।। অভীককুমার দে।।
চন্দন, আমরা যে প্রেম করছি সমাজ মেনে নেবে তো ?
--- কেন নেবে না ? আমরা তো ভুল কিছু করছি না !
না, মানে তোমার বাড়ি থেকে আমার মত মেয়ের কাছে তোমাকে বিয়ে দেবে ?
--- কেন দেবে না ? না দিলে আমি তোমার হাত ধরে পালিয়ে যাবো।
চন্দন, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
--- মীরা, আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি।
আচ্ছা, আমাদের সংসার হলে তুমি কী করবে ? মানে, তোমার ভাবনার কথা বলছি।
--- হি হি হি....
বলো না।
--- আমি তোমার জন্য রান্না করে বসে থাকবো, তুমি বাজারে আড্ডা দিয়ে যত রাত করেই বাড়ি আসো আমার কোনও আপত্তি নেই। তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বে, তারপর ছেলে মেয়ে গুলোকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে তোমার বুকে মাথা রাখবো। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে যখন আমি ঘরের কাজে মনোযোগী হবো, তুমি তখন ট্রাক্টর নিয়ে জমি চষতে যাবে অথবা মানুষের কাজে। মীরা, আমি তোমার জন্য ভাত নিয়ে মাঠে যাবো। তুমি ঘর্মাক্ত শরীরে জমির আলে খেতে বসলে আমার জামা দিয়ে তোমার মুখ মুছে দেবো। যতক্ষণ না তোমার খাওয়া হচ্ছে আমি তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবো। আমি যখন বাড়ির পথে রওনা দেবো, তুমি আমার হেঁটে যাওয়া দেখবে দাঁড়িয়ে। হাঁটতে হাঁটতে যখন আমি মাঠ থেকে বহু দূরে, আমাকে আর দেখা যাবে না, তুমি আবার কাজে মনোযোগ দেবে। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি এলে তোমাকে চা করে দেবো। চা খেয়ে তুমি বাজার খরচ করতে গেলে আমি সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালবো । তোমার পেছনে বাচ্চারা মা মা বলে চেঁচিয়ে উঠলে আমি ওদের বুকে জড়িয়ে নেবো।
***
ওগো, শুনছো ?
--- হুম, বলো চন্দন।
এবছর শেষে আমাকে একটি গাভী কিনে দিও।
--- কেন ? বাড়িতে কাজ কম নাকি !
না, মানে...
--- মানে কী বলো।
আমি পুরুষ বলে বাচ্চাগুলোকে বুকের দুধ তো খাওয়াতে পারি না। তুমি তো বাড়িতেই থাকো না। কাজেকর্মে বাইরে থাকো। ওদের কান্না আমার সহ্য হয় না।
--- আচ্ছা, ঠিক আছে। এনে দেবো।
আচ্ছা, আরেকটা কথা...
--- কী ?
সেদিন জল আনতে গিয়ে কলসির সাথে লেগে আমার একটা শাঁখা ভেঙে গেছে। আমাকে একটা শাঁখা এনে দাও না।
--- তুমি একটু দেখেশুনে কাজ করতে পারো না ! এমনিতেই কষ্টে আছি। আমার ব্লাউজটা ছিঁড়ে গেছে সেদিন বাজারে মাল নামাতে গিয়ে। ব্রায়ের ফিতা গিঁট দিয়েই চলছে, এখনও আনতে পারিনি আরেকটা, আর তুমি এখন শাঁখার কথা বলছো ?
তোমাকে কোনও জিনিসের কথা বললেই কথা শোনাও!
--- আচ্ছা বাবা, দেখা যাক্, কি করতে পারি। এখন ঘুমাও। সকালে আবার কাজে যেতে হবে।