“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

রবিবার, ৮ মার্চ, ২০২০

দা ঙ্গা


 এত রাতে কাকে পাবে সে ৷ কদিন ধরে চারদিক থেকে যা খবর আসছে ৷ পাড়ার সবাই তটস্থ হয়ে আছে ৷ দিনের বেলাও ঘর থেকে কেউ বেরুচ্ছে না ৷ রাতে তো অসম্ভব ৷ কেলাব ঘরে বিকেলে একটা মিটিন হয়েছিল পাড়ার সবাইকে নিয়ে ৷ বউয়ের এই অবস্থার কথা জানিয়ে যায়নি মিটিনে ৷ তবে সবার যা মত তাতে সে সহমত পোষণ করে বলে জানিয়েছে ৷ পাড়ার অনেকেই জানে তার সমস্যার কথা ৷ তাই তাকে রেহাই দেওয়া হয়েছে ৷
মিটিনে বয়স্ক দু-একজন সম্প্রীতির কথা বললেও কয়েকটা উটকো বহিরাগতের উস্কানিতে পাড়ার কয়েকটা ছেলে হৈ হল্লা করে সভা পণ্ড করে দিয়েছে ৷ ওরা বলেছে মিষ্টি কথায় চিরা ভিজনের দিন গেছেগা ৷ ওরা বলছে মারের বদলে মার দিতে হবে ৷
বুড়োরা যেন ঘরে গিয়ে বসে থাকে ৷ এখন জোয়ানদের দিন ৷ ওপর থেকে খবর এসেছে ওগুলোকে ঝাড়ে বংশে শেষ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই ৷ ছেলেগুলোর মিলিত চিৎকারে সন্ধ্যার পাখিগুলো কিচিরমিচির করে উঠল বাসা ছেড়ে দিয়ে ৷ পাড়ার ঘরে ঘরে একটা গুমোট আতঙ্ক ৷
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বউয়ের শরীর আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে ৷ ব্যথায় ককিয়ে উঠছে বউটা ৷ আর অসহায় দৃষ্টি মেলে তাকাচ্ছে তার দিকে ৷ উঠে দাঁড়ায় সে ৷ একটা কিছু করতে হবে ৷
অনেক রাতে হন্যে হয়ে ঘুরে কোনো যানবাহনে দেখা পেল না ৷ হতাশ যখন ফিরে আসছে তখন একটা একটা ঝুপড়ির পাশে একটা রিক্সা পড়ে রয়েছে দেখতে পেল ৷ কাছে গিয়ে চালক বা সওয়ারি কাউকে দেখতে পেল না ৷ একটু ভেবে সে নিজেই রিক্সাটা টেনে নিয়ে চলল বাসার দিকে ৷ কাজ সেরে আবার রেখে দেবে সেখানেই ৷ সকালে মালিককে বুঝিয়ে কিছু টাকা দিয়ে দেবে ৷
পাড়ার কাছাকাছি পৌঁছুতেই দেখল পাড়ায় আগুন চারদিকে ৷ লোকজনের চিৎকার ৷ মার ৷ মার ৷ ধর ৷ ধর ৷ কাইট্টা ফালা ৷  আগুনের আলোয় দেখা যাচ্ছে একদল লাঠিসোটা দা কিরিচ নিয়ে ধাওয়া করছে ৷ বাঁচাও ৷ বাঁচাও ৷ আর্তনাদ চিৎকারে একটা থমথমে পরিবেশ ৷ ওর বুকের ভেতর মোচড় দেয় ৷ বউয়ের জন্যে ৷ আর একটা স্বপ্নের জন্যে ৷ দ্রুত পৌঁছে যায় তাদের বাড়ির কাছাকাছি ৷ আর দুএকটা বাসার পরে ওদের ঘরে লাগবে আগুন ৷ দ্রুত ছড়াচ্ছে ৷

এই....এই....খাড়অ ৷ শালার শালা ৷ কই যাইতাছচ ৷ 
ধর তারে ৷ ভাগতাছে ৷ 
  সে দাঁড়িয়ে পরে ৷ 
 -- না না ভাই ৷ আমি ভাগতাছিনা ৷
 -- ভাগতাছৎনা ৷ বাল ফালাইতাছৎ ৷ রিসকা লইয়া কিতা করতাছৎ?
-না দাদা ৷ আমার বউ ৷ ব...অ...উ... ৷
পুন্দেদা দিমু তর বউ ৷ বান তারে ৷ কাইট্টাঅই লামু আজগা তরে ৷
দাদা ৷ আমারে মাইরেননা ৷ আমি প্রাণভিক্কা চাই আপনেরার কাছে ৷ আমার কথাডা হুনেন ৷
চিৎকার চেঁচামেচিতে শোনা যায়না তার কথা ৷ পিছমোড়া বেঁধে ফেলে তাকে ৷ তার বাসার সামনে ৷ সে অসহায় চেয়ে থাকে বাড়ির দিকে 
দড়িতে টান পড়ে ৷ চল আজগা তোর শেষদিন ৷

      ঠিক এই সময় বাড়ির ভেতর থেকে কান্না ভেসে আসে দুটি মানুষেরমা মা ৷ ওঙা ওঙ্গা ৷ মা..ওঙ্গা...মা...ওঙ্গা ৷ আর আর্ত চিৎকারভরা বীভৎস রাতের আকাশ থেকে যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছেদাঙ্গা...দাঙ্গা...দাঙ্গা...৷

কোন মন্তব্য নেই: