“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২০

পৃথিবী-জুড়ে কান্না : এই কি তবে ‘দেবতার গ্রাস’?




(১৮ এপ্রিলে, দৈনিক গতি পত্রিকাতে প্রকাশিত)

ড়ই দুঃসময়! পৃথিবী আজ না সারা এক ব্যমোতে ভুগছে। না! হয়তঃ বা একটু ভুল বলে ফেললাম! অসুখটা সম্ভবতঃ পৃথিবীর না। জৈবিক আর জীবের অজৈব রসদ, বাস্তু-তন্ত্রের হরেক খুঁটিনাটি উপাদান, এরা কেউই জরাগ্রস্ত নয়। অসুস্থ হয় যায় নি দিন-রাতের নির্ঘণ্ট;  অমাবস্যা-পূর্ণিমার চক্র, কিম্বা আহ্নিক অথবা বার্ষিক গতির সময় সূচি! তাহলে? কিসের এত গেলো গেলো রব?

গেছে তো ঠিকই! তবে পৃথিবীর বুকে থাকা ৭০ লক্ষেরও বেশী প্রজাতির মধ্যে ৬৯ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯৯৯টি প্রজাতির মধ্যে কোনও হাহাকার নেই! গেলো গেলো করছে শুধু ‘হোমো-সেপিয়েন্স’ নামক প্রজাতিটি। তাও আবার গোটা বিশ্ব জুড়ে এদের একই রকম দুর্যোগ! 

দুর্যোগ মানেই তো বিপর্যয়! নানান অসুবিধা এই বিপর্যয় তো এক এক সময় এক এক চেহারা নিয়ে হাজির হয় ছিয়াত্তরের মনন্ত্বর, (১১৭৬ বাং/ ১৭৭০ ইং)-এর কথা মনে আছে তো ?  একটানা তিন সাল ধরে চলে আসা ঐ দুর্ভিক্ষে সেই সময় এক কোটিরও বেশী লোক মারা যান। জন ফিস্ক তার ‘দ্য আনসিন ওয়ারল্ড’ বইটিতে লিখেছেন, বাংলার এই দুর্ভিক্ষ চতুর্দশ শতকের ইউরোপের ঘাতক বেবুনিক প্লেগের চেয়েও কয়েক গুন বেশী মারাত্মক। আবার বিভূতিভূষণের বর্ণনায় পঞ্চাশের মনন্ত্বর (১৯৪৩ ইং) বাংলার মহামারী তো কালজয়ী ‘অশনি সঙ্কেত’! পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অতীতে হয়ে আসা বিভিন্ন মহামারী (স্প্যানিশ ফ্লু , ইঁদুর বাহিত দ্য প্লেগ অফ জাস্টিশিয়ান, ই-বোলা ইত্যাদি যেন এক একটা  মূর্তিমান আতঙ্ক !

বিপর্যয় আর জরুরি (Disaster and Emergency) অবস্থার মধ্যে ফারাক এটাই যে, জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে অন্যরা সাহায্যের জন্যও এগিয়ে আসে, কিন্তু যেহেতু বিপর্যয়’ সবার জন্য একসাথেই আসে, একসঙ্গেই সবাইকে কাবু করে, অতএব, সদিচ্ছা স্বত্বেও অন্য কেউ তেমন কিছু করে উঠতে পারে না আরেকটু খোলসা করে  বলছি, ধরুন পাড়াতে কারো বাড়িতে আগুন লাগলো (বা বগিচ্যুত হয়ে ট্রেনের বেশকিছু লোক মারা গেলেন), সেটাজরুরি পরিস্থিতি’, কিন্তু, বর্তমান মহামারী নিশ্চিত ভাবেই বিপর্যয় এটা কোনও একটা প্রান্ত বা শুধুমাত্র এক দেশের জন্য নয়। গোটা বিশ্ব জুড়ে। বিপর্যয়ের তালিকায় আরও রয়েছে কেমিক্যাল এবং বায়োলোজিকাল বিপর্যয় আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে কখনো নেমে আসে বন্যা, কখনো খরা! আবার কখনো,  ভূমিকম্প, ভুমিস্খলন কিম্বা সুনামি; আবার কখনো প্রবল বেগে ঝড় 

এক একটা বিপর্যয় যে একসাথে কত লোকের প্রান কেড়ে নেবে, তার আগাম ঠাহর করা বড়ই দুস্কর! ধরা যাক ঝড় বা কালবৈশাখীর কথাই। আমরা যাকে ‘সাইক্লোন’ বলি,, সেই সর্বনাশী তুফান পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। উত্তর আটলান্টিক এবং উত্তর পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় ‘হ্যারিকেন’; উত্তর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর এবং দক্ষিণ চিন মহাসাগর এলাকায় ‘টাইফুন’নাম যাই হোক, বিধ্বংসী তাণ্ডবলীলা চালানোর ক্ষেত্রে সবার চরিত্র একই। যে পরিসংখ্যানটা  হাতে রয়েছে, তাতে দেখা যায়, গত তিন শতাব্দীর মধ্যে তুফান, হারিকেন বা টাইফুন গোটা পঁচিশেক বিধ্বংসী তাণ্ডবলীলা  চালিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, এবং এগুলোর প্রত্যেকটাতেই ন্যুনতম দশ হাজার থেকে তিন লক্ষেরও বেশী লোকের প্রান  গেছে। স্বল্প পরিসরে যদি কয়েকটার উল্লেখ করি, তাহলে বলতে হয়, ১৭৩৭ সালের কোলকাতার হুগলীর তুফান (মৃতের সংখ্যা ৩,০০,০০০); ১৮৭৬ সালে বাংলাদেশ (বাকেরগঞ্জ) (মৃতের সংখ্যা ২,৫০,০০০);  ১৮৮১ সালে চীনদেশে (মৃতের সংখ্যা ৩,০০,০০০); ১৯৭০ সালে বাংলাদেশে (মৃতের সংখ্যা ৩,০০,০০০); ১৮৯৭ সালে বাংলাদেশে (মৃতের সংখ্যা, ১,৭৫,০০০), আবার ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে (মৃতের সংখ্যা ১,৩৮,০০০)এ ছাড়াও কুড়ি থেকে ত্রিশ কম্বা পঞ্চাশ হাজার লোক মারা গেছেন, এমন ঘটনা আরও ১২-১৫টা রয়েছে। (তথ্যসুত্রঃ C R C Report, Indian Meteorological Department Publication)  করোনায় মৃতের সংখ্যা (এই নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত) এক লক্ষ পয়ত্রিশ হাজারের সামান্য বেশী হলেও,  মন্দের ভাল এটাই যে মহামারী সুলভ ভয়ানক সংক্রমণের দিকটা আর পাঁচটা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে থাকে না।

আবার ভুমিকম্প, যেটা কি না  বিপর্যয়ের অন্য আরেক নাম, তার পরিসংখ্যানটাও ভীষণ উদ্বেগের। যদিও প্রত্যেকদিন পৃথিবীর কোনও না কোনও প্রান্তে নিরন্তর মৃদু বা হালকা ভূমিকম্প হয়েই চলেছে, যেহেতু সেগুলো অনুভূতির মধ্যে আসে না, তাই প্রায়শঃ বোধগম্যই হয় না! লোকেরা উলুধ্বনি, কাঁসরঘণ্টা বাজিয়ে হুড়মুড় করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসি তখনই, যখন এর মাত্রা ৪ - ৫ কিম্বা তার থেকে বেশী হয়। উত্তর পূর্বাঞ্চল (বাংলাদেশ এবং নেপাল কে  ধরেই বলছি) তো প্রচণ্ড ভাবে ভূমিকম্প প্রবন এলাকা। এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, জাপানের পর আমাদের এটাই দ্বিতীয় স্থান, যেখানে ঘন ঘন ভূমিকম্প হয়! অতীতে এই এলাকায়  বড় মাপের (রিখটার স্কেলে ৭ বা  তারও বেশী) ভুমিকম্পের কথা উল্লেখ করলে বললে হয়, কাছাড়ে ২১ মার্চ, ১৮৬৯ হওয়া (৭.৮ মাত্রা), শিলঙে ১২ জানুয়ারি, ১৮৯৭ (৮.৭ মাত্রা), শিবসাগর, ৩১ আগস্ট, ১৯০৬ (৭.০ মাত্রা), শ্রীমঙ্গল, বাংলাদেশ ৮ই জুলাই, ১৯১৮ (৭.৬ মাত্রা), দক্ষিণ পশ্চিম আসাম, ৯ই সেপ্টেম্বর, ১৯২৩ (৭.১ মাত্রা), আপার আসাম, ২৭ জানুয়ারি, ১৯৩১ (৭.৬ মাত্রা), অরুণাচল প্রদেশ, ৭ই জুলাই, ১৯৪৭ (৭.৫ মাত্রা), ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা, ১৫ আগস্ট, ১৯৫০ (৮.৭ মাত্রা), কাঠমান্ডু, নেপাল, ২৫ এপ্রিল, ২০১৫ (৭.৮ মাত্রা)। এছাড়াও ৭-৮ মাত্রার মধ্যে আরও  ন্যুনতম দশটি ভূমিকম্প হয়েছে, যেগুলোর বিশদ উল্লেখ  এখানে আর করলাম না। এগুলোর প্রত্যেকটিতেই জান-মালের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্মরনাতীত কালের মধ্যে নেপালের ২০১৫ সালের ভুমিকম্পের বিভীষিকা কথা নিশ্চয়ই আপনাদের মন থেকে মুছে যায় নি!

সুনামি! জাপানি এই শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে, ‘বন্দরের ঢেউ’২০০৪-এ ভারত মহাসাগরের এই সামুদ্রিক ঢেউয়ের কথা অনেকের কম বেশী মনে থাকলেও তার আগেরগুলির হদিশ অনেকেরই অজানা। ১৮৮৩ সালের আগস্টে ভারত মহাসাগরের বুকে ক্রাকাটুয়া নামক দ্বীপে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের ফলে যে সুনামি হয়েছিল, তাতে সমুদ্রে জলের ঢেউগুলো ৩৫ মিটার  উঁচু পর্যন্ত উঠেছিল।  ঐ সুনামিতে ইন্দোনেশিয়া, জাভা এবং সুমাত্রার প্রায় ৩৭,০০০ লোক একদিনে প্রান হারিয়েছেন। গত ৩০০ বছরে ভারত মহাসাগর উপকুলে  ছট-বড় মোট ১৩টা সুনামি হয়েছে এবং তার তিনটিই আন্দামান-নিকোবর দ্বীপ সমুহের আশপাশ অঞ্চলে। ভারত উপমহাদেশের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে থাকা দেশগুলোর মধ্যে সুনামি র ফলে যেগুলো দেশের ক্ষতি হতে পারে, তাদের মধ্যে রয়েছে, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড,  শ্রীলঙ্কা, পাকিস্থান, ইরান, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, মালদ্বীপ, সোমালিয়া, বাংলাদেশ, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, মরিশাস, ওমান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়া।  ২৬ ডিসেম্বর, ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরের বুকে হয়ে যাওয়া ঐ সামুদ্রিক ঢেউয়ের দেশের প্রায় ১১ হাজার লোক মারা গেছিলেনপাশের সব দেশ মিলিয়ে ২,৩৮,০০০ লোক কম বেশী  ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, এদের মধ্যে ৫২,০০০ জন নিরুদ্দেশ এবং মোট চোদ্দটা দেশের ১৫০ লক্ষ লোক অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছিলভয়ানক বিভীষিকাময় ঐ সুনামির ছাপ আজকের দিনেও আন্দামানে দ্বীপ সমুহে বেড়াতে গেলে চোখে পড়ে।

একুশ দিনের লক-ডাউনের প্রথম সপ্তাহেই একটি ভুয়ো খবর হোয়াটস-এপ মারফৎ প্রত্যেকের মুঠোফোনে পৌঁছে গেছিল। বলা হচ্ছিল, সেদিনের রাত ১২টা থেকে ‘ডিসেস্টার ম্যানেজমেন্ট এক্ট’ চালু হবে। একটু সময়ের জন্য ভিমড়ি খেতে হয়েছিল বৈ কি!   জ্ঞান বিশ্বাস এবং  হিসেব মত তো ঐ আইনটা ২৩ ডিসেম্বর, ২০০৫ থেকেই লাগু। আবার এটা কার্ফু বা ১৪৪ ধারার মতোও নয়, যে পরিস্থিতি বুঝে লাগু করা যায়, আবার যখন তখন তুলে নেওয়া যায়! তাহলে?

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আইনে ‘দুর্যোগ মোকাবিলা’কে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের স্থায়ী নীতি হিসেবে গ্রহন করার উল্লেখ রয়েছে। মহিলা, বয়স্ক লোকেরা, শিশু এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী লোকেদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার কথাও ঐ আইনে উল্লেখ রয়েছে। তবে  এদেশে বর্তমানে প্রচলিত সংরক্ষণের আদলে কোনও জাতি, সম্প্রদায় ইত্যাদির জন্য বাড়তি কোনও সুবিধার কথা উল্লেখ নেই। আইনে আরও বলা রয়েছে, যে দুর্যোগ মোকাবিলায় যেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট সেক্টর ইত্যাদি সবাই  সমান ভাবে দ্বায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আইন মতে প্রত্যেকটা রাজ্যের মুখ্য মন্ত্রীর নেতৃত্বে স্টেট ডিজেস্টার মানেজমেন্ট অথোরিটি (SDMA) থাকার উল্লেখ রয়েছে, যার অধীনে জেলাগুলোতে ডিসট্রিক্ট ডিজেস্টার মানেজমেন্ট অথোরিটি (DDMA) থাকবে। জেলার জেলাধিপতি মহকুমাধিপতিদের নিয়ে জেলা ভিত্তিক বিশেষ বিশেষ দুর্যোগপ্রবন এলাকাগুলি চিহ্নিত করবেন। এক কথায়, এই আইনে ‘বটম-টু-টপ’ নীতিই প্রাধান্য পায়।

দুর্যোগ মোকাবিলার এই আইন জাতীয় স্তরে ন্যাশনাল ডিজেস্টার রেসপন্স ফোরস (NDRF) এবং রাজ্য স্তরে রাজ্যিক ডিজেস্টার রেসপন্স ফোরস STATE DISASTER RESPONSE FORCE (SDRF) গঠন করার কথাও উল্লেখ রয়েছে, এবং কেন্দ্রস্তরে থাকা NDRF, প্রত্যেকটা রাজ্যের মধ্যে সংযোগ বজায় রেখে কাজ করে। এই NDRF, সেনা বাহিনী, পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনী, দমকল বাহিনী, হোম গার্ড, এবং সর্বোপরি রাজ্যিক ডিজেস্টার রেসপন্স ফোরসের সদস্যদের প্রশিক্ষন দেবে, প্রয়োজন মোতাবেক। তা হবে অবসর সময়ে। সেই মতে, গোটা দেশে ন্যাশনাল ডিজেস্টার রেসপন্স ফোরসের সাতটি প্রধান শাখা রয়েছে, যার একটি  রয়েছে অসমে, উত্তর পূর্বের সব রাজ্যের জন্য।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার এই আইনে চার স্তরীয় দুর্যোগ মোকাবিলা চক্রের (Disaster Management Cycle) কথাও উল্লেখ রয়েছে। এগুলো হল প্রশমন (Mitigation),  প্রস্তুতি বা উদ্যতি (Preparedness),  প্রতিক্রিয়া (Response) এবং পুনরুদ্ধার বা আরোগ্য (Recovery)। দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য এই চারটি পর্যায়ের কথা সব সময় খেয়াল রাখা হয়। কোথাও ধরুন একটা শপিংমল বা সিনেমা হল বানানো হবে, তা সেখানে সিড়িগুলো বা লিফট কোথায় কোথায় হবে, ক’টা হবে, সেটা ‘প্রশমনের’ পর্যায়ে পড়ে। আবার  ভুমিকম্প হলে হটাৎ করে সেই মলে পদপৃষ্ট এড়াতে  যে পদক্ষেপ নিতে হবে, সেটা হচ্ছে ‘প্রস্তুতি’; পদপৃষ্ট  হয়ে লোকের মৃত্যু এড়ানোর ব্যাপারে যথাযথ প্রশিক্ষনের বিধান রয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে কি ভাবে কি করা, সেটা ‘প্রতিক্রিয়া’ এবং ধরুন পদপৃষ্ট হয়ে বেশ কয়জন আহত হয়েই গেলেন, সে ক্ষেত্রে যেটা করা হয়, তা ‘আরোগ্য’ পর্যায়ের।

আচ্ছা, এতোসব তাত্বিক কথা ছাড়ুন।  বলছিলাম, একজেদি ঐ রাখাল ছেলেটার কথা মনে আছে তো ? আর মোক্ষদা?  হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, কথাগুলো ‘দেবতার গ্রাস’ প্রসঙ্গেনাছোড়বান্দা রাখাল যখন কোনও ভাবেই ঘরে থাকতে রাজি হচ্ছিল না, তখন প্রচণ্ড ক্রোধে (নিতান্ত অনিচ্ছাস্বত্বে যদিও) মায়ের মুখ থেকে ঐ ‘চল তরে দিয়ে আসি, সাগরের জলে’  কথাটা বেরিয়ে এসেছিলো কি না? কবিতাটার শেষের দিকের ঘটনাক্রমও নিশ্চয় মনে আছে। কোনও শক্তিই ‘রাখাল-বালক’ কে রক্ষা করতে পারলো না সাথে করে, জলে ঝাঁপ দিয়ে  ব্রাহ্মণেরও (প্রতীকী অর্থে এখানে ডাক্তার) জীবন শেষমোক্ষদা বলুন, কিম্বা বলুন ‘ধরিত্রী’! দুজনই তো মা। ইংরেজিতে আমরা তো ‘মাদার আর্থ’ বলি।  একগুয়েমি, জেদাজেদি, নিজেদের স্বার্থলোলুপতা মানুষ ( নিবন্ধের শুরুতে উল্লেখ করা ‘হোমো-সেপিয়েন্স’) নামক ‘রাখাল’-দেরকে কোথায় পর্যবসিত করছে, সেটা ভাববার সময় কি এখনও বাকি? দেশের বাবা তো কবেই বলেছিলেন, ‘The world has enough for everyone’s needs, but not everyone’s greed.’। বাবার কথাগুলো ছেলে-মেয়েরা পালন করছে কৈ? আজকালের ছেলে-মেয়েরা সত্যিই, বড় বেশী বেপরোয়া !

সাংখ্যতত্ত্বে বর্ণিত ঐ ‘দ্বৈতবাদী দর্শন (Dualistic Philosophy)-র কথা মনে আছে তো? প্রকৃতি বলুন বা ‘নেচার, সে তো তার নিজস্ব খেয়াল-খুশি মত চলবে, এটাই তো স্বাভাবিক। প্রকৃতির ঐ ‘বিধির বাধন’ কাটতে পারো, হোমো-সেপিয়েন্স, তুমি কি এমন শক্তিমান? 
(আবার বলছি), তুমি কি এমনি শক্তিমান??

কোন মন্তব্য নেই: