই, ঐ চওড়া মুখটায় একটু লাগাম লাগান
ছুড়বেন না আর বিষ হুংকার, এটা বড্ড বেমানান।
জীবন বাজি রেখেই যারা করছেন জাতির কল্যাণ,
হেয় ভাবছে বিভাগ আজি, করছে তাদের অসম্মান।
এমন করে যদি চলতে থাকে বিভাগীয় অপকার্য,
জেনে রাখুন শিক্ষাবিভাগে কিন্তু ধ্বংস অনিবার্য।

সুখ

Image result for selfish pic
 
বৃত্ত ত্রিভুজ কত কি অনায়াসে হয় জীবন
সরল রেখা হয়না, হতে দেখা যায়না।
ঝুড়ি ঝুড়ি হরফ নিত্য গজায় এ জগতে
কিন্তু হায় সাহিত্যের দারিদ্রতা ঘুচেনা।।
মামা কাকা দাদা অগুণতি তবু
‘’সম্পর্কে’’ বীতস্পৃহ, বিষাক্ত ব্যাখা।
মঞ্চ দাপানো ‘যশ’ বাবু রাতে-
বিছানায় দেখে সত্যের আঁধার একা একা।।
ঝুলিতে হাজার ডিগ্রির ভার
কেজি কেজি মাস্টার্স আর ডক্টরেট সুখ!
আরও বাড়ে ভার তেমাথার মোড়ে যখন-
রিক্সাওয়ালারা ফেরে মুখ।
তবু সুখ খুঁজি যুক্তি দিয়ে রোজ
অনিশ্চিত কালকের সুখে ‘আজ’ প্রত্যহ খুন,
বন্ধ কপাটের বাইরে দীর্ঘ সুখের লাইন-
ভেতরে ল্যাবরেটরি, আর সুখের কৃত্রিম মিশ্রণ ।।

বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০১৯

পাখির খাঁচা

।। অভীককুমার দে।।

নেপথ্যে একটি শরীর
হাঁটছে, ঘুরছে, ছটফট করছে আর
ক্লান্ত হলে অসুখের ঘুম!

সে কথা বলতে পারে
শুধু কথাই বলতে পারে...
কেউ যেন বাইরে,
খোলা আকাশের
নীল মায়ায় জড়িয়ে শব্দের শবদেহ
ছুঁড়ে দিচ্ছে ভিন্ন প্রাণের সুর,
যদিও ওসব কিছুই বোঝে না পাখি, তবুও
নড়ে উঠছে ঠোঁট
কেঁপে উঠছে বুক
একেকটি শব্দ কঠিন হয়ে উঠছে
আর অনিচ্ছায় অনুশীলনের পর
কেঁদে উঠছে খাঁচা।

আমার নদী

।। অভীককুমার দে।।

এ নদী বইতে জানে
সইতে জানে
ঢেউয়ে কথা কয়।
এ নদী বুকের ঘরে
সুখের জ্বরে
বসতভিটা ক্ষয়।।

এ নদী আঁকাবাঁকা
কষ্ট মাখা
দৃষ্টি পথে চলে।
এ নদীর স্বপ্ন আঁকা
জীবন ফাঁকা
জলে কিংবা জ্বলে।।

গন্তব্যের দিকে

।। অভীককুমার দে।।

যেখানে শব্দ হয়
যখনই শব্দ হয়
পেছনে অদৃশ্য পথ, আমিও যাই শব্দের কাছে।

চোখে চোখ রাখতেই ভাঙাগড়ার খেলা
বুকের স্পন্দনে আকাশের জমা কষ্ট অথবা সুখ
ভাসতে ভাসাতে কেবল ঝরেই যায়
হৃদয়ের  হ্রদ হয়ে জেগে ওঠে।

আপেক্ষিক স্থিরতার পর্দা সরে গেলে
হৃদয় ভেঙে জন্ম নেয় ঝর্ণা, সেও ঝরেই যার,
সৌন্দর্য্যের অবশেষটুকুও ভাঙে;
নদীর চোখ থেকে চোখের নদী
সাগর চেনে।
শুনি, শব্দ এখানেও, অতলের কাছে
শব্দ শুনি আর আমিই যাই।

ঠিকানা

।। অভীককুমার দে।।

তোমার ঠিকানা খুঁজতে খুঁজতেই কবিতাকে পেয়েছি।

বয়স পনেরোর আমি কবিতার বুকে
কান পেতে শুনেছি শিউলি ফোটা শব্দ
ফুল শরীরে পাপড়ির ঘুম
ভেঙে গেলেই মনের কোথাও রাত দুপুরের পথ
শিশির ভেজা ভোরের কাছাকাছি।
আমি ভাবতাম, এই বুঝি পৌঁছে গেছি,
অথচ গাছের ডালে আমার অতীত গল্প, ফুল নেই,
আলোর কাছে জেনেছি--
তুমি এখন মাটির বুকে জীবনের ছবি আঁকো।

পনেরোর পর চলে গেছে আরও অনেক বছর
কবিতা জানে, শিউলির ঠিকানায় এসেছে নতুন কুঁড়ি।